
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ইনস্যুরেন্স খাতের সুবর্ণ সময়: শেয়ার উড়তে পারে আকাশ ছোঁয়া দামে!
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা, ৭ অক্টোবর ২০২৫: বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে নতুন আশার আলো দেখা যাচ্ছে ইনস্যুরেন্স খাতে। সাম্প্রতিক সময়ে যখন ব্যাংক, টেক্সটাইল ও মিউচুয়াল ফান্ড খাত কিছুটা স্থবির অবস্থায়, তখন ইনস্যুরেন্স খাত যেন হয়ে উঠেছে বিনিয়োগকারীদের নতুন ভরসাস্থল। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এই খাতে অন্তত ৩০টি কোম্পানির শেয়ার আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দ্বিগুণ দামে পৌঁছানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ইনস্যুরেন্স খাতের লেনদেন অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন এই খাতে। ফলে দীর্ঘদিনের নিস্তব্ধ বাজারে ইনস্যুরেন্স সেক্টর যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
বাজার বিশ্লেষকদের বক্তব্য, সাম্প্রতিক আর্থিক প্রতিবেদনগুলো ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর লাভজনকতা, বিনিয়োগ দক্ষতা ও পরিচালন সক্ষমতা সম্পর্কে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে। জীবন বীমা ও সাধারণ বীমা—দুই শাখাতেই প্রিমিয়াম আদায় বেড়েছে, একই সঙ্গে ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণ ও গ্রাহক আস্থা বৃদ্ধি বাজারে নতুন গতি এনেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের এক অধ্যাপক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন,
“ইনস্যুরেন্স খাত এখন পুঁজিবাজারে সবচেয়ে স্থিতিশীল ও সম্ভাবনাময় সেক্টরগুলোর একটি। কোম্পানিগুলোর প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা ও পোর্টফোলিও উন্নয়ন অব্যাহত থাকলে আগামী ছয় মাসে বেশ কিছু শেয়ারের মূল্য অন্তত দ্বিগুণ হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।”
এরই মধ্যে বেশ কিছু কোম্পানি নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা, রিজার্ভ বোনাস ও আকর্ষণীয় ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আরও বেড়েছে। বিশেষ করে লাইফ ইন্স্যুরেন্স খাতে প্রিমিয়াম কালেকশন ও ক্লেইম সেটেলমেন্টের উন্নতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে এনেছে বহুগুণে।
বাজার পর্যবেক্ষকদের মতে, ইনস্যুরেন্স খাতের এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা টিকে আছে তিনটি প্রধান কারণে।
প্রথমত, এই খাতের অধিকাংশ শেয়ার এখনো তুলনামূলকভাবে অবমূল্যায়িত;
দ্বিতীয়ত, বহু কোম্পানির পিই রেশিও ও ইপিএস ক্রমাগত উন্নতির পথে;
তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং মধ্যবিত্তের বীমা সচেতনতা খাতটিকে নতুন সম্প্রসারণের সুযোগ দিয়েছে।
বাজারে আলোচনায় রয়েছে, বর্তমানে ৩০ থেকে ৫০ টাকায় লেনদেন হওয়া শেয়ারগুলোও আগামী মাসগুলোতে ৭০ থেকে ১০০ টাকায় পৌঁছাতে পারে। তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, কেবল গুজবের ভিত্তিতে বিনিয়োগ না করে তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্তই হবে বুদ্ধিমানের পদক্ষেপ।
অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী ফরিদ আহমেদ বলেন,
“ইনস্যুরেন্স খাতে বিনিয়োগের এখনই উপযুক্ত সময়। তবে যাঁরা দীর্ঘমেয়াদে থেকে ধৈর্য ধরে এগোবেন, তাঁরাই প্রকৃত সুফল পাবেন। দ্রুত মুনাফার আশায় যারা ঝুঁকি নিতে চান, তাদের জন্য এটি বিপজ্জনক হতে পারে।”
অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশের স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা ও ব্যবসায়িক সুরক্ষার ক্ষেত্রে বীমা সেবা যত প্রসারিত হবে, ততই এই খাতের প্রকৃত মূল্য বৃদ্ধি পাবে। এ কারণে ইনস্যুরেন্স এখন শুধু একটি খাত নয়—এটি আগামী দিনের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার অন্যতম ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সব মিলিয়ে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ইনস্যুরেন্স খাত এখন দাঁড়িয়ে আছে নতুন এক সুবর্ণ যুগের দোরগোড়ায়। সঠিক সময়ে বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারলে বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি হতে পারে এক অভূতপূর্ব ‘গোল্ডেন ওয়েভ’।
পুঁজিবাজারের পুরনো ঢেউ ম্লান হলেও ইনস্যুরেন্স খাতের নতুন ঢেউ এখন অনেক বিনিয়োগকারীকে টেনে নিচ্ছে ভবিষ্যতের স্বপ্নে।