img

সাভারে নরপিশাচ বাবার নির্মম পরিণতি: মেয়েকে দিনের পর দিন ধর্ষণ, শেষমেশ বাবার রক্তে গোসল করে ৯৯৯-এ আত্মসমর্পণ!

প্রকাশিত :  ১৫:০১, ০৯ মে ২০২৫

বিশেষ প্রতিবেদন

সাভারে নরপিশাচ বাবার নির্মম পরিণতি: মেয়েকে দিনের পর দিন ধর্ষণ, শেষমেশ বাবার রক্তে গোসল করে ৯৯৯-এ আত্মসমর্পণ!

সাভারে ঘটেছে এমন একটি ঘটনা, যা কেবল একটি পরিবারের ট্র্যাজেডি নয়—এটি গোটা সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের এক নির্মম প্রতিচ্ছবি। নিজের মেয়েকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করেছে এক বাবা, সেই পাশবিকতা আবার মোবাইলে ধারণ করে রেখেছে বারবার। একজন নারীর কাছে তার বাবা হচ্ছেন সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়, অথচ সেই আশ্রয়দাতা যখন হয়ে ওঠে ভয়াবহতম শত্রু, তখন তার আত্মার আর কোথাও ঠাঁই থাকে না।

মেয়েটি একসময় আর সহ্য করতে না পেরে নিজের বাবাকেই হত্যা করে। তারপর বাবার রক্তে গোসল করে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখে এক বিভীষিকাময় দৃশ্য—এক তরুণী রক্তমাখা শরীরে চুপচাপ বসে আছে, আর মৃত পড়ে আছে সেই নরপিশাচ বাবা।

ঘটনাটি শুধু অপরাধ নয়, এটি সামাজিক ব্যর্থতার এক ভয়ংকর উদাহরণ। একজন বাবা কিভাবে দিনের পর দিন মেয়েকে নির্যাতন করতে পারে, তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। এই সমাজে মেয়েটি কাউকে বিশ্বাস করতে পারেনি, কাউকে বলতে পারেনি, এমনকি বিচার পাওয়ার আশাও করতে পারেনি।

এই হত্যাকাণ্ড এক প্রকার আত্মরক্ষার চূড়ান্ত প্রকাশ। যেখানে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আর সমাজের নীরবতা দিনের পর দিন একজন কিশোরীর জীবনকে নরকে পরিণত করেছে, সেখানে শেষ পর্যন্ত সেই মেয়েটিই হাতে তুলে নেয় বিচার।

এ ঘটনার পর সাভারের স্থানীয় জনগণ স্তব্ধ। সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে বলছেন, এই ঘটনা যেন কোনও সিনেমার গল্প নয়—এটা বাস্তব। আর এই বাস্তবতা ভয়ানক। গত দুই দশকে এই দেশের তরুণ প্রজন্মকে যেভাবে ভুল দিক নির্দেশনায় বড় করা হয়েছে, তাদের মধ্যে মূল্যবোধ, নৈতিকতা, পরিবারবোধ যেভাবে ভেঙে পড়েছে, তারই একটি ভয়ংকর ফসল এই ঘটনা।

সমাজ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে আজ?

এই প্রশ্ন শুধু প্রশাসনের নয়, প্রতিটি বাবা-মা, শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা এবং সচেতন নাগরিকের—আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কী শিক্ষা দিচ্ছি? আমরা কি আমাদের সন্তানদের নিরাপদ রাখতে পারছি?

এই মেয়েটির হাতে রক্ত লেগেছে ঠিকই, কিন্তু তার হৃদয়ে জমেছে বছরের পর বছরের দগদগে ক্ষত, অবর্ণনীয় অপমান, এবং বিচারহীনতার জ্বালা। বিচার কীভাবে হবে, সেটা আদালত ঠিক করবে। তবে এই সমাজের আত্মা কতটা কলুষিত হয়েছে, সেটার জবাব আমাদের সবারই দিতে হবে।

img

গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি: ইতিহাস, ঐতিহ্য , স্থাপত্য ও গৌরবের এক অধ্যায়

প্রকাশিত :  ১১:০২, ১৩ জুলাই ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১১:২০, ১৩ জুলাই ২০২৫

সংগ্রাম দত্ত: বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের গাঙ্গাটিয়া গ্রামে অবস্থিত গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি প্রায় চারশো বছর ধরে ঐতিহ্যের গর্ব বহন করছে। স্থানীয়রা এটি ‘মানবাবুর বাড়ি’ নামে চেনেন। এই জমিদার বাড়ি রোমান-গ্রিক স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন, যা তার দৃষ্টিনন্দন নকশা ও কারুকার্যের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।

ঐতিহ্যবাহী এই জমিদার বাড়ির শেষ বংশধর ৯৩ বছর বয়সী মানবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী চৌধুরী (মানব বাবু) আজো জীবিত আছেন। ঐতিহাসিক গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি রোমান-গ্রিক স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন।

গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি স্থানীয়ভাবে “মানববাবুর বাড়ি” নামে পরিচিত। এটি কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের গাঙ্গাটিয়া গ্রামে অবস্থিত এবং জেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে। এই নান্দনিক নির্মিত ভবনটি প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনস্বরূপ। বাড়িটির স্থাপত্যশৈলীতে ১৮শ শতাব্দীর রোমান-গ্রিক স্থাপত্যের চমৎকার ব্যবহার লক্ষ করা যায়।

স্থানীয়ভাবে মানববাবু নামে পরিচিত  ননাজেনারিয়ান  মানবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী চৌধুরী হলেন গাঙ্গাটিয়া জমিদার বংশের শেষ উত্তরাধিকারী। তিনি এখনও সেখানে বসবাস করছেন। তিনি কলকাতায় পড়াশোনা করেছেন এবং জেনারেল এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৫ সালে হোসেনপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জমিদার বাড়ির আশেপাশে তিনি মাছ চাষ করেন এবং জমিদার এস্টেটের বিস্তৃত এলাকায় চাষাবাদ পরিচালনা করেন।

মানবেন্দ্র বাবু জানান, ১৬শ শতাব্দীতে ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে একজন উচ্চশিক্ষিত পণ্ডিত পূর্ববঙ্গে (বর্তমানে বাংলাদেশ) এসে বসতি স্থাপন করেন। তার মাতুলালয় ছিল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কমলপুর মহকুমার কমলপুর এলাকায়।

ত্রিপুরা রাজ্যের কমলপুর মহকুমার কমলপুর শহরের শশীকান্ত ভট্টাচার্য ছিলেন গাঙ্গাটিয়া জমিদার পরিবারের ভূপতিনাথ চক্রবর্তী চৌধুরীর শ্বশুর।

শশীকান্ত ভট্টাচার্যের পাঁচ ছেলে ছিলেন যথাক্রমে অশুতোষ ভট্টাচার্য, সন্তোষ ভট্টাচার্য, সদানন্দ ভট্টাচার্য, পরিতোষ ভট্টাচার্য । এ পাঁচজনই বর্তমান উত্তরসূরি মানবেন্দ্র বাবুর মামা।

তাঁদের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন রাজবংশীয় ব্রাহ্মণ। তিনিই ছিলেন এই জমিদার পরিবারের প্রথম পুরুষ। সে সময় তিনি গৌড়ীয় পরম্পরা অনুযায়ী বাড়ির ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনে পূজার জন্য একটি শিব মন্দির নির্মাণ করেন। এটিই ছিল এই বংশের নির্মিত প্রথম শিব মন্দির।

এই জমিদার পরিবার এক সময় ধ্যান, পূজা এবং আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এলাকায় ব্যাপক মর্যাদা ও খ্যাতি অর্জন করে।

এই বংশের দীননাথ চক্রবর্তী ছিলেন এলাকার প্রথম জমিদার।  ১৮শ শতকের শেষভাগে তিনি হোসেনশাহী পরগনার এক-তৃতীয়াংশ ক্রয় করে এলাকায় জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন।

পরবর্তীতে দীননাথ চক্রবর্তীর পুত্র অতুলচন্দ্র চক্রবর্তী আঠারবাড়ির জমিদার জ্ঞানদাসুন্দরী চৌধুরানী থেকে আরও দুই আনা জমি কিনে তা গঙ্গাটিয়া জমিদারির সঙ্গে যুক্ত করেন। এইভাবে গঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি বিস্তৃত হয়।

এই পরিবারের প্রথম শিব মন্দিরটি জমিদার বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নির্মিত হয়েছিল। এটি বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও এখনো সময়ের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বাংলাদেশের জমিদারদের মাঝে একমাত্র জীবিত জমিদার মানবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী চৌধুরী মানব বাবু সাথে লেখক 

এই মন্দিরের পাশেই রয়েছে বিশাল পুকুর সাগরদিঘী। এরপরেই আরেকটি পুরনো ধ্বংসপ্রাপ্ত শিবমন্দির দেখা যায়, যেখানে এখনও পারিবারিক পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

পরবর্তীতে একটি বিশাল ফটকে শ্রীধর ভবন দেখা যায়। এখান থেকে প্রায় ৩০০ গজ দূরে গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ির মূল ভবন অবস্থিত। মূল ফটকের সামনে থেকে প্রায় ১২ ফুট চওড়া একটি সুন্দর রাস্তা। যার দু’পাশে নারকেল গাছের সারি । সেই পথে হেঁটে জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করতে হয়। এই বাড়ির সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করে।

অবাক করার মতো বিষয় হলো এত বছর আগে এই বাড়ির স্থাপত্য শৈলী এত সুন্দরভাবে নির্মিত হয়েছিল। মূল ভবনটি দুই তলা বিশিষ্ট। এখানে বসার ঘর, অতিথি কক্ষ, আদালত কক্ষ ও সংগীতচর্চার কক্ষ রয়েছে। এছাড়া রয়েছে কাচারিঘর, নাহাবতখানা ও দরবারঘর।

এই জমিদার বাড়ির স্তম্ভগুলোর উপর সুন্দর কারুকাজ চোখে পড়ে। বাড়ির সামনে রয়েছে একটি বড় উঠোন এবং চারপাশে উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা।

মানবেন্দ্র বাবুর মতে, তারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে ছোট জমিদার পরিবার। তারা ব্রাহ্মণ বংশীয় এবং তাঁদের পূর্বপুরুষেরা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছিলেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে, পাকিস্তানি আগ্রাসী বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা তাঁর পিতা শ্রীভূপতিনাথ চক্রবর্তী চৌধুরীকে হত্যা করে এবং ৭ মে ১৯৭১  জমিদার বাড়িতে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।  

যে স্থানে তাঁর পিতা পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দ্বারা নিহত হন, সেখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।  মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছে গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ির হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে।  

এ স্থাপনাটি নিয়মিত স্থানীয় বাসিন্দা, বিদেশী পর্যটক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক এবং অন্যান্য শ্রেণির মানুষজনের দ্বারা পরিদর্শিত হয়।  যদি জমিদার বাড়িটি সংস্কার করা যায়, তবে এটি একটি প্রধান আকর্ষণও হতে পারে।  

বর্তমানে তিনি এখানে একাকী বসবাস করছেন। তাঁর প্রয়াত ছোট ভাই তপন কুমার চক্রবর্তী চৌধুরী ও তাঁর কোনো সন্তান নেই।  

গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ির সামনের অংশে রোমান স্থাপত্যশৈলীর স্তম্ভ রয়েছে। সামনের দিক থেকে এই জমিদার বাড়ির স্থাপত্যশৈলী এক কথায় অসাধারণ।  

এই  জমিদার বাড়িটি প্রায় ১০ একর জমির উপর অবস্থিত। জমিদার বাড়ির মূল দরজাটি নকশায় ভরা।   
এই জমিদার বাড়ির কারুকার্য ও নান্দনিক সৌন্দর্য এখনো ঐতিহ্যবাহী গৌরবের সাক্ষী হিসেবে জাঁকজমকপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে আছে। যা' প্রতিদিন শত শত পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

বর্তমানে  মানবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী চৌধুরী (মানব বাবু) একাকী এই ঐতিহ্যবাহী বাড়িতে বসবাস করছেন। তিনি ইতিমধ্যেই এলাকার সেরা সমাজসেবক ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে সুপরিচিত। যদিও তাঁর কোনও সন্তান নেই, তবুও তিনি বাড়িটি সংরক্ষণ ও সংস্কারের ব্যাপারে চিন্তিত। এই জমিদার বাড়ি সংস্কারক্রমে ও পর্যটন ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে উঠলে তা' স্থানীয় অর্থনীতি ও সংস্কৃতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ হতে পারে।
  
গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও স্থাপত্য ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন। এর গৌরবময় অতীত, কারুকার্য, এবং সামাজিক প্রভাব আজো স্থানীয় জনজীবনে জ্বলজ্বল করছে। এই বাড়ির রক্ষণা-বেক্ষণ ও সঠিক পরিচর্যা বাংলাদেশের ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য অপরিহার্য।



বাংলাদেশ এর আরও খবর