img

শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিক সম্প্রদায়ের কন্যা মুক্তা দোষাদ এর কৃতিত্ব

প্রকাশিত :  ১৯:৩৪, ২৬ মে ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৯:৩৯, ২৬ মে ২০২৫

শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিক সম্প্রদায়ের কন্যা মুক্তা দোষাদ এর কৃতিত্ব
সংগ্রাম দত্ত: দেশ-বিদেশে চায়ের রাজধানী বলে খ্যাত, পর্যটন নগরী, চারদিকে সবুজ চা বাগানে ঘেরা শ্রীমঙ্গল উপজেলার চা শ্রমিক সম্প্রদায়ের কন্যা
মুক্তা দোষাদ। চা বাগানের গণ্ডি পেরিয়ে মুক্তা বর্তমানে চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ওমেন্স থেকে ২০২৪ সালে এপারেল এন্ড রিটেল ম্যানেজমেন্ট সাবজেক্ট এর উপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। 
জানা গেছে, শ্রীমঙ্গল থানার রাজঘাট চা বাগানের মৃত দীপচাঁন দোষাদ এর কন্যা মুক্তা দোষাদ। তাঁর মাতার নাম সুমিত্রা দোষাদ। তারা তিন বোন । মুক্তা বোনদের মাঝে দ্বিতীয়।
চা পাতার নরম সবুজে ঘেরা পাহাড়ে শৈশব-কৈশোর কাটলেও পথচলার প্রতিটি বাঁকে মুক্তাকে সম্মুখীন হতে হয়েছে কঠিন বাস্তবতার। অল্পবয়সেই বাবাকে হারান তিনি। চা বাগানের রীতি অনুযায়ী মুক্তার মাকে বলা হয় চা শ্রমিকের কাজ নিতে, নাহলে ছেড়ে দিতে তাদের মাথাগোঁজার একমাত্র আশ্রয়। তিন কন্যাকে নিয়ে শুরু হয় মুক্তার মায়ের সংগ্রাম। দিনে ৭০ টাকা মজুরিতে সেই সংসার চালানো ছিল অসম্ভবের মতো। 

মুক্তা বলেন, 'আমরা সপ্তাহে একদিন মাছ খেতাম, মাংস হয়তো দুই মাসে একদিন।' তবু থেমে থাকেনি তাঁর স্বপ্ন। ভালো স্কুলের অভাব, পর্যাপ্ত চিকিৎসাসুবিধার ঘাটতি , আর ক্রমাগত আর্থিক সংকট- সবকিছুর মাঝেও মুক্তা তার পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। 
বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন তিনি। পড়াশোনার খরচ যোগাতে ইন্টারমিডিয়েট থেকে শুরু করেন টিউশনি। ভোর সাতটায় উঠে দুটো টিউশন, তারপর কলেজ-কোচিং শেষে আরও তিনটি টিউশন করে রাতে বাড়ি ফিরতেন। এভাবে নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেকেই চালাতে হয়েছে কিশোরী মুক্তাকে । কারন তিনি জানতেন মায়ের একার আয়ে তার আর ছোট বোনের পড়াশোনা সম্ভব নয়। 
মুক্তার উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি হয় চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন থেকে একটি শিক্ষাবৃত্তি অর্জনের মাধ্যমে। কিন্তু সেই পথও ছিল বন্ধুর। সমাজ ও পরিবারের বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকে যায় মেধাবী মুক্তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মা-ই ছিলেন তার সবচেয়ে বড় ভরসা। তাই এবারো অনেকের আপত্তি সত্ত্বেও মা তাকে সাহস দিয়ে বলেন, 'তুই যদি যেতে চাস মা, তাহলে যা। নিজের স্বপ্ন পূরণ কর।'

চা শ্রমিকদের জীবনের কঠিন বাস্তবতা মুক্তা খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাই নিজের সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ভাবনা প্রতিনিয়ত তাকে আলোড়িত করত। সেই তাড়না থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি যুক্ত হন University Tea Students' Association (UTSA)-এর সাথে। এই সংগঠনটি চা বাগানের সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করে। 
মুক্তা বিশ্বাস করেন চা বাগানের প্রতিটি শিশুকে সঠিক শিক্ষা আর সুযোগ দেওয়া গেলে বদলে যাবে তাদের জীবন। মুক্তি মিলবে চিরাচরিত শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্য থেকে।
এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগ ও স্বেচ্ছাসেবী কর্মকান্ডে মুক্তার অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে। মূল্যবোধ ভিত্তিক সামাজিক নেতৃত্বে দক্ষতা বাড়াতে ২০২২ সালে তিনি অংশগ্রহণ করেন আমরা নতুন নেটওয়ার্কের চেইঞ্জমেকার ট্রেনিং-এর চট্টগ্রাম কোহর্টে। 
২০২২ সালেই একজন তরুণ অ্যাকটিভিস্ট হিসেবে তিনি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নির্বাচিত ১০০ জন যুব প্রতিনিধি’র একজন হন এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পান। 

২০২৩ সালে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর ICDDRB-'র আয়োজিত একটি জাতীয় পর্যায়ের একটি প্রকল্প সম্মেলনে তিনি মোট ১০০ জন নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্য থেকে অংশগ্রহণের জন্য মনোনীত হন এবং সেখানে "সেরা প্রকল্প লিডার" পুরস্কার লাভ করেন। Teach for Bangladesh-এর ২০২৪ কোহর্টের একজন প্রতিশ্রুতিশীল ফেলো হিসেবেও নির্বাচিত হন তিনি। 
মুক্তা দোষাদ প্রমাণ করেছেন, স্বপ্ন দেখতে জানতে হয়, আর সেই স্বপ্নের পথে লড়াই করার সাহস থাকতে হয়। মুক্তা মনে করেন তার নিজের সংগ্রাম যদি এতদূর পৌঁছাতে পারে তবে চা বাগানের প্রতিটি সন্তানকে সঠিক সুযোগ আর শিক্ষা দিলে তারাও দেশের গর্ব হয়ে উঠবে।

সিলেটের খবর এর আরও খবর

img

মসজিদে ঢুকে নামাজরত ছোট ভাইকে কুপিয়ে হত্যা, বড় ভাই আটক

প্রকাশিত :  ১৪:৫২, ১৭ জুলাই ২০২৫

সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরে জায়গা সংক্রান্ত জের ধরে বড় ভাইয়ের হাতে ছোট ভাই মজিবুর রহমান (৬০) খুন হয়েছেন। বুধবার (১৬ জুলাই) রাতে উপজেলার চরগাঁও গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

তবে ইতোমধ্যে পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বড় ভাই লুৎফুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে। নিহত ও ঘাতক তারা দু’জনই চরগাঁও গ্রামের কামরু মুন্সির ছেলে। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা লুৎফুর রহমান ও মজিবুর রহমানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির জায়গা সংক্রান্ত বিরোধ চলছে। তার জের ধরে বুধবার বাড়ির পাশের মসজিদে এশার নামাজ পড়তে যান মজিবুর রহমান। তখন বড় ভাই লুৎফুর রহমান মসজিদে ঢুকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে নামাজরত অবস্থায় ছোট ভাই মজিবুর রহমানকে আঘাত করলে লুটিয়ে পড়েন তিনি।

পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে তাকে বিশ্বম্ভরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। পরে রাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

বিশ্বম্ভরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোখলেছুর রহমান বলেন, এই ঘটনায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে পুলিশ বড় ভাইকে আটক করে। তবে মরদেহ এখন সিলেটে রয়েছে।

সিলেটের খবর এর আরও খবর