img

নবীগঞ্জে বিএনপির সাবেক এমপির ওপর দিনে হামলা, রাতে বাসায় আগুন

প্রকাশিত :  ১২:৪৭, ০২ মে ২০২৫

নবীগঞ্জে বিএনপির সাবেক এমপির ওপর দিনে হামলা, রাতে বাসায় আগুন

হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ সুজাত মিয়ার ওপর একদিনে দুটি পৃথক ঘটনা ঘটেছে—দুপুরে হামলা ও রাতে বাসায় অগ্নিকাণ্ড। বিএনপি নেতাকর্মীরা একে পরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করেছেন। পুরো নবীগঞ্জজুড়ে এ ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১ মে) আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে নবীগঞ্জ-হবিগঞ্জ সড়কের তিমিরপুর এলাকায় নবীগঞ্জ উপজেলা শ্রমিক দলের উদ্যোগে আয়োজিত র‍্যালি ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন শেখ সুজাত মিয়া। অনুষ্ঠান শেষে দুপুরের দিকে গাড়িতে ওঠার সময় হঠাৎ করে মৃত আহমদ মিয়ার ছেলে ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা জামির হোসেনসহ কয়েকজন যুবক দেশীয় অস্ত্র ও পিস্তল নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। শেখ সুজাত মিয়ার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তুললে হামলাকারীরা পালানোর চেষ্টা করে।

খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি মো. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হামলাকারী জামিরকে অস্ত্রসহ আটক করে। এ ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা দেখা দেয়। শেখ সুজাত দাবি করেন, ‘এই হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। আমাকে টার্গেট করেই অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়েছে।’

হামলার প্রতিবাদে বিকালেই নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে মিছিলটি নতুন বাজার মোড়ে গিয়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। এ সময় বক্তারা হামলার নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান।

ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর, রাত আনুমানিক ১১টার দিকে শেখ সুজাত মিয়ার নবীগঞ্জ শহরের হাসপাতাল সড়কের আক্রমপুর এলাকার নিজ বাসায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুন লাগে বাড়ির পেছনের একটি পরিত্যক্ত কক্ষে, যেখানে কেউ বসবাস করতেন না। আগুনে কিছু আসবাবপত্রের ক্ষয়ক্ষতি হয়।

স্থানীয়দের চিৎকারে দ্রুত আশপাশের মানুষ এগিয়ে এসে আগুন নেভাতে চেষ্টা করে। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি মো. কামাল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছি। আগুন কীভাবে লেগেছে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত চলছে।’

সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া এ বিষয়ে বলেন, ‘গতকালই আমার ওপর হামলা হয়েছে, আর আজ রাতে বাসায় আগুন লাগানো হলো। এটি নিঃসন্দেহে একটি ধারাবাহিক ও পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। আমার পরিবার আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।’

এ দুটি ঘটনায় নবীগঞ্জ ও এর আশপাশে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

সিলেটের খবর এর আরও খবর

img

কুলাউড়ায় স্কুল ছাত্রী হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, ঘাতক গ্রেফতার ও আলামত উদ্ধার

প্রকাশিত :  ১২:৫৮, ১৭ জুন ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১২:৫৯, ১৭ জুন ২০২৫

সংগ্রাম দত্ত: মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায় স্কুল ছাত্রী নাফিসা জান্নাত আনজুম (১৫) হত্যায় প্রতিবেশী মো: জুনেল মিয়াকে (৩৯) গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া আসামির দেখানো মতে এবং পুলিশের তল্লাশীকালে হত্যাকাণ্ডের আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা ভিকটিমের পরিহিত বোরকা, স্কুল ব্যাগ, বই ও একটি জুতা উদ্ধার করে পুলিশ। 

সোমবার (১৬ জুন ) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে  মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন এসব তথ্য গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে তুলে ধরেন।

গত ১২ জুন সকালে কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের আব্দুল খালিকের কন্যা এবং স্থানীয় শ্রীপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী নাসিফা জান্নাত আনজুম (১৫) 
কোচিং ক্লাসে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় । এরপর সে আর ফিরে আসেনি। সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ নিয়েও তাকে না পেয়ে স্বজনরা ঐ দিনই কুলাউড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ।

নিখোঁজের দুই দিন পর ১৪ জুন বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে বাড়ির পাশের ছড়ার পাশে দূর্গন্ধ পেয়ে ভিকটিমের ভাই ও মামা অর্ধগলিত মরদেহটি খুঁজে পান এবং পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে লাশের সুরতহাল প্রস্তুত করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় থানায় ভিকটিমের পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়। 

ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) নোবেল চাকমা, কুলাউড়া সার্কেলের (অতিঃ দায়িত্বে) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আজমল হোসেন, কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ গোলাম আপছার, পুলিশ পুরিদর্শক সুদীপ্ত শেখর ভট্টাচার্যসহ একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। 

দ্রুততম সময়ে ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল (অতিঃ দায়িত্বে কুলাউড়া সার্কেল) নেতৃত্বে কুলাউড়া থানার অফিসারদের নিয়ে কয়েকটি বিশেষ টিম গঠন করে আশেপাশের বাপক তল্লাশী করা হয়। এসময় ঘটনাস্থলের পাশে একটি ঝোপ থেকে ভিকটিমের স্কুল ব্যাগ, বই এবং একটি জুতা উদ্ধার করা হয়। 

শুধু স্থানীয় লোকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিশেষ ৬টি টিম গঠন করা হয়। স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, আলামত উদ্ধারের জাগো এবং নারী ঘটিত কিছু বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্টতা দেখে সন্দেহ হওয়ায় জুনেল মিয়াকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তার মোবাইল চেক করে পর্ন সাইটে ব্রাউজিং এর তথ্য দেখে পুলিশের সন্দেহ আরও বাড়ে। আটকের পর দুপুর থেকে রাত প্রায় ১২ টা পর্যন্ত জুনেল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।  জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে পুলিশ সুপারের সামনে রাত ১২ টার দিকে হত্যাকাণ্ডে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে। 

জিজ্ঞাসাবাদের জুনেল মিয়া জানায়, ভিকটিম তার বাড়ির সামনের একটি রাস্তা দিয়ে প্রায়ই স্কুল ও প্রাইভেটে আসা যাওয়া করত। সেই সুবাদে জুনেল মিয়া ভিকটিমের সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করে ঘটনার দিন গত ১২জুন ভিকটিম পাশের গ্রামে প্রাইভেট পড়া শেষে আসামীর বাড়ীর সামনের রাস্তা দিয়ে ফেরার পথে সকাল অনুমান ১০.৩০ ঘটিকার সময় আসামী ভিকটিমের সাথে কথা বলতে বলতে তার পিছু নেয়। ভিকটিম এড়িয়ে যেতে চাইলে জুনেল মিয়া ভিকটিমকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। তখন ভিকটিম চিৎকার করলে জুনেল মিয়া তার হাত দিয়ে গলায় চাপ দিয়ে ধরলে ভিকটিম ঘটনাস্থল কিরিম শাহ মাজারের মধ্যের রাস্তায় অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর ভিকটিমকে মোকাম সংলগ্ন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়ার পাড়ে ঝোপে ফেলে রাখে। 

মোকামের মাঠে পড়ে থাকা ভিকটিমের স্কুল ব্যাগ ও একটি জুতা ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী ঘন ঝোপে  এবং ভিকটিমের পরিহিত বোরকাটি নিকটবর্তী কিরিম শাহ মাজারের উত্তর পাশে জনৈক রওশন আলী গংয়ের পারিবারিক কবরস্থানের সীমানা বাউন্ডারীর পাশে ছুড়ে ফেলে দেয়। পুলিশ আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার দিবাগত রাতে স্থানীয় লোকজন এবং মিডিয়ার উপস্থিতিতে ভিকটিমের সেই বোরখা উদ্ধার করে।

সিলেটের খবর এর আরও খবর