img

লন্ডনে সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণের জোর দাবী

প্রকাশিত :  ১৩:৪৯, ১০ জুন ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৮:৪৭, ১১ জুন ২০২৫

লন্ডনে সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণের জোর দাবী

লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে এক জোরালো সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসীদের নাগরিক অধিকার এবং বিশেষ করে ভোটাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন ‘প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ ইউকে’-এর আহ্বায়ক মুহাম্মদ বেলায়েত হোসাইন।

গতকাল সোমবার (৯ জুন) লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই তিনি বলেন, “দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশীর পক্ষে আমরা আজ সরকারের কাছে একটি মৌলিক নাগরিক অধিকার, ভোটাধিকার, বাস্তবায়নের দাবি জানাতে এসেছি। দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে এই দাবি শুনেই আসছি, কিন্তু কোনো সরকারই এটি বাস্তবায়নের বাস্তব পদক্ষেপ নেয়নি।”

তিনি আরও বলেন, “একটি রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব গ্রহণকারী বর্তমান দলনিরপেক্ষ সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনুস শাসনব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার আনতে উদ্যোগী হয়েছেন। আমরা এই সংস্কার প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই এবং বিশ্বাস করি, এই সরকারই প্রবাসীদের ভোটাধিকার বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।”


ড. ইউনুসের আসন্ন লন্ডন সফর প্রসঙ্গে বেলায়েত হোসাইন বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনুসের বৃটিশ রাজপরিবারের আমন্ত্রণে লন্ডন সফর প্রবাসীদের জন্য গর্বের। এই সফর যেমন সম্মানের, তেমনি এটি প্রবাসীদের দাবিগুলো পৌঁছে দেওয়ারও সুযোগ।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান উৎস হিসেবে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাংলাদেশ অর্থনীতির ‘অক্সিজেন’। অথচ এই বিশাল জনগোষ্ঠী দেশের শাসন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের ন্যূনতম অধিকার — ভোটাধিকার — থেকে বঞ্চিত।

তিনি বলেন, “যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও তুরস্কসহ বহু দেশে প্রবাসীরা নিজ নিজ দেশের নির্বাচনে ভোটাধিকার ভোগ করে থাকেন। বাংলাদেশ সরকারও চাইলে এমন ব্যবস্থা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারে। এটি কেবল আন্তরিকতার বিষয়।”


বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে বলা হয়, “৭১-এর যুদ্ধে যেমন যুক্তরাজ্যের প্রবাসীরা বিশ্বজনমত গঠন ও অর্থ সংগ্রহে ভূমিকা রেখেছেন, ঠিক তেমনি আজও দেশের সংকটে প্রবাসীরা পাশে থেকেছেন। বিগত আন্দোলনেও প্রবাসীরা রেমিটেন্স বন্ধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এখন আর অবহেলার সুযোগ নেই।”

সাংবাদিকদের উদ্দেশে বেলায়েত হোসাইন বলেন, “আপনারাই জাতির চেতনার কণ্ঠস্বর। আমাদের এই দাবি সরকার পর্যন্ত পৌঁছে দিতে আপনাদের সহায়তা প্রয়োজন।”

সংবাদ সম্মেলনের শেষাংশে তিনি প্রবাসীদের উদ্দেশে আহ্বান জানান, “আমরা যারা দেশের বাইরে রয়েছি, তারা যেন একসঙ্গে থেকে নাগরিক অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ থাকি। সরকারের প্রতি সহযোগিতা বজায় রেখেই এই ন্যায্য দাবি আদায়ে সোচ্চার হই।”

উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানান প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক জজ মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। পরিষদের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান যুগ্ন আহবায়ক ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ । সদস্য সচিব ব্যারিস্টার বদরে আলম দিদারের পরিচালনায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, যুগ্ন আহবায়ক সিরাজুল ইসলাম শাহীন, অন্যতম সদস্য সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান, ব্যারিস্টার ইকবাল হোসাইন, ডঃ শামসুল আলম গোলাপ, ডক্টর মোজাম্মেল হুসাইন, আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল, সাংবাদিক তৌহিদুল করিম মুজাহিদ প্রমূখ। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনের পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।

কমিউনিটি এর আরও খবর

img

মিথ্যা নবুওতের দাবিদার ভন্ডদের ঈমান বিধ্বংসী ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা উম্মাহর সম্মিলিত দায়িত্ব

প্রকাশিত :  ১৭:৩০, ১৭ জুলাই ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৭:৩৫, ১৭ জুলাই ২০২৫

লন্ডনে অনুষ্ঠিত খতমে নবুওত সম্মেলনে নেতৃবৃন্দের বক্তব্য

গত ১৩ জুলাই রবিবার লন্ডনের সর্বদলীয় সংগঠন মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওত এর উদ্যোগে বিরাট খতমে নবুওত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব লন্ডনের ফোর্ড স্কয়ার মসজিদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ মহান সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ভারত থেকে আগত মেহমান, হযরত হুসাইন আহমদ মাদানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির দৌহিত্র, আওলাদে রাসূল আল্লামা সৈয়দ আশহাদ রশিদী। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওত লন্ডন এর সভাপতি মাওলানা গোলাম কিবরিয়া। সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারি মাওলানা মুফতি আবদুল মুনতাকিম। সভায় লন্ডনের সর্বদলীয় উলামায়ে কেরাম ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ গুরুত্ব সহকারে উপস্থিত হন এবং মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওতের ইতিবাচক কার্যক্রম ও মিথ্যা নবুওতের দাবিদার ভন্ডদের ঈমান বিধ্বংসী ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় বিভিন্ন প্রতিবাদ- আন্দোলন কর্মসূচি আরো গতিশীল করার জন্য তাওহিদী জনতার প্রতি জোর আহ্বান জানান। সভায় খতমে নবুওত এর সর্ববাদী সম্মত আকিদা বিশ্বাসের অপরিসীম গুরুত্ব ও কাদিয়ানীদের ঈমান বিধ্বংসী ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচন করে সারগর্ভ আলোচনা পেশ করেন কাউন্সিল অফ মস্ক টাওয়ার হামল্যাটস এর চেয়ারম্যান মাওলানা হাফিজ শামছুল হক, হেফাজতে ইসলাম ইউকের সভাপতি শায়খুল হাদীস মুফতি আবদুর রহমান মনোহরপূরী, খতমে নবুওত লন্ডন এর সহ-সভাপতি মাওলানা ডক্টর শুয়াইব আহমদ, সহ সভাপতি শায়খ মাওলানা ইমদাদুর রাহমান আলমাদানী, বিশিষ্ট আলেম মাওলানা ফয়েজ আহমদ প্রমুখ। সভায় কমিউনিটি নেতা, জনাব কে এম আবু তাহের চৌধুরী, মাওলানা সৈয়দ আশরাফ আলী, মাওলানা শাহনূর মিয়া, আলহাজ্ব মাওলানা আতাউর রহমান, মাওলানা সৈয়দ তামীম আহমদ, টিভি ব্যক্তিত্ব মুফতি সালেহ আহমদ,  হাফিজ হুসাইন আহমদ বিশ্বনাথীও মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদ সহ প্রচুর সংখ্যক নেতৃস্থানীয় উলামায়ে কেরাম ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় বক্তারা বলেন 


কাদিয়ানী সম্প্রদায় খতমে নবুওতের অকাট্য ও সুস্পষ্ট আকীদাকে শুধু অস্বীকারই করে না, গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে ‘নবী’ বলেও বিশ্বাস করে। (নাউযুবিল্লাহ) একারণে তারা নিজেদের পরিচয়ও দেয় ‘আহমদিয়া’ বলে। বলাবাহুল্য, এই এক কুফরই এদের কাফির হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এছাড়াও অন্যান্য কুফরীর কথা ও তাদের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। একারণে মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এই যে, কাদিয়ানী মতবাদ সম্পূর্ণ কুফরী মতবাদ এবং এই মতবাদে বিশ্বাসীরা নিঃসন্দেহে অমুসলিম, কাফির।

বক্তাগন আরো বলেন 

খতমে নবুওতের মতো অকাট্য আকীদা অস্বীকার করার পর, নবুওতে মুহাম্মাদীর সমান্তরালে নতুন ‘নবুওতে’ বিশ্বাসের পরও যারা এদের অমুসলিম পরিচয়ে সংশয় পোষণ করেন তারা হয় যিন্দীক-বেদীন কিংবা জাহিল-মূর্খ। এদেরও কর্তব্য নতুন করে আল্লাহর শেষ রাসূলের উপর ঈমানকে নবায়ন করা। বক্তাগন বিশ্ব মুসলিমের মৌলিক মানবাধিকার ও ঈমানী সার্বভৌমত্ব রক্ষার অপরিহার্য দাবি উত্থাপন করে তাঁদের সুচিন্তিত আলোচনায় উদাহরণ দিয়ে বলেন যদি কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বাংলাদেশের অখন্ডতাকে অস্বীকার করে এবং বাংলাদেশের সীমানার ভিতরে আরেক ‘বাংলাদেশে’র গোড়াপত্তন করে আর ঐ কল্পিত রাষ্ট্রের জন্য বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ব্যবহার করে, আলাদা নির্বাহী, প্রশাসন ও বিচারবিভাগ ঘোষণা করে তাহলে এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিষয়ে দেশপ্রেমিক জনগণ, সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অবস্থান কী হবে বা হওয়া উচিৎ? এরপর যদি ঐ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর উপর এদেশের কোনো জাতীয় দৈনিকে ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয় এবং তাদের ‘সংস্কৃতি’ ও ‘রাজনৈতিক পরিচিতি’ রক্ষার আবদার জানিয়ে মায়াকান্না করা হয় তাহলে এদের সম্পর্কে দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতিক্রিয়া কী হবে?  এরা কি চিরদিনের জন্য গাদ্দার ও মুনাফিক বলে চিহ্নিত হবে না?

একই কথা কাদিয়ানী সম্প্রদায় এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের সম্পর্কেও প্রযোজ্য। এ সম্প্রদায় শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওতের সমান্তরালে আলাদা নবুওতের মিথ্যা দাবি করেও এবং সে দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেও নিজেদেরকে মুসলিম উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত বলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্পূর্ণ আলাদা ও বিচ্ছিন্ন ধর্মমতে বিশ্বাসী হয়েও ইসলামের পরিচয় ও পরিভাষা ব্যবহার করে চলেছে। আর মুসলিমসমাজে ঘাপটি মেরে থাকা মুনাফিক শ্রেণী বিভিন্ন ভাবে এদেরকে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসছে এবং এদের পক্ষে জনমত সৃষ্টির অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসলামের সর্বজনীনতা ও সর্বকালীনতাকে অস্বীকারকারী এই বিচ্ছিন্নতাবাদী সম্প্রদায় সম্পর্কে এরপরও কি কোনো মুসলিম দ্বিধাগ্রস্ত থাকতে পারে? আর যেসব মুলহিদ-মুনাফিক এই বিচ্ছিন্নতাবাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে থাকে, তাদের গোত্র-পরিচয় সম্পর্কেও কি কোনো মুমিনের সংশয় থাকতে পারে? বক্তাগন দায়িত্বশীল সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন 


এখন সময়ের দাবি, মসজিদে মসজিদে কাদিয়ানী মতবাদের উপর ব্যাপক আলোচনা শুরু হওয়া। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে খতমে নবুওতের অকাট্য আকীদা এবং নবী-যুগ থেকে এ পর্যন্ত নবুওতের মিথ্যা দাবিদারদের ইতিহাস ও পরিণাম সম্পর্কে প্রমাণিক আলোচনা আরম্ভ করা। আমাদের মাসিক ও পাক্ষিক সাময়িকীগুলোতে এবং দৈনিক পত্রিকাগুলোর ইসলামী পাতাগুলোতেও এ বিষয়ে নিয়মিত আয়োজন থাকা উচিত। মনে রাখতে হবে, মিথ্যাচারের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে  প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে জঘন্যতম কাদিয়ানী ফেতনার অপতৎপরতা যে চলতে থাকবে তা বলাই বাহুল্য। গোটা দেশের আলিম-উলামা, ইমাম-খতীব এবং ইসলাম প্রিয় লেখক-সাংবাদিকের এ বিষয়ে একযোগে আলোচনা ও প্রতিরোধ শুরু করা এখন সময়ের দাবি। 

সভায় সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা গোলাম কিবরিয়া উপস্থিত সকলের প্রতি শুকরিয়া আদায় করেন এবং আগামী কর্মসূচি গুলোতে সকলের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি কামনা করেন। সভা শেষে মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন প্রধান অতিথি হযরত মাওলানা সৈয়দ আশহাদ রশিদী।


কমিউনিটি এর আরও খবর