
ভারতকে কাঁপিয়ে অভিষেক রাঙালেন হামজা

বাংলাদেশ কেন হামজাকে এমন করে চেয়েছে, তার ছাপটা স্পষ্ট ছিল খেলায়। শেফিল্ড ইউনাইটেডের এই মিডফিল্ডার আজ অভিষেকেই আলো কেড়ে নিয়েছেন। তাতেই ভারত কেঁপে কেঁপে উঠেছে রীতিমতো।
তিনি যেমন পারফর্ম করেছেন, তাতে বাংলাদেশ দল তার অভিষেকে সেরা উপহারটা দিতে পারত একটা জয় দিয়ে। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় তা আর হলো কোথায়? তবে যা হয়েছে, তাও নেহায়েত মন্দ নয়, ভারতের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে ড্র করাটা যে চাট্টিখানি কথা নয়!
অভিষেকের শুরু থেকেই হামজা ছিলেন তার মতো ছন্দেই। তার শুরুর পজিশনটা ছিল মোহাম্মদ হৃদয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের মাঝমাঠে ডাবল পিভোটে। সেখানে তিনি তার কাজটা ঠিকঠাক করে গেছেন। প্রতিপক্ষের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে হামজা ছিলেন জয়ীর ভূমিকায়। স্লাইডিং ট্যাকল তার ট্রেডমার্ক অস্ত্র, লিস্টন কোলাচোকে বাম উইংয়ে একাধিকবার এই ট্যাকলে বোতলবন্দি রেখেছিলেন তিনি।
তার ফলটা প্রথমার্ধ শেষের পরিসংখ্যান দেখলেই বুঝতে পারবেন। বাংলাদেশ এ অর্ধে কম করে হলেও ৫টা সুযোগ পেয়েছে, যার ৩টা অন্তত বিশাল সুযোগ। ওদিকে ভারত সুযোগ পেয়েছে মোটে ১টা। নিজেদের বিপদসীমা আগলে রেখে আক্রমণ শানানো, একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের কাজটা এমনই, হামজা তার এ ভূমিকায় উতরে গেছেন লেটারমার্ক পেয়ে।
তিনি স্রেফ সেখানেই আটকে থাকেননি। বল যেখানে, তাকেও ঠিক সেখানেই দেখা গেছে। বাংলাদেশের একাধিক আক্রমণ শুরু হয়েছে তার পা থেকে। ফরোয়ার্ডরা যদি একটু ক্লিনিকাল হতেন, তাহলেই কাজটা হয়ে যেত!
ম্যাচে জামাল ভূঁইয়ার ওপর ভরসা রাখতে পারেননি কোচ কাবরেরা। তার বদলে অধিনায়ক হিসেবে নেমেছিলেন তপু বর্মণ, ম্যাচের ২২ মিনিটে চোট নিয়ে তিনিও চলে যান মাঠের বাইরে।
এরপর অধিনায়কের বাহুবন্ধনী হাতে না থাকলেও দলের অলিখিত অধিনায়ক ছিলেন হামজাই। দলকে রক্ষণে, আক্রমণে, মাঠে, মাঠের বাইরে সব জায়গায় নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তাতেই কেঁপে গেছে ভারত। প্রতিবেশীদের ডেরা থেকে ‘আফসোসের’ ড্রয়ের সঙ্গে এও এক উপরি পাওনা বৈকি!
নিজের অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমেই সামর্থ্যের শতভাগ দিয়ে খেলেছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা দেওয়ান চৌধুরি। মিডফিল্ড ও আক্রমণভাগে প্রাণবন্ত ছিলেন প্রথমার্ধে, বিরতির পর তপু বর্মণের অনুপস্থিতিতে তাকে খেলানো হয় সেন্টার ব্যাকে। সেখানেও দারুণ সফল। অন্যদিকে অবসর ভেঙে ফেরা সুনীল ছেত্রীকে তেমন সুযোগ দেয়নি বাংলাদেশ। ফলে ভারতের মাঠ থেকে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা গোলশূন্য ড্র নিয়ে ফিরছে।
কনকনে বাতাস। ঘাসে জমছিল কুয়াশা। এমন শীতল আবহাওয়ায় জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে ভারতীয় সমর্থকরা কোরাসে ‘ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া’ আওয়াজ তুলে পরিবেশ গরম করেই রাখছিলেন। গ্যালারিতে উত্তেজনা থাকলেও স্বাগতিক ভারত ম্যাচে গোল করতে পারেনি। বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে না পারায় গোলশূন্য ড্র হয়েছে।
বাংলাদেশের জার্সিতে আজ অভিষেক হয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে খেলা হামজা চৌধুরির। নতুন পরিবেশে হামজা প্রথম ম্যাচেই প্রাণবন্ত ছিলেন। যেখানে বল সেখানেই ছুটে গেছেন তিনি। কখনও রক্ষণের দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছেন, আবার কখনও আক্রমণে সহায়তা করেছেন। বাংলাদেশের কর্নারগুলো হামজাই নিয়েছেন। মাঝেমধ্যে হামজার বাড়ানো থ্রু পাস ভারতের রক্ষণে ত্রাসের সৃষ্টি করেছে। প্রতিপক্ষের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে অধিকাংশ সময় হামজাই জিতেছেন। হামজার ট্রেডমার্ক স্লাইডিং ট্যাকেলে নস্যাৎ-ও হয়েছে ভারতের আক্রমণ।
হামজার উজ্জ্বল দিনে নিষ্প্রভ ছিলেন ভারতের কিংবদন্তি ফুটবলার সুনীল ছেত্রী। তিনি বাংলাদেশের গোলরক্ষক মিতুল মারমাকে তেমন কোনো পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি। কয়েক দফা বলের লাগাল পাননি, আবার পেলেও ঠিকমতো টাইমিং করতে পারেননি। তাই ভারতীয় কোচ মার্কোস ৮১ মিনিটে সুনীলকে তুলে নেন।
ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগটা মিস করেছে বাংলাদেশ। একেবারে খেলার প্রথম মিনিটে ভারতীয় গোলরক্ষক বিশাল কেইত বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড জনির পায়ে বল তুলে দেন। জনি একেবারে ফাঁকা পোস্ট পেয়েও সাইড জালে শট নেন। কিছুক্ষণ পর হামজার নেওয়া এক কর্নারে ভারতীয় গোলরক্ষক বিশাল গ্রিপ করলেও শট নেওয়ার সময় বল বাধাগ্রস্ত হয়ে আবার ভারতের পোস্টের দিকে যায়। বাংলাদেশের হৃদয়ের শট ভারতীয় ডিফেন্ডার গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করেন। ২২ মিনিটে চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক তপু বর্মণ। ফলে আরেক ডিফেন্ডার রহমত মিয়া আর্মব্যান্ড নিয়ে মাঠে নামেন।
প্রথমার্ধে বাংলাদেশ বল পজেশন ও আক্রমণে ভারতের চেয়ে এগিয়ে ছিল। ৪১ মিনিটে গোলরক্ষককে ১:১ পেয়েও বল জালে পাঠাতে পারেননি জনি। ৩১ মিনিটে ভারতীয় গোলরক্ষকের বাড়ানো বল ধরে দ্রুতগতির আক্রমণে ওঠে দল। ডান প্রান্ত থেকে নেওয়া ক্রসে ভারতীয় ফরোয়ার্ডের হেড গোললাইনে সেভ করেন বাংলাদেশের ডিফেন্ডার। ফিরতি বলে ভারতীয় ফুটবলার জোরালো শট নিতে পারেননি, ফলে সেভ করতে অসুবিধা হয়নি বাংলাদেশি গোলরক্ষক মিতুলের।
প্রাণবন্ত হামজা, বাংলাদেশের গোল মিসের প্রথমার্ধ
দ্বিতীয়ার্ধে দেখা যায় অন্য ভারতকে। খেলার শুরু থেকেই আক্রমণ করতে থাকে স্বাগতিকরা। ৫৫ মিনিটে লিস্টন কোলাসোর ক্রসে সুনীল ছেত্রী মাথা ছোঁয়াতে পারলেই গোল হতে পারতো। বাংলাদেশের গোলরক্ষক মিতুল পরাস্ত ছিলেন। এরপর ভারত একাধিক কর্নার আদায় করে কয়েক মিনিটের মধ্যে। হামজা এই অর্ধে রক্ষণেই বেশি সময় কাটিয়েছেন।
৬০ মিনিটে বাংলাদেশ শাহরিয়ার ইমন ও জনির পরিবর্তে চন্দন রায় ও ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে নামায়। ৭৫ মিনিটে রাকিবের বাড়ানো বলে ফাহিম বক্সের মধ্যে গোলের সুযোগ পেয়েও মিস করেন। দুই মিনিট পর হ্যাভিয়ের দুই সোহেল রানাকে এক সঙ্গে নামান হৃদয় ও মোরসালিনের জায়গায়। একাধিক খেলোয়াড় পরিবর্তন করলেও ম্যাচের ফল পরিবর্তন করতে পারেননি কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা।