img

শেয়ারবাজারে আস্থার ইঙ্গিত, চাঙ্গা খাদ্য, বিদ্যুৎ ও বস্ত্র খাত!

প্রকাশিত :  ১৬:২০, ১৫ জুন ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ারবাজারে আস্থার ইঙ্গিত, চাঙ্গা খাদ্য, বিদ্যুৎ ও বস্ত্র খাত!

সপ্তাহজুড়ে ওঠানামার পর দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) রোববার (১৫ জুন) দিনের শেষে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪.৯১ পয়েন্ট বা ০.৩২ শতাংশ বেড়ে ৪৭২৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এই সামান্য উত্থানও বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি ইতিবাচক বার্তা হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, দিনভর মোট ৯৪ হাজার ১৩৫টি ট্রেডের মাধ্যমে প্রায় ১০ কোটি ৬৭ লাখ শেয়ার হাতবদল হয়েছে। এ সময় মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৬৩ কোটি ৩ লাখ টাকা।

দিনের শেষে ১৪১টি কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে, কমেছে ১৭৮টির, এবং ৬৮টি কোম্পানির দর অপরিবর্তিত ছিল। যদিও দরপতনের সংখ্যা বেশি ছিল, তবে বাজার বিশ্লেষকদের মতে, কিছু বৃহৎ মূলধনী কোম্পানির শেয়ারে ক্রয়চাপ থাকায় সূচক ঊর্ধ্বমুখী রাখতে সহায়তা করেছে।

খাতভিত্তিক চিত্র: এগিয়ে খাদ্য, বিদ্যুৎ ও বস্ত্র

দিনের লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, খাদ্য ও জ্বালানি খাত শক্ত অবস্থানে ছিল। বিশেষত বস্ত্র খাতে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারে মূল্যবৃদ্ধির ধারা ছিল স্পষ্ট, যা দীর্ঘদিন পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতেও ছিল দৃঢ়তা। এই খাতের অন্যতম কোম্পানি BEACHTHACH দিনশেষে ৯.৮৮ শতাংশ দরবৃদ্ধি পেয়ে ১৯.৭৩ কোটি টাকার রেকর্ড লেনদেন করেছে। এছাড়া KPCL ও অন্যান্য পাওয়ার কোম্পানির শেয়ারেও চাঙ্গা প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।

ঔষধ ও রসায়ন খাতেও ইতিবাচক গতি ছিল। বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের আস্থার খাত হিসেবে এই সেক্টরের প্রতি এখনও ভরসা অব্যাহত রয়েছে।

ইঞ্জিনিয়ারিং খাতেও কিছু শেয়ারে উল্লেখযোগ্য মুভমেন্ট দেখা গেছে। বাজারে গুঞ্জন রয়েছে—নতুন প্রকল্প অনুমোদন ও রপ্তানি আদেশ পাওয়ার সম্ভাবনার কারণে কিছু কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে।

স্থবিরতা ও দুর্বলতা: কিছু খাত পিছিয়ে

অন্যদিকে, ট্যানারি, সিমেন্ট, এবং রিয়েল এস্টেট ও সার্ভিস সেক্টরের বেশিরভাগ কোম্পানি আজ বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ হারিয়েছে। এসব খাতে লেনদেন ছিল স্থবির এবং শেয়ারদরে দেখা গেছে মৃদু পতন।

মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও কিছু ব্যাংকিং শেয়ারের পারফরম্যান্সও তুলনামূলকভাবে দুর্বল ছিল।

‘মার্কেট ম্যাপ’-এ স্পষ্ট শক্তিশালী সংকেত

দিনশেষের ‘মার্কেট ম্যাপ’ বিশ্লেষণে BEACHTHACH ও KPCL-এর মতো কোম্পানির উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স বাজারে আস্থার বার্তা দিয়েছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ খাতে বিশাল লেনদেন পুরো বাজারকে কিছুটা স্থিতিশীলতা দিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এ চিত্রপট প্রমাণ করে বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ধীরে ধীরে বাড়ছে, এবং বেশিরভাগ সক্রিয়তা কেন্দ্রীয়ভাবে ঘনীভূত হচ্ছে শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে।

আগামী দিনের পূর্বাভাস: সতর্ক আশাবাদ

বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামীকাল সোমবার (১৬ জুন) সূচকে সামান্য ঊর্ধ্বমুখী অথবা স্থিতিশীল প্রবণতা দেখা যেতে পারে। তবে সকালবেলার লেনদেনে বড় কোনো নেতিবাচক সংবাদ না থাকলেই তা সম্ভব হবে।

ফার্মাসিউটিক্যালস, খাদ্য ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা আজও লক্ষ্য করা গেছে, যা আগামীকালও অব্যাহত থাকতে পারে।

তবে ১৭৮টি কোম্পানির দরপতনের হার এখনও উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি, যা বাজারে একটি মিশ্র বার্তা দিচ্ছে। পাশাপাশি, রাজনৈতিক এবং বৈদেশিক অনিশ্চয়তাও বাজারে সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার কারণ হিসেবে কাজ করছে।

বিশ্লেষকদের পরামর্শ: খাতভিত্তিক বিনিয়োগেই নিরাপদ লাভ

বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বল্পমেয়াদি লাভের আশায় যারা বাজার থেকে সরে গিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই আবার ধীরে ধীরে ফিরছেন। তবে বাজারে বড় ধরনের ঊর্ধ্বমুখী গতি ফিরিয়ে আনতে হলে প্রয়োজন নীতিগত স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগবান্ধব প্রণোদনা প্যাকেজ।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের প্রতি পরামর্শ হলো—

সতর্ক থেকে খাতভিত্তিক বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করুন। বিশেষ করে যেসব খাতে স্থিতিশীলতা রয়েছে এবং ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি, সেগুলোর প্রতি ধাপে ধাপে পুঁজি বাড়ানোই এখন সবচেয়ে নিরাপদ কৌশল।

১৫ জুনের বাজার পরিস্থিতি শেয়ারবাজারে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক স্থিতি ফিরিয়ে এনেছে। যদিও বড় কোনো ঊর্ধ্বমুখী গতি দেখা যায়নি, তথাপি বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা বৃদ্ধি এবং শক্তিশালী খাতগুলোর চাঙ্গা অবস্থান ভবিষ্যতের বাজারের জন্য আশাবাদের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

অর্থনীতি এর আরও খবর

img

৫ আগস্ট সারাদেশে বন্ধ থাকবে ব্যাংক

প্রকাশিত :  ১৪:৩২, ১৭ জুলাই ২০২৫

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে আগামী ৫ আগস্ট সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এ কারণে সেদিন সারা দেশের তফসিলি ব্যাংক বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রবল গণআন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। দিনটিকে ‘জুলাই অভ্যুত্থান দিবস’ ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট সরকারি ছুটির দিন হিসেবে দেশের সব তফশিলি ব্যাংক বন্ধ থাকবে। অতএব, সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে আগেভাগে প্রস্তুতি নিতে এবং আর্থিক লেনদেন পরিকল্পনা করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রবল গণআন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। দিনটিকে ‘জুলাই অভ্যুত্থান দিবস’ ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট সরকারি ছুটির দিন হিসেবে দেশের সব তফশিলি ব্যাংক বন্ধ থাকবে। অতএব, সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে আগেভাগে প্রস্তুতি নিতে এবং আর্থিক লেনদেন পরিকল্পনা করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া ছাত্রদের আন্দোলন শেষমেশ সরকার উৎখাতের ইতিহাস গড়ে। ৩৬ দিনের সেই আন্দোলনে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালাতে বাধ্য হন সাড়ে ১৫ বছর দোর্দণ্ড প্রতাপে দেশ চালিয়ে আসা শেখ হাসিনা।

শুরুতে এ আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পরে তা দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

সরকারের পক্ষে জবাব ছিল- গুলি, টিয়ারশেল আর লাঠি; এককথায় কেবলই বলপ্রয়োগ। প্রথমে ফেসবুক, পরে ইন্টারনেট বন্ধ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে চায় সরকার। তাতে হিতে বিপরীত হয়।

আন্দোলনে রক্তপাত শুরু হওয়ার ২০ দিনের মধ্যেই লাশ আর রক্তের বোঝা মাথায় নিয়ে পতন হয় দেড় দশকের আওয়ামী লীগ সরকারের। পালাতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা আর তার অমাত্যরা।