
গাজার ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধে বিশ্বকে এখনই পদক্ষেপ নিতে ইস্ট লন্ডন মসজিদ কর্তৃপক্ষের আহবান

গাজায় চলমান ভয়াবহতার জন্য গভীরভাবে মর্মাহত ইস্ট লন্ডন মসজিদ কর্তৃপক্ষ। গত মাসে ইসরায়েল একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি শেষ করার পর, যখন তারা চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়নে অস্বীকৃতি জানায়, তখন থেকে এক হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন । ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫১,০০০ মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
এই পরিস্থিতি অসহনীয়, অন্যায় এবং সম্পূর্ণ অবিচার । জাতিসংঘের ভাষায়, গাজা এখন একটি \"মৃত্যুর ফাঁদে\" পরিণত হয়েছে। কেবল রাফাহ অঞ্চল থেকেই সম্প্রতি ১ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যাদের অনেকেই ইতোমধ্যে একাধিকবার স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হয়েছে । চিকিৎসাকর্মী, মানবিক সহায়তা প্রদানকারীরা এবং সাংবাদিকদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে।
সর্বশেষ একটি নারকীয় ঘটনার মধ্যে, একটি চিহ্নিত মেডিকেল কনভয়কে লক্ষ্য করে ইসরায়েলের চালানো এক হামলায় ১৫ জন প্যালেস্টিনীয় প্যারামেডিক ও উদ্ধারকর্মীকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হয়েছে। শুরুতে ইসরায়েল দায় স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানায়, কিন্তু পরে প্রকাশিত ভিডিও প্রমাণ দেখায় যে ইসরায়েলের দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিল। এতে বিশ্বজুড়ে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে।
ইস্ট লন্ডন মসজিদ কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, গাজায় চলমান ধ্বংসযজ্ঞের বাইরেও আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে ওয়াশিংটনের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ইসরায়েলের চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মতবাদকে খোলাখুলিভাবে সমর্থন করছেন, যারা গাজা থেকে জনগণকে জোরপূর্বক উৎখাত করার আহ্বান জানাচ্ছে । এই ধরনের বক্তব্য শুধু উদ্বেগজনকই নয় বরং মারাত্মক হুমকিস্বরূপ, যা যুদ্ধাপরাধকে বৈধতা দিতে পারে এবং বিশ্বের অন্য স্বৈরশাসকদের অনুরূপ বর্বরতার সাহস যোগাতে পারে।
ইস্ট লন্ডন মসজিদ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের দুঃখ ও ক্ষোভের অংশীদার। কিন্তু আমরা কুরআনের এই বাণীতে বিশ্বাস রাখি-নিরাশ হওয়ার কিছু নেই । আমাদের ঈমান আমাদেরকে আশাবাদী থাকতে, কার্যকরভাবে কাজ করতে এবং অন্ধকারতম সময়েও ন্যায়ের পক্ষে অবিচল থাকতে শেখায়।
এই কারণেই আমরা আমাদের কমিউনিটি এবং বিবেকবান সকল মানুষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি: যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের আইনি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে যে সংস্থাগুলো কাজ করছে তাদের সমর্থন করুন। যেসব সংবাদমাধ্যম পক্ষপাতদুষ্ট ও অমানবিক সংবাদ কাভারেজ করছে তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করুন । আপনার স্থানীয় এমপির সঙ্গে যোগাযোগ করুন যাতে ব্রিটেন আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে এবং মানবাধিকার রক্ষার নীতিতে অবিচল থাকে । দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও বয়কট কর্মসূচিতে আপনার কণ্ঠকে আরও জোরদার করুন। মানবিক সহায়তার জন্য অনুদান প্রদান অব্যাহত রাখুন । আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করুন, যেন তিনি গাজার মানুষের কষ্ট লাঘব করেন, তাদের রক্ষা করেন, ধৈর্য ও বিজয় দান করেন এবং নির্যাতিতদের জীবনে ন্যায় ও শান্তি ফিরিয়ে আনেন।
আন্তর্জাতিক কমিউনিটির প্রতি আহবান
যদি আমরা গাজার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন রক্ষা করতে ব্যর্থ হই এবং এর জনগণের বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতা ও জাতিগত নিধনকে স্বাভাবিক করে তুলি, তবে আমরা সারা পৃথিবীতে নিপীড়ন ও নির্যাতনের জন্য দরজা খুলে দিচ্ছি। আজকের নীরবতা ভবিষ্যতের জন্য আমাদের সকলকে কষ্ট দেবে।
আমরা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ, যারা ন্যায়বিচার ও হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবীতে সোচ্চার ভুমিকা পালন করছেন, তাদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আহ্বান জানাই, গাজা শুধুই ধ্বংসস্তুপ নয় – এটি আমাদের প্রাণ, আমাদের পরিবার ও আশার প্রতীক। এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ হতেই হবে । বিশ্বকে এখনই কাজ করতে হবে – শুধু রক্তপাত বন্ধ করার জন্য নয় বরং এই অবস্থার পেছনের মূল কারণগুলো নির্মূল করতে হবে । ইসরায়েলের দীর্ঘকালীন অবৈধ দখলদারি, গাজার অবরোধ, এবং ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আমরা ফিলিস্তিদের পাশে ছিলাম, আজও পাশে আছি। তাদের কষ্ট, তাদের মর্যাদা ও স্বাধীনতার জন্য অটল সংগ্রামে আমরা সাথে আছি।