১৮৩ বছরের ঐতিহ্য: কমলগঞ্জে শুরু মণিপুরীদের মহাউৎসব রাসপূর্ণিমা
নিউজ কভার করতে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের আগমন
সংগ্রাম দত্ত
বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় মণিপুরী সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব রাসপূর্ণিমা আজ (বুধবার) থেকে শুরু হচ্ছে।
মাধবপুরের ঐতিহাসিক জোড়ামণ্ডপে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে, যা প্রায় ১৮৩ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শীর্ষস্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধি ছাড়াও বিদেশি গণমাধ্যমের সাংবাদিকরাও ইতিমধ্যেই জোড়ামণ্ডপে পৌঁছেছেন উৎসব কভার করতে।
ইতিহাস ও প্রবর্তন
ইতিহাসে জানা যায়, রাসলীলার প্রচলন ভারতের মণিপুর রাজ্য থেকে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে রাজা মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র স্বপ্নে রাধা ও কৃষ্ণের লীলা প্রত্যক্ষ করেন এবং সেই অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা প্রবর্তন করেন। পরবর্তীতে তাঁর এই প্রবর্তন বাংলাদেশের মাধবপুরের জোড়ামণ্ডপে মণিপুরী সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
আজ থেকে শুরু হচ্ছে ১৮৩তম রাসলীলা
২০২৫ সালের এই উৎসবে মাধবপুর জোড়া মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৮৩তম রাসলীলা, পাশাপাশি আদমপুরে পালিত হচ্ছে ৪০তম রাসোৎসব। প্রতি বছর কার্ত্তিকের পূর্ণিমায় লাখো ভক্ত ও দর্শক মাধবপুরে সমবেত হন এই মহোৎসব উপভোগ করতে। উৎসবকে ঘিরে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে পুরো কমলগঞ্জ জুড়ে।
রাখাল নৃত্য দিয়ে সূচনা
প্রতিটি রাসপূর্ণিমা শুরু হয় সকাল বেলার রাখাল নৃত্য দিয়ে। শিশু-কিশোরদের পরিবেশিত এই নৃত্য কৃষ্ণ ও তাঁর সখাদের আনন্দঘন জীবনের গল্প তুলে ধরে। শিল্পীরা পরিধান করেন ঐতিহ্যবাহী পলয় পোশাক, যার সঙ্গে থাকে কোকুতম্বি ও মাইমুখ, আর গায়ে সোনালি-রূপালি চুমকির কারুকাজ করা ভেলভেট ব্লাউজ।
রাতের মহারাসলীলা
রাত ১১টা থেকে জোড়া মণ্ডপে শুরু হবে মহারাসলীলা, যা ভোর পর্যন্ত চলবে। এটি শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার প্রেম, মান-অভিমান ও মিলনের আধ্যাত্মিক কাহিনিভিত্তিক। তিনটি মঞ্চে কুমারী শিল্পীরা পরিবেশন করবেন নৃত্য, যা ছয় ভাগে বিভক্ত—মহারাস, বসন্তরাস, নিত্যরাস, কুঞ্জরাস, গোপীরাস ও উদুখলরাস।
ঐতিহ্য ও সর্বজনীনতা
রাসপূর্ণিমা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি মণিপুরীদের সংস্কৃতি, সঙ্গীত ও নৃত্য ঐতিহ্যের এক মহোৎসব। রাখাল নৃত্য ও রাসলীলা ছাড়াও থাকে তলোয়ার নৃত্য, মশাল নৃত্য, ঢোলক নৃত্য, গান এবং স্থানীয় পণ্যের মেলা। ১৮৪২ সালে প্রথম অনুষ্ঠিত হওয়া এই উৎসব আজও মণিপুরী সমাজের গৌরবময় ঐতিহ্য বহন করছে।
উপসংহার
আজ শুরু হওয়া রাসপূর্ণিমা উৎসব কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়—এটি মণিপুরী সম্প্রদায়ের সংস্কৃতিক ঐক্য, শিল্পভাবনা ও সামাজিক সংহতির এক জীবন্ত প্রতীক, যা প্রতি বছর লাখো মানুষের হৃদয়ে জাগায় আনন্দ ও ভক্তির সুর।



















