img

শিক্ষকদের দাবির সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত বিএনপি: তারেক রহমান

প্রকাশিত :  ১৭:৪১, ০৭ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৭:৫১, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

শিক্ষকদের দাবির সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত বিএনপি: তারেক রহমান

বিএনপি নীতিগতভাবে শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার দাবির সাথে একমত রয়েছে। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মঙ্গলবার (রাজধানীর) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে এ কথা জানিয়েছেন।

‘বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা, অবসর বয়স ৬৫ বছর নির্ধারণ, ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ ও শিক্ষক-কর্মচারিদের চাকুরি জাতীয়করণের দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

শিক্ষকদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, এই সমাবেশে আপনাদের অনেকের বক্তব্যে শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ প্রসঙ্গ এসেছে। কেউ কেউ মনে হয়, আরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিভুক্ত করার কথা বলেছেন। এছাড়াও আপনাদের এই সংগঠনের বাইরেও বেসরকারি শিক্ষকদের বিভিন্ন বেশ কিছু দাবি রয়েছে। দেশের একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির সঙ্গে নীতিগতভাবে অবশ্যই একমত। 

তিনি বলেন, রাষ্ট্র এবং রাজনীতিক সংস্কার কিংবা নাগরিক উন্নয়নে আমরা যত উদ্যোগ গ্রহণ করি না কেন, শিক্ষা ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণ এবং শিক্ষকদের আর্থসামাজিক নিরাপত্তা সম্মান যদি আমরা নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে অবশ্যই আমরা যে লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছি, সেটিতে আমাদের কাঙ্খিত সুফল মিলবে না। 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের ভোটে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে অবশ্যই রাষ্ট্রের সামর্থ অনুযায়ী শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা বেষ্টিনি বাড়ানো কিংবা চাকরি স্থায়ীকরণ কিংবা জাতীয়করণের বিষয়টি ইতিবাচক বিবেচনার জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিশন আমরা গঠন করবো। একই সঙ্গে প্রচলিত শিক্ষা কারিকুলামকে ব্যবহারিক এবং কারিগরি শিক্ষা প্রধান করে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষা সংস্কার কমিশনও আমরা গঠন করতে চাই। 

নৈতিকতা এবং ধর্মীয় সামাজিক মূল্যবোধের আলোকে কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন ও শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকরণে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না যদি না যায়, তাহলে এই কম্পিটিশনের বিশ্বে আমাদের দেশ এবং জাতি হিসেবে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন হবে, বলেন তিনি। 

তারেক রহমান বলেন, অতীতের ভালো দৃষ্টান্তগুলো থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন এবং খারাপ দৃষ্টান্তগুলো বর্জনের মধ্য দিয়ে একটি সুন্দর, সমৃদ্ধ এবং একটি প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ণ করা আমাদের অঙ্গীকার। 

এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ- আমাদেরকে মেধা, মননে, জ্ঞানে এবং বিজ্ঞানে অবশ্যই সমৃদ্ধ হতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন,  আমাদের রাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে জ্ঞানভিত্তিক সমাজের ওপরে এবং দেশের শিক্ষকরাই হচ্ছেন জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র সমাজ গড়ার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। এই হাতিয়ার যদি দুর্বল হয় তাহলে অবশ্যই রাষ্ট্রকে শক্তিশালী ভিত্তির উপরে মনে হয় দাঁড় করানো সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, রাষ্ট্র, সরকার এবং প্রশাসন ও সমাজের নানা বাস্তবতায় একজন শিক্ষক যদি নিজেই নিরানন্দ পরিস্থিতিতে থাকেন, তাহলে তার দ্বারা জ্ঞানের মধ্যে আনন্দ জাগ্রত করা মনে হয় সম্ভব নয়। এ কারণেই রাষ্ট্র এবং সমাজে শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি অবশ্যই সামাজিক সম্মান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুঁথি নির্ভর না রেখে কারিকুলামকে স্কুল পর্যায় থেকে ব্যবহারিক এবং কারিগরি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থায় রূপান্তর করার বর্তমান যুগে বোধহয় আর কোন বিকল্প নেই। 

তিনি বলেন, শিক্ষকরা যাতে নিজেকে একজন রোল মডেল হিসেবে শিক্ষার্থীদের সামনে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে স্থাপন করতে পারেন, সে ধরনের বাস্তবধর্মী শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বিএনপি কাজ করছে, বিএনপির কর্মপরিকল্পনায় রয়েছে। 

তারেক রহমান বলেন, শিক্ষকতা পেশা কখনোই উপায়হীন বিকল্প কিংবা একটি সাধারণ চাকরির মতন হতে পারে না। বরং শিক্ষাদীক্ষায় সবচেয়ে মেধাবী মানুষটি যাতে কর্মজীবনে প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নিতে পারে বা নিতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। আমরা শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে সেভাবেই ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করছি, সে নিয়েও আমরা কাজ করছি। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কিংবা বিজয় দিবসসহ প্রতিবছর বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীপেশারা মানুষকে দেশের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় ভবনে আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকেন। শুভেচ্ছা বিনিময় করে থাকেন। আমি মনে করি, এ ধরনের জাতীয় দিবসগুলোতে আমন্ত্রিত অতীতের তালিকায় অবশ্যই প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুলের কমপক্ষে একজন করে শিক্ষককে আমন্ত্রণ জানানো অত্যন্ত জরুরি। 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আসন্ন নির্বাচনে আপনাদের বিরাট ভূমিকা আছে, আপনারা প্রতিটি জায়গায় দায়িত্ব পালন করবেন। আজকে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে নির্বাচনকে ভিন্ন খাতে পরিচালিত করবার। কেউ যেন সেটাকে (নির্বাচন) ভিন্ন খাতে পরিচালিত করতে না পারে সেদিকে আপনারা সজাগ দৃষ্টি রাখবেন।

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে জনগণের ভোটে তারেক রহমানকে আমরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই- এটাই জনগণের কাছে শিক্ষকদের দাবি। তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে শিক্ষক-কর্মচারীদের আর কোন দাবি-দাওয়া জানাতে হবে না। 

এসময় শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার যে বাড়ি ভাড়া বাড়িয়েছে তা প্রত্যাখান করার ঘোষণা দেন তিনি।

মহাসমাবেশকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষকরা যোগ দেন। কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে বেলা আড়াইটায় সমাবেশ শুরু হয়। পরে জাতীয় ও দলীয় সংগীতসহ চাকুরী জাতীয়করণের দাবিতে গান পরিবেশন করা হয়।

মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দারসহ শিক্ষক নেতৃবৃন্দরা।


img

হাসিনার রায় নিয়ে যা বলল জাতিসংঘ

প্রকাশিত :  ১৮:৫৪, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর)। 

আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) জেনেভা থেকে এক বিবৃতিতে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান সংস্থাটির মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি।

তিনি বলেন, ‘ঢাকায় আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় দিয়েছেন। এটি গত বছরের বিক্ষোভ দমনের সময় সংঘটিত গুরুতর অধিকার লঙ্ঘনের শিকারদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমাদের অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে আমরা বারবার দাবি জানিয়ে এসেছি যে— নির্দেশনা ও নেতৃত্বের অবস্থানে থাকা ব্যক্তিসহ সব দোষীর আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী জবাবদিহির মুখোমুখি করা হোক। পাশাপাশি আমরা দাবি করেছি, ভুক্তভোগীদের যেন কার্যকর প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা হয়।’

শামদাসানি বলেন, ‘আমরা এই মামলার বিচারকার্য সরাসরি পর্যবেক্ষণ করিনি, তবে আন্তর্জাতিক অপরাধের অভিযোগে পরিচালিত যেকোনো জবাবদিহি প্রক্রিয়ায় পর্যাপ্ত ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক মান অনুসরণের প্রয়োজনীয়তার কথা আমরা নিয়মিতভাবে বলে আসছি। বিশেষত এ ক্ষেত্রে বিচার দোষীর অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে—এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিষয়টিও দুঃখের সঙ্গে উল্লেখ করছি, আমরা সব পরিস্থিতিতেই মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করি।’

রায়ের পর সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সংযত আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে শামদাসানি বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক আশা প্রকাশ করেছেন যে বাংলাদেশ সত্য উদ্ঘাটন, ক্ষতিপূরণ এবং ন্যায়বিচারের একটি সমন্বিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডসম্মত, অর্থবহ ও রূপান্তরমূলক নিরাপত্তা খাত সংস্কার থাকা উচিত, যাতে এসব লঙ্ঘন ও নির্যাতন পুনরায় না ঘটে। এ কাজে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে সহযোগিতা করতে হাইকমিশনারের কার্যালয় সদা প্রস্তুত।’