img

১৮৩ বছরের ঐতিহ্য: কমলগঞ্জে শুরু মণিপুরীদের মহাউৎসব রাসপূর্ণিমা

প্রকাশিত :  ০৮:৪০, ০৫ নভেম্বর ২০২৫

নিউজ কভার করতে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের আগমন

১৮৩ বছরের ঐতিহ্য: কমলগঞ্জে শুরু মণিপুরীদের মহাউৎসব রাসপূর্ণিমা

সংগ্রাম দত্ত

বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় মণিপুরী সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব রাসপূর্ণিমা আজ (বুধবার) থেকে শুরু হচ্ছে।

মাধবপুরের ঐতিহাসিক জোড়ামণ্ডপে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে, যা প্রায় ১৮৩ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শীর্ষস্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধি ছাড়াও বিদেশি গণমাধ্যমের সাংবাদিকরাও ইতিমধ্যেই জোড়ামণ্ডপে পৌঁছেছেন উৎসব কভার করতে।

ইতিহাস ও প্রবর্তন

ইতিহাসে জানা যায়, রাসলীলার প্রচলন ভারতের মণিপুর রাজ্য থেকে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে রাজা মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র স্বপ্নে রাধা ও কৃষ্ণের লীলা প্রত্যক্ষ করেন এবং সেই অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা প্রবর্তন করেন। পরবর্তীতে তাঁর এই প্রবর্তন বাংলাদেশের মাধবপুরের জোড়ামণ্ডপে মণিপুরী সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

আজ থেকে শুরু হচ্ছে ১৮৩তম রাসলীলা

২০২৫ সালের এই উৎসবে মাধবপুর জোড়া মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৮৩তম রাসলীলা, পাশাপাশি আদমপুরে পালিত হচ্ছে ৪০তম রাসোৎসব। প্রতি বছর কার্ত্তিকের পূর্ণিমায় লাখো ভক্ত ও দর্শক মাধবপুরে সমবেত হন এই মহোৎসব উপভোগ করতে। উৎসবকে ঘিরে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে পুরো কমলগঞ্জ জুড়ে।

রাখাল নৃত্য দিয়ে সূচনা

প্রতিটি রাসপূর্ণিমা শুরু হয় সকাল বেলার রাখাল নৃত্য দিয়ে। শিশু-কিশোরদের পরিবেশিত এই নৃত্য কৃষ্ণ ও তাঁর সখাদের আনন্দঘন জীবনের গল্প তুলে ধরে। শিল্পীরা পরিধান করেন ঐতিহ্যবাহী পলয় পোশাক, যার সঙ্গে থাকে কোকুতম্বি ও মাইমুখ, আর গায়ে সোনালি-রূপালি চুমকির কারুকাজ করা ভেলভেট ব্লাউজ।

রাতের মহারাসলীলা

রাত ১১টা থেকে জোড়া মণ্ডপে শুরু হবে মহারাসলীলা, যা ভোর পর্যন্ত চলবে। এটি শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার প্রেম, মান-অভিমান ও মিলনের আধ্যাত্মিক কাহিনিভিত্তিক। তিনটি মঞ্চে কুমারী শিল্পীরা পরিবেশন করবেন নৃত্য, যা ছয় ভাগে বিভক্ত—মহারাস, বসন্তরাস, নিত্যরাস, কুঞ্জরাস, গোপীরাস ও উদুখলরাস।

ঐতিহ্য ও সর্বজনীনতা

রাসপূর্ণিমা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি মণিপুরীদের সংস্কৃতি, সঙ্গীত ও নৃত্য ঐতিহ্যের এক মহোৎসব। রাখাল নৃত্য ও রাসলীলা ছাড়াও থাকে তলোয়ার নৃত্য, মশাল নৃত্য, ঢোলক নৃত্য, গান এবং স্থানীয় পণ্যের মেলা। ১৮৪২ সালে প্রথম অনুষ্ঠিত হওয়া এই উৎসব আজও মণিপুরী সমাজের গৌরবময় ঐতিহ্য বহন করছে।

উপসংহার

আজ শুরু হওয়া রাসপূর্ণিমা উৎসব কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়—এটি মণিপুরী সম্প্রদায়ের সংস্কৃতিক ঐক্য, শিল্পভাবনা ও সামাজিক সংহতির এক জীবন্ত প্রতীক, যা প্রতি বছর লাখো মানুষের হৃদয়ে জাগায় আনন্দ ও ভক্তির সুর।


সিলেটের খবর এর আরও খবর

img

অবশেষে সিলেট-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী

প্রকাশিত :  ১৭:০১, ০৫ নভেম্বর ২০২৫

অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করতে সম্মতি প্রকাশ করেছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। আজ বুধবার রাতে আরিফুল হক চৌধুরী নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তবে বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে কোন ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

গত সোমবার দেশের অন্যান্য আসনের সাথে সিলেটের ৪ টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। তবে সিলেট-৪ ও সিলেট-৬ আসনে সেদিন কোন প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, আরিফুল হককে দল থেকে একাধিকবার সিলেট-৪ আসনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে তাতে সম্মত হননি আরিফ। তিনি সবসময়ই সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সিলেট-১ আসন অথবা সিঠের সিটি নির্বাচনের মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিলেন।

সর্বশেষ সোমবার বিভিন্ন আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর মঙ্গলবার বিএনপির শীর্ষ নেতবেৃন্দের পক্ষ থেকে জরুরী তলব দিয়ে আরিফকে ঢাকায় নেওয়া হয়। সেখানে মঙ্গলবার ও বুধবার আরিফের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এসব বৈঠকে আরিফুল হককে সিলেট-৪ আসনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি প্রথমে সম্মত হননি বলে জানা গেছে। এরপর বুধবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তাঁকে বাসায় ডেকে পাঠান।

রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনে চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে আরিফুল হক ওই আসনে নির্বাচন করতে সম্মত হন।

সিলেট-৪ আসনে প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়ে ঢাকা থেকে রাতে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, “চেয়ারপারসন আমাদের জাতীয় মুরুব্বী। তাঁর নির্দেশে আমি সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করতে সম্মত হয়েছি। দলের প্রয়োজনে আমি বারবার নির্দেশ পালন করে আসছি। আজকের সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার আদেশ মাথা পেতে মেনে নিয়েছি।

আরিফুল হক চৌধুরী ২০১৩ সালের সিলেট সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লৈগৈর প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানকে পরাজিত করে সিলেট সিটির মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালেও তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। তবে সর্বশেষ ২০২৩ সালের সিটি নির্বাচনে দলীয় নির্দেশনা মেনে প্রার্থী হননি তিনি।


সিলেটের খবর এর আরও খবর