img

বিজয়া দশমী আজ, প্রতিমা বিসর্জনে শেষ হচ্ছে দুর্গোৎসব

প্রকাশিত :  ০৬:০০, ০২ অক্টোবর ২০২৫

বিজয়া দশমী আজ, প্রতিমা বিসর্জনে শেষ হচ্ছে দুর্গোৎসব

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার বিজয়া দশমী আজ। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সকালে দেবীর দশমী বিহিত পূজা দিয়ে শুরু হবে দিনব্যাপী আনুষ্ঠানিকতা। এরপর দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে পাঁচ দিনব্যাপী এই শারদ উৎসব। 

হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, দশমীর দিনে দেবী দুর্গা মর্ত্য ছেড়ে ফিরে যাবেন স্বামীগৃহ কৈলাসে। তাই মণ্ডপে মণ্ডপে আজ শুধুই বিষাদের ছায়া।

উলুধ্বনি, শঙ্খ, ঘণ্টা আর ঢাকঢোলের বাজনায় থাকবে দেবী দুর্গার বিদায়ের সুর। বিসর্জনের সকালে হবে বিহিত পূজা। এরপর হবে দর্পণ ও বিসর্জন।

বিজয়া দশমীতে সারাদেশে স্থানীয় আয়োজন ও সুবিধামতো সময়ে শোভাযাত্রার মাধ্যমে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে।

হিন্দুশাস্ত্র মতে, এদিন দেবী দুর্গা মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসে ফিরে যাবেন দোলায় চড়ে। এদিন দেবী দুর্গা মর্ত্যে ছেড়ে কৈলাসে ফিরে যাবেন দোলায় চড়ে।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মানুষের মনের অসুরিক প্রবৃত্তি, কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেওয়াই বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এসব প্রবৃত্তি বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য।

দেবী দুর্গার বিদায়ের আগে মণ্ডপে মণ্ডপে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠবেন নারীরা। দেবীর চরণের সিঁদুর নিয়ে নিজেদের রাঙিয়ে তুলবেন তারা। শাস্ত্রমতে, স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন নারীরা দেবী দুর্গার সিঁথিতে দেওয়া সিঁদুর নিজের সিঁথিতে লাগিয়ে আশীর্বাদ নেন। পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গা মাকে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর একে অপরকে সিঁদুর লাগিয়ে দেন তারা। সিঁদুর খেলা শেষে শেষবারের মতো দেবীর আরাধনা করেন তারা।

রাজধানীর ১০টি ঘাটে বিসর্জন হবে দুর্গাপূজার ২৫৪টি মণ্ডপের প্রতিমা। বিসর্জন নির্বিঘ্ন করতে বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির ৭ হাজার সদস্য। আর বিসর্জনের সময় নৌ-দুর্ঘটনা রোধে টহল দেবে নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ড। 

এবার রাজধানীর ২৫৪টি মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন হবে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ নদীর ১০টি ঘাটে। সবচেয়ে বেশি হবে বিনাস্মৃতি স্নান, ওয়াইস ও নবাববাড়ি ঘাটে। এছাড়াও, লালকুটি, মিলব্যারাক, পোস্তগোলা শ্মশান, বসিলা ব্রিজ, আমিনবাজার ও আশুলিয়ার ধউরে বিআইডব্লিউটিসি ফেরিঘাটে হবে বিসর্জন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ডিএমপি জানিয়েছে, রাজধানীর বেশিরভাগ মণ্ডপের প্রতিমা কড়া নিরাপত্তায় আনা হবে ঢাকেশ্বরীতে। সেখান থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে যাবে বিনাস্মৃতি স্নান ঘাটে। আর বিসর্জন ঘিরে মোতায়েন থাকবে সাড়ে ৪ হাজার পুলিশ সদস্য। ঘাটগুলো আনা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায়। স্ট্যান্ডবাই থাকবে বিশেসায়িত ইউনিট, সোয়ট, বোম্ব ডিস্পোজাল ও কে-নাইন ইউনিট।

পুলিশের পাশাপাশি বিসর্জনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে র‌্যাবও। ৯৪টি টহলের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও নিয়োজিত থাকবে তারা। সদরদফতসহ প্রতিটি ব্যাটালিয়নের কন্ট্রোল রুম থেকে মনিটরিং করা হবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

img

ইস্ট লন্ডন মসজিদের জুমার খুতবা : জীবন কোনো রঙ-তামাশা নয়

প্রকাশিত :  ০৮:০৭, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৮:১২, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

শাইখ রাশিদ খান

ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো—এই ধর্ম দুনিয়াবী কর্মকাণ্ডকে নিরুত‍সাহিত করে না। ইসলাম আমাদের বলে না যে, আমরা ধন-সম্পদ, পরিবার, আরাম বা সৌন্দর্য পছন্দ না করি। বরং কুরআনে আল্লাহ নিজেই এগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি আমাদের মনে করিয়ে দেন—এই জিনিসগুলো আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য নয়।

কুরআনে বলা হয়েছে, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার শোভা। আর সৎকর্মসমূহ, যা চিরস্থায়ী, তা আপনার প্রতিপালকের নিকট অধিক প্রতিদানযোগ্য এবং প্রত্যাশার দিক দিয়ে উত্তম। (সূরা কাহাফ, আয়াত ৪৬)

এই আয়াত আমাদের শিখায় যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। ধন-সম্পদ, মর্যাদা, পরিবার—সবই জীবনের সৌন্দর্য, কিন্তু এগুলো ভিত্তি নয় । এগুলো আমাদের আল্লাহর পথে সহায়তা করার জন্য, পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য নয়।

কুরআনের একটি বাস্তব উদাহরণ

সুরা কাহাফে এই আয়াতের আগেই আল্লাহ তায়ালা দুই ব্যক্তির একটি গল্প তুলে ধরেছেন, যাদের একজনের ছিল বিশাল বাগান, ফল-ফলাদি, নদী—সবই ছিল। কিন্তু সে অহংকারী হয়ে পড়ল। বলল, "আমি মনে করি না যে এটা কখনো শেষ হবে। " এমনকি সে এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিল যে, যদি কেয়ামত আসে, তাহলেও সে আরও ভালো কিছু পাবে। এখানে তার সম্পদে সমস্যা ছিল না—সমস্যা ছিল তার অহংকারে, তার আত্মতুষ্টিতে এবং আল্লাহকে ভুলে যাওয়ায়।

ইসলাম দুনিয়াকে পরিত্যাগ করতে বলে না

ইসলাম কখনোই ইহ জীবনকে পরিত্যাগ করতে বলে না। বরং বলে- অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে । দুনিয়ার সৌন্দর্য উপভোগ করো, কিন্তু আল্লাহর দায়িত্ব ভুলে যেও না। উম্মাহর দুঃখ-কষ্ট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না।

আজ আমরা দেখছি একটা আশার আলো—অনেক সন্তান পবিত্র কুরআন হিফজ করছে, তরুণেরা মসজিদে ফিরছে, বড়রাও ইসলাম শিখছে । আলহামদুলিল্লাহ, এটি একটি বড় নিয়ামত, বিশেষ করে মুসলিম জাহান নানা কষ্টে আছে । কিন্তু এই ফিরে আসা যেন শুধু কোনো সংকট বা আবেগের প্রতিক্রিয়া না হয় । এটা হতে হবে স্থায়ী পরিবর্তন।

শুধু আবেগ দিয়ে ইসলাম চলে না

আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে নাড়া দেয় তখনই, যখন কোনো বড় ঘটনা ঘটে—যেমন গাজার কোনো খবর, অথবা কোনো হৃদয়বিদারক ভাষণ । আমরা তখন দান করি, দোয়া করি, কাঁদি। তারপর… ভুলে যাই।

ইসলাম এমন অস্থায়ী আবেগ চায় না। আল্লাহ চান নিয়মিত করা। তিনি চান গম্ভীরতা। শুধু মুহূর্তে নয়, মুহূর্ত পেরিয়ে যাওয়ার পরেও আমরা যেন আন্তরিক থাকি।

ইসলাম চায় ত্যাগ—আবশ্যক নয়, প্রয়োজনীয়

সত্যিকার ঈমান মানে কিছু না কিছু ত্যাগ করা—সময়, সম্পদ, আরামপ্রদ জীবন । ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার বদলানো বা র‍্যালিতে অংশ নেওয়া সহজ, কিন্তু প্রকৃত সহমর্মিতার বহি:প্রকাশ হলো, রাতের বেলা উঠে দোয়া করা, নিয়মিত ও গোপনে দান করা, যখন কোনো খবর আর মিডিয়ার শিরানাম থাকেনা, তখনও কষ্ট অনুভব করা। যদি আমরা ১০ মিনিট সময় বের করে দোয়া করতে পারিনা, তাহলে ভাবা দরকার—আমরা আসলেই কতটা আন্তরিক?

আমরা আমাদের সন্তানদের কী শিখাচ্ছি?

যদি আমরা নিজেদের না বদলাই, তাহলে আমাদের সন্তানেরা ইসলামকে মনে করবে শুধু কোনো মজার অনুষ্ঠান বা অনলাইন কনটেন্ট । তারা বুঝবে না কষ্ট কীভাবে সহ্য করতে হয়। ইসলাম তাদের কাছে শুধু সুখের ধর্ম হয়ে উঠবে—উদ্দেশ্য, ইবাদত, দায়িত্বের ধর্ম নয়।

আল্লাহ বলেন, হে বিশ্বাসীগণ, ইসলাম পূর্ণরূপে গ্রহণ করো। (সূরা বাকারা, আয়াত ২০৮)

মানে, আধা-আধা নয়, সম্পূর্ণভাবে। শুধু আবেগে নয়, দায়িত্বেও।

রাসুল (সা:) বলেছেন “যে ব্যক্তি দুনিয়াকেই তার প্রধান চিন্তা বানায়, আল্লাহ তার সব কাজ বিখণ্ডিত করে দেন। কিন্তু যে ব্যক্তি আখিরাতকে তার চিন্তা বানায়, আল্লাহ তাকে পরিপূর্ণ করেন এবং দুনিয়াও তার কাছে আসে, যদিও সে সেটা চায় না।” আল্লাহকে আগে রাখলে, দুনিয়া আমাদের পেছনে আসে । দুনিয়াকে আগে রাখলে, নিজের মধ্যে শুধু শুন্যতা অনুভব হবে।

হে আল্লাহ, আমাদের আন্তরিক বানাও। আমাদের সাহায্য করো যেন আমরা সব কাজে তোমাকে অগ্রাধিকার দিই । তোমার জন্য ত্যাগ করতে শিখি। দুনিয়ার সৌন্দর্যে বিভোর না হই। উম্মাহর কষ্টে যেন আমাদের কষ্ট হয়, এমন অন্তর দাও। এবং আমাদের সন্তানদের শেখাও—ইসলাম শুধু আনন্দ নয়, দায়িত্ব, ত্যাগ আর পরিপূর্ণতা।


(ইস্ট লন্ডন মসজিদের জুমার খুতবা । তারিখ: ১০ অক্টোবর ২০২৫ ।
শায়েখ রাশিদ খান : অতিথি খাতিব ।)

ধর্ম এর আরও খবর