img

গরীব ঋণ নিল, ঋণও রইল—রিকশাও গেল! বড়লোক চিল করে রেডিসনে—এটাই কি নিয়ম?

প্রকাশিত :  ১০:৫২, ১৪ মে ২০২৫

গরীব ঋণ নিল, ঋণও রইল—রিকশাও গেল! বড়লোক চিল করে রেডিসনে—এটাই কি নিয়ম?

সকালবেলা শহর জেগে ওঠে; কিন্তু সেই জাগরণ সবার জন্য সমান নয়। কেউ উঠে এসির ঠাণ্ডায়, কেউ উঠে ভাঙা চালার নিচে। একজনের সকাল শুরু হয় কফি আর সংবাদপত্র হাতে, অন্যজনের শুরু হয় ভাঙা ছাতার তলায়—বুকভরা ঋণ আর মনের হাজারো দুশ্চিন্তা নিয়ে। এই বৈষম্যের শহরে সূর্য একই হলেও ভাগ্য একেবারে আলাদা।  

শহরের একপাশে বড়লোকদের চিন্তা চলে—\"কীভাবে ব্যাটারিচালিত রিকশার বাজারে মুনাফা বাড়ানো যায়!\" তারা বিদেশ থেকে রিকশা আমদানি করে, ফ্যাশনেবল ডিজাইন করে গরীবের কাছে বিক্রি করে। কাস্টমসে শুল্ক দেয়, মুনাফা গুণে নেয়, নাম দেয় \"ব্যবসা\"।  

অন্যপাশে একজন গরীব মানুষ, যে দিনের পর দিন পায়ে হেঁটে শেষ সম্বল জড়ো করে কিংবা এনজিওর উচ্চসুদের ঋণ নিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা কিনেছে। সে স্বপ্ন দেখে—এই রিকশাই তাকে বাঁচাবে। ভাবে, \"মেয়েটাকে স্কুলে পাঠাব, বউকে একদিন চিকেন খাওয়াব, ভাঙা চালা বদলে দেব।\"  

কিন্তু বাস্তব নিষ্ঠুর। কয়েকদিন না যেতেই ট্রাফিক পুলিশ থানার সামনে হুঁশিয়ারি দেয়:  

\"এই রিকশা অবৈধ! লাইসেন্স নেই—ব্যাটারিচালিত রিকশা নিষিদ্ধ!\"  

রিকশা জব্দ করে নিয়ে যায়; থানায় জমা হয়, মামলা হয়।  

পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি চোখে পানি নিয়ে বলে,  

\"স্যার, ঋণ করে কিনেছি… এটা ছাড়া সংসার চলে না…\"  

কিন্তু কেউ মন গলায় না। কেউ বলে না, \"এই দিনমজুরের পাশে দাঁড়াও!\" রিকশা গেল, ঋণ রয়ে গেল।  

ওদিকে সেই বড়লোক, যে রিকশা আমদানি করে বিপুল মুনাফা করে সে এখন রেডিসনের সুইমিংপুলের পাশে মদের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছে:  

\"In retro mood—rickshaw nostalgia!\"

পেছনে আরামকেদারা, সামনে সিগারেট—চিল! 

প্রশ্ন ওঠে:  

যে রিকশা বানাল, সে \'উদ্যোক্তা\'; আর যে চালাল, সে \'অবৈধ\'?  

যে টাকা গুণল, তার \'মুনাফা\'; আর যে ঘাম ঝরাল, সে \'ঝামেলা\'?  

রাষ্ট্র শুধু বড়লোকের ব্যবসা রক্ষার জন্য?  

আইন শুধু গরীব দমনের হাতিয়ার?  

নীতিনির্ধারকদের চোখে শুধু ধনীদের স্বার্থ?  

একজন গরীব সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাইল—কেন তাকে লাঞ্ছিত হতে হয়?  

রিকশা গেল, আয় বন্ধ হল, কিন্তু ঋণ রয়ে গেল।  

শুধু টাকা নয়—  

তার স্বপ্ন ভাঙল, ভরসা হারাল, মানসিক শক্তি নিঃশেষ হল।  

কেউ কি জিজ্ঞাসা করে?

এই পরিবার এখন কী খাবে?  

শিশুটির স্কুলের খরচ জোগাবে কে?  

অন্ধকারে নতুন করে দাঁড়াবে কীভাবে?  

এই অন্যায় কতদিন? 

গরীবের ঘাম \'অবৈধ\' আর স্বপ্ন \'আবর্জনা\' হওয়ার দিন শেষ কবে?  

এটি শুধু আর্থিক বৈষম্য নয়—এটি শ্রেণীভিত্তিক অবিচার,  

মানবাধিকারের লঙ্ঘন,  

রাষ্ট্রের নীরব ষড়যন্ত্র।  

চূড়ান্ত প্রশ্ন:

এই দেশে গরীবের বেঁচে থাকার অধিকার আছে কি?  

নাকি তারা শুধু \'ব্যবহারযোগ্য\'—ভোটের সংখ্যা, শ্রমের যন্ত্র?  

সময় এসেছে প্রতিবাদের: 

গরীবের কান্নাকে গুরুত্ব দেওয়ার।  

চিলের বিরুদ্ধে কান্নার সংগ্রাম গড়ে তোলার।  

স্বপ্ন:

একটি সমাজ যেখানে রিকশাওয়ালার মুখে সম্মান,  

আর বড়লোকের চিলের মধ্যেও ন্যায়বোধ থাকবে।


লেখক : রেজুয়ান আহম্মেদ

অর্থনীতি এর আরও খবর

img

শেয়ারবাজারে কারসাজি: সাকিবসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

প্রকাশিত :  ১৪:৫০, ১৭ জুন ২০২৫

শেয়ারবাজার থেকে শতকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

মামলার বাদি দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন। 

এ মামলার প্রধান আসামি সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক ও শেয়ার বাজারের আলোচিত ব্যক্তি মো. আবুল খায়ের (হিরু)। দ্বিতীয় আসামি সাকিব আল হাসান। অন্যান্য আসামিরা হলেন- কাজি সাদিয়া হাসান, আবুল কালাম মাদবর, কনিকা আফরোজ, মোহাম্মদ বাশার, সাজেদ মাদবর, আলেয়া বেগম, কাজি ফুয়াদ হাসান, কাজি ফরিদ হাসান, শিরিন আক্তার, জাভেদ এ মতিন, মো. জাহেদ কামাল, মো. হুমায়ূন কবির ও তানভীর নিজাম।

দুদক জানায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দ্রুত আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে শেয়ারবাজারে প্রচলিত আইন ও বিধি (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ১৭ ধারা) লঙ্ঘন করেছেন।

তারা নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিও একাউন্টে অবৈধভাবে সিরিজ ট্রানজেকশন,  প্রতারণামূলক একটিভ ট্রাডিং, গেম্বলিং, ও স্পেকুলেশন-এর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে কৃত্রিমভাবে নির্দিষ্ট কিছু শেয়ারের দাম বৃদ্ধি করে বাজারে কারসাজি করেন। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রতারিত হয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হারান।

এই পদ্ধতিতে ২৫৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৩০৪ টাকা আত্মসাৎ করা হয়, যা ‘অপরাধলব্ধ অর্থ’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত। এর মধ্যে আবুল খায়ের (হিরু) তার স্ত্রী কাজি সাদিয়া হাসানের সহায়তায় ২৯ কোটি ৯৪ লাখ ৪২ হাজার ১৮৫ টাকার উৎস গোপন করে বিভিন্ন খাতে স্থানান্তর করেন।

এছাড়া তার নামে পরিচালিত ১৭টি ব্যাংক একাউন্টে মোট ৫৪২ কোটি ৩১ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

দুদক জানায়, আসামি মো. আবুল খায়ের (হিরু) কর্তৃক শেয়ার বাজারে কারসাজিকৃত প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স লি., ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স লি. এবং সোনালী পেপারস লি.-এর শেয়ারে সাকিব আল হাসান বিনিয়োগ করেন। এতে সাকিব মার্কেট ম্যানুপুলেশনে সরাসরি সহায়তা করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ২ কোটি ৯৫ লাখ ২ হাজার ৯১৫ টাকা রিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইনের নামে শেয়ার বাজার থেকে আত্মসাৎ করেন।

দুদক জানায়, শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হওয়ায় কমিশনের অনুমোদনক্রমে আসামিদের বিরুদ্ধে  ২০১২ এর ৪ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/১২০(বি)/১০৯ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

দুদক জানিয়েছে, তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।