img

ফের বেড়েছে মুরগিসহ সবজির দাম

প্রকাশিত :  ০৬:৫০, ০৯ মে ২০২৫

ফের বেড়েছে মুরগিসহ সবজির দাম

ফের বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। ধিরেধিরে সবজির দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ছে মুরগির দামও। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।

শুক্রবার (৯ মে) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেশিরভাগ সবজির দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বেগুন, করলা, ঢেঁড়স, শসা, কাঁচা মরিচ, পটোল—সব কিছুর দামই ঊর্ধ্বমুখী। আগে যেসব সবজি ৫০-৬০ টাকায় মিলত, এখন সেগুলোর দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে পৌঁছেছে।

এছাড়াও করলা বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা, বেগুন ৮০-১০০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০-৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০-৯০ টাকা, কাঁকরোল ১০০-১৩০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০-৭০ টাকা, ঝিঙে ৭০-৮০ টাকা, টমেটো ৩০-৪০ টাকা দরে। এছাড়া পেঁপে ৭০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, শসা ৭০-৮০ টাকা, পটোল ৭০-৮০ টাকা, সজনে ডাটা ১২০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সবজির মান ও বাজারভেদে কিছুটা দাম ওঠানামা করছে।

শুধু সবজি নয়, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দামও বাড়তি। দুই সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। আদা ও রসুনেও রয়েছে একই প্রবণতা।

মুরগির বাজারেও দেখা দিয়েছে নতুন চাপ। ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে এখন ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালী মুরগি ৩২০ টাকা, কক ৩৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফিডের দাম বৃদ্ধি, খামারে উৎপাদন কমে যাওয়া এবং পরিবহণ ব্যয় বাড়ায় এই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অনেকে মনে করছেন, এই সুযোগে এক শ্রেণির মজুতদার ইচ্ছাকৃতভাবে দাম বাড়িয়ে চলছে।

গরু ও খাসির মাংসের দাম আগের মতোই রয়েছে। গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছাগলের মাংস ১১০০ টাকা কেজি।

মাছের বাজার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। রুই ৩৫০-৪২০ টাকা, কাতল ৩৮০-৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, মাগুর ৫০০ টাকা, কৈ ২০০-২৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, পাঙাশ ১৮০-২৩৫ টাকা এবং তেলাপিয়া ১৫০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজার করতে আসা অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। খিলক্ষেতে বাজার করতে আসা আমিরুল বলেন, ‘সবজির দাম শুনলেই ভয় লাগে। মুরগি কিনতে গেলেও একই অবস্থা। আওয়ামী আমলের মতো দিনে দিনে বাজারে প্রত্যেকটি দ্রব্যর মূল বাড়া শুরু করেছে। মনে হচ্ছে- এখন ডাল-ভাত খেয়েই দিন চলাতে হবে।’

সাধারণ চাকুরি করা দিনেশ বলেন, ‘মাসের শুরুতেই বাজারে গিয়ে পুরো বেতন ফুরিয়ে যায়। সরকার এখনই কিছু না করলে সামনে মানুষ আর বাজারে যেতে পারবে না।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজার ব্যবস্থাপনায় নজরদারির ঘাটতি এবং সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতাই এই পরিস্থিতির মূল কারণ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন—টিসিবির মাধ্যমে কম দামে পণ্য সরবরাহ বাড়ানো, বাজার মনিটরিং জোরদার করা, কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য সংগ্রহ করা এবং মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে।

তাদের মতে, কৃষি উৎপাদন এবং পরিবহণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন।


অর্থনীতি এর আরও খবর

img

সূক্ষ্ম পতনের দিনে প্রাণবন্ত লেনদেন: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বিনিয়োগকারীদের দ্বিধান্বিত অবস্থান!

প্রকাশিত :  ১২:৫১, ১৩ জুলাই ২০২৫

রেজুয়ান আহম্মেদ

আজকের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন চিত্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি বিভাজিত মনোভাবের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। বাজারে ছিল প্রাণবন্ত লেনদেন, উচ্চ ভলিউম এবং কয়েকটি সেক্টরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও, প্রধান সূচক ডিএসইএক্স (DSEX) দিন শেষে ১.৬০ পয়েন্ট বা ০.০৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৫০৬৬.৪৪ পয়েন্টে বন্ধ হয়েছে।

অন্যদিকে, ডিএসইর অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস (DSES) সূচকটি ২.১১ পয়েন্ট বেড়ে ১১০৩.০৭ পয়েন্টে উঠেছে, যা শক্ত মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর ইতিবাচক অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়। তবে ব্লু-চিপ শেয়ারভিত্তিক সূচক ডিএস৩০ (DS30) সামান্য ০.০৫ পয়েন্ট কমে ১৯০৮.৫৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

‌লেনদেনের সারসংক্ষেপ: সংখ্যাগুলো যা বাজারের স্পন্দন জানায়

আজ মোট ২,০৭,২০৬টি ট্রেডে ২৬.৮০ কোটি ইউনিট শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ৬৬৬ কোটি টাকা।

এই চিত্রই প্রমাণ করে যে, বাজারে লেনদেন ছিল গত দিনের তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি সক্রিয়।

দিনভর লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৭৪টি কোম্পানির শেয়ার দরবৃদ্ধি পেয়েছে, ১৬৬টি দর হারিয়েছে, এবং ৫৪টি কোম্পানির শেয়ার অপরিবর্তিত থেকেছে—যা স্পষ্টভাবে বিনিয়োগকারীদের দ্বিধান্বিত মনোভাব ও সেক্টরভিত্তিক নির্বাচনের ইঙ্গিত দেয়।

সূচকের চলাচলের বিশ্লেষণ: দিনের ভেতরে নাটকীয়তা

ডিএসইএক্স (DSEX) সূচকের ঘণ্টাওয়ারি চলাচল বিশ্লেষণে দেখা যায়, দিনের শুরুতে সূচকে কিছুটা পতন হলেও মধ্য ভাগে উল্লেখযোগ্যভাবে পুনরুদ্ধার ঘটে। তবে শেষ ঘণ্টায় সূচকটি আবারও নিচের দিকে নামতে শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত ৫০৬৬.৪৪ পয়েন্টে স্থিত হয়।

এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত করে যে, বিনিয়োগকারীরা দিনের শুরুতে কিছুটা হতাশ থাকলেও মাঝামাঝি সময়ে আশাবাদী লেনদেন করেন; তবে শেষ পর্যন্ত মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাজারকে আবার নিচে নামিয়ে আনে।

মার্কেট ম্যাপ: কোন সেক্টরে কেমন চিত্র?

মার্কেট ম্যাপ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নিচের সেক্টরগুলোতে সর্বাধিক কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে:

ব্যাংক,

ফার্মাসিউটিক্যালস ও কেমিক্যালস,

খাদ্য ও অ্যালাইড,

ইঞ্জিনিয়ারিং,

মিউচ্যুয়াল ফান্ড।

এই সেক্টরগুলোতে অনেক কোম্পানির শেয়ার সবুজ এবং লাল রঙে চিহ্নিত, যা ইঙ্গিত দেয় কিছু কোম্পানি ভালো পারফর্ম করলেও, অনেকগুলো দর হারিয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিশেষ আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে ব্যাংকিং এবং ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টরে, যেগুলো সাধারণত স্থিতিশীল ও মৌলভিত্তিতে শক্তিশালী।

এছাড়া, টেক্সটাইল ও ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরেও উল্লেখযোগ্য লেনদেন হয়েছে, যদিও কিছুটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল।

টপ গেইনার সেক্টর: কারা ছিল এগিয়ে?

\"Top Sectors By Gainer\" চার্ট অনুযায়ী,

ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর আজকের লেনদেনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কোম্পানিকে দরবৃদ্ধির তালিকায় তুলেছে।

এরপর রয়েছে কেমিক্যালস, ইনস্যুরেন্স এবং খাদ্য ও অ্যালাইড সেক্টর।

এই সেক্টরগুলোর বেশিরভাগ কোম্পানি \"Up\" শ্রেণিতে থাকায় বোঝা যায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা এদিকেই প্রবল।

তবে কিছু সেক্টর যেমন ফুয়েল অ্যান্ড পাওয়ার, পেপার প্রিন্টিং ও সার্ভিস সেক্টর–এ মিশ্র ফলাফল লক্ষ্য করা যায়, যেখানে লাভবান কোম্পানির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিও ছিল।

ক্যাটাগরি ভিত্তিক ভ্যালু: কারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে?

\"Top Sectors By Value/Category\" ও \"Top Sectors By Category\" চার্ট বিশ্লেষণে দেখা যায়,

সর্বোচ্চ মূল্যের লেনদেন হয়েছে ব্যাংক এবং ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টরে, যা মূলত ‘A’ ক্যাটাগরির কোম্পানির মাধ্যমে হয়েছে।

‘A’ ক্যাটাগরির শেয়ার এখনো বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয়, কারণ এসব কোম্পানির ডিভিডেন্ড রেকর্ড ভালো এবং লিকুইডিটি তুলনামূলকভাবে বেশি।

এছাড়া ‘B’, ‘N’ ও ‘Z’ ক্যাটাগরির শেয়ারেও কিছুটা অংশগ্রহণ দেখা গেছে, তবে ‘Z’ ক্যাটাগরি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তুলনামূলক কম।

বাজার বিশ্লেষকদের অভিমত

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন—

“আজকের সূক্ষ্ম পতনকে নেতিবাচকভাবে না দেখে বাজারের স্বাভাবিক সংশোধনের অংশ হিসেবে দেখা উচিত। ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোতেই বিনিয়োগকারীরা আস্থা রাখছেন, যা দীর্ঘমেয়াদে বাজারের জন্য ইতিবাচক।”

অপর বিশ্লেষক তানভীর রহমান বলেন—

“ব্যাংক, ফার্মা ও খাদ্য সেক্টরে যে অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে, তা অর্থনীতির ভেতরে একটি স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত। তবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বৈদেশিক মুদ্রা সংকট বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলছে।”

রাজনীতি ও বৈদেশিক অর্থনীতির প্রভাব

বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থনৈতিক নীতির ঘোষণা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) সঙ্গে চুক্তির কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আশাবাদ তৈরি হলেও

মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি,

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস,

ডলার সংকট,

এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে ধীরগতি—এই সবই বাজারে চাপ সৃষ্টি করছে।

বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখনো \'অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণ\' নীতিতে চলছেন, ফলে বৈদেশিক অংশগ্রহণ বাড়েনি।

বিনিয়োগকারীদের জন্য পরামর্শ

আজকের বাজার চিত্রে নিম্নোক্ত সুপারিশ করা যেতে পারে:

মৌলভিত্তি ভালো, পরিষ্কার আর্থিক প্রতিবেদন এবং নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদানকারী কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা উচিত।

ঝুঁকিপূর্ণ Z ক্যাটাগরির শেয়ার বা হঠাৎ আলোচনায় আসা অস্থিতিশীল কোম্পানি এড়ানো উচিত।

বাজার এখনো পর্যবেক্ষণযোগ্য পর্যায়ে থাকায়, ‘সতর্ক বিনিয়োগ’ কৌশল অনুসরণ করাই হবে শ্রেয়।

আজকের বাজারে লেনদেনের গতি ছিল গতিশীল, তবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব স্পষ্ট। কিছু সেক্টরে আস্থা দেখা গেলেও বাজার এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়ে উঠেনি।

সরকার যদি নীতিগত স্বচ্ছতা এবং বিদেশি বিনিয়োগের পথ সহজ করে, তাহলে বাজারে দ্রুত আস্থা ফিরবে এবং বিদেশি অংশগ্রহণ বাড়বে—এমন আশা করছেন বিশ্লেষকরা।

আজকের বাজার প্রমাণ করে, শুধুমাত্র লেনদেনের পরিমাণ নয়—বাজারে আস্থা, মৌলিক শক্তি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাই বিনিয়োগকারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

অর্থনীতি এর আরও খবর