img

ধ্বংসপ্রায় শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ চায় বিনিয়োগকারীরা

প্রকাশিত :  ১৩:৫১, ০৬ জুন ২০২৫

ধ্বংসপ্রায় শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ চায় বিনিয়োগকারীরা

ধ্বংসপ্রায় শেয়ারবাজারের গতি ফেরাতে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন।

\r\nসংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের প্রধান শেয়ারসূচক পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে এবং বাজার মূলধন প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে দৈনিক লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমে আসায় বাজারে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে, যা বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসে বড় ধাক্কা দিয়েছে।
\r\nবুধবার (০৪ জুন) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন বলেন, “এই পরিস্থিতি কেবল সাধারণ বাজার সংশোধন নয়, বরং এটি একটি কাঠামোগত সংকট। এ থেকে উত্তরণে জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ একান্ত জরুরি।”

ইকবাল হোসেন প্রস্তাব করেন, অপ্রদর্শিত অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হোক, তবে এর সঙ্গে তিন বছরের ‘লক-ইন পিরিয়ড’ বাধ্যতামূলক করা হোক। তার কথায়, “লক-ইন সময়ে বিনিয়োগকারীরা মূলধন তুলতে পারবেন না, শুধু ডিভিডেন্ড আয় নিতে পারবেন।” তিনি মনে করেন, এমন সুযোগ চালু হলে বাজারে তারল্য ফিরবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।
\r\nইকবাল হোসেন বলেন, শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা আশা করেছিলেন, এবারের বাজেট তাদের জন্য প্রণোদনামূলক হবে। বিশেষ করে ব্যক্তি পর্যায়ে মূলধন লাভের ওপর কর প্রত্যাহার এবং ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ডিভিডেন্ড আয়ে কর মওকুফের প্রত্যাশা ছিল। “কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সরাসরি কোনো সুবিধা রাখা হয়নি,”—বলেন তিনি।
\r\nপ্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাজেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য করহার ২০ শতাংশ নির্ধারণ করে পূর্বের তুলনায় কিছুটা স্বস্তি দেওয়া হয়েছে। তবে প্রস্তাবিত ১০ শতাংশের কর ব্যবধানের স্থলে বাস্তব ব্যবধান দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭.৫ শতাংশ, যা প্রত্যাশার চেয়ে কম।

\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n\r\n

মার্চেন্ট ব্যাংকের জন্য করহার ৩৭.৫ শতাংশ থেকে ২৭.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য তেমন কোনো সুবিধা আনবে না বলে মনে করেন সংগঠনের সভাপতি।
\r\nএছাড়া, ব্রোকারেজ লেনদেনে উৎসে কর ০.০৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.০৩ শতাংশে নামানোর প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে উপকৃত করবে; সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এতে তেমন কোনো সরাসরি লাভ পাবেন না।
\r\nইকবাল হোসেন বলেন, বাজেটের কিছু সমন্বয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সুবিধাজনক হলেও, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য তা বাস্তবিক অর্থে স্বস্তি আনতে ব্যর্থ হয়েছে।”
\r\nতিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সরকার যদি বিনিয়োগকারীদের দাবিগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে, তাহলে শেয়ারবাজারে আস্থা ফিরবে এবং একটি নতুন গতি সঞ্চার হবে।

অর্থনীতি এর আরও খবর

img

শেয়ারবাজারে কারসাজি: সাকিবসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

প্রকাশিত :  ১৪:৫০, ১৭ জুন ২০২৫

শেয়ারবাজার থেকে শতকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

মামলার বাদি দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন। 

এ মামলার প্রধান আসামি সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক ও শেয়ার বাজারের আলোচিত ব্যক্তি মো. আবুল খায়ের (হিরু)। দ্বিতীয় আসামি সাকিব আল হাসান। অন্যান্য আসামিরা হলেন- কাজি সাদিয়া হাসান, আবুল কালাম মাদবর, কনিকা আফরোজ, মোহাম্মদ বাশার, সাজেদ মাদবর, আলেয়া বেগম, কাজি ফুয়াদ হাসান, কাজি ফরিদ হাসান, শিরিন আক্তার, জাভেদ এ মতিন, মো. জাহেদ কামাল, মো. হুমায়ূন কবির ও তানভীর নিজাম।

দুদক জানায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দ্রুত আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে শেয়ারবাজারে প্রচলিত আইন ও বিধি (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ১৭ ধারা) লঙ্ঘন করেছেন।

তারা নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিও একাউন্টে অবৈধভাবে সিরিজ ট্রানজেকশন,  প্রতারণামূলক একটিভ ট্রাডিং, গেম্বলিং, ও স্পেকুলেশন-এর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে কৃত্রিমভাবে নির্দিষ্ট কিছু শেয়ারের দাম বৃদ্ধি করে বাজারে কারসাজি করেন। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রতারিত হয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হারান।

এই পদ্ধতিতে ২৫৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৩০৪ টাকা আত্মসাৎ করা হয়, যা ‘অপরাধলব্ধ অর্থ’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত। এর মধ্যে আবুল খায়ের (হিরু) তার স্ত্রী কাজি সাদিয়া হাসানের সহায়তায় ২৯ কোটি ৯৪ লাখ ৪২ হাজার ১৮৫ টাকার উৎস গোপন করে বিভিন্ন খাতে স্থানান্তর করেন।

এছাড়া তার নামে পরিচালিত ১৭টি ব্যাংক একাউন্টে মোট ৫৪২ কোটি ৩১ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

দুদক জানায়, আসামি মো. আবুল খায়ের (হিরু) কর্তৃক শেয়ার বাজারে কারসাজিকৃত প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স লি., ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স লি. এবং সোনালী পেপারস লি.-এর শেয়ারে সাকিব আল হাসান বিনিয়োগ করেন। এতে সাকিব মার্কেট ম্যানুপুলেশনে সরাসরি সহায়তা করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ২ কোটি ৯৫ লাখ ২ হাজার ৯১৫ টাকা রিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইনের নামে শেয়ার বাজার থেকে আত্মসাৎ করেন।

দুদক জানায়, শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হওয়ায় কমিশনের অনুমোদনক্রমে আসামিদের বিরুদ্ধে  ২০১২ এর ৪ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/১২০(বি)/১০৯ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

দুদক জানিয়েছে, তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।