img

পরকীয়ার অভিযোগে মাজার জিয়ারতের কথা বলে সিলেটে এনে স্ত্রীকে খুন!

প্রকাশিত :  ০৮:৫৪, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১০:৫৭, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

 পরকীয়ার অভিযোগে মাজার জিয়ারতের কথা বলে সিলেটে এনে স্ত্রীকে খুন!

হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার জিয়ারতের কথা বলে স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যার অভিযোগ ওঠেছে সুনামেঞ্জের দোয়ারাবাজারের ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে। শনিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। এর আগের দিন দোয়ারাবাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে সিলেটের এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ।

এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ অক্টোবর বিকেলে লাক্কাতুরা চা বাগানের ভাইগণ নামক টিলার উপরে নির্জন ও ঝোপঝাড়ে এক অজ্ঞাতনামা নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতদেহটি আংশিক পচনধরা অবস্থায় ছিল। প্রাথমিকভাবে ওই নারীর বয়স প্রায় ২৫ বছর অনুমান করা হয়। পরনে ছিল নতুন লাল রঙের জমিন ছাপা শাড়ি, হালকা গোলাপি রঙের বোরকা, এবং গলায় হলুদ রঙের ওড়না পেঁচানো ছিল। মৃতদেহের পাশেই পাওয়া যায় একটি লেডিস হ্যান্ডব্যাগ, যার ভিতরে ছিল কয়েকটি জামাকাপড় এবং ব্যাগের পকেটে একটি ছোট মেমোরি কার্ড।

পিবিআই ও সিআইডি কর্তৃক আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহ করে পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করা হলেও, আঙ্গুলে পচন ধরায় পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।পরবর্তীতে মেমোরি কার্ডে থাকা রেকর্ডকৃত মোবাইলের কথোপকথনের অডিও তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং সংশ্লিষ্ট নম্বরের সিডিআর সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে পুলিশ মৃত নারীর পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

নিহত নারী হলেন—সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারা বাজার থানার মওলারপাড় গ্রামের মৃত মাহতাব মিয়ার কন্যা রাবেয়া বেগম। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তদন্তে অগ্রগতি ঘটে এবং পুলিশের সন্দেহভাজন হিসেবে উঠে আসে নিহতের স্বামী সুনামগঞ্জ সদর থানার রাঙ্গারচর গ্রামের ওমান ফেরত আব্দুল আজিজের ছেলে ফারুক আহমেদ।

এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) এয়ারপোর্ট থানার একটি আভিযানিক দল দোয়ারা বাজার থানাধীন রাঙ্গারচর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ফারুককে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিকভাবে ফারুক হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করলেও, জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করলে সে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে।

আসামি ফারুকের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ফারুক ওমানে অবস্থানকালে তার স্ত্রী রাবেয়া বেগমের পূর্বের বিয়ে গোপন করা, তার সাথে বিয়ের পর অন্য পুরুষের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মনোমালিন্য চলছিল। পরবর্তীতে গত ১৩ অক্টোবর ফারুক স্ত্রীকে নিয়ে হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর মাজার জিয়ারতের কথা বলে সিলেটে আসে। মাজার জিয়ারত শেষে বেড়ানোর কথা বলে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উত্তর-পূর্ব দিকের নির্জন টিলায় নিয়ে যায়। সেখানে বিকেল আনুমানিক চারটার দিকে তার ফুফাতো ভাই আলামিনের সহায়তায় স্ত্রী রাবেয়া বেগমকে গলা টিপে হত্যা করে।

এ ঘটনার বিষয়ে এয়ারপোর্ট থানায় ফারুক ও অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে ভিকটিমের চাচা রিপন মিয়া অভিযোগ দায়ের করলে এয়ারপোর্ট থানার মামলা নং-১৭ তারিখ-১৭/১০/২৫খ্রিঃ ধারা ৩০২/৩৪।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, শনিবার (১৮ অক্টোবর) ফারুককে আদালতে উপস্থাপন করলে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতের সম্মুখে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। জবানবন্দি প্রদান শেষে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সিলেটের খবর এর আরও খবর

img

সিলেট নগরের সড়কে নেই হকার, যানজটও কম

প্রকাশিত :  ০৯:০৭, ২০ অক্টোবর ২০২৫

সিলেট নগরের হকাররা জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা মেনে প্রধান প্রধান সড়ক ও ফুটপাত ছেড়ে দিয়েছেন । রোববার নগরের প্রধান সড়কগুলোতে হকারদের দেখা মিলেনি।

ফলে রোববার এক অন্যরকম নগরের দেখা পান নগরবাসী। দখলমুক্ত সড়ক ও ফুটপাত। কোথাও হকার নেই। ফলে যানজটও কমে গেছে অনেকটা। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নগরবাসী। এই অবস্থা অব্যাহত রাখার দাবি জানেয়েছেন তারা।

দুপুরে নগরীর প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা জিন্দাবাজার, লামাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, বন্দরবাজার ও তালতলা এলাকায় ফুটপাত ও সড়কে হকারদের দেখা মিলেন। তবে এসব এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তারা হেঁটে হেঁটে এসব এলাকায় টহল দিয়েছেন। সন্ধ্যার পর নগরের জিন্দাবাজার এলাকা পরির্দশন করেন পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, রোববার নগরের সাতটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে একযোগে অভিযান চালানো হয়। এতে সাতজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অংশ নেন। তবে তার আগেই হকাররা সড়ক ও ফুটপাত ছেড়ে চলে যান।

এর আগে শনিবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রবিবার সকাল থেকে নগরীর কোনো সড়ক বা ফুটপাতে হকার বসতে দেওয়া হবে না। এ নির্দেশ অমান্য করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হকারদের পুণবার্সনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে লালদিঘির পড়ের মাঠ। তবে সড়ক ছাড়লেও রোববার এই মাঠে সামান্য সংখ্যক হকারদের দেখা গেছে। মাঠের বেশিরভাগ জায়গাই ফাঁকা রয়েছে। কয়েকজন দোকান প্রস্তুত করতে দেখা গেছে।

তাদের একজন বলেন, আমরা এর আগেও দুবার এখানে এসেছি। এখানে ক্রেতারা আসেন না। ফলে ব্যবসাও হয় না। এই মাঠে প্রবেশের রাস্তাও খুব সরু।

তিনি বলেন, ব্যবসা না করতে পারলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। তাই প্রশাসনের কাছে দাবি আমাদের যেনো স্থায়ী একটি ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

তবে হকাররা ফুটপাত ছাড়ায় খুশি নগরবাসী। বন্দরবাজার হাসান মার্কেটের ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের মার্কেটের সামনের প্রায় পুরোটা সড়ক তো হকাররা দখল করে নিয়েছিলো। সব সময় এখানে যানজট লেগে থাকতো। ক্রেতারাও ফুকতে পারতো না।

তিনি বলেন, আজ দেখি ফুটপাত ফাঁকা, যানজট নেই। মনে হচ্ছে সত্যিই পরিবর্তন আসছে।

নগরবাসী প্রশাসনের এই কঠোর অবস্থানকে স্বাগত জানালেও তাদের আশঙ্কা—এই অবস্থা কতদিন থাকবে? আবারও কি পুরনো চিত্রে ফিরে যাবে শহর?

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযান একদিনের নয়, চলবে ধারাবাহিকভাবে—যতদিন না পর্যন্ত নগরীর ফুটপাত ও সড়ক পুরোপুরি দখলমুক্ত রাখা যায়।

সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লালদিঘীরপারস্থ হকার মার্কেটের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। চলছে শেষ মুহুর্তের কাজ। এখানে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার হকারের ব্যবসার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে এবং নির্দিষ্ট পণ্যের জন্য আলাদা এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, লালদিঘির পাড় মাঠে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবাইকে সেখানে চলে যেতে হবে। নগরের ব্যস্ততম এলাকার সড়কে হকারদের বসতে দেওয়া হবে না। বসলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিলেটের খবর এর আরও খবর