
শেয়ারবাজারে আস্থার ইঙ্গিত, চাঙ্গা খাদ্য, বিদ্যুৎ ও বস্ত্র খাত!
নিজস্ব প্রতিবেদক

সপ্তাহজুড়ে ওঠানামার পর দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) রোববার (১৫ জুন) দিনের শেষে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪.৯১ পয়েন্ট বা ০.৩২ শতাংশ বেড়ে ৪৭২৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এই সামান্য উত্থানও বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি ইতিবাচক বার্তা হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, দিনভর মোট ৯৪ হাজার ১৩৫টি ট্রেডের মাধ্যমে প্রায় ১০ কোটি ৬৭ লাখ শেয়ার হাতবদল হয়েছে। এ সময় মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৬৩ কোটি ৩ লাখ টাকা।
দিনের শেষে ১৪১টি কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে, কমেছে ১৭৮টির, এবং ৬৮টি কোম্পানির দর অপরিবর্তিত ছিল। যদিও দরপতনের সংখ্যা বেশি ছিল, তবে বাজার বিশ্লেষকদের মতে, কিছু বৃহৎ মূলধনী কোম্পানির শেয়ারে ক্রয়চাপ থাকায় সূচক ঊর্ধ্বমুখী রাখতে সহায়তা করেছে।
খাতভিত্তিক চিত্র: এগিয়ে খাদ্য, বিদ্যুৎ ও বস্ত্র
দিনের লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, খাদ্য ও জ্বালানি খাত শক্ত অবস্থানে ছিল। বিশেষত বস্ত্র খাতে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারে মূল্যবৃদ্ধির ধারা ছিল স্পষ্ট, যা দীর্ঘদিন পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতেও ছিল দৃঢ়তা। এই খাতের অন্যতম কোম্পানি BEACHTHACH দিনশেষে ৯.৮৮ শতাংশ দরবৃদ্ধি পেয়ে ১৯.৭৩ কোটি টাকার রেকর্ড লেনদেন করেছে। এছাড়া KPCL ও অন্যান্য পাওয়ার কোম্পানির শেয়ারেও চাঙ্গা প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
ঔষধ ও রসায়ন খাতেও ইতিবাচক গতি ছিল। বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের আস্থার খাত হিসেবে এই সেক্টরের প্রতি এখনও ভরসা অব্যাহত রয়েছে।
ইঞ্জিনিয়ারিং খাতেও কিছু শেয়ারে উল্লেখযোগ্য মুভমেন্ট দেখা গেছে। বাজারে গুঞ্জন রয়েছে—নতুন প্রকল্প অনুমোদন ও রপ্তানি আদেশ পাওয়ার সম্ভাবনার কারণে কিছু কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে।
স্থবিরতা ও দুর্বলতা: কিছু খাত পিছিয়ে
অন্যদিকে, ট্যানারি, সিমেন্ট, এবং রিয়েল এস্টেট ও সার্ভিস সেক্টরের বেশিরভাগ কোম্পানি আজ বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ হারিয়েছে। এসব খাতে লেনদেন ছিল স্থবির এবং শেয়ারদরে দেখা গেছে মৃদু পতন।
মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও কিছু ব্যাংকিং শেয়ারের পারফরম্যান্সও তুলনামূলকভাবে দুর্বল ছিল।
‘মার্কেট ম্যাপ’-এ স্পষ্ট শক্তিশালী সংকেত
দিনশেষের ‘মার্কেট ম্যাপ’ বিশ্লেষণে BEACHTHACH ও KPCL-এর মতো কোম্পানির উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স বাজারে আস্থার বার্তা দিয়েছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ খাতে বিশাল লেনদেন পুরো বাজারকে কিছুটা স্থিতিশীলতা দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এ চিত্রপট প্রমাণ করে বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ধীরে ধীরে বাড়ছে, এবং বেশিরভাগ সক্রিয়তা কেন্দ্রীয়ভাবে ঘনীভূত হচ্ছে শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে।
আগামী দিনের পূর্বাভাস: সতর্ক আশাবাদ
বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামীকাল সোমবার (১৬ জুন) সূচকে সামান্য ঊর্ধ্বমুখী অথবা স্থিতিশীল প্রবণতা দেখা যেতে পারে। তবে সকালবেলার লেনদেনে বড় কোনো নেতিবাচক সংবাদ না থাকলেই তা সম্ভব হবে।
ফার্মাসিউটিক্যালস, খাদ্য ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা আজও লক্ষ্য করা গেছে, যা আগামীকালও অব্যাহত থাকতে পারে।
তবে ১৭৮টি কোম্পানির দরপতনের হার এখনও উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি, যা বাজারে একটি মিশ্র বার্তা দিচ্ছে। পাশাপাশি, রাজনৈতিক এবং বৈদেশিক অনিশ্চয়তাও বাজারে সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার কারণ হিসেবে কাজ করছে।
বিশ্লেষকদের পরামর্শ: খাতভিত্তিক বিনিয়োগেই নিরাপদ লাভ
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বল্পমেয়াদি লাভের আশায় যারা বাজার থেকে সরে গিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই আবার ধীরে ধীরে ফিরছেন। তবে বাজারে বড় ধরনের ঊর্ধ্বমুখী গতি ফিরিয়ে আনতে হলে প্রয়োজন নীতিগত স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগবান্ধব প্রণোদনা প্যাকেজ।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের প্রতি পরামর্শ হলো—
সতর্ক থেকে খাতভিত্তিক বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করুন। বিশেষ করে যেসব খাতে স্থিতিশীলতা রয়েছে এবং ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি, সেগুলোর প্রতি ধাপে ধাপে পুঁজি বাড়ানোই এখন সবচেয়ে নিরাপদ কৌশল।
১৫ জুনের বাজার পরিস্থিতি শেয়ারবাজারে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক স্থিতি ফিরিয়ে এনেছে। যদিও বড় কোনো ঊর্ধ্বমুখী গতি দেখা যায়নি, তথাপি বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা বৃদ্ধি এবং শক্তিশালী খাতগুলোর চাঙ্গা অবস্থান ভবিষ্যতের বাজারের জন্য আশাবাদের ইঙ্গিত দিচ্ছে।