img

বাংলাদেশে গুম ও নির্যাতনের বিচার নিয়ে জাতিসংঘের বার্তা

প্রকাশিত :  ০৬:৪৮, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৬:৫১, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশে গুম ও নির্যাতনের বিচার নিয়ে জাতিসংঘের বার্তা

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, বাংলাদেশের পূর্ববর্তী সরকারের সময় সংঘটিত গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়া দেশটিতে জবাবদিহিতার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দুটি মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করে। টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেল ও জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল থেকে অভিযোগগুলো উঠে এসেছে। এসব মামলায় সাবেক ও কয়েকজন বর্তমান সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের সাবেক মহাপরিচালক এবং র্যাবের সাবেক কর্মকর্তা আছেন।

এরপর শনিবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জানায়, তারা এক ডজনের বেশি অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাকে আটক করেছে। এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘ প্রধান বলেন, এ কর্মকর্তাদের স্বাধীন ও যোগ্য বেসামরিক আদালতে দ্রুত হাজির করা জরুরি, যাতে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী বিচার স্বচ্ছ হয়।

ভলকার তুর্ক আরও বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে সুষ্ঠু বিচার ও যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে এই সংবেদনশীল মামলাগুলোতে ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা রক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশ গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধন আনে। এর মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো গুমকে একটি আইনত স্বীকৃত অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তুর্ক আরও বলেন, আগের সরকারের আমল থেকে ঝুলে থাকা বহু মামলার দ্রুত ও সুষ্ঠু নিষ্পত্তি জরুরি। সেই সঙ্গে, যাদের অন্যায়ভাবে আটক রাখা হয়েছে—বিশেষ করে গুম থেকে ফিরে আসা ব্যক্তি, সাংবাদিক, এবং সাবেক সরকারের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের—তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। তিনি বলেন, অনেকেই এখনো কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় অযৌক্তিক মামলার মুখে রয়েছেন।

এছাড়া, জাতিসংঘ প্রধান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, অপরাধ যত গুরুতরই হোক না কেন, যেন কোনও মামলাতেই মৃত্যুদণ্ডের পথ বেছে না নেওয়া হয়।

শেষে তুর্ক বলেন,শুধু বিচারের মাধ্যমে নয়, সত্য উদঘাটন, ক্ষতিপূরণ, নিরাময় ও ন্যায়বিচারভিত্তিক একটি প্রক্রিয়া শুরু করাই বাংলাদেশের জন্য এগিয়ে যাওয়ার পথ। এতে অতীতের মানবাধিকার লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি ঠেকানো সম্ভব হবে। আমি অন্তর্বর্তী সরকারকে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই। সূত্র: জাতিসংঘ প্রেস বিজ্ঞপ্তি


জাতীয় এর আরও খবর

img

এখনো ধোঁয়া উড়ছে কার্গো ভিলেজে, চলছে উদ্ধারকাজ

প্রকাশিত :  ০৮:২৭, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স ভবনের চারপাশে রোববার সকালেও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা এখনো দুই পাশ থেকে পানি ছিটিয়ে ঠাণ্ডা করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। 

বিমানবন্দরের সামনের অংশে কৌতূহলী মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তবে বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিমা খানম জানান, “এখনো উদ্ধারকাজ চলছে। আগুন পুরোপুরি নেভানো হলেও ধোঁয়া নিরসনের কাজ অব্যাহত আছে।”

ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মো. মুহিদুল ইসলাম বলেন, “ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে কাজ করছে। নিরাপত্তার জন্য বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। এখনো কোনো মামলা হয়নি।”

গতকাল শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট, পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরা। সাত ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে এবং রাত ৯টার দিকে বিমানবন্দর পুনরায় চালু হয়। 

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, কার্গো ভিলেজের যে অংশে আগুন লেগেছিল, সেখানে আমদানি করা পণ্যসামগ্রী রাখা ছিল। আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা যায়নি।

অগ্নিকাণ্ডের ফলে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। 

কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পাটওয়ারী। এছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন এনবিআরের প্রথম সচিব মো. রইচ উদ্দিন খান, মো. তারেক হাসান, ঢাকা কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মুহাম্মদ কামরুল হাসান এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের উপসচিব পঙ্কজ বড়ুয়া।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অগ্নিকাণ্ডে সৃষ্ট সার্বিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য কমিটিকে দ্রুততম সময়ে অগ্নিকাণ্ডে সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।এদিকে অগ্নিকাণ্ডের পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকা কাস্টম হাউসের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যাতে বাণিজ্য কার্যক্রমে কোনো বিঘ্ন না ঘটে।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। কমিটিকে আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিমানের ফ্লাইট সেফটি চিফ। 

সদস্য হিসেবে থাকবেন-বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, বিমানের মহাব্যবস্থাপক (কর্পোরেট সেফটি অ্যান্ড কোয়ালিটি), চিফ ইঞ্জিনিয়ার (কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স), উপ-মহাব্যবস্থাপক (সিকিউরিটি) ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (কার্গো-রপ্তানি)। 

আর সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিমানের উপ-ব্যবস্থাপককে (ইনস্যুরেন্স)।কমিটিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, দায়ীদের চিহ্নিতকরণ ও ভবিষ্যতে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে সুপারিশমালা পেশ করতে হবে।


জাতীয় এর আরও খবর