img

শেয়ারবাজারে ধস: খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অপসারণে বিনিয়োগকারীদের জোর দাবি

প্রকাশিত :  ০৮:১৪, ০৪ মে ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৯:১৮, ০৪ মে ২০২৫

আজই সিদ্ধান্ত চান তারা, নইলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

শেয়ারবাজারে ধস: খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অপসারণে বিনিয়োগকারীদের জোর দাবি

স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা, ৪ মে ২০২৫: বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে চলমান বিপর্যয় লাখ লাখ সাধারণ বিনিয়োগকারীর জীবনকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। ভয়াবহ এই সংকটের পেছনে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বকে দায়ী করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাদের দাবি, অবিলম্বে তাঁকে অপসারণ করে একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞকে দায়িত্বে আনতে হবে।

বিনিয়োগকারীদের ভাষ্য, একজন ব্যক্তির দায়িত্বহীন নেতৃত্বের কারণে প্রায় ৩০ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী পথে বসেছেন। আজ শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ডিএসই ভবনের সামনে এক বিক্ষোভে বিনিয়োগকারীরা বলেন, "আমাদের সঞ্চয় আজ শূন্য, আর সরকার একজন চেয়ারম্যানকে রক্ষা করছে? এর কি কোনো ব্যাখ্যা আছে?"

বাজারে বিপর্যয়, সূচকে ধস

গত ছয় মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১০ সালের পরে এটিই সবচেয়ে বড় পতন। হাজার হাজার বিনিয়োগকারী তাদের সঞ্চয়ের একটি বড় অংশ হারিয়েছেন। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই ধরণের অস্থিরতা দেখা গেছে।

বিনিয়োগকারী মো. আব্দুল হক বলেন, “আমার জীবনের সব সঞ্চয় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলাম। এখন কিছুই নেই। বিএসইসি আমাদের রক্ষা করেনি, বরং আমাদের ডুবিয়ে দিয়েছে।”

নেতৃত্বের প্রশ্নে ক্ষোভ

২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। এর আগে তিনি সিটিব্যাংক এনএ, এনআরবিসি ব্যাংক এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে বিনিয়োগকারীদের দাবি, তাঁর ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা থাকলেও পুঁজিবাজার পরিচালনায় তিনি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন।

ফাতেমা বেগম নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, “স্বামীর মৃত্যুর পর পাওয়া টাকা নিরাপদ মনে করে শেয়ারবাজারে রেখেছিলাম। আজ আমি নিঃস্ব। আমার পরিবারের পথে বসার কারণ রাশেদ মাকসুদ।”

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আবেদন

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বিনিয়োগকারীরা সরাসরি হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা বলছেন, আজকের মধ্যেই রাশেদ মাকসুদকে অপসারণ করে যোগ্য কাউকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে, অন্যথায় পুঁজিবাজারের ওপর মানুষের আস্থা আর কখনো ফিরবে না।

১ মে তারিখে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' নামে একটি সংগঠন ড. ইউনূসের কাছে দেওয়া চিঠিতে জানায়, “৩০ লাখ বিনিয়োগকারীর স্বার্থে দ্রুত পদক্ষেপ নিন, নইলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।”

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের একজন অধ্যাপক বলেন, “বাজার পরিচালনায় এমন নেতৃত্ব প্রয়োজন, যিনি পুঁজিবাজারের স্বরূপ জানেন, জবাবদিহিমূলক নীতিতে বিশ্বাস করেন এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার প্রতীক হতে পারেন।”

তবে কিছু বিশ্লেষকের মতে, দায়িত্ব নেওয়ার সময়টা অল্প হওয়ায় রাশেদ মাকসুদকে বিচার করা তাড়াহুড়া হতে পারে। যদিও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এ যুক্তি মানতে রাজি নন।

সম্ভাব্য সমাধান

বিশেষজ্ঞ ও বিনিয়োগকারীদের পরামর্শে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উঠে এসেছে তা হলো—

১. চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন: অভিজ্ঞ ও প্রমাণিত যোগ্যতা সম্পন্ন নেতৃত্বের প্রয়োজন।

২. নীতিগত সংস্কার: বাজারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত, মূল্য কারসাজি দমন ও কঠোর তদারকি।

৩. আস্থা পুনঃস্থাপন: বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও তথ্যের সুষ্ঠু প্রবাহ।

৪. অর্থনৈতিক পরিবেশ: সামগ্রিক অর্থনীতির সঙ্গে বাজারের ভারসাম্য রক্ষা।

৫. তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ: ধসের প্রকৃত কারণ খুঁজে দায়ীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।

বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই পরিস্থিতিতে শুধু নেতৃত্ব পরিবর্তন নয়, প্রয়োজন সাহসী সংস্কার ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন। সময় এসেছে বিনিয়োগকারীদের জীবন সঞ্চয় রক্ষায় বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নেওয়ার।

অর্থনীতি এর আরও খবর

img

শেয়ারবাজারে কারসাজি: সাকিবসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

প্রকাশিত :  ১৪:৫০, ১৭ জুন ২০২৫

শেয়ারবাজার থেকে শতকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

মামলার বাদি দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন। 

এ মামলার প্রধান আসামি সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক ও শেয়ার বাজারের আলোচিত ব্যক্তি মো. আবুল খায়ের (হিরু)। দ্বিতীয় আসামি সাকিব আল হাসান। অন্যান্য আসামিরা হলেন- কাজি সাদিয়া হাসান, আবুল কালাম মাদবর, কনিকা আফরোজ, মোহাম্মদ বাশার, সাজেদ মাদবর, আলেয়া বেগম, কাজি ফুয়াদ হাসান, কাজি ফরিদ হাসান, শিরিন আক্তার, জাভেদ এ মতিন, মো. জাহেদ কামাল, মো. হুমায়ূন কবির ও তানভীর নিজাম।

দুদক জানায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দ্রুত আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে শেয়ারবাজারে প্রচলিত আইন ও বিধি (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ১৭ ধারা) লঙ্ঘন করেছেন।

তারা নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিও একাউন্টে অবৈধভাবে সিরিজ ট্রানজেকশন,  প্রতারণামূলক একটিভ ট্রাডিং, গেম্বলিং, ও স্পেকুলেশন-এর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে কৃত্রিমভাবে নির্দিষ্ট কিছু শেয়ারের দাম বৃদ্ধি করে বাজারে কারসাজি করেন। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রতারিত হয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হারান।

এই পদ্ধতিতে ২৫৬ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৩০৪ টাকা আত্মসাৎ করা হয়, যা ‘অপরাধলব্ধ অর্থ’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত। এর মধ্যে আবুল খায়ের (হিরু) তার স্ত্রী কাজি সাদিয়া হাসানের সহায়তায় ২৯ কোটি ৯৪ লাখ ৪২ হাজার ১৮৫ টাকার উৎস গোপন করে বিভিন্ন খাতে স্থানান্তর করেন।

এছাড়া তার নামে পরিচালিত ১৭টি ব্যাংক একাউন্টে মোট ৫৪২ কোটি ৩১ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

দুদক জানায়, আসামি মো. আবুল খায়ের (হিরু) কর্তৃক শেয়ার বাজারে কারসাজিকৃত প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স লি., ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স লি. এবং সোনালী পেপারস লি.-এর শেয়ারে সাকিব আল হাসান বিনিয়োগ করেন। এতে সাকিব মার্কেট ম্যানুপুলেশনে সরাসরি সহায়তা করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ২ কোটি ৯৫ লাখ ২ হাজার ৯১৫ টাকা রিয়ালাইজড ক্যাপিটাল গেইনের নামে শেয়ার বাজার থেকে আত্মসাৎ করেন।

দুদক জানায়, শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হওয়ায় কমিশনের অনুমোদনক্রমে আসামিদের বিরুদ্ধে  ২০১২ এর ৪ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/১২০(বি)/১০৯ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

দুদক জানিয়েছে, তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।