নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সিদ্ধিরগঞ্জের মিনারুল হত্যা মামলায় শুনানি শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।
আজ শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাইনুদ্দিন কাদেরের আদালত এ নির্দেশ দেন।
নারায়ণগঞ্জের কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. কাইয়ুম খান জানান, সাবেক মেয়র আইভীকে মিনারুল হত্যা মামলায় আদালতে হাজির করা হয়েছিল। আদালত মামলার শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি ২৬ মে হবে।
শুক্রবার ভোর ৩টার দিকে শহরের দেওভোগ এলাকায় অবস্থিত চুনকা কুটির থেকে আইভীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তবে তিনি দিনের আলো দেখার পর পুলিশের সঙ্গে যাবেন ঘোষণা দিয়ে সকাল সাড়ে ৫ টায় পুলিশের গাড়িতে করে থানার উদ্দেশ্যে বাড়ি ত্যাগ করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে পুলিশের একটি দল শহরের দেওভোগ এলাকায় অবস্থিত আইভীর বাড়ি চুনকা কুটিরে প্রবেশ করেন। এসময় আইভীর গ্রেপ্তারের খবরে স্থানীয় বাসিন্দারা ও তার নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে আসলে পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এসময় আইভীর বাড়ির দিকে যাওয়ার চারটি রাস্তায় বাঁশ, ঠেলাগাড়ি, ভ্যানগাড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও আইভীর সমর্থকরা। আশেপাশের এলাকার মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সকলকে আইভীর বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয়ার আহ্বান জানান তারা।
প্রকাশিত :
১৩:৪৭, ১৩ জুলাই ২০২৫ সর্বশেষ আপডেট: ১৪:২৪, ১৩ জুলাই ২০২৫
রাজনৈতিক উদ্দেশে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার অপব্যবহার ঠেকাতে নতুন বিধান প্রণয়নে সম্মত হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। আজ রোববার (১৩ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের সংলাপের দ্বাদশ দিনে এই ঐকমত্যে পৌঁছায় দলগুলো।
জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিষয়ে সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১৪১(ক) এর ১ নম্বর ধারায় বর্তমানে উল্লেখ রয়েছে- যদি রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয়, যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ কিংবা অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের কারণে বাংলাদেশ বা তার কোনো অংশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন হুমকির মুখে পড়েছে, তবে তিনি অনধিক ৯০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন। তবে এই ঘোষণা দেওয়ার আগে মন্ত্রিসভার লিখিত অনুমোদন বাধ্যতামূলক হবে। বর্তমান সংবিধানে এই সময়সীমা ১২০ দিন।
প্রস্তাবনায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, জরুরি অবস্থা ঘোষণার বৈধতার শর্ত হিসেবে পূর্বে যে ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর’ প্রয়োজনীয় ছিল, তা পরিবর্তন করে ‘মন্ত্রিসভার সম্মতি’ গ্রহণের বিধান যুক্ত করা হবে।
এই বিষয়ে ৭ ও ১০ জুলাই অনুষ্ঠিত আলোচনার ভিত্তিতে রোববারের সংলাপে সিদ্ধান্ত হয়, ১৪১(ক) অনুচ্ছেদে ব্যবহৃত ‘অভ্যন্তরীণ গোলযোগ’ শব্দটি বাদ দিয়ে তার পরিবর্তে ‘রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা, মহামারি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত হুমকি’- এই শব্দগুলো অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
জরুরি অবস্থার সময় নাগরিকের দুটি মৌলিক অধিকারকে অলঙ্ঘনীয় হিসেবে বিবেচনায় আনার বিষয়ে সংলাপে গুরুত্বারোপ করা হয়। সংবিধানের ৪৭(৩) ধারা অনুযায়ী, জরুরি অবস্থার সময়েও কোনো নাগরিকের জীবনধিকার এবং নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক ও মর্যাদাহানিকর আচরণ বা শাস্তি থেকে মুক্ত থাকার অধিকার খর্ব করা যাবে না।
জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এই বিষয়ে মন্ত্রিসভার বদলে সর্বদলীয় বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তাব দেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের আহমদ আবদুল কাদের প্রস্তাব করেন, মন্ত্রিসভার সঙ্গে বিরোধী দলকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
আলোচনার একপর্যায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের প্রস্তাব করেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিরোধী দলীয় নেতা বা নেত্রীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এই প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানান। পরে ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন প্রশ্ন তোলেন—বিরোধী দলীয় নেতা অনুপস্থিত থাকলে কে উপস্থিত থাকবেন? তিনি সেই অবস্থায় বিরোধী দলীয় উপনেতাকে উপস্থিত রাখার সুযোগ রাখার প্রস্তাব দেন।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার জানান, বিরোধী দলীয় উপনেতারও মন্ত্রী পদমর্যাদা রয়েছে। সবশেষে সিদ্ধান্ত হয়, জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রী নয়, বরং মন্ত্রিসভার লিখিত অনুমোদন প্রয়োজন হবে। সেই বৈঠকে বিরোধী দলীয় নেতা বা তার অনুপস্থিতিতে উপনেতার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক থাকবে।