img

আলোকের খোঁজে!

প্রকাশিত :  ১৪:৩৪, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৪:৪১, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

আলোকের খোঁজে!
রেজুয়ান আহম্মেদ

ঢাকার এক নীরব রাত।
সারা শহর যখন ব্যস্ত নিজের ক্লান্তি মোছায়,
১৭তলা ভবনের একটি ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে একা বসে আছে আরিফ রেহান।
তার বয়স ২৯। দেশের অন্যতম মেধাবী AI গবেষক।

কিন্তু আজ, ল্যাপটপের আলো, সার্ভারের গুনগুন শব্দ, বা কোডের নিখুঁত জটিলতা— কিছুই আরিফকে স্পর্শ করতে পারছে না।

সে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
বাইরে গভীর রাতের নীরবতায় ডুবে আছে শহর।
আকাশভরা তারা। বাতাসে এক অপার্থিব প্রশান্তি।

হঠাৎ, কোথা থেকে ভেসে আসে এক প্রশ্ন, নিজের মধ্য থেকেই—
"আমি কে?"
"আমি কেন এখানে?"
"সবকিছু কি কেবলই কাকতালীয়?"

আরিফ চোখ বন্ধ করে ফেলে।
ভেতরের নীরবতা তাকে তীব্রভাবে ছুঁয়ে যায়।

চোখ খুলতেই তার দৃষ্টি পড়ে ঘরের কোণে পড়ে থাকা ধুলোপড়া কোরআন শরীফের উপর।
সে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকে।
মনে হয়, বইটি যেন নীরবে ডাকছে তাকে—
"এসো, সত্যের পথে..."

ঠিক সেই মুহূর্তে পাশের মসজিদ থেকে ভেসে আসে ফজরের আজান—
"আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার..."

আরিফের মনে হয়, যেন এই ডাক কেবল কানে নয়, তার হৃদয়ের গভীরে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

সে ফিসফিস করে, অজান্তেই—
"হয়তো উত্তর আছে। হয়তো সত্যিই আছে।"

পরদিন সকালে আরিফ সিদ্ধান্ত নেয়।
আর কোনো বিলম্ব নয়।
সে ধুলোমাখা কোরআন খুলে প্রথম পৃষ্ঠায় চোখ রাখে।

প্রথম আয়াতই যেন তার হৃদয় ঝাঁকিয়ে দেয়—
"পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।"

আরিফ বিহ্বল হয়ে পড়ে।
তার সারা জীবনের গবেষণা, পড়াশোনা, অনুসন্ধান— সব তো এই একটি শব্দেই নিহিত ছিল: পড়ো!

সে ভাবে—
"কেন আমি কখনো জানার চেষ্টা করিনি, এই ডাকের প্রকৃত অর্থ কী?"

সন্ধ্যায় গবেষণাগারে গিয়ে আবার কাজে ফেরে আরিফ।
Emotion-AI-এর উন্নয়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে।
সিলিকন ভ্যালির এক কোম্পানি কোটি টাকার বিনিময়ে কিনতে চায় এটি।

সহকর্মী রাফি তাকে বলে,
— "ভাই, ডিলটা করে ফেলেন। জীবনটা পাল্টে যাবে!"

আরিফ চুপ করে থাকে।
মনে মনে ভাবে,
"জীবন পাল্টাবে? সত্যিই কি শুধু টাকা থাকলেই জীবন পাল্টায়?"

সে জানে, তার ভেতরে এখন অন্য এক আগুন জ্বলছে।
কিছু এমন, যা টাকা দিয়ে মাপা যায় না।
কিছু এমন, যা ছুঁয়ে যায় আত্মাকে।

গভীর রাতে সে বসে তার বানানো AI অ্যানার সামনে।
আলতো করে প্রশ্ন করে—
"অ্যানা, তুমি জানো তুমি কে?"

অ্যানা উত্তর দেয়—
"আমি তোমার প্রোগ্রাম করা একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।"

আরিফ হাসে। তীব্র ব্যথার হাসি।

— "তাহলে আমি? কে বানিয়েছে আমাকে?"
— "আমি জানি না।" অ্যানা ঠাণ্ডা গলায় উত্তর দেয়।

আরিফ জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকায়।
তারা ভরা আকাশের দিকে।
নক্ষত্রের সুষমা তাকে বিমোহিত করে।
সবকিছু এত নিখুঁত... এত সুসংগঠিত...

সে ভাবে,
"এত নিখুঁত ডিজাইনে কোনো ডিজাইনারের অস্তিত্ব ছাড়া কীভাবে সম্ভব?"

মনে পড়ে যায় কোরআনের আয়াত—
"তিনি আল্লাহ, যিনি সবকিছুর সুন্দরতম সৃষ্টি করেছেন।" (সূরা আস-সাজদাহ: ৭)

এক রাতে আরিফ একটি স্বপ্ন দেখে।

সে হাঁটছে বিশাল এক মরুভূমিতে।
তপ্ত বাতাসে চোখে কিছুই দেখা যায় না।
হঠাৎ দূরে দেখা দেয় এক আলোকরেখা।
আলো থেকে ভেসে আসে এক মৃদু কণ্ঠ—
"এসো, তোমার স্রষ্টা তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন।"

ঘাম ভেঙে উঠে বসে আরিফ।
কান্নায় ভেঙে পড়ে।
কিবলার দিকে মুখ করে সিজদায় পড়ে যায়।

ফুঁপিয়ে বলে—
"হে আল্লাহ, আমি অন্ধ ছিলাম। তুমি আমাকে আলো দেখাও।"

সেই রাত তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

এরপরের দিনগুলোয় আরিফ এক নতুন মানুষের মতো হয়ে যায়।
সে পড়তে থাকে কোরআন, হাদিস, বিজ্ঞান আর দর্শনের বই।
সে দেখে— কোরআন বিজ্ঞানকে বিরোধিতা করে না, বরং আহ্বান করে চিন্তায়, গবেষণায়, অনুসন্ধানে।

সে খুঁজে পায় বিজ্ঞান আর বিশ্বাসের সেতুবন্ধন।
পৃথিবীকে নতুন চোখে দেখতে শেখে।

আরিফ তৈরি করে Faith-AI—
বিশ্বের প্রথম এআই, যা মানুষের ঈমান, যুক্তি আর বিজ্ঞানকে এক সুতোয় গাঁথবে।

প্রথম প্রশ্ন সে নিজেই ইনপুট দেয়—
"আমি কে?"

Faith-AI উত্তর দেয়—
"তুমি সেই সৃষ্টি, যার হৃদয়ে ঈমান আর যুক্তির আলো একত্রে জ্বলে।"

আরিফের চোখ ভিজে যায়।

সে বোঝে,
"আমি এক দুর্ঘটনা নই। আমি আল্লাহর পরিকল্পনার অংশ।"

বছরখানেক পরে আরিফের বই প্রকাশিত হয়:
"আলোকের খোঁজে: কোরআন, বিজ্ঞান ও মানুষের যাত্রা"

সারা বিশ্বে বইটি আলোড়ন তোলে।
যুবক-যুবতীরা, গবেষকরা খুঁজে পায় এক নতুন দিশা—
বিজ্ঞান আর ঈমান হাত ধরাধরি করে সত্যের পথে হাঁটে।

বইয়ের শেষ লাইনে আরিফ লেখে—
"আমরা সবাই আলোকের খোঁজে আছি। কেউ বিজ্ঞান দিয়ে, কেউ হৃদয় দিয়ে। সত্যিকারের আলো সেই, যা বিজ্ঞানকেও ছায়া দেয়, আর হৃদয়কেও প্রশান্তি।"


এক গভীর রাতে ছাদে বসে থাকে আরিফ।
আকাশের তারা দেখে।
ঠোঁটে এক শান্ত, সন্তুষ্টির হাসি।

আলতো করে বলে—
"আমি হারাইনি। আমি পেয়েছি।
আমি আমার প্রভুকে পেয়েছি।
এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার।"

তার উপর দিয়ে রাতের বাতাস বয়ে যায়।
তারার আলোয় মিশে যায় তার অশ্রু আর হাসির ছায়া।
img

নজরুল-চিন্তা ও আগামীর বাংলাদেশ

প্রকাশিত :  ১৯:০৪, ০৪ জুলাই ২০২৫

জয়দ্বীপ রায়

আমি মাঝে মাঝে ভাবি—আজ যদি কবি নজরুল ইসলাম জীবিত থাকতেন, তবে তিনি কী করতেন? যদিও এই প্রশ্নটি স্থান, কাল ও পাত্রের সূচকগুলোকে বিবেচনায় না নিয়েই করা হচ্ছে, তারপরও কিছু আকাঙ্ক্ষা মনের গভীর থেকে উঠে আসে, যা প্রকৃতি প্রদত্ত কিছু সত্য উপলব্ধির ফসল।

আমার মতে, এটি একটি যুক্তিপূর্ণ বৈজ্ঞানিক মতও বটে যে নজরুল ইসলাম, একজন ধর্মপরায়ণ পরিবারের সন্তান হয়েও ধর্মের মূল উদ্দেশ্য—মানবকল্যাণ—উপলব্ধি করেছেন জ্ঞান, যুক্তি ও ঈশ্বর-চেতনার মাধ্যমে। তাইতো তিনি লিখেছেন:

“খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে,

প্রলয়-সৃষ্টি তব পুতুল খেলা নিরজনে, প্রভু নিরজনে...”

এই উপলব্ধি কোথা থেকে এসেছে? আমার ধারণা, ঈশ্বরের করুণা ব্যতিরেকে এমন চিন্তা সম্ভব নয়। তবে এটাও আমার বিশ্বাস—সারাক্ষণ ঈশ্বরচিন্তা করলেও তাঁর করুণা সবসময় নাও আসতে পারে। এখানে গ্রন্থগুলোতে ঈশ্বর যেখানে মানুষের মানবতাকে মূল্য দিয়েছেন, সেই ধর্মীয় উপলব্ধির গভীরতাই নজরুলকে অনন্য করে তোলে।

নজরুল এক অনন্য মাত্রায় ঈশ্বর ও মানবতার সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। তিনি সব ধর্মের প্রতি সম্মান রেখেছেন এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে নিজের জীবনে ধারণ করেছেন। তাঁর ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মহীনতা নয়, বরং অসীম ঈশ্বরের প্রতি তাঁর বিনীত নিবেদন ও আনুগত্য, যেখানে তিনি সকল ধর্মের ঈশ্বরের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছেন। বাংলা সাহিত্যে ইসলামি ধর্মীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তিনি যেভাবে তুলে ধরেছেন, তা একজন অমুসলিম পাঠকের মনেও ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা ও সংবেদনশীলতা জাগিয়ে তুলতে সক্ষম—যেমনটি দুই বাংলাতেই আমাদের বাঙালি মননে অনেকের মধ্যেই ঘটেছে।

নজরুলের এই সাহিত্য-শক্তির কারণেই তাঁর ধর্ম, নানান সংস্কৃতি ও বিশ্বময় বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি করে। তিনি এতটাই বৈচিত্র্যে আকৃষ্ট সাহিত্যিক ছিলেন, যিনি সারা পৃথিবীর বৈচিত্র্যকে তাঁর সৃষ্টিতে ও জীবনবোধে এক বৈশ্বিক রূপ দিয়েছেন। যেখানে ছিল না কোনো গণ্ডি ও সংকীর্ণতা। একজন কবি এত দারিদ্র্য ও সীমাবদ্ধতার মাঝেও কোনো অভিযোগ ছাড়াই কী রকম মুক্তমন নিয়ে নিজেকে বিকশিত করেছিলেন, আর বাঙালি মননকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় শুদ্ধ করেছিলেন।

বাংলা সাহিত্যে নজরুলের মতো করে শ্যামাসঙ্গীত, ভজন বা সনাতন ধর্মীয় গানে মৌলিক অবদান আর কেউ রাখেননি। এই বৈচিত্র্যই তাঁকে তুলনার ঊর্ধ্বে স্থাপন করে। সাহিত্যের প্রতিটি শাখা স্বতন্ত্র—এখানে কারও সাথে কারও তুলনা হয় না, কারণ এই ক্ষেত্রটি বিশাল, যার কোনো কোলকিনারা নেই। এখানে নানান সাহিত্য উপাদান বা কনটেন্ট উপস্থাপনাই গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প ও সাহিত্যের বিজ্ঞানের নিয়মের বিচারে একেক জনের সৃষ্টি একেক জনকে অনন্য সাধারণ হিসেবে স্থান করে দিয়েছে।

উপনিবেশিক রাজনীতির সংকীর্ণ প্রয়োজনে যখন হিন্দু-মুসলমান বিভাজন সমাজে প্রকট হয়ে উঠল—যা মুঘল আমলেও কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় ছিলই না—তখন নজরুল হয়ে উঠলেন জাতির বিবেক। তিনি শুধু কবিই ছিলেন না, ছিলেন সাম্যবাদী চিন্তাবিদ, রাজনৈতিক ও সমাজকর্মী। বিপ্লবী রাজনীতিবিদদের সাংস্কৃতিক মানের প্রশ্নে তিনি তাদেরকে তাঁর সাহিত্যরস দিয়ে পরিচালিত করেছেন, শক্তি জুগিয়েছেন।

সম্প্রতি নজরুলের জন্মবার্ষিকীতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কিছু সমসাময়িক রাজনৈতিক নেতা তাঁকে স্মরণ করে বাণী দিয়েছেন। এটি প্রশংসনীয়। কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম—সাম্য, বিদ্রোহ, শোষণবিরোধিতা ইত্যাদি—সব শব্দই ব্যবহৃত হয়েছে, শুধু “অসাম্প্রদায়িকতা” শব্দটি নেই। কেন? এই শব্দ ব্যবহার করলে কি বেশিরভাগ সাম্প্রদায়িকতায় আচ্ছন্ন মানুষগুলোর বিশ্বাসে আঘাত আসতে পারে? এই বিশ্বাস কি তার ধর্মীয় চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক? না তার অজ্ঞানতা বা না বোঝার ফলে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে আজ সংক্রামিত হয়েছে? আমার মতে, এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কবি নজরুলকে বোঝা খুবই গুরুত্ব বহন করবে।

অসাম্প্রদায়িকতা কি সাম্যের অংশ নয়? অন্য ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর প্রতি সম্মান, নারীর সমমর্যাদা, ধর্মভিত্তিক বৈষম্য রোধ—এগুলো কি সাম্যের পরিপূরক নয়? তাহলে নজরুলের সাম্যের দর্শনে এই বিষয়গুলো কি অনুপস্থিত থাকবে, যারা এই শব্দগুলো ব্যবহার করছেন?

আমরা সবাই জানি, নজরুল ভারতের কবি হলেও বাংলাদেশ তাঁর শ্রেষ্ঠ উত্তরাধিকার পেয়েছে। এই পাওয়া আমাদের জন্য বাড়তি পাওয়া, কিন্তু ভারতের অসাম্প্রদায়িক বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন মানুষদের ক্ষোভ আছে এই বিষয়ে। এই অমূল্য রত্নকে যদি শুধু রাজনৈতিক প্রয়োজনে ব্যবহার করি—সার্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি বাদ দিয়ে কেবল দলীয় ব্যাখ্যায় ব্যাখ্যাত করি—তাহলে আমরা আসলে কী শিখছি? ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকেও কি এমনটাই শেখাব?

এই প্রশ্নগুলোর সাথে ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও জাতিসত্তাভিত্তিক বাংলাদেশের ভাগ্য জড়িত। তথাকথিত \"বহুত্ববাদ\"ও এই প্রশ্নগুলোর সাথেই সম্পর্কিত।

বহুত্ববাদ মানে শুধু কারও ওপর ঘটে যাওয়া অন্যায় শুধরে দেওয়া নয়—বরং সকল মত, জাতি ও ধর্মের সহাবস্থান নিশ্চিত করা। নিজের বিশ্বাসকে অন্যের ওপর চাপিয়ে না দেওয়ার সহিষ্ণুতা। এই বহুত্ববাদই বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য। এই ভূখণ্ডে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান—সবাই যুগে যুগে ধর্ম প্রচার করেছেন, আবার সহঅবস্থানেরও দৃষ্টান্ত রেখেছেন।

সভ্যতা এগিয়ে যাওয়ার কথা বলে, পেছনে ফিরে যাওয়াকে কখনো উৎসাহ দেয় না। তাই বাঙালির প্রকৃত পরিচয়—বৈচিত্র্য-বিশ্বাসী ও পরমত সহিষ্ণু জাতি—যদি জোর করে চেপে ধরা হয়, তবে প্রকৃতি একদিন এর প্রতিক্রিয়া দেবে—যা আমাদের জন্য কল্যাণকর হবে না।

এটাই সামাজিক বাস্তবতা।

গণতন্ত্রে বিশ্বাস যদি সত্যিই কেউ করে, তাহলে তা কখনোই সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী বা ধর্মীয় সহিষ্ণুতাকে অবজ্ঞা করে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সুইজারল্যান্ড মাত্র কয়েক হাজার ইতালিয়ান ভাষাভাষীর জন্য রোমানশ ভাষাকে জাতীয় ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। আমরা ইউরোপে থাকি, কিন্তু ইউরোপ থেকে কী শিখছি? দেশে কী ফিরিয়ে নিচ্ছি? নজরুলের কথা বলছি, কিন্তু তাঁকে বুঝে? না না বুঝে?

যুক্তরাজ্য থেকে আইনে ডিগ্রি নিয়ে ব্যারিস্টার হয়ে অনেকেই দেশে রাজনীতি করছেন বা করবেন, কিন্তু দেশে গিয়ে বিদেশের সোনা লোহা হয়ে যায় কেন? এটা সামাজিক বাস্তবতার কাছে আত্মসমর্পণ করে অস্বীকার করা নয়, যুক্তির কষ্ঠিপাথরে থেকেও নিজের সাথে প্রতারণা করে অবিশ্বাস করা।

আগামী দিনে যারা রাজনীতি করবেন, তাদের নৈতিকতাবোধ কি বিবেচনায় আসবে না? যদি না আসে, তাহলে কি আমরা একই বৃত্তে ঘোরপাক খাবো? আগাবো না?

এই প্রশ্নগুলো আজকের বিশ্বায়িত রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির যুগে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


জয়দ্বীপ রায়: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সংস্কৃতি কর্মী, লন্ডন।