img

ইহকাল ও পরকালে সফলতার জন্য রাসূলের (সা:) তিনটি উপদেশ

প্রকাশিত :  ১৫:০১, ০৭ মে ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ২১:০৬, ০৭ মে ২০২৫

ইস্ট লন্ডন মসজিদের জুমার খুতবা

ইহকাল ও পরকালে সফলতার জন্য রাসূলের (সা:) তিনটি উপদেশ

শাইখ জামাল আবদি-নাসির

দু’জন মহান সাহাবী রাসুল (সাঃ) এর কাছে এসে বললেন: “হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে এমন কিছু উপদেশ দিন যা আমি আমল করতে পারি, যা দুনিয়াতে উপকার দিবে এবং আখিরাতে মুক্তি দিবে।”

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তিনটি শক্তিশালী বাক্যে উত্তর দিলেন: এক. “যেখানেই থাকো আল্লাহকে ভয় করো । দুই. খারাপ কাজের পর ভালো কাজ করো, তা সেই খারাপটিকে মুছে দেবে। তিন. মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো।”

শাইখ জামাল আবদি-নাসির গত ২ মে শুক্রবার ইস্ট লন্ডন মসজিদের জুমার খুতবায় উপরোক্ত হাদীসটি উদ্ধৃত করে বক্তব্য শুরু করেন। তিনি অতিথি ইমাম হিসেবে খুতবা পেশ করছিলেন। তিনি বলেন, এই সপ্তাহের খুতবায় আমি এই হাদীসটি নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছি যা ইমাম আহমাদের ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। এরপর তিনি হাদীসটি বিশদ ব্যাখ্যা তুলে ধরেন।

এক. “যেখানেই থাকো, আল্লাহকে ভয় করো।”

তুমি একা হও বা জনসমক্ষে। ভ্রমণে বা বাসস্থানে, পরিবারে বা ব্যবসায় — সব জায়গায় আল্লাহকে ভয় করো। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন: “সে কি জানে না যে আল্লাহ তাকে দেখছেন?” সূরা আল-আলাক, ৯৬:১৪।

রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তাকওয়া অন্তরে থাকে। এটা তোমার চেহারায়, কথায় বা বংশে নয় । যদি অন্তরে না থাকে, জীবনে তা প্রতিফলিত হবে না। যার অন্তরে তাকওয়া নেই, সে আল্লাহকে সত্যিকারভাবে চিনতে পারে না।

সাহাবি সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন: “কিয়ামতের দিন এমন কিছু লোক থাকবে যাদের নেক আমল পাহাড়সম হবে, কিন্তু আল্লাহ তা বাতাসে উড়ন্ত ধুলোর মতো করে দেবেন।” সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, তারা কারা? তিনি বললেন: তারা হল এমন লোক যারা একাকী অবস্থায় আল্লাহকে ভয় করে না। তারা লুকিয়ে গুনাহ করে, ধর্মের সীমা লঙ্ঘন করে, কিন্তু জনসমক্ষে নিজেকে ধার্মিক দেখায়। আল্লাহ সব জানেন, তাই তাদের আমল নিজের চোখের সামনেই ধ্বংস হয়ে যাবে।”

দুই. “খারাপ কাজের পর ভালো কাজ করো, তা সেই খারাপটিকে মুছে দেবে।”

আমরা ফেরেশতা নই, মানুষ । আমাদের দ্বারা ভুল হবেই । কিন্তু আল্লাহ চান আমরা জান্নাতে যাই। তাই যদি কোনো গুনাহ করো, তার পরে একটা ভালো কাজ করো। সেটা পূর্বের গুনাহ মুছে দেবে।

শয়তান হয়তো কানে কানে বলবে, “এটা তো ভণ্ডামি! গুনাহ করে আবার নেক আমল?”

কিন্তু আল্লাহ আমাদের প্রকৃতি জানেন। তাই তিনি বলেন: “খারাপ কাজের পরে ভালো কাজ করো, আমি তা মাফ করে দেব।”

আল্লাহ বলেন: “দিনের দুই প্রান্তে এবং রাতের প্রথম ভাগে নামাজ কায়েম করো। নিশ্চয়ই ভালো কাজগুলো খারাপ কাজগুলোকে মুছে দেয়। এটা স্মরণকারীদের জন্য উপদেশ।” (সূরা হুদ)।

তিন: ‘মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো’

মানুষের সঙ্গে এমন ব্যবহার করো, যেমন ব্যবহার তুমি তাদের কাছ থেকে আশা করো।”

অনেকে অন্যকে কষ্ট দেয়, অপবাদ দেয়, গীবত করে বা অন্যায় আচরণ করে — অথচ নিজের সঙ্গে এমন হলে সহ্য করতে পারে না। রাসূল (সাঃ) বলেন: “মানুষের সঙ্গে এমনভাবে চলো, যেমনটা তুমি চাও তারা তোমার সঙ্গে করুক।”

রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি চায় জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাতে প্রবেশ, সে যেন দুটি কাজ করে: ১. আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস নিয়ে জীবনযাপন ও মৃত্যু লাভ। ২. মানুষের সঙ্গে এমন ব্যবহার করা, যেমন ব্যবহার সে নিজের জন্য চায়।

আরেকটি হাদীসে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম কী? জবাবে তিনি বললেন: “আল্লাহভীতি এবং উত্তম চরিত্র।”

রাসূল (সাঃ) “দেউলিয়া মুসলিম ” সম্পর্কে সতর্ক করেছেন । সে এমন ব্যক্তি- যে নামাজ, রোজা ও সদকা নিয়ে কিয়ামতের ময়দানে আসবে, কিন্তু মানুষকে গালি দিয়েছে, অপবাদ দিয়েছে, কারও হক মেরেছে। তখন তার নেক আমল থেকে সেই হকের ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে। যখন তার আমল শেষ হয়ে যাবে, তখন তাদের গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে এবং সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।

ইমাম শাইখ জামাল আবদি-নাসির খুতবার সমাপ্তিতে বলেন, এই তিনটি উপদেশই একজন মুসলমানের জীবন বদলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট । আল্লাহ আমাদের এসব উপদেশ অনুযায়ী

জীবনযাপন করার তাওফিক দিন। আমীন।


ইস্ট লন্ডন মসজিদ এন্ড লন্ডন মুসলিম সেন্টার
শুক্রবার, ৪ মে ২০২৫
img

বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে ইসলাম ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা

প্রকাশিত :  ১৮:৫৫, ১১ জুন ২০২৫

গত এক দশকে বিশ্বব্যাপী ইসলাম ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা অন্যান্য ধর্মের তুলনায় সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি অন্যান্য সব প্রধান ধর্মের সম্মিলিত প্রবৃদ্ধিকেও ছাড়িয়ে গেছে ইসলামের সম্প্রসারণ। ‘পিউ রিসার্চ সেন্টার’-এর সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, ইসলাম এখন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম।
গবেষণাটি ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়কাল ঘিরে পরিচালিত হয়েছে এবং এটি ‘গ্লোবাল রিলিজিয়াস ল্যান্ডস্কেপ’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।

পিউ রিসার্চ জানিয়েছে, ইসলাম ধর্মে এই বৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি হলো প্রাকৃতিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি। ধর্মান্তরণের ভূমিকা এখানে খুবই সীমিত। মুসলিম পরিবারে গড় সন্তানসংখ্যা অন্য ধর্মের তুলনায় বেশি। বর্তমানে সারাবিশ্বে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ এই ধর্মের অনুসারী।
২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতি মুসলিম নারী গড়ে ২.৯ সন্তান জন্ম দিয়েছেন, যেখানে অমুসলিম নারীর ক্ষেত্রে এই হার ২.২। তাছাড়া মুসলিম জনগোষ্ঠীর গড় বয়স তুলনামূলকভাবে কম, যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
গবেষণা অনুযায়ী, খ্রিষ্টধর্ম এখনো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্ম, যার অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ২৩০ কোটি। তবে ইসলাম দ্রুত বাড়তে থাকায় দুই ধর্মের মধ্যকার সংখ্যাগত ব্যবধান দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
২০১০ সাল থেকে খ্রিষ্টধর্মের অনুসারীর সংখ্যা বিশ্বে গড়ে ১.৮ শতাংশ হারে কমেছে। এ সময়ে ইসলাম ধর্মের অনুসারী বেড়েছে প্রায় ৩৫ কোটি, যা খ্রিষ্টধর্মের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি।
অঞ্চলভিত্তিক পরিবর্তন
বিশ্বজুড়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতেই ইসলাম ধর্মের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি হয়েছে। কাজাখস্তান, বেনিন ও লেবাননে ইসলাম ধর্মে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। তবে ওমান ও তানজানিয়ায় মুসলমানদের অনুপাত কিছুটা কমেছে।
ধর্মহীন মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। চীনে সবচেয়ে বেশি ধর্মহীন মানুষ বাস করেন, যাদের সংখ্যা প্রায় ১৩০ কোটি। যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মহীন মানুষের সংখ্যা ২০১০ সালের তুলনায় বেড়েছে ৯৭ শতাংশ।
ধর্মত্যাগ ও ধর্মান্তর প্রবণতা
গবেষণায় দেখা গেছে, খ্রিষ্টধর্ম, হিন্দুধর্ম ও বৌদ্ধধর্মে ধর্মত্যাগের হার ধর্মান্তরের চেয়ে বেশি।
বিশেষ করে খ্রিষ্টধর্মে, প্রতি একজন প্রাপ্তবয়স্ক নতুন অনুসারীর বিপরীতে তিনজন ধর্ম ত্যাগ করেছেন। অন্যদিকে, ধর্মহীনতায় প্রবেশের হারও বেশি—প্রতি একজন ধর্মহীনতা ছেড়েছেন, আর তিনজন নতুন করে ধর্মহীন হয়েছেন।

তবে ইসলাম একমাত্র প্রধান ধর্ম, যেখানে ধর্মান্তরিত হয়ে আসা মানুষের সংখ্যা ধর্মত্যাগীদের চেয়ে বেশি।

বিশ্ব ধর্মের বর্তমান চিত্র
ইসলাম : এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। প্রায় ২০০ কোটি মানুষ এই ধর্মের অনুসারী, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ।
খ্রিষ্টধর্ম : বৃহত্তম ধর্ম, যার অনুসারী সংখ্যা ২৩০ কোটি।
ধর্মহীন : সংখ্যা বেড়ে ২০০ কোটিতে, ২০১০ সালের তুলনায় বেড়েছে ২৭ কোটি।
হিন্দুধর্ম : তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম, এর ১২০ কোটি অনুসারী রয়েছে; গত এক দশকে বেড়েছে ১২.৬ কোটি, তবে বৈশ্বিক হারে অপরিবর্তিত।

বৌদ্ধধর্ম : একমাত্র ধর্ম যার অনুসারীর সংখ্যা কমেছে — ১.৮৬ কোটি হ্রাস পেয়ে হার ৫% থেকে ৪%-এ নেমেছে।
ইহুদি ধর্ম : গত এক দশকে এর মাত্র ১০ লাখ জনসংখ্যা বেড়েছে। অন্যান্য ধর্ম (শিখ, বাহাই ইত্যাদি) সম্মিলিতভাবে প্রায় ২০ কোটি অনুসারী, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২.২ শতাংশ।
এই গবেষণাটি পরিষ্কারভাবে দেখায় যে, ইসলাম শুধু প্রাকৃতিকভাবে নয়, বৈশ্বিক ধর্মীয় পরিবর্তনের ধারাতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি, ধর্মহীনতা ও ধর্মত্যাগের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আগামী দশকে বিশ্ব ধর্মীয় মানচিত্রে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।