img

করোনার সাইলেন্ট কিলার সম্পর্কে সবার ধারণা থাকা প্রয়োজন

প্রকাশিত :  ১০:০৫, ১৮ জানুয়ারী ২০২১
সর্বশেষ আপডেট: ১০:২৬, ১৮ জানুয়ারী ২০২১

করোনার সাইলেন্ট কিলার সম্পর্কে সবার ধারণা থাকা প্রয়োজন

আমার এক বন্ধুর ভাই জার্মানীতে একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী। ভদ্রলোক কভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। অবস্থার একটু উন্নতি হচ্ছে বলে তিনি খুশী মনে আমার বন্ধুকে তা জানিয়ে ডিনার খেয়ে ইউটিউবে মুভি দেখে ঘুমুতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে তাঁর স্ত্রী তাঁকে বল্লেন তাঁর ঠোঁটটা একটু নীলচে দেখাচ্ছে। 

আমার বন্ধুর ভাই কথাটায় গুরুত্ব না দিয়ে ঘুম পাচ্ছে বলে বিছানায় চলে গেলেন। কিন্তু ভদ্রলোকের স্ত্রী কিছুতেই মনে স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। তিনি এম্বুলেন্স ডাকলেন। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে দেখা গেল রোগীর শরীরে অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাত্র বায়ান্ন শতাংশ (৫২%)।

আপনারা হয়তো অনেকে শুনেছেন, কোভিড রোগীর অবস্থা ভালোর দিকেই যাচ্ছিল , তারপর হঠাৎ মারা গেল। সেজন্যেই এই কভিডকালীন সময়ে আপনাদের জানা দরকার কোন্ পরিস্থিতি নীরবে নিভৃতে কোনো রকম আভাস ছাড়াই কোভিড রোগীর জীবন কেড়ে নিতে পারে।

অনেক সময় কোভিড রোগীর তেমন কোনো সিম্পটম বা উপসর্গ অর্থাৎ কোনো কষ্ট অনুভব করা ছাড়াই রোগীর অক্সিজেনের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে, শুধুমাত্র ঠোঁট ও নাকের ডগা  নীল হতে দেখা যাবে। এমন অবস্থা হলে রোগী খারাপ বোধ না করলেও সময় নষ্ট না করে এমার্জেন্সি চিকিৎসা ব্যবস্থার শরণাপন্ন হতে হবে। সেজন্যে প্রত্যেক করোনা রোগীর বাড়ীতে একটি মেডিকেল গ্রেড পাল্স  অক্সিমিটার থাকা প্রয়োজন। 


পাল্স অক্সিমিটার ছোট একটি যন্ত্র যা আপনার রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বলে দিতে পারে। এটি দিয়ে রক্তে অক্সিজেনের সম্পৃক্ততা মাপা যায় বাড়ীতে বসেই কোনো ডাক্তারের সাহায্য ছাড়াই। ছোট এই যন্ত্রটির মধ্যে হাতের একটি আঙ্গুল ঢুকিয়ে ২০/৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করলেই যন্ত্রটি বলে দেবে আপনার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কত। 

তবে এটি ব্যবহারের কিছু নিয়ম রয়েছে। 

যেমন, আপনার হাতে যদি নেইল পলিশ তাকে তাহলে অক্সিমিটারে আলো নেইল পলিশ ভেদ করে যেতে পারেনা। সে ক্ষেত্রে নেইল পলিশ উঠিয়ে অক্সিজেন মাপতে হবে। যদি দু'হাতেই মেহেদী লাগানো থাকে তাহলে পায়ের আঙুলে অক্সিমিটার লাগাতে হবে। খুব কড়া আলোতে যেমন রোদেলা দিনে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে মাপলে যন্ত্রটি ভুল মাপ দেবে। এছাড়া যে আঙ্গুলটি অক্সিমিটারে ঢোকাবেন সে আঙ্গুলে যদি কোনো কারনে রক্ত চলাচলে সমস্যা থাকে তাহলে সঠিক মাপ দেখা যাবে না। যে হাতের আঙ্গুলে অক্সিজেন মাপবেন সে হাতটার কোনো অংশে যদি এমন চাপ দেওয়া থাকে যাতে রক্ত চলাচল ব্যহত হয় তাহলেও যন্ত্রটি সঠিক মাপ দেবে না।

অক্সিমিটারে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ থেকে ১০০-এর মধ্যে থাকা স্বাভাবিক। ৯৫-এর কম হলে দেরী না করে জরুরী ভিত্তিতে  হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন। ৯০% -এর কম হলে মোটেই দেরী করা উচিত নয়।

আরো একটি কথা মনে রাখা দরকার। যদি কারো বসে থাকা অবস্থায় অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ -এর উপরে থাকে কিন্তু ৪০/৫০ স্টেপ হেঁটে আসার পর অক্সিজেনের মাত্রা ৩ কমে যায়, যেমন বসে থাকলে ছিয়ানব্বই আর ৪০/৫০ স্টেপ বা কদম হেঁটে আসলে প্রায় ৯৩ হয়ে যায় তাহলেও দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।

তবে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ ১০০% থেকে ৭০% পর্যন্ত থাকলেই কেবল মাত্র অক্সিমিটারে ধরা পড়বে। যদি অক্সিজেনের পরিমাণ ৭০% - এর চাইতেও কমে যায় তাহলে সেটি মাপার ক্ষমতা আর অক্সিমিটারের থাকেনা। তখন রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে অক্সিজেনের পরিমাণ জানতে হয়। 

কাজেই মোরাল অফ দ্যা স্টোরি হচ্ছে, করোনাকালীন সময়ে বাড়ীতে একটি অক্সিমিটার থাকা প্রয়োজন, সেই সাথে এর ব্যবহার জেনে রাখা প্রয়োজন এবং করোনা রোগী খারাপ বোধ না করলেও অক্সিজেনের মাত্রা ৯৪/৯৫-এর কম হলে হাসপাতালে যেতে হবে।

[মেডিকেল গ্রেড পাল্স অক্সিমিটার ৩০-৫০ পাউন্ডের মত দাম হবে।]

লেখক: ড. জাকি রেজওয়ানা আনোয়ার FRSA, মা ও শিশু বিশেষজ্ঞ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সংবাদ পাঠক।

img

করোনার ঝুঁকি: জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারতে না যাওয়ার পরামর্শ

প্রকাশিত :  ১৯:১৪, ০৯ জুন ২০২৫

ভারতসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এবং অন্যান্য দেশে ভাইরাসের এই ধরনটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় নতুন সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত এবং ভাইরাস ছড়ানো অন্যান্য দেশে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি ঝুঁকি মোকাবেলায় সব স্থল ও বিমানবন্দরে হেলথ স্ক্রিনিং ও নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। 

আজ সোমবার (৯ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. হালিমুর রশিদের স্বাক্ষরে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। 

নির্দেশনায় বলা হয়, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের নতুন সাব ভেরিয়েন্ট, বিশেষ করে অমিক্রন এলএফ. ৭, এক্সএফজি, জেএন-১ এবং এনবি ১.৮.১ এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে এর সম্ভাব্য সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারত ও অন্যান্য সংক্রামক দেশ এবং বাংলাদেশ থেকে ভারত এবং অন্যান্য সংক্রামক দেশে ভ্রমণকারী নাগরিকদের জন্য দেশের সকল স্থল, নৌ, বিমানবন্দরের আইএইচআর ডেস্কে নজরদারি জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি ঝুঁকি মোকাবিলায় কিছু কার্যক্রম নিতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার দেশে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়। আশঙ্কাজনক না হলেও দেশে এ রোগের প্রকোপ বাড়ছে। আইসিডিডিআরবির গবেষকেরা করোনার নতুন একটি ধরন শনাক্তের কথা বলছেন। এর নাম এক্সএফজি। এর পাশাপাশি এক্সএফসি ধরনটিও পাওয়া গেছে। দুটোই করোনার শক্তিশালী ধরন অমিক্রনের জেএন-১ ভ্যারিয়েন্টের উপধরন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া সংক্রমণ প্রতিরোধে কিছু নির্দেশনা হলো:

- সাত বার প্রয়োজনমতো সাবান দিয়ে হাত ধোবেন (অন্তত ২৩ সেকেন্ড)।
- নাক-মুখ ঢাকায় জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন।
- আক্রান্ত ব্যক্তি হতে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরে থাকতে হবে
- অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না
- হাঁচি-কাশির সময় বাহ/ টিস্যু/ কাপড় দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখুন।
দেশে প্রবেশ পথের জন্য নির্দেশনা
- দেশের বিভিন্ন স্থল/নৌ/ বিমান বন্দরসমূহে আইএইচআর (IHR-2005) স্বাস্থ্য ডেস্কসমূহে সতর্ক থাকা, হেলথ স্ক্রিনিং এবং সার্ভেল্যান্স জোরদার করুন।
- দেশের পয়েন্টস অব এন্ট্রি সমূহে থার্মাল স্কান্যার/ ডিজিটাল হেন্ড হেল্ড থার্মোমিটারের মাধ্যমে নন টাচ টেকনিকে তাপমাত্রা নির্ণয় করুন।

- চিকিৎসা কাজে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ মাস্ক, গ্লাভস এবং রোগ প্রতিরোধী পোশাক মজুত রাখুন (পিপিই)

- ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য রোগ প্রতিরোধ নির্দেশনা সমূহ প্রচার করুন।
- জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ভারত ও অন্যান্য আক্রান্ত দেশসমূহে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন।
সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে করণীয়
- অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন, মারাত্মক অসুস্থ হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
- রোগীর নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে বলুন
- প্রয়োজন হলে আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন (০১৪০১-১৯৬২৯৩)