
রাজধানীতে ভয়াবহ অপহরণ: ১৭ ঘণ্টার উদ্বেগজনক বন্দিদশা, ১ লাখ ১৯ হাজার টাকা লুট!

রাজধানীর ফার্মগেট ও খামারবাড়ি এলাকার এক ব্যক্তির উপর ভয়াবহ অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। অপহরণকারীরা ১৭ ঘণ্টা ধরে তাকে বন্দি রেখে ১ লাখ ১৯ হাজার টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছে। তাঁর নাম আলমগীর হোসেন। বর্তমানে তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছেন।
৯ মার্চ ভোর ৫টা ১০ মিনিটে একটি ঘটনা ঘটে, যখন খামারবাড়ি থেকে অফিস যাওয়ার সময় আলমগীরকে হঠাৎ তিনটি কালো হাইস মাইক্রোবাস থেকে ৪-৫ জন অপহরণকারী জোরপূর্বক তুলে নেয়। চোখে পতাকা বেঁধে তাকে গাড়ির পিছনের সিটে বসানো হয়।
আলমগীর জানান, “আমি কিছু বলার চেষ্টা করলে তারা বলেছিল, ‘চুপ থাকো! বেশি কথা বললে খারাপ হবে!’” এরপর তারা তার মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট নিতে শুরু করে।
অপহরণকারীরা তার বিকাশ ও নগদ অ্যাপ থেকে অ্যাক্সেস করে ৫০,০০০ থেকে ৭০,০০০ টাকার মধ্যে তার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ট্রান্সফার করে। সব মিলিয়ে ১ লাখ ১৯ হাজার টাকা লুট করে নেওয়ার পর তারা আলমগীরকে রাজধানী থেকে ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায়, যেখানে তাকে বিদ্যুৎ শক, মারধর ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়।
তিনি জানিয়েছেন, “ওরা আমাকে মারধর করেছে এবং বিদ্যুৎ শক দিয়েছে। আমি চিৎকার করলেও তারা থামেনি। বারবার আমাকে সতর্ক করছিল যে, কাউকে জানালে খারাপ অবস্থায় ফেলে দেবে।”
অপহরণকারীরা মুক্তিপণ হিসেবে আলমগীরের পরিবার থেকে ১০-১৫ লাখ টাকা দাবি করে। পরিবারের পক্ষ থেকে এই টাকা দেওয়ার জন্য জানানো হলেও তারা তা দিতে পারছিল না। ফলে সময়ের সাথে সাথে অপরাধীরা তাদের দাবিকে কমিয়ে আনে।
অপহরণের সময় আলমগীরের ছোট ভাইকে কিছু ছবি পাঠিয়ে মুক্তিপণের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। পরিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি জানানোর চিন্তা করলেও অপহরণকারীদের হুমকিতে তারা আতঙ্কিত ছিলেন।
১৭ ঘণ্টা বন্দি থাকার পর, রাত সাড়ে ১০টায় অপহরণকারীরা আলমগীরকে সাতরাস্তা মোড়ে ফেলে দেয়; তখন তিনি প্রায় অজ্ঞান ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিলেন। ধীরে ধীরে তিনি বাসায় ফিরে এসে পরিবারের কাছে সবকিছু খুলে বললেন।
তবে দুর্ভাগ্যবশত, তার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ অপহরণকারীরা ফিরিয়ে দেয়নি।
এই ঘটনার উপর ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অপহরণের সময় ব্যবহৃত একটি মোবাইল নম্বর শনাক্ত করা হয়েছে (০১৭৩৭৪৬৩৭০৫), এবং একজন অপরাধীর নাম ‘জয়’ বা ‘অলক্ষ্মী বেগম’ বলে শনাক্ত হয়েছে।
এ ধরনের ঘটনার ফলে সাধারণ মানুষ ভীতির মধ্যে পড়েছেন। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল লেনদেনে আরও সচেতন হওয়া উচিত এবং অচেনা নম্বর থেকে কল আসলে সতর্ক থাকতে হবে।
ভুক্তভোগীর পরিবার অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের কাছে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। নাগরিকদেরও অনুরোধ করা হচ্ছে, যদি কেউ এই ঘটনার বিষয়ে সহায়তা করতে পারেন, তাহলে দয়া করে প্রশাসনকে অবহিত করুন।
রাজধানীর মধ্যবর্তী সময়ে এমন যে কোনও অপহরণ জনসাধারণের মধ্যে ভয়াবহ উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না হলে পরিস্থিতি অবনতির দিকে যেতে পারে।