img

অর্থনীতি সামলাতে দরকার সুশাসন: সিপিডির সংলাপে বক্তারা

প্রকাশিত :  ১০:১৯, ০৫ মে ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১১:৪৭, ০৫ মে ২০২৪

অর্থনীতি সামলাতে দরকার সুশাসন: সিপিডির সংলাপে বক্তারা

‘নতুন সরকার, জাতীয় বাজেট ও জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সিপিডির নীতি সংলাপে বক্তারা বলেছেন, দেশর অর্থনীতি সামলাতে সুশাসন দরকার। আসছে বছরের বাজেট নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির আলোচনায় উঠে আসে এমন মন্তব্য। রোববার গুলশানের একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) উদ্যোগে এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের সহযোগিতায় ‘নতুন সরকার, জাতীয় বাজেট ও জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক একটি নীতি সংলাপে এসব কথা বলেন বক্তারা।

সংলাপটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় চলমান জনসম্পৃক্ত সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ।

অনুষ্ঠানে বিরোধী দলীয় উপনেতা ও সাবেক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সংসদ সদস্য এ কে আজাদ, নাগরিক প্লাটফর্মের কোর সদস্য ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, খুবই জটিল রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিরাজমান। ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিও জটিল। বাজেটকে সামনে রেখে আমরা সামাজিক ও সরেজমিন মতামত নিয়েছি। অর্থনীতিতে সমস্যার ত্রিযোগ ঘটেছে। যার মধ্যে বড় সমস্যা হচ্ছে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি। অর্থনীতিতে এখনও অতি মাত্রায় মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে চলেছে। এটা গ্রাম কিংবা শহর এবং খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের জন্য সত্য। সেহেতু প্রথম সমস্যা হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতি, যা মানুষের জীবনমানকে আঘাত করছে।

দ্বিতীয়ত ঋণের পরিস্থিতি। সরকার বিদেশি উৎস থেকে যে টাকা নেয়, তার চেয়ে দেশীয় উৎস থেকে দ্বিগুণ টাকা ঋণ নেয়। এটার দায়-দেনা পরিস্থিতি ভিন্ন একটা ইঙ্গিত বহন করছে।

তৃতীয় সমস্যা হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে প্রবৃদ্ধির যে ধারা ছিল, সেই ধারায় শ্লোথকরণ হয়েছে। এর সঙ্গে কর আহরণ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতি এখনও ১০ দশমিক ১০ এর কাছাকাছি, যা মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করছে। পিছিয়ে পড়া মানুষের ভোগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ওপর মূল্যস্ফীতি সরাসরি প্রভাব ফেলছে। এসব কারণে বাল্যবিবাহ বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পৃথিবীতে যেখানে মূল্যস্ফীতি কমছে, কিন্তু সেই সুফল বাংলাদেশে দেওয়া যাচ্ছে না।

জিপিডি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জিডিপির ৩৭ শতাংশ সরকারি ঋণের পরিমাণ এবং ব্যক্তিখাতে ঋণ ৫ শতাংশ। সবমিলিয়ে ৪২ শতাংশ ঋণ রয়েছে। এর ফলে বিনিময় হারের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। এতদিন বলতাম বাংলাদেশ কখন বিদেশি ঋণ অনাদায়ি করেনি, কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিতে সরকার ঋণের টাকা দিতে পারছে না, যার পরিমাণ অন্তত ৫ শতাংশ। আর জিডিপি হার ৪ শতাংশ, কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশের ওপরে। সেটা অর্জন করতে বাকি সময়ে জিডিপি হার হতে হবে ১০ শতাংশে ওপরে, যার বাস্তবায়ন অসম্ভব। কারণ বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ কমে এসেছে, অন্যদিকে ব্যক্তিখাত কিংবা বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না।

গবেষণার সারাংশ উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, মানুষ তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছে। প্রথমত শোভন কর্মসংস্থান, দ্বিতীয়ত মানসম্মত শিক্ষা এবং সর্বশেষ সামাজিক সুরক্ষা। চার নম্বরে এসেছে পিছিয়ে পড়া মানুষের বৈষম্য কমিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থা। বাজেট পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য হতে হবে সংবেদনশীল, তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবেশ ও জলবায়ুর বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। আমার কথা বাজেট যাই হোক, তার বাস্তবায়ন যেন যথাযথ হয়। যার কাছে দুই টাকা যাওয়ার কথা সেটা যেন তার কাছে যায়।

তিনি বলেন, বাজেট সম্পর্কিত সংসদের স্থায়ী কমিটি রয়েছে, তাদের যেন বৈঠক হয়। এর আগের সংসদে ওই ধরনের বৈঠক দেখা যায়নি। এছাড়া তিন মাস পরপর অর্থমন্ত্রীকে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সংসদে উপস্থাপন করতে হবে, যা এর আগে দেখা যায়নি।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, উন্নয়ন অবকাঠামো খাতে বরাদ্দে বাড়লেও গুরুত্ব কমছে শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতের মতো সামাজিক খাত, যা দ্বিতীয় প্রজন্মের বড় সমস্যা। সরকারি অর্থের অপচয় বন্ধ ও সুষম বণ্টনের গুরুত্ব তুলে ধরেন বক্তারা বলেন, রেওয়াজ অনুযায়ী অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা হলেও বাজেট তৈরিতে গুরুত্ব পায় সুবিধাভোগী (প্রেসার গ্রুপের) শ্রেণির সুপারিশ। অনেক দিন থেকে বিশৃঙ্খলায় আর্থিক খাত। অর্থপাচার বাড়িয়েছে সংকট। এমন পরিস্থিতে অর্থনীতিতে বাগে আনতে দরকার সুশাসন আর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের জোরালো গুরুত্ব উঠে এসেছে আলোচনায়।

অর্থনীতি এর আরও খবর

img

১২ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত :  ১৫:৪৩, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৮ কোটি ৬৬ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ১১ হাজার ৮৩৯ কোটি ২০ লাখ টাকা।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য বলছে, চলতি মাস অক্টোবরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি ২২ লাখ ডলার বা ৯৮৬ কোটি টাকার রেমিট্যান্স আসছে। এভাবে রেমিট্যান্স আসার ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে আড়াই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে প্রবাসী আয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে, এই সময়ে রাষ্ট্র-মালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে একটি ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ৪ কোটি ৪৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৬৯ কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৬ লাখ ৪০ হাজার ডলার।

এই সময়ে ১১ ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স পাঠাননি প্রবাসীরা। ব্যাংকগুলো হলো- রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাবাক। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেন্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। আর বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং উরি ব্যাংক।

উল্লেখ্য, গত জুন মাসে ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার প্রবাসী আয় আসার পর চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল প্রায় ১৯১ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত ১০ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম আয় ছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় গত আগস্টে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। আর গত সেপ্টেম্বরে দেশে এসেছে চলতি অর্থবছরের সর্বোচ্চ ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার।


অর্থনীতি এর আরও খবর