img

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জিহাদের আহ্বান জানিয়ে ফতোয়া জারি করলেন মুসলিম পণ্ডিতরা

প্রকাশিত :  ১৬:৪৪, ০৫ এপ্রিল ২০২৫

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জিহাদের আহ্বান জানিয়ে ফতোয়া জারি করলেন মুসলিম পণ্ডিতরা

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সরকারের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের কারণে সমস্ত মুসলিম এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোকে জিহাদ করার জন্য ফতোয়া (ধর্মীয় ফরমান) জারি করেছে বিশিষ্ট ইসলামী পণ্ডিতদের নিয়ে গঠিত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্স (IUMS)।

অবরুদ্ধ গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ১৭ মাস ধরে চলা ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের পর ১৪ জন বিশিষ্ট মুসলিম পণ্ডিতের সমর্থনে এই বিরল ফতোয়া জারি করা হলো।

ইউনিয়নের মহাসচিব আলী আল-কারাদাঘি শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, সমস্ত মুসলিম দেশকে এই গণহত্যা এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে অবিলম্বে সামরিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করতে হবে।
\r\n১৫ দফা সম্বলিত ফরমানে উল্লেখ করা হয়েছে, গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধে আরব ও ইসলামিক সরকারগুলো ব্যর্থ হলে তা ইসলামিক আইন অনুযায়ী আমাদের নিপীড়িত ফিলিস্তিনি ভাইদের বিরুদ্ধে বড় অপরাধ বলে গণ্য হবে।

\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n

আলী আল-কারাদাঘিকে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের সবচেয়ে সম্মানিত ধর্মীয় কর্তৃপক্ষদের একজন বিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে তার ফরমানগুলো বিশ্বের প্রায় দুই বিলিয়ন সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব বহন করে।
\r\nজারি করা ফরমানে সমস্ত ইসলামী দেশকে তেল আবিবের সাথে \'তাদের শান্তি চুক্তি পর্যালোচনা\' করার এবং নৃশংস যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানদের ট্রাম্প প্রশাসনকে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
\r\nএক বিবৃতিতে আলী আল-কারাদাঘি বলেছেন, গাজার মুসলমানদের নির্মূলে কাফের শত্রুকে সমর্থন করা নিষিদ্ধ, তা সে যে ধরণের সমর্থনই করুক না কেন। এর কাছে অস্ত্র বিক্রি করা, অথবা সুয়েজ খাল, বাব আল-মান্দাব, হরমুজ প্রণালী, অথবা অন্য কোনো স্থল, সমুদ্র বা আকাশপথের মতো বন্দর বা আন্তর্জাতিক জলপথের মাধ্যমে এর পরিবহন সহজতর করা নিষিদ্ধ।
\r\nতিনি আরও বলেন, আমাদের ইউনিয়ন একটি ফতোয়া জারি করেছে, যাতে গাজার আমাদের ভাইদের সমর্থনে দখলদার শত্রুর আকাশ, স্থল এবং সমুদ্র অবরোধের দাবি করা হয়েছে।
\r\nহামাসের প্রতিশোধমূলক অভিযানের পর ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় শুরু হওয়া ইসরায়েলি সরকারের গণহত্যার যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫০ হাজার ৬০৯ জন নিহত হয়েছে।
\r\nগত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সামরিক বিষয়ক দায়িত্বে থাকা প্রাক্তন মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

img

বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে ইসলাম ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা

প্রকাশিত :  ১৮:৫৫, ১১ জুন ২০২৫

গত এক দশকে বিশ্বব্যাপী ইসলাম ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা অন্যান্য ধর্মের তুলনায় সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি অন্যান্য সব প্রধান ধর্মের সম্মিলিত প্রবৃদ্ধিকেও ছাড়িয়ে গেছে ইসলামের সম্প্রসারণ। ‘পিউ রিসার্চ সেন্টার’-এর সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, ইসলাম এখন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম।
গবেষণাটি ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়কাল ঘিরে পরিচালিত হয়েছে এবং এটি ‘গ্লোবাল রিলিজিয়াস ল্যান্ডস্কেপ’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।

পিউ রিসার্চ জানিয়েছে, ইসলাম ধর্মে এই বৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি হলো প্রাকৃতিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি। ধর্মান্তরণের ভূমিকা এখানে খুবই সীমিত। মুসলিম পরিবারে গড় সন্তানসংখ্যা অন্য ধর্মের তুলনায় বেশি। বর্তমানে সারাবিশ্বে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ এই ধর্মের অনুসারী।
২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতি মুসলিম নারী গড়ে ২.৯ সন্তান জন্ম দিয়েছেন, যেখানে অমুসলিম নারীর ক্ষেত্রে এই হার ২.২। তাছাড়া মুসলিম জনগোষ্ঠীর গড় বয়স তুলনামূলকভাবে কম, যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
গবেষণা অনুযায়ী, খ্রিষ্টধর্ম এখনো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্ম, যার অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ২৩০ কোটি। তবে ইসলাম দ্রুত বাড়তে থাকায় দুই ধর্মের মধ্যকার সংখ্যাগত ব্যবধান দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
২০১০ সাল থেকে খ্রিষ্টধর্মের অনুসারীর সংখ্যা বিশ্বে গড়ে ১.৮ শতাংশ হারে কমেছে। এ সময়ে ইসলাম ধর্মের অনুসারী বেড়েছে প্রায় ৩৫ কোটি, যা খ্রিষ্টধর্মের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি।
অঞ্চলভিত্তিক পরিবর্তন
বিশ্বজুড়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতেই ইসলাম ধর্মের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি হয়েছে। কাজাখস্তান, বেনিন ও লেবাননে ইসলাম ধর্মে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। তবে ওমান ও তানজানিয়ায় মুসলমানদের অনুপাত কিছুটা কমেছে।
ধর্মহীন মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। চীনে সবচেয়ে বেশি ধর্মহীন মানুষ বাস করেন, যাদের সংখ্যা প্রায় ১৩০ কোটি। যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মহীন মানুষের সংখ্যা ২০১০ সালের তুলনায় বেড়েছে ৯৭ শতাংশ।
ধর্মত্যাগ ও ধর্মান্তর প্রবণতা
গবেষণায় দেখা গেছে, খ্রিষ্টধর্ম, হিন্দুধর্ম ও বৌদ্ধধর্মে ধর্মত্যাগের হার ধর্মান্তরের চেয়ে বেশি।
বিশেষ করে খ্রিষ্টধর্মে, প্রতি একজন প্রাপ্তবয়স্ক নতুন অনুসারীর বিপরীতে তিনজন ধর্ম ত্যাগ করেছেন। অন্যদিকে, ধর্মহীনতায় প্রবেশের হারও বেশি—প্রতি একজন ধর্মহীনতা ছেড়েছেন, আর তিনজন নতুন করে ধর্মহীন হয়েছেন।

তবে ইসলাম একমাত্র প্রধান ধর্ম, যেখানে ধর্মান্তরিত হয়ে আসা মানুষের সংখ্যা ধর্মত্যাগীদের চেয়ে বেশি।

বিশ্ব ধর্মের বর্তমান চিত্র
ইসলাম : এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। প্রায় ২০০ কোটি মানুষ এই ধর্মের অনুসারী, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ।
খ্রিষ্টধর্ম : বৃহত্তম ধর্ম, যার অনুসারী সংখ্যা ২৩০ কোটি।
ধর্মহীন : সংখ্যা বেড়ে ২০০ কোটিতে, ২০১০ সালের তুলনায় বেড়েছে ২৭ কোটি।
হিন্দুধর্ম : তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম, এর ১২০ কোটি অনুসারী রয়েছে; গত এক দশকে বেড়েছে ১২.৬ কোটি, তবে বৈশ্বিক হারে অপরিবর্তিত।

বৌদ্ধধর্ম : একমাত্র ধর্ম যার অনুসারীর সংখ্যা কমেছে — ১.৮৬ কোটি হ্রাস পেয়ে হার ৫% থেকে ৪%-এ নেমেছে।
ইহুদি ধর্ম : গত এক দশকে এর মাত্র ১০ লাখ জনসংখ্যা বেড়েছে। অন্যান্য ধর্ম (শিখ, বাহাই ইত্যাদি) সম্মিলিতভাবে প্রায় ২০ কোটি অনুসারী, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২.২ শতাংশ।
এই গবেষণাটি পরিষ্কারভাবে দেখায় যে, ইসলাম শুধু প্রাকৃতিকভাবে নয়, বৈশ্বিক ধর্মীয় পরিবর্তনের ধারাতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি, ধর্মহীনতা ও ধর্মত্যাগের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আগামী দশকে বিশ্ব ধর্মীয় মানচিত্রে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।