img

৩৫ হাজার মুসল্লির জন্য প্রস্তুত জাতীয় ঈদগাহ

প্রকাশিত :  ১০:৫০, ১৬ জুন ২০২৪

৩৫ হাজার মুসল্লির জন্য প্রস্তুত জাতীয় ঈদগাহ

দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে আগামীকাল সোমবার। রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে কাল সকাল সাড়ে ৭টায়। সেখানে প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করবেন। সে লক্ষে এরই মধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।

ডিএসসিসির আওতাধীন হওয়ায় প্রতি বছর জাতীয় ঈদগাহের ব্যবস্থাপনার কাজ করে সংস্থাটি। এ বছরও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-১ প্রকৌশল বিভাগের আওতায় জাতীয় ঈদগাহের কাজ চলছে। জানা গেছে, জাতীয় ঈদগাহে প্রায় ২৫০ জন অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও ৮০ জন গুরুত্বপূর্ণ নারী জামাতে অংশ নেবেন। এছাড়া সাধারণ পুরুষ প্রায় ৩১ হাজার এবং নারী ৩ হাজার ৫০০ জন মিলিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ নামাজে অংশ নেবেন।

ডিএসসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঈদগাহ মাঠে ১০টি এয়ার কুলারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত ফ্যান ও লাইটের ব্যবস্থা আছে। পাশাপাশি খাবার পানির ব্যবস্থা, ভিআইপি কাতারে জায়নামাজের ব্যবস্থা, ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা এবং বৃষ্টির পানি নিরোধক সামিয়ানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় ঈদগাহে ভিআইপি, নারী ও পুরুষের প্রবেশের জন্য আলাদা ৩টি গেট করা হয়েছে।

আরও জানা গেছে, জাতীয় ঈদগাহে ভিআইপি (পুরুষ) কাতার হবে ৫টি, ভিআইপি (নারী) ১টি, জনসাধারণের মধ্যে পুরুষ কাতার ৬৫টি ও নারী কাতার ৫০টিসহ ১২১টি কাতার হবে। এছাড়া জাতীয় ঈদগাহে অজুখানায় একসঙ্গে ১১৩ জন পুরুষ ও ২৭ জন নারীসহ ১৪০ জন একসঙ্গে অজু করতে পারবেন।

এদিকে আজ সকালে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ঈদগাহ ও এর আশপাশের এলাকায় এসবির ইকুইপমেন্ট ও ডিএমপির ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করা হবে। পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ, ড্রোন পেট্টোলিং ও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। সেইসঙ্গে করা হবে মেটাল ডিটেকটর ও আর্চওয়ের মাধ্যমে তল্লাশি।

এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ইউনিফর্ম পুলিশ ছাড়াও ডিবি, এসবি ও অন্য সংস্থার কার্যক্রম অব্যহত থাকবে। কোনো দাহ্য বস্তু নিয়ে ঈদের জামাতে আসা যাবে না। জঙ্গি তৎপরতার আশঙ্কা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এরপরও ডিএমপি পুরো বিষয়টি বিবেচনায় রেখে নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করেছে।


img

হজ কোনো সাধারণ সফর নয়

প্রকাশিত :  ০৯:০৭, ১৫ মে ২০২৫

জু\'মার খুতবা: ইস্ট লন্ডন মস্ক এন্ড লন্ডন মুসলিম সেন্টার শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫

শায়খ আব্দুল কাইযুম

হজের বরকতময় দিনগুলো সমাগত । আমাদের অনেক ভাই-বোন এখন তাঁদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এটি কেবল বাহ্যিক প্রস্তুতির সময় নয়, বরং গভীর আত্মমর্যাদার ও আত্মপর্যালোচনার সময়ও বটে । সামনের সপ্তাহগুলো শুধু ভ্রমণের পরিকল্পনা বা ব্যাগ গোছানোর ব্যাপার নয়—এটা সেই মুহূর্ত যখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের তাড়াহুড়ো থেকে দূরে সরে এসে নিজের অন্তরের দিকে ফিরে তাকাতে হবে এবং ভাবতে হবে: আমি কি সত্যিই আল্লাহর এক অনুগত বান্দা?

কথাগুলো বলেছেন ইস্ট লন্ডন মসজিদের প্রধান ইমাম ও খতীব শায়খ আব্দুল কাইয়ুম । তিনি ৯ মে শুক্রবার ইস্ট লন্ডন মসজিদে জুমার খুতবা উপস্থাপন করছিলেন।

তিনি বলেন, হজ কোনো সাধারণ সফর নয়। এটি এক ইবাদত যা আমাদের অহংকার, মর্যাদা ও পার্থিব পার্থক্য ঝেড়ে ফেলে সবাইকে আল্লাহর সামনে সমান করে দাঁড় করায় । তাই আমাদের প্রস্তুতি শুধু কাপড়চোপড় বা যাত্রার জিনিস নিয়ে নয়- আমাদের হৃদয়ও প্রস্তুত হওয়া দরকার।

হজ কেবল কিছু নিয়মিত আচার-অনুষ্ঠান নয় । এটি অধিকাংশের জন্য নবী ইবরাহিম (আঃ), তাঁর স্ত্রী হাজেরা ও তাঁদের পুত্র ইসমাইল (আঃ)-এর সাথে গভীর ও ব্যক্তিগতভাবে সংযুক্ত হওয়ার একটি মহান সুযোগ ।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন:  “নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘরটি নির্ধারিত হয়েছে, তা তো বাক্কায় (মক্কায়)—বরকতময় এবং জগতসমূহের জন্য পথনির্দেশ।”-সূরা আলে ইমরান, ৩:৯৬।

হজ আমাদের নিয়ে যায় সেই পবিত্র ঘরে, যে ঘর আল্লাহর নিদর্শন ও মানবতার জন্য শিক্ষা-ভাণ্ডারে পরিপূর্ণ । সফরের প্রতিটি ধাপ ইতিহাসের ভার বহন করে এবং আমাদেরকে শিখায় কীভাবে পূর্ববর্তীরা আল্লাহর আদেশে নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন। সফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে দৌঁড়ানো হোক, মিনায় অবস্থান, জমজম কূপের পানি পান করা হোক—প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, ত্যাগ এবং ধৈর্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই সফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। সূরা আল-বাকারা, ২:১৫৮। তিনি আরও বলেন: “যে কেউ আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান প্রদর্শন করে, তা তার হৃদয়ের তাকওয়া থেকেই উদ্ভূত হয়।” সূরা আল-বাকারা।

এই নিদর্শনগুলো কেবল নিয়ম রক্ষার জন্য নয়। সফা-মারওয়া পাহাড়ের মাঝে দৌড়ানো হোক কিংবা জামারায় পাথর নিক্ষেপ—প্রতিটি কাজই আল্লাহর স্মরণ (যিকর) এবং আনুগত্য প্রকাশের একটি রূপ।

যখন আমরা তালবিয়াহ পাঠ করি—\"লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক...\"—তখন আমরা আল্লাহর প্রতি আমাদের দাসত্ব ও একনিষ্ঠতার পুনর্ব্যক্তি করি:

\"লাব্বাইক, হে আল্লাহ, আমি উপস্থিত।

আপনার কোনো অংশীদার নেই, আমি উপস্থিত।

নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, অনুগ্রহ ও সার্বভৌমত্ব আপনারই।

আপনার কোনো অংশীদার নেই।\"

এটাই হজের মূল কথা। আমি আপনার আহ্বানে সাড়া দিচ্ছি, হে আল্লাহ। যদিও আমি প্রতিটি কাজের পেছনের হিকমাহ বুঝি না, তবুও আমি সমর্পণ করছি। সফর যদি কঠিন হয়, ভীড় বা কষ্টদায়ক হয়, তবুও আমি আপনার জন্যই তা গ্রহণ করছি। এটি এক আনুগত্যের ঘোষণা, সুবিধার নয়।

তিনি বলেন, আমরা যখন মিনায় একটি সাধারণ তাঁবুতে থাকি, কোনো বিলাসিতা ছাড়াই-সেটাও ইবাদত। কেউ কেউ ভাবতে পারেন, হারামে অবস্থান করে বেশি নফল নামাজ পড়লে বেশি সওয়াব হবে। কিন্তু হজ নিজের ইচ্ছেমতো নয়—এটি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাঃ) আদেশ মেনে চলার নাম।

মিনায় অবস্থান, যতই অস্বস্তিকর হোক, সেটিও আল্লাহর হুকুম মানার একটি নিদর্শন । কেউ মক্কায় ফিরে বেশি তাওয়াফ করতে চাইতে পারেন, ভাবতে পারেন এতে বেশি সওয়াব হবে। কিন্তু হজ কেবল আমাদের উপলব্ধি নয়—এটি নিখাদ আনুগত্য। প্রকৃত সমর্পণ মানে নিজের মনের খুশি নয়—আল্লাহ যা বলেছেন, সেটাই করা।

ইহরামে থাকা কোটিপতি ও গরিব মজুর—দু\'জনই এক রকম । পাঁচ-তারকা হজযাত্রী এবং সাধারণ প্যাকেজ হজযাত্রী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায় । এভাবেই আমরা উপলব্ধি করি—আল্লাহর কাছে মূল্যবান হচ্ছে অন্তরের একনিষ্ঠতা, বাহ্যিক অবস্থা নয়।

আসুন আমরা মনে রাখি—হজ একটি নিয়ামত এবং পরিবর্তনের সুযোগ। আসুন আমরা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অন্তরকে কোমল করি, ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং আল্লাহর প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি নবায়ন করি । যারা যাচ্ছেন, তারা যেন পরিবর্তিত হয়ে ফিরে আসেন। আর যারা পেছনে রয়েছেন, আল্লাহ যেন তাদের ভবিষ্যতে হজ করার তাওফিক দেন। আমিন।