img

বার্ষিক পরীক্ষার মধ্যে শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে ক্ষতির মুখে শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত :  ০৬:৩২, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫

বার্ষিক পরীক্ষার মধ্যে শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে ক্ষতির মুখে শিক্ষার্থীরা

সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) টানা দ্বিতীয় দিনের মতো দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। বছরের শেষ প্রান্তে এসে দুই স্তরের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা কার্যক্রমে এমন অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কর্মবিরতি শিক্ষার্থীদের চরম ক্ষতির মুখে ফেলছে।

তবে রাত পৌনে ১০টার দিকে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, সাময়িকভাবে তাদের কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়েছে। আজ বুধবার থেকে মাধ্যমিক স্তরের বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। বিপরীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ঘোষণা দিয়েছেন, তাদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির বলেন, বার্ষিক পরীক্ষার সময় কর্মবিরতি শিক্ষার্থীদের ‘মারাত্মক ক্ষতির’ মুখে ফেলছে। করোনার দীর্ঘ বন্ধে সৃষ্ট ক্ষত এখনো পুষিয়ে ওঠেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষকরা দাবিতে আন্দোলন করতে পারেন, তবে পরীক্ষাকালের মতো স্পর্শকাতর সময়ে নয়।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা বেতন বৃদ্ধি ও পদোন্নতি–সংক্রান্ত তিন দফা দাবিতে গত ২৭ নভেম্বর থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন। সোমবার থেকে তারা বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন শুরু করেন। গতকালও দেশের বহু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি। ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামের প্ল্যাটফর্মের সদস্যরা গতকাল জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দিন জানান, আজ বুধবার তারা উপজেলা শিক্ষা অফিসের সামনে হাজিরা দেবেন এবং ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করবেন।

প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবির মধ্যে রয়েছে সহকারী শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তত ১১তম গ্রেডে উন্নীত করা, চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেডপ্রাপ্তির জটিলতা দূর করা এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি নিশ্চিত করা। বর্তমানে সহকারী শিক্ষকেরা ১৩তম গ্রেডে রয়েছেন, যার শুরুর মূল বেতন ১১ হাজার টাকা।

অন্যদিকে চার দফা দাবিতে গত সোমবার থেকে কর্মবিরতিতে ছিলেন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক‍্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করে নবম গ্রেডসহ পদসোপান প্রকাশ, শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ–পদায়ন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে বকেয়া টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রদান এবং ২০১৫ সালের আগের মতো ২ থেকে ৩টি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন-সুবিধা পুনর্বহাল।

কর্মবিরতির কারণে গতকালও রাজধানীর বহু সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি। ফার্মগেটের গবর্নমেন্ট সায়েন্স হাইস্কুলসহ পুরোনো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর বেশির ভাগেই পরীক্ষা বন্ধ ছিল। এতে অভিভাবকদের ক্ষোভ আরও বাড়ে।

তবে রাতে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি জানায়, শিক্ষার্থী ও পরিবারগুলোর ‘মানসিক চাপ’ বিবেচনায় কর্মবিরতি স্থগিত করে তারা আবার পরীক্ষা কার্যক্রমে ফিরছেন। একই সঙ্গে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগের মাধ্যমে তাদের ন্যায্য দাবি সমাধানের আহ্বান জানান।

ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, প্রাথমিক স্তরে কর্মবিরতি অব্যাহত থাকায় দু’টি বড় স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থা এখনো সংকটময় অবস্থায় রয়েছে।


জাতীয় এর আরও খবর

img

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি

প্রকাশিত :  ০৯:০৬, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সংকটাপন্ন অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। দলের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক পরামর্শ ও লজিস্টিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেই কাতারের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে লন্ডনে নেওয়া হবে।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ও চিকিৎসক জোবাইদা রহমান লন্ডন থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে। তিনি ঢাকায় পৌঁছে খালেদা জিয়ার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন এবং অবস্থা অনুকূল থাকলে তার সঙ্গেই লন্ডন যাত্রা করবেন বলে জানা গেছে।

এদিকে কাতার জানায়, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজন হলে তারা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিতে প্রস্তুত। চিকিৎসকদের সম্মতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবে। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরেই তা রওনা হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে ব্যক্তিগত চিকিৎসকসহ মোট ১৪ জন যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তার শারীরিক অবস্থায় তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। চিকিৎসকরা অবস্থাকে ‘স্থিতিশীল’ বলছেন। তার চিকিৎসায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ রিচার্ড বিলসহ দেশি–বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড কাজ করছে। বুধবার যুক্তরাজ্য এবং চীন থেকে বিশেষজ্ঞের নতুন দুটি দল এই বোর্ডে যুক্ত হয়েছে।

গত ২৩ নভেম্বর ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণ নিয়ে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে কিডনি জটিলতা, হৃদরোগ ও নিউমোনিয়ায় তার অবস্থার আরও অবনতি হয়। ১ ডিসেম্বর তাকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয় বলে দলীয় সূত্র জানায়।

অন্যদিকে, তাকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ (ভিভিআইপি) ঘোষণার পর হাসপাতাল এলাকাজুড়ে নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে এসএসএফ ও পিজিআর সদস্যদের। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, এয়ার ট্রান্সপোর্ট প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে হাসপাতালের নিকটস্থ উন্মুক্ত মাঠে সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারের পরীক্ষামূলক অবতরণ ও উড্ডয়ন পরিচালিত হবে। এ বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য না ছড়ানোর অনুরোধ করেছে কার্যালয়।

বহু বছর ধরেই আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি ও ফুসফুসজনিত জটিলতাসহ নানা অসুস্থতায় ভুগছেন খালেদা জিয়া। গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর মুক্তি পেয়ে তিনি চলতি বছরের জানুয়ারিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান এবং ১১৭ দিন অবস্থান শেষে মে মাসে দেশে ফেরেন। দেশে ফেরার পর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্যও তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।


 

জাতীয় এর আরও খবর