img

বিশ্বনাথে এক সন্তানের জনকের মিথ্যা প্রেমের ফাঁদে সব হারালেন কিশোরী, প্রেমিক গ্রেপ্তার

প্রকাশিত :  ০৬:৪৭, ০৬ মে ২০২৫

বিশ্বনাথে এক সন্তানের জনকের মিথ্যা প্রেমের ফাঁদে সব হারালেন কিশোরী, প্রেমিক গ্রেপ্তার

নিজের আসল পরিচয় গোপন করে ১৭ বছর বয়সী কিশোরীর সাথে দীর্ঘদিন প্রেম করে, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জোরপূর্বক প্রেমিকা কিশোরীকে ধর্ষণ করার অভিযোগে ধর্ষিতার পিতার দায়ের করা মামলায় প্রতারক প্রেমিক মোজাহিদ আলী (৩০) নামের এক সন্তানের জনককে গ্রেপ্তার করেছে সিলেটের বিশ্বনাথ থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত মোজাহিদ বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের দশপাইকা গ্রামের নজিবুল্লাহ’র পুত্র। তার বিরুদ্ধে থানায় দায়ের করা মামলা নং ৩ (তাং ৪.০৫.২৫ইং)।

পুলিশ ও স্থানীয় জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যার দিকে ধর্ষণের শিকার হওয়া কিশোরীর পিতার মামলা দায়েরের পর ওই রাতেই অভিযান পরিচালনা করে ধর্ষণ মামলার একমাত্র অভিযুক্ত মোজাহিদ আলীকে তার নিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত মোজাহিদ আলী ব্যক্তিগত জীবনে দুটি বিবাহ করেছেন। প্রথম বিবাহের পর এক কন্যা সন্তানের পিতা হন মোজাহিদ আলী এবং বর্তমানে ঘরে তার দ্বিতীয় স্ত্রীও রয়েছেন।

 মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের মিরেরগাঁও-চাঁনপুর গ্রামস্থ নানার বাড়িতে আসা যাওয়ার পথিমধ্যে গ্রেপ্তারকৃত মোজাহিদ আলীর সাথে পরিচয় হয় ধর্ষণের শিকার হওয়া কিশোরীর। ওই পরিচয়ের সূত্রে ধরেই উভয়ের মধ্যে নিজেদের মোবাইল নাম্বার আদান-প্রদান হয়। চলে কথাবার্তা। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সেই প্রেমের সূত্র ধরে গত ৩.০৫.২৫ইং তারিখ বিকেল ৩টার দিকে কিশোরীকে বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে কৌশলে বেড়াতে নিয়ে যায়। মোজাহিদ এরপর নিজের চালিত সিএনজিতে ওই কিশোরীকে নিয়ে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ঘুরাঘুরি করে। এরপর ওই দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে গ্রেপ্তারকৃত মোজাহিদ আলীকে কিশোরীকে তার (মোজাহিদ) বসতঘরের পূর্ব দিকের একটি কক্ষে নিয়ে বাদীর কন্যাকে (ওই কিশোরী) বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বকভাবে একাধিকবার ধর্ষণ করে। পরদিন (৪ মে) সকাল ৯টার দিকে গ্রেপ্তারকৃত মোজাহিদ আলী নিজের চালিত সিএনজি যোগে বাদীর কন্যাকে তার (বাদী) বাড়ির সামনের রাস্তার ফেলে যায়। এরপর কিশোরীর কাছ থেকে ঘটনাটি শুনে এলাকার স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের অবহিত করে থানায় এসে মামলা দায়ের করেছেন বাদী।

মামলার বাদী স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রতারক মোজাহিদ আলী আমার কন্যার কাছে নিজের আসল নাম পরিচয় গোপন করে ছিলো। তার নাম মোজাহিদ হওয়ার পরও সে বলে ছিলো জুবায়ের। এরপর পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে প্রতারক মোজাহিদ আলীর আসল পরিচয়।

কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় মামলা দায়ের ও অভিযুক্ত মোজাহিদ আলী গ্রেপ্তারের সত্যতা স্বীকার করেন বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এনামুল হক চৌধুরী বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মোজাহিদ আলীকে আজ (সোমবার) আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

সিলেটের খবর এর আরও খবর

img

কুলাউড়ায় স্কুল ছাত্রী হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, ঘাতক গ্রেফতার ও আলামত উদ্ধার

প্রকাশিত :  ১২:৫৮, ১৭ জুন ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১২:৫৯, ১৭ জুন ২০২৫

সংগ্রাম দত্ত: মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায় স্কুল ছাত্রী নাফিসা জান্নাত আনজুম (১৫) হত্যায় প্রতিবেশী মো: জুনেল মিয়াকে (৩৯) গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া আসামির দেখানো মতে এবং পুলিশের তল্লাশীকালে হত্যাকাণ্ডের আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা ভিকটিমের পরিহিত বোরকা, স্কুল ব্যাগ, বই ও একটি জুতা উদ্ধার করে পুলিশ। 

সোমবার (১৬ জুন ) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে  মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন এসব তথ্য গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে তুলে ধরেন।

গত ১২ জুন সকালে কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের আব্দুল খালিকের কন্যা এবং স্থানীয় শ্রীপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী নাসিফা জান্নাত আনজুম (১৫) 
কোচিং ক্লাসে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় । এরপর সে আর ফিরে আসেনি। সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ নিয়েও তাকে না পেয়ে স্বজনরা ঐ দিনই কুলাউড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ।

নিখোঁজের দুই দিন পর ১৪ জুন বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে বাড়ির পাশের ছড়ার পাশে দূর্গন্ধ পেয়ে ভিকটিমের ভাই ও মামা অর্ধগলিত মরদেহটি খুঁজে পান এবং পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে লাশের সুরতহাল প্রস্তুত করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় থানায় ভিকটিমের পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়। 

ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) নোবেল চাকমা, কুলাউড়া সার্কেলের (অতিঃ দায়িত্বে) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আজমল হোসেন, কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ গোলাম আপছার, পুলিশ পুরিদর্শক সুদীপ্ত শেখর ভট্টাচার্যসহ একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। 

দ্রুততম সময়ে ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল (অতিঃ দায়িত্বে কুলাউড়া সার্কেল) নেতৃত্বে কুলাউড়া থানার অফিসারদের নিয়ে কয়েকটি বিশেষ টিম গঠন করে আশেপাশের বাপক তল্লাশী করা হয়। এসময় ঘটনাস্থলের পাশে একটি ঝোপ থেকে ভিকটিমের স্কুল ব্যাগ, বই এবং একটি জুতা উদ্ধার করা হয়। 

শুধু স্থানীয় লোকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিশেষ ৬টি টিম গঠন করা হয়। স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, আলামত উদ্ধারের জাগো এবং নারী ঘটিত কিছু বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্টতা দেখে সন্দেহ হওয়ায় জুনেল মিয়াকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তার মোবাইল চেক করে পর্ন সাইটে ব্রাউজিং এর তথ্য দেখে পুলিশের সন্দেহ আরও বাড়ে। আটকের পর দুপুর থেকে রাত প্রায় ১২ টা পর্যন্ত জুনেল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।  জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে পুলিশ সুপারের সামনে রাত ১২ টার দিকে হত্যাকাণ্ডে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে। 

জিজ্ঞাসাবাদের জুনেল মিয়া জানায়, ভিকটিম তার বাড়ির সামনের একটি রাস্তা দিয়ে প্রায়ই স্কুল ও প্রাইভেটে আসা যাওয়া করত। সেই সুবাদে জুনেল মিয়া ভিকটিমের সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করে ঘটনার দিন গত ১২জুন ভিকটিম পাশের গ্রামে প্রাইভেট পড়া শেষে আসামীর বাড়ীর সামনের রাস্তা দিয়ে ফেরার পথে সকাল অনুমান ১০.৩০ ঘটিকার সময় আসামী ভিকটিমের সাথে কথা বলতে বলতে তার পিছু নেয়। ভিকটিম এড়িয়ে যেতে চাইলে জুনেল মিয়া ভিকটিমকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। তখন ভিকটিম চিৎকার করলে জুনেল মিয়া তার হাত দিয়ে গলায় চাপ দিয়ে ধরলে ভিকটিম ঘটনাস্থল কিরিম শাহ মাজারের মধ্যের রাস্তায় অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর ভিকটিমকে মোকাম সংলগ্ন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়ার পাড়ে ঝোপে ফেলে রাখে। 

মোকামের মাঠে পড়ে থাকা ভিকটিমের স্কুল ব্যাগ ও একটি জুতা ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী ঘন ঝোপে  এবং ভিকটিমের পরিহিত বোরকাটি নিকটবর্তী কিরিম শাহ মাজারের উত্তর পাশে জনৈক রওশন আলী গংয়ের পারিবারিক কবরস্থানের সীমানা বাউন্ডারীর পাশে ছুড়ে ফেলে দেয়। পুলিশ আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার দিবাগত রাতে স্থানীয় লোকজন এবং মিডিয়ার উপস্থিতিতে ভিকটিমের সেই বোরখা উদ্ধার করে।

সিলেটের খবর এর আরও খবর