img

সশস্ত্র বাহিনীর বঞ্চিত সদস্যদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে সরকার : প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশিত :  ১৮:৪১, ৩০ নভেম্বর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৮:৫৩, ৩০ নভেম্বর ২০২৫

সশস্ত্র বাহিনীর বঞ্চিত সদস্যদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে সরকার : প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিগত সরকারের সময়ে সশস্ত্র বাহিনী—সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী—এর যেসব সদস্য অন্যায় বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তাদেরও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীর মতো ন্যায়বিচারের আওতায় আনা হবে।

বিগত সরকারের আমলে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ এর ৪ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনীর চাকরিতে বৈষম্য, বঞ্চনা, অবিচার ও প্রতিহিংসার শিকার অবসরপ্রাপ্ত ও বরখাস্তকৃত অফিসারদের আবেদন পর্যালোচনা করে যথার্থ সুপারিশ পেশের জন্য গঠিত কমিটি  রোববার (৩০ নভেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিলে তিনি এই মন্তব্য করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন,“যখন আপনাদেরকে এই কাজ করার দায়িত্ব দিয়েছিলাম তখন মনে হয়েছিল সামান্য কিছু অনিয়ম হয়ত হয়েছে। কিন্তু আপনারা যে পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে এনেছেন তা রীতিমতো ভয়াবহ। এটা কল্পনার একেবারে বাইরে”।

পূর্ণ পেশাদারিত্ব ও নির্মোহ থেকে সত্য বের করে আনায় কমিটির সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা।

কমিটির সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সহকারী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আব্দুল হাফিজ, কমিটির সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মুহম্মদ শামস-উল-হুদা, মেজর জেনারেল (অব.) শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন, রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ শফিউল আজম এবং এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মুহাম্মদ শাফকাত আলী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

কমিটি সর্বমোট ৭৩৩ টি আবেদন পায়। যাচাই বাছাই করে ১৪৫ টি আবেদনের ব্যাপারে সুপারিশ করে।

আব্দুল হাফিজ জানান, আবেদনপত্র পর্যালোচনার জন্য গঠিত কমিটি গত ১৯ আগস্ট ২০২৫ তারিখে প্রথম সভা করে। বঞ্চিত অফিসারদেরকে সেন্ট্রাল অফিসার্স রেকর্ড অফিস, আইএসপিআর এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সংগঠন রাওয়ার মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেজ, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং টিভি স্ক্রলের মাধ্যমে গত ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন জমা দিতে বলা হয়।

জেনারেল আব্দুল হাফিজ জানান, স্ব স্ব বাহিনী কর্তৃক গঠিত বোর্ড যাদের বিষয়ে সুপারিশ দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কোনো নৈতিক স্খলনজনিত শাস্তি কিংবা অভিযোগ ডোসিয়ারে লিপিবদ্ধ ছিল না।

স্ব স্ব বাহিনী কর্তৃক গঠিত বোর্ডের সুপারিশ আমলে নিয়ে সেগুলোর বাইরেও কমিটি বিবেচনা উপযুক্ত আবেদনসমূহে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এবং আবেদনকারীর সাথে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সুপারিশ প্রদান করেছে।

অনেক আবেদনকারী সম্পর্কে কমিটির সদস্যবৃন্দ মতামত দিয়েছেন, আবেদনের যথার্থতা ও বঞ্চিত হওয়ার যৌক্তিকতা সম্পর্কে তাদের মতামত নির্মোহভাবে কমিটিতে উপস্থাপন করেছেন বলে জানান জেনারেল হাফিজ।

তিনি বলেন, কমিটি ভুক্তভোগী অফিসারদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের অধিনায়ক ও ঊর্ধ্বতন অফিসারদের সাথে ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের বঞ্চনা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে।

কমিটির অনুসন্ধানে জানা যায়, আবেদনকারীদের মধ্যে ছয় জন অফিসারকে তাদের আত্মীয়-স্বজনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার দরুন বা জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অপবাদ দিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বিভিন্ন মেয়াদে (১ বছর হতে ৮ বছর পর্যন্ত) গুম করে রাখা হয়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজির বিহীন। এমনকি একজন অবসরপ্রাপ্ত অফিসারকে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়, পরবর্তীতে উক্ত অফিসারের স্ত্রীকে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এক বছরের শিশুসহ বিনা বিচারে দুই দফায় দীর্ঘ ছয় বছর কারাগারে রাখা হয়।

তদন্তে আরও জানা যায়, কিছুসংখ্যক অফিসার ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে বিডিআর হত্যাযজ্ঞের নারকীয় ঘটনায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় সোচ্চার ছিলেন, তাদের মধ্যে পাঁচ জনকে একটি ভুয়া ঘটনা (ব্যারিস্টার তাপস হত্যা প্রচেষ্টা মামলা) সাজিয়ে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়।

তদন্তে জানা যায়, পাঁচ জন অফিসার ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ডিজিএফআইতে কর্মরত থাকাকালীন তাদেরকে মিথ্যা অভিযোগে কিংবা বিনা অভিযোগে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

তদন্তে বেরিয়ে আসে যে, কিছু অফিসার বিডিআর হত্যাযজ্ঞের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দরবারে প্রশ্ন করার জন্য সেনাসদর কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এক পর্যায়ে উক্ত দরবারে ব্যাপক হইচই ও হট্টগোল হওয়ায় পাঁচ জন অফিসারকে অযথা দায়ী করা হয় এবং তাদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো প্রকার সুযোগ না দিয়ে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

চারজন কনিষ্ঠ অফিসার (লেফটেন্যান্ট পদবির) ধর্মীয় আচার-আচরণ নিয়ম-নিষ্ঠার সাথে পালন করার কারণে তাদেরকে কোনো একটি দলের অনুসারী হিসেবে অথবা জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে অন্যায়ভাবে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা হয় বলেও বেরিয়ে আসে তদন্তে।

কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনীতে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার ১১৪ জন কর্মকর্তা সম্পর্কে সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে। তাদেরকে (যার জন্য যা প্রযোজ্য) স্বাভাবিক অবসর প্রদান, পদোন্নতি, অবসর পূর্ব পদোন্নতি, বকেয়া বেতন ও ভাতা এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি প্রদান করার জন্য কমিটি সুপারিশ করে। এর মধ্যে চারজনকে চাকুরিতে পুনর্বহাল করার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।

নৌবাহিনীতে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার ১৯ জন কর্মকর্তাকে (যার জন্য যা প্রযোজ্য) স্বাভাবিক অবসর প্রদান, পদোন্নতি, অবসরপূর্ব পদোন্নতি, বকেয়া বেতন ও ভাতা এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি প্রদান করার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।

বিমান বাহিনীতে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার ১২ জন কর্মকর্তাকে (যার জন্য যা প্রযোজ্য) স্বাভাবিক অবসর প্রদান, পদোন্নতি, অবসর পূর্ব পদোন্নতি, বকেয়া বেতন ও ভাতা এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি প্রদান করার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।

বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে মো. আশরাফ উদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ তারিক উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় এর আরও খবর

img

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি

প্রকাশিত :  ০৯:০৬, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সংকটাপন্ন অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। দলের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক পরামর্শ ও লজিস্টিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেই কাতারের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে লন্ডনে নেওয়া হবে।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ও চিকিৎসক জোবাইদা রহমান লন্ডন থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে। তিনি ঢাকায় পৌঁছে খালেদা জিয়ার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন এবং অবস্থা অনুকূল থাকলে তার সঙ্গেই লন্ডন যাত্রা করবেন বলে জানা গেছে।

এদিকে কাতার জানায়, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজন হলে তারা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিতে প্রস্তুত। চিকিৎসকদের সম্মতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবে। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরেই তা রওনা হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে ব্যক্তিগত চিকিৎসকসহ মোট ১৪ জন যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তার শারীরিক অবস্থায় তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। চিকিৎসকরা অবস্থাকে ‘স্থিতিশীল’ বলছেন। তার চিকিৎসায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ রিচার্ড বিলসহ দেশি–বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড কাজ করছে। বুধবার যুক্তরাজ্য এবং চীন থেকে বিশেষজ্ঞের নতুন দুটি দল এই বোর্ডে যুক্ত হয়েছে।

গত ২৩ নভেম্বর ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণ নিয়ে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে কিডনি জটিলতা, হৃদরোগ ও নিউমোনিয়ায় তার অবস্থার আরও অবনতি হয়। ১ ডিসেম্বর তাকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয় বলে দলীয় সূত্র জানায়।

অন্যদিকে, তাকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ (ভিভিআইপি) ঘোষণার পর হাসপাতাল এলাকাজুড়ে নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে এসএসএফ ও পিজিআর সদস্যদের। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, এয়ার ট্রান্সপোর্ট প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে হাসপাতালের নিকটস্থ উন্মুক্ত মাঠে সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারের পরীক্ষামূলক অবতরণ ও উড্ডয়ন পরিচালিত হবে। এ বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য না ছড়ানোর অনুরোধ করেছে কার্যালয়।

বহু বছর ধরেই আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি ও ফুসফুসজনিত জটিলতাসহ নানা অসুস্থতায় ভুগছেন খালেদা জিয়া। গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর মুক্তি পেয়ে তিনি চলতি বছরের জানুয়ারিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান এবং ১১৭ দিন অবস্থান শেষে মে মাসে দেশে ফেরেন। দেশে ফেরার পর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্যও তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।


 

জাতীয় এর আরও খবর