img

অন্তিমের পরে

প্রকাশিত :  ১৮:৪৫, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ২১:১৯, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫

অন্তিমের পরে

রেজুয়ান আহম্মেদ

ফজরের আজানের ধ্বনি ভেসে এলো অন্ধকার আকাশে। সেলিম সাহেব ধীরে ধীরে বিছানা থেকে উঠলেন। প্রতিদিনকার মতো আজও তিনি নামাজ পড়ে কাজ শুরু করবেন, কিন্তু আজ তাঁর মনটা অস্থির। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখছেন। স্বপ্নে নিজেকে তিনি একটি অন্ধকার কবরের ভেতর আবিষ্কার করেন। ঘরটি অদ্ভুত ঠান্ডা, চারপাশে শুধু নিস্তব্ধতা। কোনো আলো নেই, শুধু অন্ধকার।

স্বপ্নে তিনি দেখতে পান, একটি কণ্ঠস্বর তাঁকে বলছে, "তোমার সময় শেষ। এখানে তোমার কাজের হিসাব হবে।" তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন, "আমার কী ভুল ছিল? আমাকে আরেকটা সুযোগ দিন।" কিন্তু কণ্ঠস্বরটি কোনো উত্তর দেয় না। এরপর ঘুম ভেঙে যায়।

এই স্বপ্নগুলো তাঁর শান্ত জীবনে এক অশান্তির স্রোত এনে দিয়েছে। তিনি একজন সৎ ব্যবসায়ী। জীবনে কখনো মিথ্যা বলেননি, কাউকে ঠকাননি। তাহলে এই স্বপ্নের অর্থ কী?

সেলিম সাহেব একদিন নিজের গ্রামের পুরোনো মসজিদের ইমামের কাছে গেলেন। ইমাম সাহেব তাঁকে বললেন, "আপনার স্বপ্ন সম্ভবত বারযাখের অবস্থান নিয়ে ইঙ্গিত করছে। মৃত্যুর পর মানুষের আত্মা বারযাখ নামক একটি জগতে যায়। সেখানে আত্মার জন্য শান্তি বা শাস্তি নির্ধারিত হয়। এটি কবরের শাস্তি হিসেবেও পরিচিত।"

"কিন্তু বিচার তো কিয়ামতের দিন হবে, তাই না?" সেলিম সাহেব প্রশ্ন করলেন।

"হ্যাঁ, মূল বিচার কিয়ামতের দিনই হবে। তবে বারযাখে আত্মা তার কর্মফল অনুসারে একটি অবস্থায় থাকে। এটি একটি অন্তবর্তীকালীন সময়। আপনি যদি আল্লাহর পথে চলেন, তবে আপনার চিন্তার কিছু নেই," ইমাম সাহেব বললেন।

সেলিম সাহেব কিছুটা আশ্বস্ত হলেন। কিন্তু তাঁর মনে আরও প্রশ্ন জমে রইল। তিনি ভাবলেন, 'আমার যদি কোনো অজানা পাপ থাকে, তবে কী হবে? যদি আমি ভুল করে কিছু করে থাকি?'

এই চিন্তাগুলো তাঁকে আরও বেশি আল্লাহর কাছে নিয়ে এলো। তিনি প্রতিদিন রাতের তাহাজ্জুদের নামাজে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতেন। একদিন তিনি কুরআন তিলাওয়াত করতে করতে সুরা আল-ইনফিতারের আয়াতগুলো পড়লেন:

"নিশ্চয়ই পুণ্যবানরা থাকবে অনন্ত সুখে এবং অধার্মিকরা থাকবে জ্বলন্ত জাহান্নামে। তারা সেখানে প্রবেশ করবে বিচার দিবসে।"

তিনি মনে মনে বললেন, 'তাহলে কবরের এই শাস্তি হয়তো মূল শাস্তি নয়, বরং এটি আমাদের সতর্ক করার একটি উপায়।'

সেলিম সাহেবের মনে পড়ল তাঁর ছোটবেলার বন্ধু রাশেদের কথা। রাশেদ ছিল একজন দুর্নীতিপরায়ণ মানুষ। অনেক বছর আগে তিনি মারা গেছেন। গ্রামের মানুষ বলে, মৃত্যুর পরে রাশেদের কবরের উপর অদ্ভুত আওয়াজ শোনা যেত। কেউ বলে, এটি কবরের শাস্তি। আবার কেউ বলে, এগুলো গুজব।

সেলিম সাহেব সেদিন ভাবলেন, 'কবরের আজাব সত্য হোক বা না হোক, এটি আমাদের দুনিয়ার জীবনের জন্য সতর্কবার্তা। আমাদের এমন কাজ করতে হবে যেন মৃত্যুর পরে আমরা শান্তি পাই।'

সেদিন থেকে সেলিম সাহেব কেবল নিজের জন্য নয়, অন্যদের জন্যও কাজ করা শুরু করলেন। গ্রামের মসজিদে নতুন করে সংস্কার কাজ শুরু করলেন। গরিবদের জন্য একটি চ্যারিটি চালু করলেন। তিনি বললেন, "আমরা দুনিয়াতে কী করছি, তা আমাদের মৃত্যুর পরে নির্ধারণ করবে। আমরা যদি ভালো কিছু রেখে যেতে পারি, তবে আমাদের মৃত্যুর পরে অন্তত শান্তি থাকবে।"

সেলিম সাহেবের জীবন ধীরে ধীরে বদলে গেল। স্বপ্ন আর তাঁকে ভীত করে না। বরং তিনি সেই স্বপ্নকে নিজের জীবনের পথপ্রদর্শক মনে করেন।

তিনি ভাবলেন, 'কবরের আজাব হয়তো আমার জন্য একটি সতর্কবার্তা। আল্লাহ আমাকে বোঝাতে চেয়েছেন যে, দুনিয়া হলো একটি পরীক্ষাগার। এখানেই আমাকে এমন কিছু করে যেতে হবে, যা আমাকে পরকালে রক্ষা করবে।'

তাঁর শেষ কথাটি ছিল:

"মৃত্যু কোনো শেষ নয়। এটি শুরু। আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করলেই সেই শুরু হবে সুন্দর।"




রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম
img

আগামীকাল পবিত্র শবে বরাত

প্রকাশিত :  ১৫:২৩, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৫:৩৭, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আগামীকাল শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে সারাদেশে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় পবিত্র শবে-বরাত পালিত হবে। হিজরি সালের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি মুসলমানরা শবে-বরাত বা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে থাকেন। এ রাতটি ‘লাইলাতুল বরাত’ হিসেবেও পরিচিত।

পবিত্র শবে-বরাত উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষে আগামী শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সরকারি ছুুটি থাকবে।

বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা পবিত্র শবে-বরাত উপলক্ষ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানান।  

তিনি বলেন, এই সৌভাগ্যময় রজনী মানব জাতির জন্য বয়ে আনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের অশেষ রহমত ও বরকত। এ রাতে আল্লাহপাক ক্ষমা প্রদান ও প্রার্থনা পূরণের অনুপম মহিমা প্রদর্শন করেন।

পবিত্র এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয় উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এই মহিমাময় রাতে ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। অর্জন করতে পারি তাঁর অসীম রহমত, বরকত, নাজাত ও মাগফিরাত।’

পবিত্র শবেবরাতের মাহাত্ম্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানব কল্যাণ ও দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করতে তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘আসুন, সকল প্রকার অন্যায়, অনাচার, হানাহানি ও কুসংস্কার পরিহার করে আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সকল স্তরে প্রতিষ্ঠা করি।’

এ রাতে বাসাবাড়ি ছাড়াও মসজিদে মসজিদে নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। 

আজ বৃস্পতিবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়।

পবিত্র শবে-বরাত, ১৪৪৬ হিজরি উপলক্ষে আগামীকাল শুক্রবার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) উদ্যোগে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে ওয়াজ, দোয়া মাহফিল, পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত ও হামদ নাতসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। 

ইফা আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদ পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে লাইলাতুল বারাআতের শিক্ষা ও করণীয় বিষয়ে ওয়াজ করবেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। 

রাত ৭টা ১০ মিনিটে লাইলাতুল বারাআতের ফজিলত ও তাৎপর্য বিষয়ে ওয়াজ করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খান। 

রাত ৮টা ৫০ মিনিটে লাইলাতুল বারাআতের ফজিলত ও তাৎপর্য তুলে ধরে ওয়াজ করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর ও  তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ড. খলিলুর রহমান মাদানি। 

রাত সাড়ে ৯টায় পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে লাইলাতুল বারাআতের শিক্ষা ও করণীয় সম্পর্কে ওয়াজ করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর ও চরমোনাই আহসানাবাদ রশিদিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি।

রাত সোয়া ২টায় (দিবাগত রাত) নফল ইবাদতের গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে ওয়াজ করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মিজানুর রহমান এবং ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে আখেরি মোনাজাত। মোনাজাত পরিচালনা করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী। 

বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও এ উপলক্ষে ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।

এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলসহ এবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটাবেন।

মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মুসলমানরা বিশেষ মোনাজাত করবেন।