রাতের চলাচল নিষিদ্ধ

img

সিলেট সীমান্তে ভারতের কারফিউ জারি

প্রকাশিত :  ০৭:০৭, ১০ মে ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৭:৫২, ১০ মে ২০২৫

সিলেট সীমান্তে ভারতের কারফিউ জারি

সিলেট সীমান্তঘেঁষা ভারতের মেঘালয় রাজ্যে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে রাত্রিকালীন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারতীয় প্রশাসন। ৮ মে থেকে কার্যকর হওয়া এই নির্দেশনায় প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত সীমান্তসংলগ্ন এলাকাগুলোতে সাধারণ মানুষের চলাচল সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে।

ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, মেঘালয়ের পূর্ব ও পশ্চিম জয়ন্তিয়া হিলস, পূর্ব খাসি হিলস, দক্ষিণ গারো হিলস এবং পশ্চিম গারো হিলস জেলার সীমান্তসংলগ্ন অঞ্চলগুলোতে এই কারফিউ কার্যকর হয়েছে। শূন্যরেখার ২০০ মিটার থেকে এক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাকে 'নিরাপত্তা সংবেদনশীল' ঘোষণা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

প্রশাসনের জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কারফিউ চলাকালীন পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির জমায়েত, অস্ত্র বা লাঠিসোঁটা বহন, গবাদিপশু ও পণ্য পরিবহন (বিশেষ করে চা পাতা, সুপারি, পানের পাতা, শুকনা মাছ), সীমান্ত পারাপার বা অবৈধ অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার সিলেটের তামাবিল সীমান্তে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ জরিপ কার্যক্রম চলাকালে বিএসএফ বাধার সম্মুখীন হয়। স্থানীয়দের আপত্তিতে ওই জরিপ বন্ধ হয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এই ঘটনার পরই সীমান্তে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার বাসিন্দা তাওহীদুল ইসলাম বলেন, “আমরা যারা বৈধভাবে চলাফেরা করি, তাদের জন্য এটা বড় সমস্যা নয়। তবে যারা অবৈধ কাজ করে, যেমন চোরাচালান বা সীমান্ত অতিক্রম করে, তাদের জন্য এটা কঠিন হবে। আইন মেনে চললে আমাদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।”

জৈন্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা মো. সাজু হোসেন বলেন, “সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অবশ্যই প্রয়োজন, তবে এতে যেন সাধারণ মানুষের চলাচলে সমস্যা না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এখানে অনেকেই ভোরবেলায় মাঠে কাজ করতে যান। কারফিউ থাকলে সেটা একটা সমস্যা হতে পারে।”

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, “ভারতের এই সিদ্ধান্ত তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক। আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। সীমান্তে যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে এবং বাংলাদেশি নাগরিকরা যেন নিরাপদে থাকতে পারে, সে জন্য আমাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।”

সিলেটের খবর এর আরও খবর

img

কুলাউড়ায় স্কুল ছাত্রী হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, ঘাতক গ্রেফতার ও আলামত উদ্ধার

প্রকাশিত :  ১২:৫৮, ১৭ জুন ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১২:৫৯, ১৭ জুন ২০২৫

সংগ্রাম দত্ত: মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায় স্কুল ছাত্রী নাফিসা জান্নাত আনজুম (১৫) হত্যায় প্রতিবেশী মো: জুনেল মিয়াকে (৩৯) গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া আসামির দেখানো মতে এবং পুলিশের তল্লাশীকালে হত্যাকাণ্ডের আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা ভিকটিমের পরিহিত বোরকা, স্কুল ব্যাগ, বই ও একটি জুতা উদ্ধার করে পুলিশ। 

সোমবার (১৬ জুন ) দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে  মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন এসব তথ্য গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে তুলে ধরেন।

গত ১২ জুন সকালে কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের আব্দুল খালিকের কন্যা এবং স্থানীয় শ্রীপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী নাসিফা জান্নাত আনজুম (১৫) 
কোচিং ক্লাসে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় । এরপর সে আর ফিরে আসেনি। সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ নিয়েও তাকে না পেয়ে স্বজনরা ঐ দিনই কুলাউড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ।

নিখোঁজের দুই দিন পর ১৪ জুন বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে বাড়ির পাশের ছড়ার পাশে দূর্গন্ধ পেয়ে ভিকটিমের ভাই ও মামা অর্ধগলিত মরদেহটি খুঁজে পান এবং পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে লাশের সুরতহাল প্রস্তুত করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় থানায় ভিকটিমের পরিবারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়। 

ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) নোবেল চাকমা, কুলাউড়া সার্কেলের (অতিঃ দায়িত্বে) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আজমল হোসেন, কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ গোলাম আপছার, পুলিশ পুরিদর্শক সুদীপ্ত শেখর ভট্টাচার্যসহ একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। 

দ্রুততম সময়ে ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল (অতিঃ দায়িত্বে কুলাউড়া সার্কেল) নেতৃত্বে কুলাউড়া থানার অফিসারদের নিয়ে কয়েকটি বিশেষ টিম গঠন করে আশেপাশের বাপক তল্লাশী করা হয়। এসময় ঘটনাস্থলের পাশে একটি ঝোপ থেকে ভিকটিমের স্কুল ব্যাগ, বই এবং একটি জুতা উদ্ধার করা হয়। 

শুধু স্থানীয় লোকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিশেষ ৬টি টিম গঠন করা হয়। স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, আলামত উদ্ধারের জাগো এবং নারী ঘটিত কিছু বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্টতা দেখে সন্দেহ হওয়ায় জুনেল মিয়াকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তার মোবাইল চেক করে পর্ন সাইটে ব্রাউজিং এর তথ্য দেখে পুলিশের সন্দেহ আরও বাড়ে। আটকের পর দুপুর থেকে রাত প্রায় ১২ টা পর্যন্ত জুনেল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।  জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে পুলিশ সুপারের সামনে রাত ১২ টার দিকে হত্যাকাণ্ডে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে। 

জিজ্ঞাসাবাদের জুনেল মিয়া জানায়, ভিকটিম তার বাড়ির সামনের একটি রাস্তা দিয়ে প্রায়ই স্কুল ও প্রাইভেটে আসা যাওয়া করত। সেই সুবাদে জুনেল মিয়া ভিকটিমের সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করে ঘটনার দিন গত ১২জুন ভিকটিম পাশের গ্রামে প্রাইভেট পড়া শেষে আসামীর বাড়ীর সামনের রাস্তা দিয়ে ফেরার পথে সকাল অনুমান ১০.৩০ ঘটিকার সময় আসামী ভিকটিমের সাথে কথা বলতে বলতে তার পিছু নেয়। ভিকটিম এড়িয়ে যেতে চাইলে জুনেল মিয়া ভিকটিমকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। তখন ভিকটিম চিৎকার করলে জুনেল মিয়া তার হাত দিয়ে গলায় চাপ দিয়ে ধরলে ভিকটিম ঘটনাস্থল কিরিম শাহ মাজারের মধ্যের রাস্তায় অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর ভিকটিমকে মোকাম সংলগ্ন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়ার পাড়ে ঝোপে ফেলে রাখে। 

মোকামের মাঠে পড়ে থাকা ভিকটিমের স্কুল ব্যাগ ও একটি জুতা ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী ঘন ঝোপে  এবং ভিকটিমের পরিহিত বোরকাটি নিকটবর্তী কিরিম শাহ মাজারের উত্তর পাশে জনৈক রওশন আলী গংয়ের পারিবারিক কবরস্থানের সীমানা বাউন্ডারীর পাশে ছুড়ে ফেলে দেয়। পুলিশ আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার দিবাগত রাতে স্থানীয় লোকজন এবং মিডিয়ার উপস্থিতিতে ভিকটিমের সেই বোরখা উদ্ধার করে।

সিলেটের খবর এর আরও খবর