img

হিরু-সাকিব চক্রকে ২০৮ কোটি টাকা জরিমানা

প্রকাশিত :  ০৫:৫৫, ০২ জুন ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৬:০৬, ০২ জুন ২০২৫

 হিরু-সাকিব চক্রকে ২০৮ কোটি টাকা জরিমানা

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক ও আলোচিত শেয়ার ব্যবসায়ী মো. আবুল খায়ের হিরু এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ডজন খানেকের বেশি কোম্পানির শেয়ার কারসাজি করে মুনাফা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তাদের মোট ২০৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।DSE stock quotes

একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে আবুল খায়ের হিরুকে এই অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিএসইসি গত ১৩ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে অবহিত করেছে। একই সঙ্গে বিষয়টি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকেও জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগেও ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর একই বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি পাঠিয়েছিল বিএসইসি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আবুল খায়ের হিরু, তার পরিবারের সদস্য এবং সহযোগীদের বিরুদ্ধে শেয়ার কারসাজির অভিযোগ উঠলেও তেমন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিএসইসি'র পুনর্গঠিত খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন আবুল খায়ের হিরু ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। এমনকি, আবুল খায়েরের ব্যবসায়িক পার্টনার বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকেও এই কারসাজির ঘটনায় ছাড় দেয়নি বিএসইসি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বিএসইসি উল্লেখ করেছে যে, আবুল খায়ের হিরু একজন সরকারি কর্মচারী এবং সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক হিসেবে কর্মরত। তিনি নিজে এবং তার সহযোগীদের সঙ্গে মিলিতভাবে বিভিন্ন সময়ে শেয়ারবাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে কারসাজি করেছেন। এই কারসাজির ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা শেয়ারবাজার উন্নয়নের পরিপন্থী। তার এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন প্রমাণিত হওয়ায় বিএসইসি তাদের বিভিন্ন সময়ে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ১৯ জুন থেকে ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত আবুল খায়ের হিরু ও তার সহযোগীদের ১৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ৭ মে পর্যন্ত ১৯৪ কোটি ৬ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। অর্থাৎ, সর্বমোট জরিমানার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এই পদক্ষেপ শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিএসইসি'র প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।

গুরুত্বপূর্ণ কিছু শেয়ার কারসাজির ঘটনা ও জরিমানা

১. ২০২২ সালের ১৯ জুন

গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স ও ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির জন্য আবুল খায়েরের স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান ও তাদের সহযোগীদের যথাক্রমে ৪২ লাখ ও ৯৫ লাখ টাকা জরিমানা। এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের জন্য আবুল খায়েরের দেশ আইডিয়াল ট্রাস্ট কো-অপারেটিভকে ৭২ লাখ টাকা জরিমানা।

২. ২০২২ সালের ৬ জুলাই

ফরচুন সুজ ও এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার কারসাজির জন্য আবুল খায়েরের বাবা আবুল কালাম মাতবর এবং বোন কনিকা আফরোজ ও তাদের সহযোগীদের যথাক্রমে ১ কোটি ৫০ লাখ ও ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা।

৩. ২০২২ সালের ২ আগস্ট

ওয়ান ব্যাংক ও বিডিকম অনলাইনের শেয়ার কারসাজির জন্য আবুল খায়েরের বাবা আবুল কালাম মাতবর এবং তার প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ ও তাদের সহযোগীদের যথাক্রমে ৩ কোটি ও ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা।

৪. ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর

প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির জন্য আবুল খায়ের ও তার সহযোগীদের ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা জরিমানা, যার মধ্যে সাকিব আল হাসানকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

৫. ২০২৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি

ফরচুন সুজের শেয়ার কারসাজির জন্য আবুল খায়ের ও তার সহযোগীদের ৭৭ কোটি ২১ লাখ টাকা জরিমানা, যার মধ্যে আবুল খায়ের হিরুকে ১১ কোটি টাকা এবং কাজী সাদিয়া হাসানকে ২৫ কোটি টাকা জরিমানা।

৬. ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি

ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের শেয়ার কারসাজির জন্য যথাক্রমে ৪৯ কোটি ৮৫ লাখ ও ৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

৭. ২০২৫ সালের ৯ এপ্রিল

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজির জন্য দু'দফায় ৫২ কোটি ও ২৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা জরিমানা, যার মধ্যে সাকিব আল হাসানকে ২৫ লাখ টাকা এবং ২ কোটি ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

৮. ২০২৫ সালের ৭ মে

ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির জন্য আবুল খায়ের ও তার সহযোগীদের ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা, যার মধ্যে সাকিব আল হাসানকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

এ বিষয়ে বিএসইসির মুখপাত্র ও পরিচালক আবুল কালাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিনিয়োগকারী আবুল খায়েরকে একাধিকবার জরিমানা করা হয়েছে। তিনি বলেন, যে কোনো কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে আগামীতে কমিশন আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।


অর্থনীতি এর আরও খবর

img

৫ আগস্ট সারাদেশে বন্ধ থাকবে ব্যাংক

প্রকাশিত :  ১৪:৩২, ১৭ জুলাই ২০২৫

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে আগামী ৫ আগস্ট সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এ কারণে সেদিন সারা দেশের তফসিলি ব্যাংক বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রবল গণআন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। দিনটিকে ‘জুলাই অভ্যুত্থান দিবস’ ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট সরকারি ছুটির দিন হিসেবে দেশের সব তফশিলি ব্যাংক বন্ধ থাকবে। অতএব, সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে আগেভাগে প্রস্তুতি নিতে এবং আর্থিক লেনদেন পরিকল্পনা করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রবল গণআন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। দিনটিকে ‘জুলাই অভ্যুত্থান দিবস’ ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট সরকারি ছুটির দিন হিসেবে দেশের সব তফশিলি ব্যাংক বন্ধ থাকবে। অতএব, সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে আগেভাগে প্রস্তুতি নিতে এবং আর্থিক লেনদেন পরিকল্পনা করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া ছাত্রদের আন্দোলন শেষমেশ সরকার উৎখাতের ইতিহাস গড়ে। ৩৬ দিনের সেই আন্দোলনে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালাতে বাধ্য হন সাড়ে ১৫ বছর দোর্দণ্ড প্রতাপে দেশ চালিয়ে আসা শেখ হাসিনা।

শুরুতে এ আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পরে তা দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

সরকারের পক্ষে জবাব ছিল- গুলি, টিয়ারশেল আর লাঠি; এককথায় কেবলই বলপ্রয়োগ। প্রথমে ফেসবুক, পরে ইন্টারনেট বন্ধ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে চায় সরকার। তাতে হিতে বিপরীত হয়।

আন্দোলনে রক্তপাত শুরু হওয়ার ২০ দিনের মধ্যেই লাশ আর রক্তের বোঝা মাথায় নিয়ে পতন হয় দেড় দশকের আওয়ামী লীগ সরকারের। পালাতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা আর তার অমাত্যরা।