img

গাজায় এখনো আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ইসরাইলের ‘বিস্ফোরক রোবট’

প্রকাশিত :  ০৬:৫৮, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৬:৫৯, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

গাজায় এখনো আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ইসরাইলের ‘বিস্ফোরক রোবট’

দখলদার ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর নিজ বাসস্থানে ফিরে আসছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। জাবালিয়া, শেখ রাদওয়ান, আবু ইস্কান্দারসহ বিভিন্ন এলাকায় যারা ফিরে গিয়েছেন তারা দেখছেন—ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও পড়ে আছে ইসরাইলের ‘বিস্ফোরক রোবট’, যেগুলোর অনেকগুলো এখনও ফাটেনি, নীরব ও মারাত্মক বিপজ্জনক অবস্থায় রয়ে গেছে। খবর আল জাজিরার। 

২০২৪ সালের মে মাসে ইসরাইল প্রথমবারের মতো জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্পে এসব রোবট ব্যবহার করে। এরপর থেকে এগুলো উত্তর গাজায় এক ভয়ঙ্কর আতঙ্কে পরিণত হয়েছে।

ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটর জানায়, যুদ্ধবিরতির আগ পর্যন্ত ইসরাইল এসব রোবট ব্যবহারে ‘অভূতপূর্ব গতি’ অর্জন করেছিল—প্রতিদিন প্রায় ৩০০টি আবাসিক ভবন ধ্বংস করা হচ্ছিল গাজা সিটি ও জাবালিয়ায়।

এই রোবটগুলো মূলত সাঁজোয়া যান, যেগুলোর ভেতর বিস্ফোরক ভর্তি করা হয়। এরপর সেগুলোকে সাঁজোয়া বুলডোজার দিয়ে টেনে নির্দিষ্ট এলাকায় নিয়ে গিয়ে দূরনিয়ন্ত্রণে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়—যা চারপাশের সবকিছু গুঁড়িয়ে দেয়।

গাজা সিটি সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, এসব রোবটের ‘ধ্বংস পরিধি প্রায় ৫০০ মিটার’ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এবং অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি ছিল ‘বিস্ময়কর মাত্রার’।

জাবালিয়ার ২২ বছর বয়সী শরিফ শাদি বলেন, ‘বিস্ফোরক রোবট যখন ঢোকে, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পুরো ব্লকটা ধ্বংস হয়ে যায়। শুধু ধ্বংসস্তূপ আর ধোঁয়া থাকে। ‘

শাদি স্মরণ করে বলেন, এক সকালে রাস্তায় থাকা অবস্থায় দেখেন একটি ডি১০ বুলডোজার একটি রোবট টেনে তাদের ব্লকের দিকে নিচ্ছে। 

তিনি বলেন, ‘আমি দৌড় দিতে শুরু করি। ১০০ মিটার দূর যেতে না যেতেই বিশাল এক বিস্ফোরণে আমি ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ি। যাঁরা কাছাকাছি ছিলেন, তাদের আর কোনো চিহ্নই ছিল না।’

ইউরো-মেড মনিটর তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, এসব রোবটের নির্বিচার ধ্বংসযজ্ঞ ‘নিষিদ্ধ অস্ত্রের শ্রেণিতে পড়ে’ এবং জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এর ব্যবহার “যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ” হিসেবে গণ্য হয়।

তবে ইসরাইলি সেনাবাহিনী এখনও এসব অস্ত্র ব্যবহারের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেনি।

ফিলিস্তিনি মেডিকেল রিলিফ সোসাইটির পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আবু আফাশ জানান, বিস্ফোরণের পর এসব রোবট থেকে বিষাক্ত গ্যাস ও ভারী ধাতব ধোঁয়া নির্গত হয়, যা তীব্র শ্বাসকষ্ট ও বিষক্রিয়ার কারণ হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মানুষের  বারবার শ্বাসরোধ, বুকে ব্যথা ও স্নায়বিক দুর্বলতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।’


আন্তর্জাতিক এর আরও খবর

img

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় ইসরাইলি হামলা, নিহত ৩ শিশুসহ ১১

প্রকাশিত :  ০৬:৩৫, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি হামলায় একই পরিবারের ১১ সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে সাতটি শিশু ও তিনজন নারী। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার মাত্র আট দিন পরই ইসরাইল চুক্তি লঙ্ঘনের এ ঘটনা ঘটালো। 

 আজ রোববার (১৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

গাজার সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় গাজা সিটির জায়তুন এলাকায় আবু শাহবান পরিবারের বেসামরিক একটি গাড়িতে ইসরাইলি বাহিনীর ট্যাংকের গোলা আঘাত হানে। গাড়িটিতে করে তারা তাদের নিজ বাড়ির অবস্থা দেখতে যাচ্ছিলেন।

সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, নিহতদের মধ্যে সাতটি শিশু ও তিনজন নারী। 

তিনি বলেন, ‘তাদের সতর্ক করা যেত বা অন্যভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। কিন্তু যা ঘটেছে, তা প্রমাণ করে দখলদার বাহিনী এখনো রক্তপিপাসু এবং নিরীহ বেসামরিকদের বিরুদ্ধে অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।’

সংস্থাটি এক পৃথক বিবৃতিতে জানায়, জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক কার্যালয়ের (ওসিএইচএ) সহায়তায় তারা এখন পর্যন্ত নয়জনের মরদেহ উদ্ধার করতে পেরেছে। তবে দুটি শিশুর মরদেহ এখনো নিখোঁজ, কারণ প্রচণ্ড বিস্ফোরণে তাদের দেহাবশেষ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।

হামাস এই ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ বলে নিন্দা জানিয়েছে। 

সংগঠনটির দাবি, কোনো কারণ ছাড়াই ওই পরিবারের ওপর হামলা করা হয়েছে। এতইসঙ্গে তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যেন ইসরাইলকে  যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে চাপ দেওয়া হয়।

এদিকে চলমান বন্দি বিনিময় চুক্তির মধ্যেই শনিবার পর্যন্ত ইসরাইল অন্তত ৩৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে গাজার মিডিয়া অফিস। খাদ্য ও চিকিৎসাসহ জরুরি সহায়তা প্রবাহও কঠোরভাবে সীমিত রাখা হয়েছে।


আন্তর্জাতিক এর আরও খবর