img

শেখ হাসিনার পক্ষে ববি শিক্ষকদের গোপন সভা ফাঁস, সমালোচনার ঝড়

প্রকাশিত :  ০৬:২১, ২১ এপ্রিল ২০২৫

শেখ হাসিনার পক্ষে ববি শিক্ষকদের গোপন সভা ফাঁস, সমালোচনার ঝড়

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) শিক্ষকদের একটি গোপন অনলাইন বৈঠকের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ অবলম্বন করেন এবং জুলাই আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। 

এ ঘটনায় শিক্ষাঙ্গনজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা, যার প্রভাব শিক্ষার্থীদের মধ্যেও পড়েছে।

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত প্রায় দেড় ঘণ্টার ওই জুম মিটিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে বৈঠকটি হয়। সম্প্রতি সেই ভিডিওটি ফাঁস হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, তারা যেকোনো মূল্যে সরকার পতনের প্রচেষ্টা রুখে দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সভাটি শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আজকের জরুরি সভার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবদুল বাতেন চৌধুরী।”

এরপর ড. বাতেন চৌধুরী বলেন, “দেশ এক সংকটকাল অতিক্রম করছে। এ সময়ে আমাদের সবাইকে নির্দিষ্ট অবস্থান নিতে হবে।” 

তিনি উল্লেখ করেন, ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে শেখ হাসিনার ভূমিকা রয়েছে, তাই তাঁর বিপক্ষে যাওয়া অকৃতজ্ঞতা। তিনি বলেন, ছাত্রদের এক দফা দাবির কোনো ভিত্তি নেই। আমি আন্দোলনকারীদের ঘৃণা করি ও তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করছি।’

ড. বাতেন চৌধুরী দাবি করেন, “আমরা সবাই আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিয়োগপ্রাপ্ত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হিসেবে আজ শেখ হাসিনার পক্ষে অবস্থান নেওয়ার সময় এসেছে।”

এ সময় একে একে অন্যান্য শিক্ষকরা শেখ হাসিনার পক্ষে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দেন। ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীন। তিনি বলেন, “আমাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত ছিল—কোনো শিক্ষার্থী যেন আহত, হয়রানির শিকার বা গুলিবিদ্ধ না হয়। আমরা এখনও সেই নীতিতে আছি।”

ড. মুহসিনের বক্তব্যের পর তাকে তোপের মুখে ফেলেন অন্যান্য শিক্ষকরা। বিশেষ করে ড. মো. খোরশেদ আলম, ড. মো. আব্দুল কাইয়ুম ও ড. মো. আবির তার বক্তব্যের প্রতিবাদে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান।

ভিডিওটিতে আরও দেখা যায়, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন দিল আফরোজ খানম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “গত দুদিন ধরে গলা ধরে আসছে, কিছু বলতে পারছিলাম না। আমি বিশ্বাস করি, এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই।”

সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি, উপাচার্য, রেজিস্ট্রারসহ বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। 

ভিডিওটি সম্প্রতি ফাঁস হলে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া।

শিক্ষা এর আরও খবর

img

সিরাজগঞ্জে ব্যবসায়ী হত্যার দায়ে ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশিত :  ১০:২২, ২০ মে ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১০:৩০, ২০ মে ২০২৫

সিরাজগঞ্জে নাজমুল ইসলাম নামে এক সবজি ব্যবসায়ীকে হত্যার দায়ে ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এসময় তাদের প্রত্যেককে আরও ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও ১ মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। 

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এম আলী আহমেদ আসামিদের অনুপস্থিতিতে এই রায় প্রদান করেন। 

মামলার আসামিরা সবাই পলাতক রয়েছে। 

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানার পারধুন্দিয় গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে খাজা মিয়া, হরিনাথপুর বিষপুকুর গ্রামের মৃত ময়েজ উদ্দিনের ছেলে মো. এনামুল, দরগাপাড়া গ্রামের মৃত মজিবর শেখের ছেলে মোজাহিদ, পারধুন্দিয়া গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে বসু, মাদারদহ পূর্বপাড়া গ্রামের আব্দুর রহমান প্রধানের ছেলে সাইদুল ইসলাম ও সাঘাটা থানার রামনগর গ্রামের নজরুল ইসলাম সরকারের ছেলে মিলন সরকার। 

অন্যদিকে ভিকটিম নওগাঁ জেলার বাসিন্দা। 

আদালত ও মামলা সূত্রে জানা যায়, নাজমুল ইসলাম নওগা জেলার চকগৌরী বাজার হতে সবজি কিনে ঢাকার বাইপাইল এলাকায় আড়তে বিক্রি করতেন। গত ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট দুপুরে সে একইভাবে ট্রাকে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পরের দিনে পরিবারের সাথে কথা হলেও রাত ১২টার দিকে নাজমুলের মোবাইল থেকে ভিকটিমের বউয়ের মোবাইল ফোনে কল করে জানানো হয় নাজমুলকে চন্দ্রা এলাকা হতে কিডন্যাপ করা হয়েছে এবং ৫০ হাজার টাকা পেলে ছেড়ে দিবে। 

পরবর্তীতে পরিবার নাজমুলের সাথে কথা বলতে চাইলেও বলতে দেওয়া হয়না। পরেরদিন ১২ তারিখ সকালে জানতে পারেন যে নাজমুলকে সিরাজঞ্জের সলঙ্গা থানা পুলিশ মৃত অবস্থায় পেয়েছে। খবর পেয়ে সলঙ্গা থানায় গিয়ে পরিবার তার মৃতদেহ সনাক্ত করেন এবং নাজমুলের বাবা আব্দুর রহমান বাদী হয়ে এই মামলার এজাহার দায়ের করেন। 

এই মামলায় মোট ৭ জন আসামি করা হয়। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ বিচারক দ্যা পিনাল কোড, ১৮৬০ এর ৩৬৪, ৩০২, ২০১ তৎসহ পঠিত ৩৪ ধারার অধীন চার্জ গঠন করেন। পরে একজনের মৃত্যু হলে মামলার বিচার চলাকালে তাকে এই মামলার দায় হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। 

ওই আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) শাকিল মোহাম্মদ শরিফুর হায়দার রফিক সরকার জানান, রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণের জন্য মোট ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য উপস্থাপন করে। সাক্ষ্য শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে দ্যা পিনাল কোড, ১৮৬০ এর ৩৯৬ তৎসহ পঠিত ৩৪ ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আজ এই রায় ঘোষণা করেন।