img

বানারীপাড়ায় মাদক ব্যবসা জমজমাট; যুব সমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে

প্রকাশিত :  ০৯:৪১, ০৪ জুন ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১১:৩৮, ০৪ জুন ২০২৫

বানারীপাড়ায় মাদক ব্যবসা জমজমাট; যুব সমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরিশাল জেলার বানারীপাড়া থানার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের গোয়াইল বাড়ি গ্রামের উত্তর সীমানায় মাদক ব্যবসা জমজমাট,  যুব সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছেন মাদক ব্যবসায়ীরা এ অভিযোগ এলাকাবাসীর। অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে খোঁজ-খবর নিয়ে মাদক ব্যবসার সত্যতা পাওয়া যায়।

মাদক ব্যবসাযীরা হলেন : মোঃ আলাউদ্দিন সরদার, পিতা: মৃত খবিরউদ্দীন সরদার, ২. মোঃ সাইফুল সরদার, পিতা: মৃত খবিরউদ্দীন সরদার, ৩. মোঃ সজল সরদার, পিতা: মৃত খবিরউদ্দীন সরদার, ৪. ইয়াসমিন, পিতা: মৃত খবিরউদ্দীন সরদার, ৫. মুস্তি বেগম, স্বামী: মৃত খবিরউদ্দীন সরদার, ৬. মোঃ রফিক ইয়াসমিনের স্বামী। ৭. মোঃ বাবু সরদার, পিতা : মোঃ আলমগীর সরদার, ৮. মীম, স্বামী: মোঃ বাবু সরদার। পশ্চিম চাখার পাকার মাথার আশপাশেই এসব মাদক ব্যবসায়ীদের বাড়ি-ঘর। 

এসব মাদক ব্যবসায়ীর শ্বশুর বাড়ির লোকজনও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত বলে জানা গেছে। তারাও বরিশালে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এবং সেখান থেকে এসব মাদক গ্রামে সরবরাহ করে থাকে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। এসব মাদক ব্যবসায়ীরা নিত্যনতুন রূপ ধারণ করে ঢাকা বরিশাল ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাদক সংগ্রহ করে থাকেন। এদের পেশাই মাদক ব্যবসা। এরা অন্য কোনো কাজকর্ম করে না। ঘোরাঘুরি করে আর মাদক ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। আলাউদ্দিন গং মাদক ব্যবসা করে জায়গাজমি ক্রয় করছেন বলেও জানা গেছে। 

বাবু সরদার মাদক ব্যবসা করে তার ছোট ভাই উজ্জ্বল সরদারকে ইউরোপের গ্রিসে পাঠিয়েছেন বলে এলাকাবাসী জানান। তার বাবা মোঃ আলমগীর সরদার এলাকায় মুদি দোকানদারি করে। সেখানেও মাদক ব্যবসায়ীদের আনাগোনা দেখা যায়। পশ্চিম পাখার পাকার মাথা থেকে নদীরপাড় পর্যন্ত কয়েকটি মুদি দোকান আছে। এসব দোকানে মাদক ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বিরাজমান।

আলাউদ্দিন, সাইফুল, রফিক ও বাবু সরদার মাদক সম্রাটদের সাথে আঁতাত করে বিভিন্ন জেলায়ও মাদক সরবরাহ করে থাকে বলে এলাকায় গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। সেখান থেকে মোটা অংকের টাকা-পয়সা পায় বলে তারা এলাকাবাসীর সাথে দম্ভ করে কথা বলে। 

এসব মাদক ব্যবসায়ীরা এলাকার মানুষের সাথে একথাও বলে বেড়ায় যে, আমি আমার সংসার এই কাজ করেই চালাই। আমার আর কোনো আয়-রোজগার নেই বা অন্য কোনো কাজকর্মও করি না। এরা ইতিমধ্যে এলাকার মানুষের বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র চুরির ঘটনাও সুকৌশলে ঘটিয়েছে। কারো অটোরিক্সা, কারো পানির মেশিন, কারো এনডয়েড মোবাইল, কারো গাছের নারকেল এবং এলাকাবাসীর ফলফলাদি চুরির ঘটনা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে বলে জানা গেছে। মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীরাই এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। এর আগে কখনো এ ধরনের ঘটনা এলাকায় ঘটেনি বলে জানা যায়। এরা এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করার পর থেকে চুরির ঘটনা ঘটেই চলছে বলে এলাকাবাসী জানান। 

বাবু সরদার ও তার স্ত্রী কৌশলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। তারা দু’জন খুবই বিচক্ষণ ও অভিজ্ঞ।

চাখারের কিছু লোকজন ভূয়া গোয়েন্দা পুলিশ সেজে বাইক ব্যবহার করে আলাউদ্দিন ও সাইফুলের পরিবারের লোকজনদের আটকের নাটক সাজায়। আলাউদ্দিন ও সাইফুলের পরিবারের লোকজন ১ কেজি ৮০০ গ্রাম গাঁজা রেখে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় বলে জানা গেছে। ভূয়া গোয়েন্দারা ওদের রেখে যাওয়া মাদকগুলো ওখান থেকে নিয়ে চলে যায় বলে এলাকার বাসিন্দারা জানান। এর কিছুদিন পর আলাউদ্দিন ও সাইফুলের আত্মীয়-স্বজন মাদক ব্যবসা করতে গিয়ে গ্রেফতার হলে সেই সূত্র ধরে এ এলাকায় আইন-শৃঙ্খরা বাহিনী অভিযান চালায়। অভিযান চালানোর আগেই তারা বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর পেয়ে গা-ঢাকা দেয়। এরই মধ্যে আলাউদ্দিন, সাইফুল, রফিক মাদকসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এই মাদক ব্যবসায়ীরা ঘরের টিভি ফ্রিজ ও অন্যান্য আসবাবপত্র বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ছাড়া পেয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে।

পশ্চিম চাখারের রুবেল নামের এক ব্যক্তি ইয়াবা বিক্রি করে বলেও জানা গেছে। তার বাড়ি পশ্চিম চাখার পাকা ব্রিজের কাছাকাছি। পাকা ব্রিজটি চাখার কালিরবাজার মূল খালের ওপর। ওই ব্রিজ পাড় হয়ে চাখার ইউনিয়ন পরিষদ ও অন্যান্য দিকে যাওয়া যায়। মাদক ব্যবসা করে পাকা ভবনের কাজও শুরু করেছে জানা গেছে। সে বড় চাউলাকাঠী (দঃ), কালীরবাজার, গোয়াইলবাড়ি ও বিভিন্ন এলাকায় মোবাইলের মাধ্যমে ইয়াবা বিক্রির জন্য কণ্ট্রাক্ট করে ক্রেতার অর্ডার অনুযায়ী ইয়াবা সরবরাহ করে থাকেন বলে এলাকার বাসিন্দারা জানান। 

মাদক ব্যবসায়ীরা এলাকায় উচ্চস্বরে দম্ভ করে বলে বেড়ায়, টুকু চেয়ারম্যানই যখন কিছু করতে পারেনি! তখন আর কে আছে এই এলাকায় আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে! আমরা কাউকে পরোয়া করি না! তাদের কাছে দেশীয় অস্ত্রও মজুত আছে বলে জানা গেছে। কেউ কোনো প্রতিবাদ করলে প্রকাশ্যে তাদের দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে এবং খুন-জখমের চেষ্টা চালায় এবং হুমকি প্রদান করেন এসব মাদক ব্যবসায়ীরা।

মোঃ লিমন সরদার, পিতা: সোহেল সরদার-প্রবাসী। সে পশ্চিম চাখার আমেনার বাড়িতে বসবাস করেন। তার বন্ধু-বান্ধব নিয়ে পশ্চিম চাখার পাকার মাথা থেকে নদীরপাড় গিয়ে মাদক সেবন করে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। 

মোঃ শরীফ সরদার, পিতা: সেলিম সরদার, গোয়াইলবাড়ি, মাদক সেবন ও জুয়া খেলায় জড়িত বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। এ কারণে তাকে বাবার সংসার থেকে আলাদা করে দেয়া হয়েছে বলেও এলাকাবাসী জানায়। 

এই এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আগমন ঘটবে এ ধরনের খবর হারুন সরদার ও শাহআলম সরদারের কাছে অলৌকিকভাবে পৌঁছে যেতো। আওয়ামী আমলে এরা দুজন এদের কাছ থেকে মাসোহারা গ্রহণ করতেন  বলে এ দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এদের আত্মীয়তার সুবাদে মাদক ব্যবসায়ীরা পার পেয়ে যেতো বলে জানা গেছে। এসব মাদক ব্যবসায়ীরা আওয়ামীলীগ আমলে এ দু’জনকে আঁতাত করে মাদক ব্যবসা চালিয়েছেন। বর্তমানে বিএনপির কিছু নেতাকর্মীদের সাথে মাদক ব্যবসায়ীরা সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এলাকাবাসীর দাবি, এদের বিরুদ্ধে আইনী কোনো ব্যবস্থা  না নিলে এলাকার যুবক-যুবতিদের মাদকের ছোবল থেকে বাঁচানো যাবে না। এদের বিরুদ্ধে অতিসত্ত্বর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে তারা দাবি করেছেন।


img

টেকনাফ সীমান্তে বিজিবির অভিযান: কেওড়া জঙ্গল থেকে উদ্ধার ১ লাখ ১০ হাজার ইয়াবা

প্রকাশিত :  ১৭:৩১, ১৭ জুন ২০২৫

টেকনাফ | ১৭ জুন ২০২৫: কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার লেদা ও নোয়াপাড়া সীমান্তসংলগ্ন আদমের জোড়া বেড়িবাঁধ এলাকায় সফল মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ১ লাখ ১০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে গোপন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে টেকনাফ ব্যাটালিয়নের (২ বিজিবি) অধীনস্থ লেদা বিওপি ও নোয়াপাড়া বিশেষ ক্যাম্পের একাধিক টহল দল অভিযানে অংশ নেয়। বিজিবির সদস্যরা ঝড়-বৃষ্টি ও প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে নাফ নদীর তীরে কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করেন।

রাত গভীর হলে দুই ব্যক্তিকে চুপিসারে বেড়িবাঁধ অতিক্রম করার চেষ্টা করতে দেখে বিজিবি সদস্যরা তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে করে বিভিন্ন দিক থেকে ধাওয়া শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা নদীর পাশের জলমগ্ন কেওড়া জঙ্গলে পালিয়ে যায়। এরপর বিজিবির সদস্যরা পুরো এলাকা ঘিরে দীর্ঘ সময় ধরে তল্লাশি চালান।

অভিযানে পাচারকারীদের ফেলে যাওয়া কর্দমাক্ত অবস্থার দুইটি বস্তার ভেতর থেকে ১,১০,০০০ (এক লক্ষ দশ হাজার) পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। তবে ঘটনাস্থল থেকে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, পাচারকারীরা রাতের অন্ধকারে নদী সাঁতরে মিয়ানমারের দিকে পালিয়ে গেছে।

বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উদ্ধারকৃত ইয়াবা ট্যাবলেট মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী জমা ও ধ্বংসের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে বিজিবির দৃঢ় অবস্থান

বিজিবির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সীমান্ত এলাকায় যেকোনো ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে। ভবিষ্যতেও সীমান্ত নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় বিজিবি এ ধরনের অভিযান আরও জোরদার করবে।

উল্লেখযোগ্য যে, দেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তবর্তী এলাকা টেকনাফ দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিজিবি নিয়মিত অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে এই চোরাচালান রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।

বাংলাদেশ এর আরও খবর