গবেষণা প্রতিবেদন

img

৪ ধরনের সাইবার অপরাধের প্রবণতা বেড়েছে

প্রকাশিত :  ১২:২৯, ২৫ অক্টোবর ২০১৯
সর্বশেষ আপডেট: ১২:৪২, ২৫ অক্টোবর ২০১৯

 ৪ ধরনের সাইবার অপরাধের প্রবণতা বেড়েছে

জনমত ডেস্ক: বর্তমানে ভার্চুয়াল জগতে বাংলাদেশের প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের মধ্যে ১১ ধাপে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এর মধ্যে ৪টিই নতুন। এগুলো হলো- ফোনে বার্তা পাঠিয়ে হুমকি, কপিরাইট আইন লঙ্ঘন, পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার এবং অনলাইনে কাজ করিয়ে নেয়ার কথা বলে প্রতারণা। গবেষণা প্রতিবেদন বলা হয়, আক্রান্তদের মধ্যে নারী ভুক্তভোগীদের সংখ্যা বেড়েছে ১৬.৭৭ শতাংশ। তবে ভুক্তভোগীদের ৮০.৬ শতাংশই আইনের আশ্রয় নেন না। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিসিএ ফাউন্ডেশন) একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তায় অংশীজনদের প্রতি ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

 প্রতিবেদন বিষয়ে দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান বলেন, আমরা ব্যর্থতার জন্য সরকারকে দায়ী করি। ভোটাধিকার গেছে, সেটা নিয়ে কথা বলি, দরকার আছে।

কিন্তু এসব নিয়ে যতোটা চিন্তা করি, তার চেয়ে একদম সম্পূর্ণ ভিন্ন, নতুন জগত সাইবার ওয়ার্ল্ড, সেটি নিয়ে ততোটা চিন্তা করি না। তিনি বলেন, আইন আমাদের ১০ থেকে ২০ ভাগ সুরক্ষা দিতে পারে, বাকিটা সচেতনতার মাধ্যমেই করতে হবে। সাইবার জগতে পরিবারকে বাঁচাতে হবে নিজেকেই। তিনি বলেন, আমাদের মায়েরা তার সন্তানকে স্কুলে-ভার্সিটিতে নিয়ে যায়। সমাজে মেয়েদের চোখে চোখে রাখা হয়। অথচ সেটি অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে যখন সন্তানের হাতে যখন ডিভাইস তুলে দিচ্ছে, স্মার্ট ফোন দিয়ে দিচ্ছে। হয়তো একটি রুমে তাকে আবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। কিন্তু তখন সে ইন্টারনেটের সুবিধা নিয়ে পুরো সাইবার জগতে বিচরণ করছে।

 এ বিষয়ে থিংক ট্যাংক ফর সিকিউর ডিজিটাল বাংলাদেশের আহ্বায়ক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রকৌশলী সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, কম্পিউটার এখন আমাদের জন্য সৌখিন কোনো বস্তু নয়, নিত্য প্রয়োজনীয়। অপরাধীরা আগের মতোই অপরাধ করছে, তবে ধরন পরিবর্তন হয়েছে। ইন্টারনেটের সুন্দর সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে অপরাধীরা ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয় এবং পরে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটায়। এর জন্য কোনো কারিগরি জ্ঞান দরকার হয় না। এগুলোকে বলে স্যোসাল ইঞ্জিনিয়ারিং। অপরাধীরা অর্থনৈতিক লাভের জন্য এসব করে।

 প্রযুক্তিবিদদের আন্তর্জাতিক সংগঠন আইসাকা ঢাকা চ্যাপ্টারের ডিরেক্টর (মার্কেটিং) মাহবুব উল আলম বলেন, সন্তান সাইবার জগতে কার সঙ্গে মিশছে, তার বন্ধু কে, কার সঙ্গে যোগাযোগ করছে, এসব বাবা-মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, সাইবার খাতে দেশের অভ্যন্তরিণ নিরাপত্তায় নিজেদেরই নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য পেশাদার সাইবার নিরাপত্তা প্রকৌশলী তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে।

 এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি মাহমুদা আফরোজ লাকী বলেন, দিন দিন সাইবার অপরাধ বাড়ছে। আমাদের অজান্তেই অনেক তথ্য অন্যের কাছে চলে যাচ্ছে। এ জন্য এসব বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে সচেতনতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সব সময় পরামর্শ দেই ম্যাসেঞ্জারের গোপনীয় বিষয়গুলো ডিলিট করতে। কারণ এমন বহু ঘটনা ঘটেছে যে, কারও ফেসবুক হ্যাক (বেদখল) করে ম্যাসেঞ্জারের একান্ত ব্যক্তিগত গোপন তথ্য ও ছবি নিয়ে টাকা দাবি করা হচ্ছে।

 এদিকে মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে সাইবার সচেতনতা মাস (ক্যাম) অক্টোবর-২০১৯। এবারের ক্যাম্পেইনের থিম নির্ধারণ করা হয়েছে 'Own IT. Secure IT. Protect IT.’ অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করো, নিরাপদ করো, সুরক্ষিত করো। হ্যাশট্যাগ #BeCyberSmart

 যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যালায়েন্স (এনসিএসএ) এর যৌথ নেতৃত্বে সচেতনতা তৈরির এই উদ্যোগে অংশীদার হয়ে ২০১৬ থেকে বাংলাদেশে সাইবার সচেতনতা মাস অক্টোবর পালন করে আসছে সিসিএ ফাউন্ডেশন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সমিতি, অলাভজনক সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়ে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা তৈরিতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা হিসেবে আন্তর্জাতিক এই ক্যাম্পেইন পরিচালিত হয়। এই ক্যাম্পেইনের নেতৃত্বে সহযোগী হিসেবে আরো আছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সাইবারসিকিউরিটি অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সি (সিআইএসএ)।

 বেসরকারি অংশীজনদের প্রতি ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাইবার পাঠ অন্তর্ভুক্তকরণ, অফিস-আদালতে দায়িত্বশীল পদে সৎ ও নৈতিক জনবল নিয়োগ নিশ্চিতকরণ, দক্ষ জনশক্তি তৈরি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে প্রশিক্ষিত জনবল বাড়ানো, সাইবার নিরাপত্তার কাজে দেশি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্ব দেয়া, সাইবার নিরাপত্তা কাজে অংশীজনদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সব সেবায় দেশীয় প্রযুক্তিকে জনপ্রিয়করণ, প্রবাসী জনশক্তিকে কাজে লাগানো এবং বেসরকারি উদ্যোগে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।

 সিসিএ ফাউন্ডেশন জানায়, একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সাইবার নিরাপত্তার সর্বোৎকৃষ্ট অনুশীলনের মধ্য দিয়ে কিভাবে নিজেকে সাইবার স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে পারে সে বিষয়ে এবারের থিমে উৎসাহিত করা হয়েছে। ২০১৯ সালের অক্টোবরকে আন্তর্জাতিকভাবে ১৬তম সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস হিসেবে উদযাপন করা হবে।

 এখন আমাদের অনলাইন এবং অফলাইন জীবনযাপনের মধ্যকার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের ঘর-বাড়ি, সামাজিক কল্যাণ, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং সর্বোপরি দেশের জাতীয় সুরক্ষার বিষয়গুলো ইন্টারনেট দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই এ বছর সাইবার সচেতনতা মাস (ক্যাম) অক্টোবরের সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে যেসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা হলো: প্রযুক্তি ব্যবহারে ব্যক্তিগত জবাবদিহিতা, উৎকৃষ্ট নিরাপত্তার চর্চায় প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ও ডিজিটাল তথ্য সুরক্ষায় (প্রাইভেসি) উৎসাহিত করা এবং সাইবার নিরাপত্তায় ক্যারিয়ার গঠনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা।

 মাসব্যাপী এই ক্যাম্পেইনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো- সকল নাগরিকের কাছে ইন্টারনেটে কিভাবে নিরাপদ থাকতে হয় এবং অনলাইনকে কিভাবে অধিকতর নিরাপদ করা যায় সেসব প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছে দেওয়া। প্রতি বছরের মতো এবারও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে সেসব তথ্য পৌঁছে দিতে সিসিএ ফাউন্ডেশন বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অনলাইনে ক্যাম্পেইন, আলোচনা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন আয়োজনে সহযোগিতা করা উল্লেখযোগ্য।

 সিসিএ ফাউন্ডেশন মনে করে, ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প এখন স্বপ্ন নয় বাস্তবতা। যতোই আমরা প্রযুক্তির বহুমুখী ব্যবহারের দিকে অগ্রসর হচ্ছি ততোই সচেতনতার বিষয়গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। অনলাইনে আমরা ব্যক্তি পর্যায়ে যাই করি তার প্রভাব সমষ্টিগত। তাই নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ জায়গা থেকে ইতিবাচক ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এটা আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব।

img

গুগলকে টেক্কা দিতে সার্চ ইঞ্জিন আনছে ওপেনএআই

প্রকাশিত :  ১২:৫১, ১২ মে ২০২৪

ফোনে কিংবা কম্পিউটারে গুগল সার্চ ইঞ্জিনই বেশি ব্যবহৃত হয়, যা গুগলের নিজস্ব উদ্ভাবন। এবার এই প্রতিষ্ঠানটিকে টেক্কা দিতে মাঠে নামছে চ্যাটজিপিটি ডেভেলপার ওপেনএআই। যারা চ্যাটজিপিটি সার্চ ইঞ্জিন চালু করছে। ধারণা করা হচ্ছে এই সার্চ ইঞ্জিন চালু হলে গুগলকে রীতিমতো বেকায়দায় ফেলবে।

ওপেনএআই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) সার্চ ইঞ্জিন ফিচার নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে। এর মাধ্যমে গুগল সার্চের সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতায় নামবে কোম্পানিটি। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তির বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে।

আগামী সোমবার ফিচারটি উন্মোচন করতে পারে কোম্পানিটি। ব্লুমবার্গ ও দ্য ইনফরমেশনের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অ্যালফাবেটের মালিকানাধীন গুগল কোম্পানি ও নতুন এআই স্টার্টআপ পারপ্লেক্সিটির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে নতুন একটি সার্চ ইঞ্জিন তৈরির চেষ্টা করছে মাইক্রোসফট সমর্থিত ওপেনএআই।

আগামী মঙ্গলবার গুগলের বার্ষিক ডেভেলপার কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে। কোম্পানিটির এআইভিত্তিক বিভিন্ন পণ্য এই অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হবে। তাই এই অনুষ্ঠানের আগেই ওপেনএআই নতুন সার্চ ইঞ্জিন উন্মোচন করতে পারে বলে বিভিন্ন প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন।

ব্লুমবার্গের মতে, চ্যাটবট চ্যাটজিপিটিরই একটি এক্সটেনশন হবে ওপেনএআইয়ের সার্চ ইঞ্জিনটি। এর মাধ্যমে চ্যাটজিপিটি ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি তথ্য ও উদ্ধৃতি তুলে ধরতে পারবে। টেক্সটের মাধ্যমে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হলে চ্যাটজিপিটি চ্যাটবট মানুষের মতো উত্তর দিতে পারে।

চ্যাটজিপিটিকে অনেক আগে থেকেই অনলাইনে তথ্য জানার বিকল্প হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্রযুক্তি খাতের বিশ্লেষকেরা। তবে এটি নির্ভুল ও ওয়েবসাইট থেকে সাম্প্রতিক তথ্য তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে।

মাইক্রোসফটের বিং সার্চ ইঞ্জিনের সঙ্গে ওপেনএআইয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়েছে। আর গুগল তার সার্চ ইঞ্জিনেই এআই জেনারেটিভ ফিচার যুক্ত করেছে। ওপেনএআই প্রাক্তন গবেষক পারপ্লেক্সিটি নামের নতুন একটি স্টার্টআপ শুরু করেন। কোম্পানিটির মূলধন এখন ১০০ কোটি ডলার। এআইভিত্তিক সার্চের ইন্টারফেসের কারণে স্টার্টআপটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই সার্চ ইঞ্জিনের ফলাফল উদ্ধৃতি, টেক্সট ও ছবি দেখায়। গত জানুয়ারিতে এক ব্লগ পোস্টে কোম্পানিটি বলে, এতে ১ কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে।

২০২২ সালের নভেম্বরে চালু হওয়ার পর ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অ্যাপ হিসেবে পরিণত হয় চ্যাটজিপিটি। সেসময় প্ল্যাটফর্মটিতে ১০ কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারী ছিল। তবে গত বছর চ্যাটজিপিটিতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়তে-কমতে দেখা যায়। ওয়েবসাইট ট্রাফিক ও পারফরম্যান্স বিশ্লেষণকারী সংস্থা সিমিলারওয়েবের মতে, ২০২৩ সালের মে মাসে প্ল্যাটফর্মটিতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারী ছিল। চ্যাটজিপিটিতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়াতে চাপের মুখে রয়েছে কোম্পানিটি।