img

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ‘ভারতীয় যোগসাজশ’, ষড়যন্ত্র শুরু ২০০৮ থেকে

প্রকাশিত :  ০৫:০৭, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ‘ভারতীয় যোগসাজশ’, ষড়যন্ত্র শুরু ২০০৮ থেকে

জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান জানিয়েছেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পেছনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং ‘ভারতীয় যোগসাজশ’-এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। রোববার (৩০ নভেম্বর) ১৬ বছর আগের এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন।

ফজলুর রহমান বলেন, তদন্তে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরকে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা এবং বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার ভাষায়, ‘কথা হচ্ছে এই বাহিনীটাকে দুর্বল করার ও বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র ছিল। তখন ভারত চেয়েছিল বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে আর তৎকালীন সরকার ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছিল।’

সংবাদ সম্মেলনে পিলখানা হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীদের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কয়েকজন রাজনৈতিক ও সামরিক নেতার নাম উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, শেখ সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, সাহারা খাতুন, জেনারেল তারেক সিদ্দিকী, তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ, তৎকালীন ডিজিএফআই এর প্রধান মেজর জেনারেল আকবর।’

তিনি আরও দাবি করেন, ‘বিডিআর কার্নেজটা হওয়ার পর সরকার তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছিল এবং প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল।’ প্রতিবেশী দেশ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতকে বুঝিয়েছি, যেখানে আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দলবলসহ আশ্রয় নিয়েছেন।’

এ সময় তিনি আরও জানান, তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ নাকি বলেছিলেন, ‘তিনি এখানে অ্যাকশন করলে ভারত এখানে হস্তক্ষেপ করত।’

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। ওই সময়কার পরিস্থিতিতে ভারতীয়দের সম্পৃক্ততার প্রসঙ্গ তুলে কমিশনপ্রধান বলেন, ‘ওই সময় ৯২১ জনের মতো ভারতীয় দেশে এসেছিল। তার মধ্যে ৬৭ জন ভারতীয়র হিসাব মিলছে না।’

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুনঃতদন্তের দাবি ওঠায় গত ২৪ ডিসেম্বর সরকার জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে। রোববার জমা দেওয়া প্রতিবেদন তৈরিতে ২৪৭ জনের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। সাক্ষ্যদাতাদের মধ্যে নিহতদের পরিবার, রাজনৈতিক নেতা, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য, সাবেক ও বর্তমান বিডিআর–বিজিবি সদস্য, কারাবন্দী ব্যক্তি ও তিনজন সাংবাদিকও ছিলেন। সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে বর্তমান সেনাপ্রধানেরও।

ফজলুর রহমান জানান, এই ঘটনার পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ধরে হয়েছে। তার ভাষায়, ‘এটা একদিনে হয়নি। যেমন তাপস এসে বিভিন্ন সময় মিটিং করেছেন। সর্বশেষ দিনে এই কিলিংটা হয়েছে।’ ষড়যন্ত্র কখন শুরু হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০০৮ থেকে শুরু হয়েছে এটা বলতে পারেন। নির্বাচনের আগে থেকে শুরু হয়েছে।’

পিলখানায় বিদ্রোহের কারণ প্রসঙ্গে তিনি জানান, বিডিআরের ভেতরে ‘ডাল–ভাত কর্মসূচি নিয়ে ক্ষোভ, অতিরিক্ত ডিউটি, অফিসারদের প্রতি বিরূপ মনোভাব এবং অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন’ ছিল।

সাবেক মেয়র তাপসকে ‘হত্যাচেষ্টা’ মামলায় পাঁচ সেনা কর্মকর্তাকে গুম করার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাদের গুম করা হয়নি। তাদের ডিজিএফআইসহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।’

এর আগে প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তরের সময় জানানো হয়, পিলখানা হত্যাকাণ্ড ‘পরিকল্পিত’ ছিল এবং এর পেছনে ‘ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবুজ সংকেত’ ছিল—এমন তথ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। আওয়ামী লীগ দল হিসেবে সরাসরি ভূমিকা রাখে এবং সাবেক সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস ‘প্রধান সমন্বয়কের’ ভূমিকা পালন করেন বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়। পাশাপাশি ‘বহিঃশক্তির সরাসরি সম্পৃক্ততার’ও প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়।

প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর কমিশনের দুই সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান ও মেজর জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর এ বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।


জাতীয় এর আরও খবর

img

আইজিপিকে সরাতে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ

প্রকাশিত :  ১৩:৩৩, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

বিডিআর বিদ্রোহে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে দায়ী ব্যক্তিদের তালিকায় নাম আসায় বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমকে অপসারণ করতে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, জনপ্রশাসন সচিব ও আইন সচিবকে এই নোটিশ পাঠিয়েছেন।

নোটিশে বলা হয়, নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আইজিপি বাহারুল আলমকে অপসারণ করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো আইনজীবীরা হলেন অ্যাডভোকেট মো. আব্দুস সামাদ, অ্যাডভোকেট শাহিন হোসেন ও অ্যাডভোকেট মো. আতিকুর রহমান।

উল্লেখ্য, বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমসহ পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তার নাম এসেছে। স্পর্শকাতর ওই প্রতিবেদনে আইজিপির নাম আসার পর থেকেই প্রশাসনের ভেতরে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।

প্রতিবেদনে আইজিপির বিরুদ্ধে নেতিবাচক তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। বিশেষ করে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) দায়িত্ব পালনকালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখা এবং বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সক্রিয় থাকার অভিযোগ উঠে এসেছে বাহারুল আলমের বিরুদ্ধে।

এই অবস্থায় তার ভাগ্যে কী হতে পারে, তা নিয়েও চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।


জাতীয় এর আরও খবর