ঢাকাদক্ষিণ উন্নয়ন সংস্থা ইউকে\'র কার্যনির্বাহী কমিটি ও উপদেষ্টা কমিটির যৌথ সভা গত ১ অক্টোবর বুধবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয়।সভায় উন্নয়ন সংস্থার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
পূর্ব লন্ডনের একটি রেষ্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সংস্থার প্রেসিডেন্ট আব্দুল লতিফ নিজাম, সভা পরিচালনা করেন জেনারেল সেক্রেটারি আব্দুল বাছির।সভায় আগামী ৯ নভেম্বর রবিবার ২০২৫ ঢাকাদক্ষিণ উন্নয়ন সংস্থার আয়োজনে এডুকেশনাল অ্যাওয়ার্ড সিরিমনি অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করতে সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটি, সম্মানিত ট্রাস্টিবৃন্দ ও ঢাকাদক্ষিণবাসী সহ সংস্লিস্ট সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতার আহবান করা হয়।
বৃটেনে ঢাকাদক্ষিণ হাউস থেকে রেন্ট বাবৎ সংগৃহীত পাউন্ড দিয়ে বাংলাদেশে প্রতিটি গ্রামে ঘরহীন মানুষের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ঘর নির্মাণ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রথম ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ইনশাআল্লাহ আগামী মাসে নতুন আরো একটি ঘর নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
সভায় কোরআন তেলাওয়াত করেন সহকারী ট্রেজারার মোঃ ছাদেক আহমদ, সভায় উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সম্মানিত উপদেষ্টাগণের মধ্যে আতাউর রহমান আঙ্গুর মিয়া, আফজল হোসেন চৌধুরী, আলাউদ্দিন আহমদ, দেলওয়ার হোসেন লেবু, সালেহ আহমদ, সংস্থার প্রেসিডেন্ট আব্দুল লতিফ নিজাম, জেনারেল সেক্রেটারি আব্দুল বাছির, ট্রেজারার জাকির হোসেন, সহকারী ট্রেজারার মো: ছাদেক আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল আহমদ চৌধুরী, মেম্বারশীপ সেক্রেটারি কামরুল ইসলাম, ফান্ড রাইজিং সেক্রেটারি সোহেল আহমদ, ইসি মেম্বার আবজল হোসেন, আজিজুর রহমান ও জাবেদ আহমদ।
অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে আলোচনায় উপস্থিত সকলেই আগামীর পথচলায় ঢাকাদক্ষিণ উন্নয়ন সংস্থা কর্তৃক গৃহিত মানবতার কল্যাণকামী সকল পদক্ষেপে ঢাকাদক্ষিণবাসী ও সংগঠনের সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা অতীতের মতোই অব্যাহত থাকবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সিলেটের যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই: সড়ক, রেল, এবার আকাশপথও
প্রকাশিত :
০৯:৫৩, ০৯ অক্টোবর ২০২৫
সংগ্রাম দত্ত: বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট বিভাগ—চা, পাহাড়, হাওর ও প্রবাসী অধ্যুষিত এই অঞ্চল দেশের অর্থনীতি, পর্যটন ও প্রবাসী যোগাযোগের এক উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র।
তবু দুর্বল যোগাযোগব্যবস্থা, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও বিমান চলাচলের সংকট সিলেটের এই সম্ভাবনাকে বারবার পিছিয়ে দিচ্ছে।
বিভাগে রয়েছে দুটি বিমানবন্দর—সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যা সচল; এবং মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর বিমানবন্দর, যা দীর্ঘদিন ধরে নিস্তব্ধ।
একটির সম্প্রসারণ প্রকল্প বছরের পর বছর পিছিয়ে যাচ্ছে, অপরটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে অচল।
এর ফলে ভোগান্তি বাড়ছে সিলেটবাসীর, হারিয়ে যাচ্ছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্ভাবনার এক বিশাল ক্ষেত্র।
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর: সময় বাড়ে, ব্যয় বাড়ে—শেষ হয় না কাজ
১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ও ২০০২ সালে আন্তর্জাতিক মর্যাদা পাওয়া সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শুধু সিলেট নয়, প্রবাসী অধ্যুষিত সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আবেগ ও গৌরবের প্রতীক।
বর্তমানে এখান থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডন, ম্যানচেস্টার ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি রুটে সরাসরি ফ্লাইট চলাচল করছে।
তবে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট সংখ্যা সীমিত, টিকিট সংকট প্রকট, আর অতিরিক্ত ভাড়ায় যাত্রীরা পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যানজট ও ট্রেনের বিলম্বের কারণে অনেক যাত্রী বাধ্য হয়ে বিমানে যেতে চান, কিন্তু টিকিট না পাওয়ায় হতাশ হয়ে ফিরতে হয়।
২০১৮ সালের নভেম্বরে বিমানবন্দরটির সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ২,৩০৯ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প অনুমোদন হয়।
তবে নকশাগত ত্রুটি, প্রশাসনিক জটিলতা ও ধীরগতি কারণে পাঁচ বছরে অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২২ শতাংশ।
প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৭৮০ কোটি টাকা, আর মেয়াদ তৃতীয় দফায় বাড়িয়ে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বছরে প্রায় ২০ লাখ যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়মতো কাজ শেষ হলে সিলেট কেবল প্রবাসী যোগাযোগের কেন্দ্রই নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ রিজিওনাল এয়ার হাব (Regional Air Hub) হয়ে উঠবে।
শমশেরনগর বিমানবন্দর: ইতিহাসের গৌরব, বর্তমানের নিস্তব্ধতা
অন্যদিকে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় চা-বাগানঘেরা শমশেরনগরে অবস্থিত বিমানবন্দরটি একসময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিত ছিল।
১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার সামরিক ব্যবহারের জন্য ৬২২ একর জমিতে বিমানবন্দরটি নির্মাণ করে।
৬,০০০ ফুট দীর্ঘ ও ৭৫ ফুট প্রশস্ত রানওয়েতে একসময় প্রশিক্ষণ ও যাত্রীবাহী বিমান চলাচল করত। কিন্তু ১৯৬৮ সালের একটি দুর্ঘটনার পর থেকে বিমান ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়।
পরবর্তীতে এটি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে।
রানওয়ে ও সীমান্ত প্রাচীর সংস্কার করা হলেও বড় অংশ পতিত পড়ে আছে; স্থানীয়রা ইজারা নিয়ে সেখানে কৃষিকাজ করছেন।
১৯৯৫ সালে সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের প্রচেষ্টায় বেসরকারি এয়ারলাইনসের একটি স্বল্পমেয়াদি ফ্লাইট চালু হয়, কিন্তু অবকাঠামো ও যাত্রীসুবিধার অভাবে তা টেকেনি।
২০১৬ সালে তৎকালীন বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ঘোষণা দিয়েছিলেন, এক বছরের মধ্যে শমশেরনগরে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু হবে—কিন্তু তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।
বিগত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর অন্তবর্তী কালীন সরকার অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতের বিকাশ ও যাত্রী পরিবহণ বাড়াতে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিত্যক্ত, অব্যবহৃত ও দখলে থাকা ৭টি বিমানবন্দর যথাক্রমে ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, বগুড়া, শমসেরনগর, কুমিল্লা ও তেজগাঁও বিমানবন্দর নতুন করে চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে ।
প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন। যাত্রীসেবার পাশাপাশি ভৌগোলিক কারণে এই বিমানবন্দরের সামরিক গুরুত্বও রয়েছে।
বিমানবন্দরটি চালুর লক্ষ্যে ঢাকা থেকে বিমানবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেছেন। তবে দুঃখজনকভাবে, এখনো এর চালুর বিষয়ে কোনো কার্যকর সরকারি উদ্যোগ বা সিদ্ধান্ত দেখা যায়নি।
পর্যটন ও প্রবাসী যোগাযোগের অনাবিষ্কৃত সম্ভাবনা
সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, চা-বাগান ও হাওরের অপার বৈচিত্র্যে ভরপুর।
প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী নির্ময় শিববাড়ি, ভূনবীর গ্রামের প্রাচীন শ্রী শ্রী বাসুদেব মন্দির, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, হামহাম জলপ্রপাত, বাইক্কা বিল, হাকালুকি হাওর, মাধবপুর লেক, হযরত শাহজালাল ও হযরত শাহপরান মাজার, ছাতকের প্রাচীন সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, ফেঞ্চুগঞ্জের সার কারখানা, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট এমএজি মেডিকেল কলেজ হসপিটাল, সবুজ চা বাগানের মধ্যে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, শ্রীশ্রী মহালক্ষ্মী শক্তিপীঠ, শ্রী শ্রী জয়ন্তী শক্তিপীঠ, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু পিতার বাসস্থান, লালাখাল, ও জাফলং ইত্যাদি স্থানে প্রতিদিন হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক এই স্থানগুলোতে ভিড় জমায়।
কিন্তু পর্যটন শিল্পের বিকাশে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে সহজ ও দ্রুত যোগাযোগের অভাব।
প্রবাসী ও পর্যটকরা বলেন, শমশেরনগর বিমানবন্দর চালু হলে সিলেট ওসমানীর চাপ কমবে, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বিনিয়োগ বাড়বে, চা, মাছ ও কৃষিপণ্য দ্রুত রপ্তানি করা সম্ভব হবে, আর প্রবাসীরা সরাসরি নিজ জেলায় পৌঁছাতে পারবেন।
শ্রীমঙ্গলের সাবেক রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকরাসেন্দ্র দত্ত চৌধুরী বলেন, “শমশেরনগর বিমানবন্দর চালু হলে মৌলভীবাজারে পর্যটন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে। এটি শুধু সময়ের দাবি নয়—অঞ্চলটির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত।”
সিলেটের আকাশে উন্নয়নের নতুন উড়াল
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন এবং শমশেরনগর বিমানবন্দরের পুনরুজ্জীবন—এই দুই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন সিলেট বিভাগের জন্য এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে।
অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীরা খুব দ্রুত ঢাকা ও অন্যান্য জেলায় যেতে পারবেন, সময় ও খরচ দুটোই কমবে।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক রুটে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে থাকা প্রবাসীরা সরাসরি সিলেট বা শমশেরনগর বিমানবন্দরে নেমে অল্প সময়েই নিজ গৃহে পৌঁছাতে পারবেন।
দেশি-বিদেশি পর্যটকেরাও সহজে এসে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের চা-বাগান, জলপ্রপাত, হাওর ও পাহাড়ি সৌন্দর্য উপভোগ করে অল্প সময়েই ফিরে যেতে পারবেন।
সঠিক পরিকল্পনা, সময়োপযোগী উদ্যোগ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এই দুটি বিমানবন্দরই হতে পারে বাংলাদেশের আঞ্চলিক বিমান যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু—যেখান থেকে সিলেটের আকাশে সত্যিই উড়বে উন্নয়নের নতুন স্বপ্ন।