img

চোখের জল কমলে ক্ষতির আশঙ্কা

প্রকাশিত :  ০৯:২৫, ১৪ জুলাই ২০১৯

চোখের জল কমলে ক্ষতির আশঙ্কা
কাজের জন্য একটানা তাকিয়ে থাকতে হয় কম্পিউটার বা ল্যাপটপের দিকে। বাড়িতে ফিরেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সরব থাকার কারণে স্মার্টফোন বা ল্যাপটপেই চোখ আটকে। অথবা দীর্ঘ সময় টিভির পর্দায় বুঁদ রয়েছেন কিংবা ভিডিয়ো গেম খেলায় মশগুল? এতে যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আপনার চোখ, সে দিকে লক্ষ রাখছেন কি? চোখের জল শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন অনেক মানুষ। ড্রাই আইজ় ডেকে আনতে পারে অন্ধত্বও। ড্রাই আইজ় বা শুষ্ক চোখের সমস্যার একাধিক কারণের মধ্যে একটানা অনেকক্ষণ স্ক্রিনে আটকে থাকাকে চিকিৎসকেরা প্রধান কারণ বলে মনে করছেন।   
চোখের উপরে জলের একটি পাতলা স্তর থাকে। জল, তেল, পিচ্ছিল মিউকাস এবং জীবাণুরোধী অ্যান্টিবডি দিয়ে তৈরি এই চোখের জল। চোখের গ্রন্থি থেকে কোনও কারণে জল নিঃসরণ কম হলে চোখ শুষ্ক হয়ে পড়ে। সমস্যা দেখা দেয় তখনই। চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. সুমিত চৌধুরী জানালেন, ‘‘চোখে যথেষ্ট পরিমাণে জল তৈরি না হলে বা সেই জল লুব্রিক্যান্ট হিসেবে যথেষ্ট না হলে চোখ কড়কড় করে, জ্বালা ভাব অনুভূত হয়। আলোর দিকে তাকানোও যায় না। মিউকাসে ভরে যায় চোখ। ঝাপসা হয়ে আসে দৃষ্টি।’’ 
 
ঝুঁকি কাদের বেশি
বয়স বাড়লে, ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে এই সমস্যা বাড়ে। মেয়েরা মেনোপজ়ের পরেও এই সমস্যায় ভুগতে পারেন। আবার অতিরিক্ত এসি ঘরে বেশি সময় কাটালেও ড্রাই আইজ়ের আশঙ্কা থাকে। প্রতিনিয়ত দূষিত আবহাওয়াও শুষ্ক চোখের কারণ হতে পারে। আবার কোনও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া শোগ্রেন সিনড্রোমও (এক ধরনের অটোইমিউন ডিজ়িজ়) চোখের উপরে আঘাত আনতে পারে। ঘুমোনোর সময়ে যাদের চোখ পুরোপুরি বন্ধ হয় না, যেমন স্ট্রোক বা স্নায়ু সমস্যার রোগী, তাঁদেরও চোখের জল শুকিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। ভিটমিন এ-র ঘাটতিও চোখের জল কমার কারণ হতে পারে। এই সমস্যা অনেক দিন ধরে চললে এবং ঠিক মতো চিকিৎসা না করলে দৃষ্টিশক্তি লোপ পাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
 চোখের শুষ্কতা বোঝার উপায়
কী করে বুঝবেন, সমস্যাটি আপনার চোখে দানা বেঁধেছে? 
•চোখ অনবরত চুলকালে বা বারবার চোখ রগড়াতে ইচ্ছে হলে
•চোখ ভারী-ভারী মনে হলে 
•চোখ খটখটে শুকনো লাগলে বা চোখে কিছু পড়েছে মনে হলে 
•চোখ লাল হয়ে গেলে বা অবিরাম জল পড়তে থাকলে 
•আলোয় অস্বস্তি হলে, কাছের ও দূরের বস্তু দেখতে অসুবিধে হলে
•কোনও কোনও ক্ষেত্রে মাথাব্যথা থেকে জ্বর এমনকি নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপসর্গ হলে
এই সমস্ত লক্ষণ দেখা দিলে ড্রাই আইজ় হওয়া অস্বাভাবিক নয়। 
চোখের শুষ্কতা কমাতে 
•হালকা গরম জলে পরিষ্কার কাপড়ের টুকরো বা তুলো ডুবিয়ে রাখুন। সেটি থেকে বাড়তি জল নিংড়ে চোখের উপরে পাঁচ মিনিট রাখুন। তার পরে আঙুলের হালকা চাপে চোখের উপরের ও নীচের পাতায় মালিশ করুন। কাপড়টি একেবারে ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত করতে হবে। এতে চোখের ময়লা পরিষ্কার করে চোখের জল বা অশ্রুর মান আগের চেয়ে ভাল হবে। কমে আসবে চোখের লাল বা জ্বালা ভাবও 
•ঘন ঘন ও জোরে জোরে চোখের পাতা ফেলুন। এতে চোখের তরল পদার্থগুলি বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হয়ে কর্নিয়াকে ভিজিয়ে রাখবে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে না থেকে ঘন ঘন পলক ফেলার চেষ্টা করুন
•দীর্ঘ সময় কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ না রেখে মাঝেমাঝে বিরতি দেওয়া দরকার। কাজের ফাঁকেই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চোখের কয়েকটি ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। সুযোগ পেলেই সবুজ গাছপালার দিকে তাকান
  •ঠিক আলোর ব্যবহার প্রয়োজন। খুব কম আলো বা অন্ধকারে যেমন কাজ করবেন না, তেমনই অযথা কম্পিউটার ও মোবাইলের ব্রাইটনেস বাড়াবেন না। চোখের লেভেলে মনিটর থাকতে হবে
 •কম্পিউটার মনিটরে ও চশমায় অ্যান্টিগ্লেয়ার স্ক্রিন এবং চশমায় অ্যান্টি রিফ্লেকটিভ গ্লাস ব্যবহার করাও জরুরি
 •চোখ তরতাজা রাখতে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চোখের ড্রপ বা অয়েনমেন্ট ব্যবহার করুন
 •খাদ্য তালিকায় তাজা আনাজ, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন ছোট মাছ, আখরোট, সয়াবিনের তেল, ডিম রাখতে পারলে ভাল
উপশমের সন্ধান
চোখের শুষ্কতার চিকিৎসার শুরুতেই কারণ নির্ণয় করা জরুরি। স্ক্রিন টাইম বাড়ার জন্য না কি অনেকক্ষণ ঠান্ডা ঘরে থাকার ফলে অথবা অন্তর্নিহিত রোগের কারণে— উৎস বুঝে চিকিৎসা চলবে। ডা. চৌধুরী জানালেন, ‘‘টিয়ার সিক্রেশন টেস্ট, টিয়ার কোয়ালিটি টেস্ট, টিয়ার ভলিয়ুম অ্যাসেসমেন্ট করে চোখের জল তৈরি হচ্ছে কি না বা চোখের জল তৈরি হলেও সেটি যথেষ্ট পরিমােণ রয়েছে কি না— তা জেনেই প্রতিকার হিসেবে কৃত্রিম চোখের জল (আর্টিফিশিয়াল 
টিয়ার্স) তৈরি করতে হবে। কার্বক্সিমিথাইল সেলুলোজ, সোডিয়াম হাইলুরোনেট শুষ্কতা কমানোর সলিউশন হিসেবে খুব ভাল কাজ করে।’’ এতেও সমস্যা না গেলে আই ড্রপ, অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। 
চোখের শুষ্কতাকে অবহেলা করা উচিত নয়। এটি কর্নিয়ার ক্ষতি করার পাশাপশি অন্ধত্বের কারণও হতে পারে। সুস্থ থাকতে গেলে রোগের চিকিৎসাই একমাত্র উপায় নয়। প্রাথমিক শর্ত হল সচেতনতা। কর্মব্যস্ততার মাঝেই সময় বার করুন, মেনে চলুন কয়েকটি নিয়ম। তা হলে সুন্দর থাকবে চোখ। ভাল থাকবেন আপনিও। 
img

টাইপ টু ডায়বেটিসের সঙ্গে রয়েছে ঘুমের সম্পর্ক

প্রকাশিত :  ১৩:৪৯, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১৩:৫৭, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

টাইপ টু ডায়বেটিসের সঙ্গে রয়েছে ঘুমের অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক। প্রতি রাতে যারা ছয় ঘণ্টার কম ঘুমান তাদের টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি থাকে। সম্প্রতি একটি গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্যা ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে জামা নেটওয়ার্ক ওপেন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের বরাতে বলা হয়েছে, যারা প্রতিদিন ছয় ঘণ্টার কম সময় ঘুমান তাদের টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১৬ শতাংশ। এই ক্ষতি স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করেও পূরণ করা যাবে না।

যুক্তরাজ্যের প্রায় দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার প্রাপ্তবয়স্কের উপর গবেষণায় দেখা গেছে, যারা রাতে সাত ঘণ্টার বেশি ঘুমান তাদের তুলনায় যারা তিন থেকে চার ঘণ্টা ঘুমান তাদের ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার মাত্রা ৪১ শতাংশ বেশি। যুক্তরাজ্যে আনুমানিক ৪.৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ টাইপ-টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং ১৩.৬ মিলিয়ন মানুষ তীব্র ঝুঁকিতে রয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাইপ-টু ডায়াবেটিস শরীরের চিনি বা গ্লুকোজ প্রক্রিয়ার ক্ষমতায়কে প্রভাবিত করে এবং শরীরে ইনসুলিন শোষণে বাধা দেয়; যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। সময়ের সাথে সাথে এটি গুরুতর শারীরিক ক্ষতি করতে পারে, বিশেষ করে স্নায়ু এবং রক্তনালির।

 যুক্তরাজ্যের বায়োব্যাঙ্কে সংরক্ষিত ২ লাখ ৪৭ হাজার ৮৬৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুসের চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার ১২ বছরের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণাটি করা হয়েছে।

এতে গবেষকরা দেখেছেন, যারা স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন, সপ্তাহে দুইবারের কম লাল মাংস, প্রতিদিন চার চামচের বেশি শাকসবজি, প্রতিদিন দুই বা তিন টুকরার বেশি ফল গ্রহণ করেন এবং সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন মাছ খান, এমন ৭,৯০৫ জনের টাইপ-টু ডায়াবেটিস দেখা দিয়েছে।

সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গবেষক ক্রিশ্চিয়ান বেনেডিক্ট বলেন, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস মেনে চলা ব্যক্তিদের টাইপ-টু ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ২৫ শতাংশ কম এবং যারা এই খাদ্যাভাস মেনে চলেছেন কিন্তু ৬ ঘণ্টার কম ঘুমিয়েছেন তাদের আক্রান্ত হওয়ার মাত্রা বেশি।