img

আগামীকাল শুরু হচ্ছে মনিপুরীদের বৃহৎ রাসপূর্ণিমা উৎসব

প্রকাশিত :  ১৪:৫৪, ০৪ নভেম্বর ২০২৫

আগামীকাল শুরু হচ্ছে মনিপুরীদের বৃহৎ রাসপূর্ণিমা উৎসব

সংগ্রাম দত্ত: বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় মনিপুরী সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব, রাসপূর্ণিমা, আগামীকাল শুরু হচ্ছে। মাধবপুরের জোড়ামণ্ডপে এই উৎসব প্রায় ১৮৩ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

ইতিহাসে জানা যায়, রাসলীলার প্রচলন মূলত ভারতের মণিপুর রাজ্য থেকে এসেছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মণিপুরের রাজা মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র স্বপ্নে রাধা ও কৃষ্ণের লীলা দেখেন এবং সেই অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা আয়োজন করেন। রাজা ভাগ্যচন্দ্র প্রথমে কয়েকজন কুমারী মেয়েকে নিয়ে এই নৃত্য স্থাপন করেন। তিনি নিজ মেয়েকে শ্রীরাধার এবং মন্দিরের শ্রীগোবিন্দকে শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকায় অবতীর্ণ করে রাসলীলা পরিচালনা করেন এবং নিজেই মৃদঙ্গবাদক হিসেবে তাল ব্যবহার করেন। এই প্রবর্তনই পরে মাধবপুরের জোড়ামণ্ডপে বাংলাদেশের মণিপুরী সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

২০২৫ সালের এই উৎসবে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর জোড়া মণ্ডপে ১৮৩তম রাসলীলা অনুষ্ঠিত হবে এবং আদমপুরে মণিপুরী মৈতেই সম্প্রদায়ের আয়োজনে ৪০তম রাসোৎসব পালিত হবে। প্রতি বছর কার্ত্তিকের পূর্ণিমায় লাখেরও বেশি ভক্ত ও দর্শক এই উৎসবের সৌন্দর্য ও ধর্মীয় মহিমা উপভোগ করতে মাধবপুরের জোড়ামণ্ডপে ছুটে আসেন।

রাখাল নৃত্য দিয়ে শুরু

প্রতিটি রাসপূর্ণিমা অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল বেলার রাখাল নৃত্য দিয়ে। শিশু-কিশোররা এই নৃত্য পরিবেশন করে, যা কৃষ্ণ ও তার সখীদের রসাত্মক জীবনের গল্প তুলে ধরে। রাখাল নৃত্যের আগে শিল্পীরা এক ধরনের গোপী ভোজন গ্রহণ করেন, যা মূলত ভাত ও নানা সবজির তরকারি দিয়ে তৈরি হয়।

রাখাল নৃত্য চলাকালীন শিল্পীরা পরিধান করেন রাজা ভাগ্যচন্দ্রের সময় থেকেই প্রচলিত পলয় পোশাক। এই পোশাকের মাথার অংশের নাম কোকুতম্বি, মুখে থাকে স্বচ্ছ আবরণ মাইমুখ, এবং গায়ে সোনালি ও রূপালি চুমকির কারুকাজ করা ঘন সবুজ ভেলভেটের বস্নাউজ। পেটিকোট, কলথা, খবাংচিক ও অন্যান্য স্বর্ণালঙ্কার এই পোশাকের অংশ।

মহারাসলীলা: রাত্রির মহাযাত্রা

রাত ১১টা থেকে শুরু হয় মাধবপুর জোড়া মণ্ডপে মহারাসলীলা, যা ভোর পর্যন্ত চলতে থাকে। রাসলীলা হলো শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার প্রেম, মান-অভিমান এবং শেষমেষ মিলনের কাহিনি। মণ্ডপে তিনটি মঞ্চে কুমারি মেয়েরা রাসনৃত্য পরিবেশন করেন।

মণিপুরীদের সমাজে রাসনৃত্যকে ছয় ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে—মহারাস, বসন্তরাস, নিত্যরাস, কুঞ্জরাস, গোপীরাস ও উদুখলরাস, যার মধ্যে মহারাস সর্বাধিক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। রাসলীলা মঞ্চকে বিশেষ কারুকাজের বাঁশ ও কাগজের মণ্ডপ দিয়ে সাজানো হয় এবং আলোকসজ্জার মাধ্যমে রাতের অন্ধকারেও তা ঝলমল করে।

ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি

মণিপুরীরা এই উৎসবকে কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবেই নয়, তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের চিরায়ত প্রদর্শন হিসেবেও পালন করেন। রাখাল নৃত্য ও রাসলীলা ছাড়াও অনুষ্ঠিত হয় তলোয়ার নৃত্য, মশাল নৃত্য, মার্শাল আর্ট, ঢোলক নৃত্য, গান ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গ্রামীণ পণ্যের মেলা, আলোচনা সভা এবং গুণীজন সংবর্ধনা উৎসবকে আরও সমৃদ্ধ করে।

মাধবপুরে উৎসবের ইতিহাসও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। জানা যায়, ১৮৪২ সালে এখানে প্রায় প্রথমবার বাংলাদেশে রাসলীলা অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসব মূলত ভারতের মণিপুর রাজ্য থেকে আগত প্রথার ধারাবাহিকতা হিসেবে দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

সর্বজনীন উৎসব

রাসপূর্ণিমা এখন শুধুমাত্র মণিপুরীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সিলেট ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এই উৎসব পালিত হয় এবং এতে অংশ নিতে লাখেরও বেশি পুণ্যার্থী ভিড় করেন। কমলগঞ্জে এই উৎসব একদিকে ধর্মীয় আধ্যাত্মিকতা এবং অন্যদিকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মিলনমেলা হিসেবে পরিচিত।

আগামীকাল শুরু হতে যাওয়া এই উৎসব মণিপুরীদের জীবনে কেবল ধর্মীয় তাৎপর্যই নয়, তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সমাজিক সংহতিরও এক অনন্য চিত্র তুলে ধরবে।


সিলেটের খবর এর আরও খবর

img

অবশেষে সিলেট-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী

প্রকাশিত :  ১৭:০১, ০৫ নভেম্বর ২০২৫

অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করতে সম্মতি প্রকাশ করেছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। আজ বুধবার রাতে আরিফুল হক চৌধুরী নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তবে বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে কোন ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

গত সোমবার দেশের অন্যান্য আসনের সাথে সিলেটের ৪ টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। তবে সিলেট-৪ ও সিলেট-৬ আসনে সেদিন কোন প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, আরিফুল হককে দল থেকে একাধিকবার সিলেট-৪ আসনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে তাতে সম্মত হননি আরিফ। তিনি সবসময়ই সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সিলেট-১ আসন অথবা সিঠের সিটি নির্বাচনের মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিলেন।

সর্বশেষ সোমবার বিভিন্ন আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর মঙ্গলবার বিএনপির শীর্ষ নেতবেৃন্দের পক্ষ থেকে জরুরী তলব দিয়ে আরিফকে ঢাকায় নেওয়া হয়। সেখানে মঙ্গলবার ও বুধবার আরিফের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এসব বৈঠকে আরিফুল হককে সিলেট-৪ আসনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি প্রথমে সম্মত হননি বলে জানা গেছে। এরপর বুধবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তাঁকে বাসায় ডেকে পাঠান।

রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনে চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে আরিফুল হক ওই আসনে নির্বাচন করতে সম্মত হন।

সিলেট-৪ আসনে প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়ে ঢাকা থেকে রাতে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, “চেয়ারপারসন আমাদের জাতীয় মুরুব্বী। তাঁর নির্দেশে আমি সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করতে সম্মত হয়েছি। দলের প্রয়োজনে আমি বারবার নির্দেশ পালন করে আসছি। আজকের সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার আদেশ মাথা পেতে মেনে নিয়েছি।

আরিফুল হক চৌধুরী ২০১৩ সালের সিলেট সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লৈগৈর প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানকে পরাজিত করে সিলেট সিটির মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালেও তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। তবে সর্বশেষ ২০২৩ সালের সিটি নির্বাচনে দলীয় নির্দেশনা মেনে প্রার্থী হননি তিনি।


সিলেটের খবর এর আরও খবর