img

আল্লাহর হুকুমে কী মানুষের অনৈতিক কাজ ঘটে?

প্রকাশিত :  ১৮:৪৪, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৯:০৩, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫

আল্লাহর হুকুমে কী মানুষের অনৈতিক কাজ ঘটে?

রেজুয়ান আহম্মেদ

হুজুররা বলেন, “আল্লাহর হুকুম ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়ে না।” এটি এমন একটি কথা, যা ইসলামী ধর্মীয় দর্শনের একটি গভীর দিককে প্রকাশ করে। এই বক্তব্যের মাধ্যমে আল্লাহর অশেষ ক্ষমতা এবং তাঁর সৃষ্টির প্রতি পূর্ণ কর্তৃত্ব বোঝানো হয়। কিন্তু, যখন একই প্রশ্নে মানুষ এবং তার কর্মকাণ্ডের কথা আসে, তখন একটি দ্বিধা সৃষ্টি হয়—“যদি আল্লাহর হুকুম ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়ে না, তাহলে মানুষের অনৈতিক কাজ কি আল্লাহর হুকুমে ঘটে?”

এই প্রশ্নটি একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা শুরু করে—মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা এবং আল্লাহর হুকুমের সম্পর্ক কীভাবে ঘটে। কুরআন এবং হাদিসের আলোকে আমরা এ বিষয়ে কিছু মৌলিক ধারণা পেতে পারি, যা আমাদের এই প্রশ্নের উত্তর সন্ধানে সহায়ক হতে পারে।

কুরআনে বলা হয়েছে, “আল্লাহ যা চান, তাই ঘটে।” (সূরা আল-ইসরা, 17:13)। অর্থাৎ, তিনি আছেন সকল সৃষ্টির উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। এটি এমন একটি ধারণা, যা আমাদের মনে আল্লাহর সর্বশক্তিমত্তা এবং সার্বভৌমত্বকে প্রতিষ্ঠিত করে। আল্লাহর ইচ্ছা এবং হুকুমে সমস্ত পৃথিবী, আকাশ, গ্রহ-নক্ষত্র, এমনকি গাছের পাতাও নড়ে। এই অন্তর্নিহিত সত্যটি কোনো এক মুহূর্তে আমাদের মনে প্রতিফলিত হয়—তিনি যা চান, তা-ই হয়।

তবে, মানবজাতির জন্য আল্লাহ যে স্বাধীনতা দিয়েছেন, তা কুরআন স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে। আল্লাহ বলেন, “আমি তোমাদের জন্য দুই পথ তৈরি করেছি, এখন তোমরা যার ইচ্ছা, সে পথে চলতে পারো” (সূরা আল-বাদিয়া, 90:10)। এখানেই আমরা প্রথম ধাপে প্রশ্নের সম্মুখীন হই—যদি আল্লাহ মানুষের জন্য দুটি পথ তৈরি করে দেন, তবে কেন তাকে তার কাজের জন্য দায়ী করা হয়? কেন মানুষের কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে?

এটি একটি অদ্ভুত ব্যাপার, কারণ মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা তাকে ভালো-মন্দ চয়নের ক্ষমতা প্রদান করেছে। তবে, এই স্বাধীনতা এক্ষেত্রে পরীক্ষা হিসেবে এসেছে, যাতে মানুষ তার আচরণ, নৈতিকতা এবং চরিত্রের দিকে চিন্তা করতে পারে। আল্লাহ মানুষকে মুক্ত ইচ্ছা দিয়েছেন, যাতে সে চয়ন করতে পারে সৎ বা অসৎ পথ, ভালো বা খারাপ কাজ। কিন্তু, এই স্বাধীনতা মানে এই নয় যে, মানুষের খারাপ কাজ আল্লাহর ইচ্ছায় ঘটে। বরং, এটি মানুষের নিজের সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ ঘটে।

এখন, প্রশ্নটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে—যদি আল্লাহর হুকুম ছাড়া কিছু ঘটে না, তবে মানুষের অনৈতিক কাজ কি আল্লাহর হুকুমে ঘটছে? কুরআন স্পষ্টভাবে বলে যে, আল্লাহ কখনও কাউকে খারাপ বা অনৈতিক কাজ করতে আদেশ দেন না। আল্লাহর ইচ্ছা কখনও মন্দকে সমর্থন করে না। বরং, তিনি বলেন “কোনো ব্যক্তির ওপর কোনো অযৌক্তিক বোঝা চাপানো হবে না” (সূরা আল-বাকারাহ, 2:286)। এর মানে, আল্লাহ কখনও কাউকে অসৎ কাজ করতে আদেশ দেন না, বরং তিনি মানুষকে তার স্বাধীন ইচ্ছায় সঠিক পথ অনুসরণ করতে উৎসাহিত করেন।

যখন মানুষ খারাপ কাজ করে, তখন সেটি তার নিজের স্বাধীন ইচ্ছা ও সিদ্ধান্তের ফল। এই স্বাধীনতা বা ইচ্ছার সুযোগ দিয়ে, আল্লাহ তাকে সৎ পথে চালিত করতে চান, কিন্তু সেই পথ বেছে নিতে আবার মানুষেরই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এর মধ্যে একটা পরীক্ষা নিহিত—মানুষ নিজের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ভালো-মন্দের মধ্যে পার্থক্য বুঝে, সে যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, তার জন্য পরিণতি আসবে।

কুরআন আমাদের শেখায় যে, মানুষ যা কিছু করে, আল্লাহ তা দেখে থাকেন। “তোমরা যা কিছু করো, আল্লাহ তা জানেন” (সূরা আল-ফুসসিলাত, 41:46)। মানুষের কাজের জন্য তাকে অবশেষে উত্তর দিতে হবে—সে ভালো কাজ করেছে, নাকি খারাপ কাজ করেছে। আল্লাহ তার কর্মের প্রতি সুবিচার করবেন, এবং তাকে তার কাজের জন্য পুরস্কৃত বা শাস্তি দেবেন।

এখানে আরও একটি মৌলিক বিষয় উঠে আসে—মানুষের স্বাধীনতা, আল্লাহর হুকুমের আওতায় সীমাবদ্ধ। তার কাজের ফলাফল শুধুমাত্র আল্লাহর জ্ঞান ও পরিকল্পনার অধীনে আসে। এর মাধ্যমে মানুষের জন্য পরিপূর্ণ শিক্ষা থাকে, যে তাকে শুধু তার ভালো কাজের জন্যই পুরস্কৃত করা হবে, বরং খারাপ কাজের জন্য তাকে শাস্তি পেতে হবে।

এটা পরিষ্কার যে, মানুষের অনৈতিক কাজ আল্লাহর হুকুমের মধ্যে পড়ে না। আল্লাহ মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছেন, কিন্তু তিনি তাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন। মানুষ যদি খারাপ কাজ করে, তবে সেটি তার নিজস্ব সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ ঘটে, এবং আল্লাহ তার প্রতি সুবিচার করবেন। এটাই আল্লাহর মহাপরিকল্পনার এক অঙ্গ—তিনি মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছেন, কিন্তু সঠিক পথ অনুসরণের মাধ্যমে তিনি তাকে তার প্রকৃত উদ্দেশ্যে পৌঁছানোর সুযোগ দেন।

এভাবে, আল্লাহর হুকুম এবং মানুষের স্বাধীনতার মধ্যে একটি সূক্ষ্ম সঙ্গতি রয়েছে, যা আমাদের জীবনকে একটি পরীক্ষার মাঠে পরিণত করে। এটি আমাদের সামনে এক মহান শিক্ষার জগত খুলে দেয়, যেখানে আমরা নিজের কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী এবং পরিণতিও সেই অনুযায়ী নির্ধারিত।





রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম
img

ইহুদি ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী ইসরায়েলের আয়ু আর দুবছর

প্রকাশিত :  ১১:৪৯, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার গণহত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন সারা বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা এবং গাজায় হামলা বন্ধের দাবিতে প্রতিদিন বিক্ষোভ করছেন তারা। এমনকি এসব বিক্ষোভ থেকে অনেকে ইসরায়েলের ধ্বংস চাইছেন। এরই মাঝে ইহুদিদের ধর্মীয় ন্যায়শাস্ত্রের একটি ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে ইসরায়েলিদের মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক।

ইহুদিদের ধর্মীয় ন্যায়শাস্ত্র তালমুদ-এ এই ভবিষ্যদ্বাণীটি ‘লা’নাতুল আকদিস সামিন’ বা ‘অষ্টম দশকের অভিশাপ’ হিসেবে পরিচিত। ওই ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়েছে, কোনো ইহুদি রাষ্ট্র আট দশকের বেশি টিকবে না। ভেঙে যাবে। আর সে ভাঙন হবে নিজেদের মধ্যকার জাতি-উপজাতির কোন্দলে। ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ইসরায়েলের আয়ু আর দুবছর অবশিষ্ট আছে।

গাজায় ইসরায়েলের চলমান নৃশংসতার মধ্যে সম্প্রতি ইহুদিদের ধর্মীয় ন্যায়শাস্ত্রের ভবিষ্যদ্বাণীটি ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভবিষ্যদ্বাণীটি নিয়ে ইসরায়েলের ইহুদিদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। অনেকে বলছেন, আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতে পারে এই আতঙ্ক ভর করেছে নেতানিয়াহুকেও। এজন্য তিনি ইসরায়েলের জন্য হুমকি হতে পারে এমন সব কিছু ধ্বংস করে টিকে থাকতে মরিয়া।

গেল দুই হাজার বছরে বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় সার্বভৌম অনেক ইহুদি রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর মধ্যে কিং ডেভিডের অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের দাউদ নবীর রাজত্ব এবং হাসমোনিয়ান রাজত্ব ছাড়া আজ পর্যন্ত কোনো ‘ইহুদি রাজ্য’ ৮০ বছরের বেশি টেকেনি। তবে কিং ডেভিডের রাজত্ব ও হাসমোনিয়ান রাজত্ব ৮০ বছরের বেশি টিকে থাকলেও এই দুই রাজত্বের ভাঙন ধরেছিল ৮০ বছরের মাথায়। এরপর দুটো রাজত্বই টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল।

আজকের আধুনিক ইসরায়েলের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৮ সালের ১৪ মে। ২০২৮ সালে ৮০ বছর পূরণ হবে তাদের। অর্থাৎ হাতে সময় আছে মাত্র ২ বছর। তালমুদের ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হলে আর দুই-তিন বছরের মধ্যেই ইসরায়েল রাষ্ট্রটি ভেঙে পড়বে।

যেহেতু ইসরায়েলের ইহুদি সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতে বিশ্বাসী ও তালমুদের আদেশ-নিষেধ সংক্রান্ত প্রত্যাদেশের অনুসারী, সেহেতু ইসরায়েলের বাসিন্দাদের একটি বিরাট অংশ ‘অষ্টম দশকের অভিশাপ’ নিয়ে নিজেদের মধ্যে সিরিয়াস আলাপ-আলোচনা করে থাকেন। অনেক ইহুদি ইসরায়েলের ওপর কোনো দুর্যোগ নেমে এলে কীভাবে সেখান থেকে সরে যাবেন, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছেন।

তারা এই ন্যাচারাল ফেনোমেনন বা প্রাকৃতিক প্রপঞ্চ অমোঘ নিয়মে নেমে আসতে পারে বলে বিশ্বাস করেন। এজন্য ইসরায়েল তাদের জন্য হুমকি এমন সব কিছু ধ্বংস করে টিকে থাকতে মরিয়া। বিশ্লেষকদের ধারণা- ইসরায়েল গাজা, লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান, ইয়েমেনসহ সব জায়গায় অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে হামলা চালাচ্ছে, যেন তারা ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচতে পারে। তবে তারা ন্যাচারাল ফেনোমেনন বা আল্লাহর পক্ষ থেকে নেমে আসা কোনো বিপদ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে কি না তা নিয়ে শঙ্কিত।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘লা’নাতুল আকদিস সামিন’ অর্থাৎ ইহুদি রাষ্ট্র ভেঙে যাওয়ার সেই ভবিষ্যদ্বাণীটি অনেক বেশি আলোচিত হচ্ছে। এমনকি বছর দুই আগে ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাকও ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।