img

সবুজের প্রত্যাশায় মনোবলের জয়: দুর্যোগে নয়, ঐক্যে জিতবে পুঁজিবাজার

প্রকাশিত :  ১৬:২৫, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

সবুজের প্রত্যাশায় মনোবলের জয়: দুর্যোগে নয়, ঐক্যে জিতবে পুঁজিবাজার

✍️ রেজুয়ান আহম্মেদ

যখনই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে—বন্যা, ঘূর্ণিঝড় কিংবা মহামারী—তখন আমরা এক অদ্ভুত ঐক্যের চিত্র দেখি। মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ায়। কারও ঘর ভেসে গেলে অন্য কেউ তার কাঁধে হাত রাখে, খাবার ভাগ করে নেয়, জীবন বাঁচায়। বাংলাদেশের মানুষ দুর্যোগে ভয় পায় না—তারা লড়তে জানে। এই মনোবলই আমাদের জাতির পরিচয়।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, যখন পুঁজিবাজারে দুর্যোগ নামে, তখন এই ঐক্য আর দেখা যায় না। বরং দেখা যায় একদল মানুষ, যারা ভয় ছড়ায়, নেতিবাচক মন্তব্য করে এবং নিজেদের হতাশা ছড়িয়ে দেয় অন্যের মনে। যেন বাজারে আগুন ধরলে পানি নয়—তারা তেল ঢেলে দেয়!

সোশ্যাল মিডিয়ার ফিড খুললেই দেখা যায় হতাশার বন্যা। কেউ লিখছেন—“সব শেষ!”, কেউ বলছেন—“এই বাজারে আর কিছু নেই!” এমন পোস্ট পড়েই অনেকে ভয় পেয়ে যান। যে বিনিয়োগকারী সকালবেলা আশায় বুক বেঁধে শেয়ার কিনেছিলেন, দুপুরে সেই ভয় দেখে বিক্রি করে দেন—লস নিয়েই।

এইভাবেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারপর সূচক নেমে যায়, বাজার লাল হয়ে ওঠে, আর সেই একই মানুষরা বলে—“দেখলেন তো, আমি বলেছিলাম ধস আসবে!”

কিন্তু আসলে ধস আনে বাজার নয়, মানুষের মানসিকতা।

আমি নিজেও একজন বিনিয়োগকারী। আমারও ক্ষতি হয়েছে—অনেক লস। কিন্তু কখনো মনোবল হারাইনি। কারণ আমি জানি, পুঁজিবাজার মানেই ওঠানামা, লাভ-ক্ষতির মিশেল।

আজ যদি সূচক নিচে নামে, আগামীকাল তা আবার উঠবে—ইতিহাস তাই বলে।

বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিরাও পুঁজিবাজারের পথেই গেছেন। তাদের জীবনেও ক্ষতির গল্প আছে, কিন্তু সেই ক্ষতি তাদের ভাঙতে পারেনি। বরং শিখিয়েছে—ধৈর্যই সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ।

আমাদের দেশে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী অন্যের কথায় বিনিয়োগ করেন।

কেউ বলে, “এই শেয়ার নাও, এটা উড়বে!”—আর মানুষ চোখ বুজে কিনে ফেলে। পরে যখন পড়ে যায়, তখন বলে, “বাজার খারাপ।”

না, বাজার খারাপ নয়—খারাপ আমাদের অজ্ঞতা।

তাই বিনিয়োগের আগে জানা জরুরি—

কোন কোম্পানি ভালো, তার আয় কেমন, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কী, বাজারের ধারা কেমন—এসব জানা ছাড়া বিনিয়োগ মানেই অন্ধ দৌড়।

এখানে টিপস নয়, দরকার তথ্য ও বিশ্লেষণ।

আর এই বিশ্লেষণই লেখেন তারা, যারা সত্যিই বিনিয়োগকারীদের জন্য কাজ করেন—অর্থনীতি সাংবাদিক, বাজার বিশ্লেষক ও গবেষকেরা।

আমরা যারা পুঁজিবাজার নিয়ে লেখালেখি করি, আমাদের লক্ষ্য একটাই—বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা।

কারও ক্ষতি চাওয়া নয়, বরং তাদের ভুল থেকে ফিরিয়ে আনা।

তবু আশ্চর্যের বিষয়, অনেকেই ভাবেন—আমরাই নাকি তাদের ক্ষতির কারণ!

তারা বুঝতে চান না, যদি আমরা না লিখতাম, যদি আমরা ভুল কোম্পানির বিষয়ে সতর্কতা না দিতাম, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ হতো আরও ভয়াবহ।

আমরা লিখি কারণ আমরা চাই—বাজার টিকুক, বিনিয়োগকারীরা বাঁচুক।

আমরা সমালোচনা করি, কারণ নীরবতা মানে আত্মঘাতী সমর্থন।

দুর্যোগে আমরা এক হই—সেটাই আমাদের শক্তি।

তাহলে পুঁজিবাজারে কেন নয়?

যখন বাজার পড়ে যায়, তখন প্রয়োজন একসাথে দাঁড়ানো—

যেন এক বিনিয়োগকারীর ভয় অন্যের আস্থা না কাঁপায়,

যেন এক নেতিবাচক পোস্টে হাজার বিনিয়োগকারী লস না দেন,

যেন আমরা সবাই মিলে বলি—“আমরা আছি, আমরা ভাঙব না!”

বাজার শুধু অর্থের নয়—এটি আস্থার ক্ষেত্র।

আর আস্থা গড়ে ওঠে ঐক্যে, বিশ্বাসে, সাহসে।

আজ সূচক হয়তো নিচে, স্ক্রিন লাল—

কিন্তু এই লালই একদিন সবুজের ইঙ্গিত দেয়।

যে বিনিয়োগকারী আজ ধৈর্য ধরেন, আগামীকাল সেই হাসেন।

যে আজ নেতিবাচকতার বদলে সাহস ছড়ান, সেই আসলে বাজারের প্রকৃত নায়ক।

তাই যারা পুঁজিবাজারে আছেন, তাদের উদ্দেশে একটাই কথা—

দুর্যোগে হতাশ হবেন না, হোন দৃঢ়। ভয় নয়, ছড়ান বিশ্বাস।

কারণ ইতিহাস বারবার বলে—

“যে ভয় পায়, সে হারায়; আর যে বিশ্বাস রাখে, সে জেতে।”

বাজারকে ধ্বংস করে ভয়, আর বাঁচায় মনোবল।

যখন আমরা সবাই একসাথে ইতিবাচক ভাবি, তখনই সূচক জেগে ওঠে।

আজ যারা হতাশ, তারা যদি এক মুহূর্তের জন্যও ভাবেন—

“আমি হারিনি, আমি অপেক্ষা করছি”—

তাহলেই বাজারে সবুজ ফিরে আসবে।

তাই চলুন—নেতিবাচকতা নয়, ছড়াই আস্থা।

বিনিয়োগ হোক জ্ঞানে, বাজার হোক ঐক্যে,

আর আমাদের প্রত্যেকের হৃদয়ে থাকুক একটাই বিশ্বাস—

সবুজ ফিরবে, যদি আমরা হার না মানি।

img

শেয়ারবাজার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে মাঠে নামছে জেলা-উপজেলা প্রশাসন

প্রকাশিত :  ০৯:৫০, ২০ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৯:৫৫, ২০ অক্টোবর ২০২৫

দেশের পুঁজিবাজার সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে আরও শিক্ষিত ও সচেতন করতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে । এবার বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমে সরাসরি সম্পৃক্ত হচ্ছে মাঠ প্রশাসন—অর্থাৎ দেশের সব জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

বিএসইসির অনুরোধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত ৮ অক্টোবর একটি স্মারক জারি করে সব জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) বিনিয়োগ শিক্ষা বিস্তারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে।

বিএসইসি মনে করছে, সরকারের এই সর্বোচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা দেশের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি, নিরাপদ বিনিয়োগ চর্চা ও মূলধন বাজারের টেকসই উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের জন্য বিএসইসির ৫ দিকনির্দেশনা:

১ ওয়েবসাইটে লিংক সংযুক্তি: প্রতিটি জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে বিএসইসির আর্থিক সাক্ষরতা বিষয়ক ওয়েবসাইট www.finlitbd.com এবং ইউটিউব চ্যানেলের (https://www.youtube.com/@financialliteracyprogramba6178) লিংক যুক্ত করতে হবে।

২. সেমিনার ও কর্মশালায় সহযোগিতা: জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিএসইসি আয়োজিত বিনিয়োগ সচেতনতা সেমিনার, কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ আয়োজন এবং সমন্বয়ে প্রশাসনের সহায়তা দিতে হবে।

৩. মাসিক সভায় আলোচ্যসূচি: জেলা মাসিক সমন্বয় সভায় বিনিয়োগ শিক্ষা ও নিরাপদ বিনিয়োগ সচেতনতা সৃষ্টির বিষয়টি নিয়মিত আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৪.  প্রচার-প্রকাশনা উদ্যোগ: জেলা তথ্য অফিসের সহায়তায় বিনিয়োগ শিক্ষা বিষয়ক প্রচার ও প্রকাশনা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

৫.  নির্দিষ্ট দায়িত্ব প্রদান: জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার বা সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ শাখা)-কে শেয়ারবাজার বিনিয়োগসংক্রান্ত তথ্য ও সহায়তা প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিএসইসি আশা করছে, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের এই সম্মিলিত উদ্যোগ দেশের সাধারণ জনগণের মাঝে বিনিয়োগ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করবে। ফলে নিরাপদ ও জ্ঞানভিত্তিক বিনিয়োগ সংস্কৃতি গড়ে উঠবে, যা দেশের শেয়ারবাজারকে আরও গতিশীল ও শক্তিশালী করে তুলবে।