img

গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক বহিষ্কার

প্রকাশিত :  ০৫:৪৮, ১৪ মে ২০২৫

গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক বহিষ্কার

টানা কয়েকদিনের সংঘাত, হামলা-পাল্টা হামলা, গোলাগুলি ও উত্তেজনার পর কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলওসি) পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে আসছে। উত্তেজনা আরও না বাড়ানোর জন্য উভয় দেশই নিয়মিত একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগও রাখছে।

এর মধ্যেই কূটনৈতিক সংঘাতে জাড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে উভয় দেশই একে অপরের হাইকমিশনের কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করেছে। বুধবার (১৪ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে, ঠিক তখনই দুই দেশ গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে একে অপরের হাইকমিশনের কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করেছে। আর এই পদক্ষেপ উভয় দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে।

মূলত কর্মকর্তা বহিষ্কারের এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের শুরু হয় ভারতের পক্ষ থেকে। দিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তান হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তাকে “কূটনৈতিক মর্যাদার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কার্যকলাপের” অভিযোগে ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়তে বলা হয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।

ভারতের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে নেওয়া হয় যখন দেশটির পাঞ্জাব রাজ্যে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি এক হ্যান্ডলারকে সেনাবাহিনীর সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস করার অভিযোগ রয়েছে। পাঞ্জাব পুলিশ জানায়, ধৃতদের একজন পাকিস্তান হাইকমিশনের এক কর্মকর্তার নির্দেশে সেনাবাহিনীর চলাচলের তথ্য পাচার করছিল।

এই অভিযোগের পর ভারত পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে ডেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদপত্র হস্তান্তর করে।

পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তানও একইদিন সন্ধ্যায় দিল্লিতে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনের এক কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করে। বহিষ্কৃত ওই কর্মকর্তার নাম শংকর রেড্ডি চিন্তালা। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, তিনি “কূটনৈতিক মর্যাদার অপব্যবহার করে গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন”।

এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, শংকর রেড্ডিকে ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করে তার পরিবারসহ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। ভারতীয় ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে ডেকে এনে একটি প্রতিবাদপত্রও হস্তান্তর করে পাকিস্তান, যেখানে “অগ্রহণযোগ্য কর্মকাণ্ডের” তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর একইসঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনকে স্মরণ করিয়ে দেয়, কূটনৈতিক রীতিনীতি অনুসরণ করা এবং দায়িত্বের অপব্যবহার না করাই একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্রের আচরণ হওয়া উচিত।

মূলত পাল্টাপাল্টি এই বহিষ্কারের ঘটনা এমন এক সময় ঘটল, যখন পরমাণু অস্ত্রধারী এই দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ, অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন এবং ক্রস-বর্ডার হামলার অভিযোগে উত্তেজনা চরমে রয়েছে।

জাতীয় এর আরও খবর

img

ঢাকায় ভিসা কার্যক্রম ফের চালু করায় অস্ট্রেলিয়াকে ধন্যবাদ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশিত :  ১৫:০৯, ১৭ জুন ২০২৫

ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ভিসা প্রসেসিং কার্যক্রম পুনরায় চালু করায় দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার সুসান রাইলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এই ধন্যবাদ জানান।

হাইকমিশনার রাইল জানান, এখন থেকে ভিসা আবেদন অনলাইনের মাধ্যমে জমা দেওয়া যাবে। বর্তমানে ৬৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন এবং সেখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি।

সাক্ষাৎকালে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, নির্বাচন, প্রশাসনিক সংস্কার ও রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন,“বিশৃঙ্খল একটি সময় পার করে আমরা সাংবিধানিক, বিচারিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছি। একটি শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কাজ করছি, যাতে মসৃণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করা যায়।”

তিনি জানান, আগামী জুলাই মাসে ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন করা হবে।

জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন,“এই প্রথমবার জনগণ, বিশেষত তরুণ ভোটাররা স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে। আমি বিশ্বাস করি, এটি একটি উৎসবমুখর ও আশাব্যঞ্জক মুহূর্ত হবে।”

নির্বাচনী সহায়তার অংশ হিসেবে ইউএনডিপির মাধ্যমে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের দক্ষতা বৃদ্ধিতে অস্ট্রেলিয়া ২০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার দেবে বলে জানান হাইকমিশনার রাইল।

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রসঙ্গে তিনি জানান, বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার বাণিজ্য ৫ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারে পৌঁছেছে, যা গত পাঁচ বছরে গড়ে বছরে ১৬.২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

রাইল আরও জানান,“অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডসের মাধ্যমে তিন হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এখন অ্যালামনাই নেটওয়ার্কে যুক্ত, যারা দেশের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখছেন।”

প্রফেসর ইউনূস এই বৃত্তির সংখ্যা আরও বাড়াতে অনুরোধ জানান।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন,“বাংলাদেশে অবস্থানরত ১০ লাখ রোহিঙ্গার জন্য মানবিক সহায়তা আরও বাড়ানো জরুরি।”

এর জবাবে হাইকমিশনার রাইল জানান, ২০১৭ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে ৫৫৩.৬ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারের মানবিক সহায়তা দিয়েছে এবং সম্প্রতি আরও ৯.৬ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে।

তিনি বলেন,“মিয়ানমারে পরিস্থিতি অনুকূল হলে, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের পাশে থাকবে।”

বাংলাদেশে নতুন দায়িত্ব পেয়ে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে রাইল বলেন,“বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক গতিশীলতা দীর্ঘদিন ধরে আমাকে আকৃষ্ট করেছে। এখানে এসে আমি সত্যিই রোমাঞ্চিত।”

সাক্ষাতে সিনিয়র সচিব ও এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অনুবিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নূরে আলম উপস্থিত ছিলেন।