img

সিলেটে ভেঙে ফেলা হচ্ছে জিন্নাহর স্মৃতিবিজড়িত 'মিনিস্টার বাড়ি'

প্রকাশিত :  ০৬:৫২, ২২ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৭:০৮, ২২ অক্টোবর ২০২৫

সিলেটে ভেঙে ফেলা হচ্ছে জিন্নাহর স্মৃতিবিজড়িত 'মিনিস্টার বাড়ি'

ভেঙে ফেলা হচ্ছে সিলেটের আরেকটি ঐতিহ্যবাহী বাড়ি। সিলেট জুড়ে শতাব্দীর আভিজাত্য ও ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছিল বাড়িটি।

জেলার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর তালিকায় যে বাড়িটির নাম একসময় গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হতো, সেটিই আজ ভেঙে পড়ছে বুলডোজারের নিচে। ইট-সিমেন্টের স্তূপে পরিণত হচ্ছে শতবর্ষের গল্প, হারিয়ে যাচ্ছে এক নগর-ঐতিহ্যের মূল্যবান অধ্যায়।

সিলেট নগরের মধ্য পশ্চিমে অবস্থিত ঐতিহাসিক জনপদ পাঠানটুলা। এই এলাকায় নিঃশব্দে ভেঙে ফেলা হচ্ছে প্রায় ১১৫ বছরের স্থাপনা—সাবেক মন্ত্রী আবদুল হামিদের পুরনো বাড়ি। সময়ের সাক্ষী এই বাড়িটি কেবল একটি স্থাপনা নয়, বরং সিলেটের নগর জীবন স্থাপত্য ঐতিহ্যের এক জীবন্ত দলিল। আবদুল হামিদ পাকিস্তানের সরকারের প্রভাবশালী শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। আসামের প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রী ও পার্লামেন্টের স্পিকার ছিলেন। তাদের পরিবারের নির্মিত এই বাড়ি গত ১০০ বছর ধরে

'মিনিস্টার বাড়ি ' হিসেবে সিলেট জুড়ে সমধিক প্রসিদ্ধ ছিল। এই বাড়িতে অতিথি হয়েছেন পাকিস্তানের কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহসহ ব্রিটিশ ভারতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের জনপ্রিয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর আবদুর রহমান হিরা সোমবার ( ২০ অক্টোবর) দুপুরে জানতে পারেন মিনিস্টার বাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। তিনি দৌড়ে ছুটে চলেন পাঠানটুলায়। সেখানে গিয়ে বুলডোজারের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত প্রাচীন এই স্থাপনা ভাঙার কয়েকটি ছবি নিয়ে তিনি জালাবাবাদ আবাসিক এলাকায় তার বন্ধু একজন সিনিয়র সাংবাদিকের সাথে বিষয়টি শেয়ার করেন। এরপর তিনি মিনিস্টার বাড়ি ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলার ছবি তার আইডিতে শেয়ার করেন। বিষয়টি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় মুহূর্তে।

আবদুর রহমান হীরা মিনিস্টার বাড়ির উত্তরাধিকারের একজনের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে কথা বলেন।

বাড়ির মালিকপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, স্থাপনাটি ‘ব্যবহার অনুপযোগী’ হয়ে পড়েছিল। বাড়ির ছাদে ফাটল দেখা দেয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে ভেঙে ফেলা ছাড়া উপায় ছিল না। তাদের দাবি—‘আমাদেরও মন খারাপ হচ্ছে, কিন্তু ছাদ ড্যামেজ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই ভাঙতে হচ্ছে।’

তবে সিলেট শহরের সচেতন নাগরিকদের অনেকেই এই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন।

অনেকের আক্ষেপ দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবদুর রহমান হীরার সহপাঠী রেজাউল করিম আলো লিখেছেন, ‘শুধু ছাদ ড্যামেজ হওয়ার কারণে শতবর্ষী স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। যদিও এটি ব্যক্তিগত সম্পত্তি, কিন্তু এমন একটি শৈল্পিক ইমারত এখন আর নির্মাণ করা সম্ভব নয়। এরকম ঐতিহ্য ধ্বংস করা যতটা সহজ, সৃষ্টি করা তার চেয়ে বহু গুণ কঠিন। ব্যথিত হলাম, মর্মাহত হলাম।’

কামরুজ্জামান রনি’ নামের একজন মন্তব্যে লিখেন, এই ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি বিক্রয়ের জন্য ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেখেছি।

জালাল আহমেদ জালাল নামের আরেকজন লিখেন, সিলেট থেকে বাসে সুনামগঞ্জ যাওয়ার পথে এই বাড়িটি দেখতাম। এ বাড়িতে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বিশ্রাম নিয়েছেন।

সিলেট শহরের পুরনো স্থাপত্যগুলো একে একে হারিয়ে যাচ্ছে আধুনিকতার দৌড়ে। কিন্তু প্রতিটি ধ্বংসের সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে শহরের ইতিহাসের টুকরো। হারিয়ে যাচ্ছে সেই কারুকাজ, সেই নান্দনিক ছোঁয়া যা একসময় সিলেটকে আলাদা করে জানান দিতো বাংলাদেশ ও বিশ্বের মানুষের মধ্যে।

স্থাপত্যবিদদের মতে, শতবর্ষী ভবনগুলো কেবল ইট-পাথরের দেয়াল নয়—এগুলো একটি সময়ের সংস্কৃতি, জীবনধারা ও ঐতিহ্যের প্রতিফলন। এমন স্থাপনা ভাঙার আগে সংরক্ষণের উদ্যোগ না নেয়া দুঃখজনক।


img

৬ মাস ধরে বন্ধ শায়েস্তাগঞ্জে বিদ্যুৎকেন্দ্র, লোডশেডিং চরমে

প্রকাশিত :  ০৭:২৫, ২২ অক্টোবর ২০২৫

হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নছরতপুরে অবস্থিত ১১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় গ্রামেগঞ্জে লোডশেডিং ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ঘন ঘন বিদ্যুৎবিভ্রাটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এনার্জিপ্যাক পাওয়ার ভেঞ্চার লিমিটেড ২০০৯ সালে হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মালিকানাধীন দুই একর জমিতে কেন্দ্রটি স্থাপন করে। এই কেন্দ্রটি চালু হওয়ার পর থেকে হবিগঞ্জ শহরসহ আশপাশের গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে স্বস্তি ফিরে আসে। শিল্পকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সচল রাখতে কেন্দ্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় কেন্দ্রটির উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে কেন্দ্রের আইটি শাখার কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় এপ্রিলে কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। ভবন, যন্ত্রপাতিসহ মালামাল বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে।

কেন্দ্র বন্ধের পর থেকে হবিগঞ্জ সদর, শায়েস্তাগঞ্জ, চুনারুঘাট ও আশপাশের কয়েকটি উপজেলায় বিদ্যুৎসংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। দিন-রাত লোডশেডিং হচ্ছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।

শায়েস্তাগঞ্জ পৌর এলাকার ব্যবসায়ী মিজান মিয়া বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসা চালানোই কঠিন হয়ে গেছে। দোকানে ফ্রিজ চলে না, লাইট বন্ধ থাকে, বিক্রি কমে গেছে অর্ধেকে।

শিক্ষার্থী কামরুল হোসেন বলেন, ‘রাতে পড়াশোনা করতে পারি না। বিদ্যুৎ থাকলে পড়ার পরিবেশ থাকে, এখন এত বেশি লোডশেডিং হয় যে ঘরে থাকাই দায়।’

চুনারুঘাটের কৃষক মধু মিয়া জানান, চাল ও ধানের মৌসুমে সেচ দিতে পারছি না। বিদ্যুৎ গেলে পাম্প চলে না, জমি শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এনার্জিপ্যাকের উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। নতুন উৎস থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের চেষ্টা চলছে, তবে কিছু সময় লাগবে।

স্থানীয়দের মতে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুনরায় চালু করা গেলে লোডশেডিং অনেকাংশে কমে আসবে এবং গ্রামীণ জনজীবনে স্বস্তি ফিরবে। তারা সরকারের কাছে দ্রুত কেন্দ্রটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম জিল্লুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাঁর সাড়া মেলেনি।


সিলেটের খবর এর আরও খবর