img

শেয়ার বাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও আগামীকালের পূর্বাভাস -

প্রকাশিত :  ১৯:০১, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১৯:০১, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শেয়ার বাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও আগামীকালের পূর্বাভাস -

বাংলাদেশের শেয়ার বাজার গত কয়েক মাসে অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংকট, মুদ্রাস্ফীতি, এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাজারের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামীকাল শেয়ার বাজারের গতি কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে, তবে কিছু সেক্টরে বিশেষ গতিশীলতা দেখা যাবে।

গত সপ্তাহের বাজারের ওঠানামার প্রেক্ষিতে দেখা গেছে যে, বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী কিছু নির্দিষ্ট সেক্টরে মনোযোগ দিচ্ছেন। ব্যাংকিং সেক্টর, ফার্মাসিউটিক্যাল, এবং প্রযুক্তি খাতগুলোতে শেয়ার দর কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, নির্মাণ ও বস্ত্র খাতে কিছুটা স্থবিরতা দেখা গেছে। এসব প্রবণতা আগামীকালও অব্যাহত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কোন সেক্টর ভালো করতে পারে? 

১. ব্যাংকিং সেক্টর 

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত গত কয়েক মাসে মিশ্র ফলাফল দেখালেও, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক নীতিমালা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে ব্যাংকিং সেক্টরে পুনরায় উন্নতি দেখা যাচ্ছে। বিশেষত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে তারল্যের সংকট কাটিয়ে উঠতে সহায়ক নীতিগুলি কার্যকর হচ্ছে, যা আগামীকালে বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যাংকিং সেক্টরকে আকর্ষণীয় করতে পারে। ব্যাংকগুলোর আয় বাড়তে পারে সুদের হার নিয়ন্ত্রণে এবং ঋণের মানোন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা আগামীকাল ব্যাংকিং সেক্টরের দিকে বেশি ঝুঁকতে পারেন।

২. ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টর 

ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টর বরাবরই শেয়ার বাজারে একধরনের স্থিতিশীলতা ধরে রেখেছে। বিশেষত, বাংলাদেশে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ওষুধের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। কোভিড-পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীকাল এই সেক্টর ভালো করতে পারে, বিশেষ করে যারা ঔষধ রপ্তানি করছে বা দেশে চাহিদা পূরণ করছে।

৩. প্রযুক্তি সেক্টর 

প্রযুক্তি খাত সাম্প্রতিক সময়ে বেশ লাভজনক প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল ব্যাংকিং, ই-কমার্স, এবং সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো বিশেষত ভালো ফল দেখাচ্ছে। প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতা বাড়ার ফলে ভবিষ্যতে এই সেক্টরে ব্যাপক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামীকাল প্রযুক্তি খাতের শেয়ার দর কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।

৪. টেলিকম সেক্টর 

টেলিকম সেক্টর বাংলাদেশে অন্যতম বড় এবং স্থিতিশীল খাত হিসেবে বিবেচিত হয়। দেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবার প্রসার ঘটায় এই খাতটি ক্রমাগত শক্তিশালী হয়েছে। মোবাইল ডেটার চাহিদা বাড়তে থাকায় এবং ৫জি প্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণের ফলে টেলিকম সেক্টর বিনিয়োগের জন্য ভালো হতে পারে। আগামীকাল এই সেক্টরে শেয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য লাভজনক হতে পারে।


কোন সেক্টরগুলোতে সতর্ক থাকা প্রয়োজন? 

 ১. নির্মাণ সেক্টর 

নির্মাণ খাত সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা দুর্বল ফলাফল প্রদর্শন করছে। যদিও দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য নির্মাণ খাতে অনেক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে নির্মাণ সামগ্রীর দামের অস্থিতিশীলতা এই খাতের শেয়ারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই বিনিয়োগকারীদের এই সেক্টরে বিনিয়োগের আগে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

২. বস্ত্র সেক্টর 

বস্ত্র খাতও বর্তমানে কিছুটা চাপের মধ্যে রয়েছে। ইউরোপ এবং আমেরিকার বাজারে রপ্তানি হ্রাস পাওয়া, এবং ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে এই খাতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। যদিও বাংলাদেশে বস্ত্র খাত শক্তিশালী, তবে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই সেক্টরে আগামীকালের বাজারে শেয়ারের দাম নিম্নমুখী থাকতে পারে।

বাংলাদেশের শেয়ার বাজারের উপর আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিরও বড় প্রভাব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার বৃদ্ধি, বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি এবং চীনের অর্থনৈতিক সংকটের ফলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা কিছুটা সতর্ক হয়ে উঠেছেন। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের এই মন্দাভাব বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে না, কারণ দেশের শেয়ার বাজার মূলত অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগকারীদের উপর নির্ভরশীল। তবুও, বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অস্থিতিশীলতা কিছু খাতে প্রভাব ফেলতে পারে, যেমন পেট্রোলিয়াম ও শক্তি খাত।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামীকাল বিনিয়োগকারীদের কৌশলী হওয়া উচিত। মিশ্র প্রভাবের কারণে বাজারে একদিকে সুযোগ থাকবে, আবার অন্যদিকে কিছু ঝুঁকিও থাকবে। যাঁরা কম ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টরে বিনিয়োগ করতে চান, তাঁরা ব্যাংকিং, ফার্মাসিউটিক্যাল এবং টেলিকম সেক্টরের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন। অন্যদিকে, যাঁরা অপেক্ষাকৃত বেশি ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক, তাঁদের জন্য প্রযুক্তি খাত এবং কিছু অংশে বস্ত্র খাত আকর্ষণীয় হতে পারে।

তবে বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বাজারের পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্রেক্ষাপটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া। আগামীকাল শেয়ার বাজারে কোনও বড় পরিবর্তন না হলেও, সঠিক সেক্টরে বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।


রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম


অর্থনীতি এর আরও খবর

img

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দুর্নীতির তথ্য চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি

প্রকাশিত :  ১১:৫০, ০৩ অক্টোবর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১৩:৩২, ০৩ অক্টোবর ২০২৪

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পলায়নকারী শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের অধীনে করা চুক্তিগুলো পর্যালোচনায় গঠিত জাতীয় কমিটি জনগণের কাছে দুর্নীতির তথ্য চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা হয়।

ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যে কোনো ব্যক্তি ওই আইনের অধীনে চুক্তিবদ্ধ দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্থাগুলোর দুর্নীতি সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণাদি কমিটিতে পাঠাতে পারবেন। আগামীকাল (শুক্রবার) থেকে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে nationalreviewcommittee@gmail.com ই-মেইল করে জাতীয় রিভিউ কমিটিতে অভিযোগ দাখিল করা যাবে। তবে কমিটি প্রয়োজন মনে করলে পরে অভিযোগ দাখিলকারী এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি বা তার প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করবে।

এছাড়া ওই চুক্তির অধীনে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে যোগাযোগ করে জাতীয় কমিটি প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করবে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০১০ সালে দুই বছরের জন্য ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন’ করে। পরে তিন দফায় ওই আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয় ১৪ বছর। ওই আইনে বলা হয়েছে, বিদ্যুতের জন্য জ্বালানি আমদানি অথবা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন অথবা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অন্য কোনো কার্যক্রম, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা, আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। সে কারণে এ আইনকে বিদ্যুৎ খাতের ‘দায়মুক্তি আইন’ বলেন সমালোচকরা।

এই আইনের সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিপুল অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের ভাষায়, বিগত সরকারের সময় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ‘অনিয়মের মহোৎসব’ হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের অধীনে করা চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করতে গত ৫ সেপ্টেম্বর পাঁচ সদস্যের জাতীয় কমিটি গঠন করে বিদ্যুৎ বিভাগ।

এ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আছেন হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী। আর সদস্য হিসেবে আছেন বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক আবদুল হাসিব চৌধুরী, কেপিএমজি বাংলাদেশ এর সাবেক সিওও ফেলো চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট (এফসিএ) আলী আশফাক, বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনোমিস্ট জাহিদ হোসেন এবং ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ফ্যাকাল্টি অব ল অ্যান্ড সোশাল সায়েন্সের অধ্যাপক (অর্থনীতি) মোশতাক হোসেন খান।

এই কমিটি তাদের কাজের জন্য যে কোনো সূত্র থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও প্রয়োজনীয় যে কোনো নথি নিরীক্ষা করতে পারবে, সংশ্লিষ্ট যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে শুনানিতে আহ্বান করতে পারবে। কমিটি 'বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০' এর আওতায় ইতোমধ্যে সম্পাদিত চুক্তিগুলোতে সরকারের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়েছে কিনা তা নিরীক্ষা করবে। নিরীক্ষার ভিত্তিতে পরবর্তী কার্যক্রম বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন করবে এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় কমিটিকে সাচিবিক ও আনুষঙ্গিক সহায়তা দিবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।