img

লন্ডনে তীব্র আবাসন সংকট মোকাবিলায় ১০ বছরের হাউজিং স্ট্র্যাটেজি প্রকাশ করেছে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল

প্রকাশিত :  ১৮:২৯, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫

লন্ডনে তীব্র আবাসন সংকট মোকাবিলায় ১০ বছরের হাউজিং স্ট্র্যাটেজি প্রকাশ করেছে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল

টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল ২০২৫ থেকে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত ১০ বছর মেয়াদের জন্য একটি  খসড়া হাউজিং স্ট্র্যাটেজি বা আবাসন কৌশলপত্র প্রকাশ করেছে। এই পরিকল্পনায় আগামী ১০ বছর কিভাবে বরোর গুরুতর আবাসন সংকট মোকাবিলা করা হবে, তার বিস্তারিত রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে।
কাউন্সিল এলাকায় হাউজিংয়ের ক্রমবর্ধমান চাহিদা, ওভারক্রাউডিং, গৃহহীনতা এবং সাশ্রয়ী আবাসনের চাপের প্রেক্ষিতে- মোর হোমস, বেটার হোমস, সেইফার হোমস (আরও বাড়ি, উন্নত বাড়ি, নিরাপদ বাড়ি) - এই দারুন এক রূপান্তরমূলক কৌশল গ্রহন করেছে কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ।
টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান গত ১ ডিসেম্বর সোমবার পপলারের ব্ল্যাকওয়াল রিচে একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই পরামর্শ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক প্রচারনা শুরু করেন। ব্লাকওয়াল রিচ বরোর একটি প্রধান পুনর্গঠন প্রকল্প।
২০১৩ সাল থেকে লন্ডনের অন্য যেকোনো বরোর তুলনায় টাওয়ার হ্যামলেটস সবচেয়ে বেশি নতুন বাড়ি নির্মাণ করেছে। তবুও বর্তমানে হাউজিং রেজিস্টারে ৩০ হাজারের বেশি পরিবার, ৩ হাজার ২ শতর বেশি বাসিন্দা অস্থায়ী আবাসনে রয়েছেন। কম আয়ের মানুষের জন্য ভাড়ার মাত্র ৫% বাসা সাশ্রয়ী। এ পরিস্থিতিতে কাউন্সিল আবাসন নিশ্চিত করতে আরও দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে।
মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, “আবাসন শুধু ইট-সিমেন্ট নয়, এটি স্বাস্থ্য, সুযোগ এবং কমিউনিটির ভিত্তি। আমরা প্রতিটি বাসিন্দাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, সবাই যাতে নিরাপদ ও মানসম্পন্ন ঘর পান। সে জন্য আমরা জরুরি  এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী পদক্ষেপ নেব।”
রিজেনারেশন, ইনক্লসিভ ডেভেলপমেন্ট ও হাউজবিল্ডিং বিষয়ক কেবিনটে মেম্বার কাউন্সিলার কবির আহমেদ বলেন, “আমি টাওয়ার হ্যামলেটসের একটি কাউন্সিল ফ্ল্যাটে বড় হয়েছি, তাই জানি একটি ভালো বাড়ি জীবনে কত বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এই কৌশল বাস্তব অভিজ্ঞতা, প্রমাণ এবং আমাদের বাসিন্দাদের দাবীর ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এটি শুধু ভবন নয়, এটি একজন মানুষের ভবিষ্যৎ।”
স্যাঙ্কচুয়ারীর ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর ডেভিড সুথিল বলেন, “আমরা টাওয়ার হ্যামলেটসের খসড়া হাউজিং স্ট্র্যাটেজিকে স্বাগত জানাই এবং আবাসন সংকট মোকাবিলায় তাদের অঙ্গীকারের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করি। ব্ল্যাকওয়াল রিচ দেখিয়েছে, পার্টনারশিপ কী অর্জন করতে পারে। ইতোমধ্যে ১ হাজার ৫\'শর বেশি নতুন বাড়িঘর নির্মান সম্পন্ন হয়েছে। যার মধ্যে ৫\'শর স্থানীয় মানুষ এবং ৪৪টি পরিবারিক বাড়ি। আমরা এখন ফেইজ ৩ এবং আইসল্যান্ড ওয়ার্ফ প্রকল্পে কাজ করছি, যা আরও ১\'শ ৬৫ নতুন বাড়িঘর সরবরাহ করবে। আরো প্রকল্প পরিকল্পনায় রয়েছে, এবং আমরা কমিউনিটির জন্য আরও বাড়িঘর নির্মান ও সুযোগ সৃষ্টিতে কাউন্সিলের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে চাই।”


টাওয়ার হ্যামলেটস হাউজিং: কী করা হচ্ছে -   
টাওয়ার হ্যামলেটস বর্তমানে আবাসন সংকটের তীব্রতম পর্যায়ে রয়েছে। ২০৩২ সালের মধ্যে বরোর জনসংখ্যা ২০.৪% বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লন্ডনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক স্বল্পমেয়াদি ভাড়াটিয়া থাকায় ঘরবাড়ির ভাড়ার চাপ বাড়াচ্ছে। আবাসন ব্যয়ের কারনে বরোর ৪৭% শিশু দারিদ্র্যেসীমায়  বসবাস করছে।  
হাউজিং সংকট মোকাবিলায় কাউন্সিল উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে। তা হলো, মেয়রের অ্যাকসেলারেটেড হাউজিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে ৩ হাজার ৩৩২টি  নতুন বাড়িঘর নির্মান, যেখানে বড় পরিবার এবং হুইলচেয়ার-অ্যাক্সেসযোগ্য বাড়ি অগ্রাধিকারে থাকবে। ১৪০ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগে কাউন্সিলের বাড়িগুলোর উন্নয়ন, স্যাঁতসেঁতে ও ছত্রাক প্রতিরোধ, অগ্নি নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা।
“ইওর ভয়েস, আওয়ার একশন” হাউজিং পরিষেবা চালুর মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০% ডেসেন্ট হোমস স্ট্যান্ডার্ড অর্জনের লক্ষ্য। বিপজ্জনক ক্ল্যাডিং অপসারণে যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো কাউন্সিল কর্তৃক রিমিডিয়েশন অর্ডার জারি। ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের সহায়তায় হাউজিং ফাস্ট ইয়ং পারসন পাথওয়ে প্রকল্প সম্প্রসারণ। প্রাইভেট রেন্ট সেক্টরে শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ নিতে ১২ হাজার ৬০০ বাড়ি লাইসেন্সিং- এর আওতায় আনা এবং রেন্টারস রাইট এ্যাক্ট অনুযায়ী ক্ষমতা প্রয়োগ বৃদ্ধি। ঘর বাড়ি নিরাপদ রাখা, ল্যান্ডলর্ডদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা ও কমিউনিটিকে সুরক্ষিত রাখতে আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত সিলেক্টিভ লাইসেন্স পুনর্নবায়ন এবং  অন্তর্ভুক্তিমূলক আবাসন, সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল এক্সট্রা কেয়ার হোম, তরুণদের জন্য কো-লিভিং স্পেস, এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তায় প্রজেক্ট ১২০ সম্প্রসারণ।
খসড়া হাউজিং স্ট্র্যাটেজির সাতটি মূল অগ্রাধিকার হলো:  
১. ওভারক্রাউডিং: নতুন বাড়িঘর নির্মাণ, বিদ্যমান বাড়ির উন্নত ব্যবহার এবং স্থানীয় পরিষেবার সঙ্গে সমন্বয় সাধন।
২. আরও নতুন বাড়ি নির্মাণ: লন্ডনের যে কোন জায়গার তুলনায় সর্বোচ্চ  দ্রুত, উচ্চাভিলাষী ও সাশ্রয়ী বাড়িঘর নির্মান ।
৩. কাউন্সিলের বাড়ির যত্ন: সংস্কার, পরিষেবা উন্নয়ন এবং বাসিন্দাকেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনা।
৪. প্রাইভেট রেন্টের মানোন্নয়ন: নিরাপদ, ন্যায্য ও স্থিতিশীল ভাড়া নির্ধারন।
৫. বেটার টুগেদার: বরোজুড়ে সামাজিক ও সাশ্রয়ী আবাসন উন্নয়নে শক্তিশালী পার্টনারশিপ।
৬. গৃহহীনতা প্রতিরোধ: আগাম পদক্ষেপ নিয়ে গৃহহীনতা এবং অস্থায়ী আবাসনের ওপর নির্ভরতা কমানো।
৭. সবার জন্য আবাসন: পরিবার, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীসহ কমিউনিটির বৈচিত্র্যময় চাহিদা অনুযায়ী বাড়ি নির্মান। 
 

কমিউনিটি এর আরও খবর

নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সতর্কতা

img

দেশের উদ্দেশে আজ লন্ডন ছাড়বেন তারেক রহমান

প্রকাশিত :  ০৫:৪৫, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেড় দশকের বেশি সময় পর দেশে ফিরছেন। নেতার দেশে ফেরা ফেরা নিয়ে উচ্ছ্বসিত দলের নেতাকর্মীরা।

আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য সময়  সন্ধ্যায় লন্ডন থেকে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে তার। সব ঠিক থাকলে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা নাগাদ দেশের মাটিতে পা রাখবেন তারেক রহমান। 

এ সময় তার সঙ্গে থাকবেন স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমান।

এদিকে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে রাজধানীতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। 

দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাকে বরণ করে নিতে ঢাকায় স্মরণকালের অন্যতম বড় গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রাজধানীর কুড়িল সংলগ্ন পূর্বাচল হাইওয়ে এক্সপ্রেস এলাকায় যাবেন তিনি। সেখানেই অনুষ্ঠিত হবে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।

বিএনপি নেতাদের আশা, এই আয়োজনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক উপস্থিত হবেন। 

ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় আসছেন দলটির তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। বলা যায়, তারেক রহমানের ঘরে ফেরা নিয়ে চারদিকে সাজ সাজ রব।

দলীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের। তার আগমনকে কেন্দ্র করে পূর্বাচল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। 

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দলীয় স্বেচ্ছাসেবকরাও সুশৃঙ্খলভাবে আয়োজন সম্পন্ন করতে কাজ করছেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিক অনুমতিও পেয়েছে বিএনপি। মঞ্চ নির্মাণসহ সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এরই মধ্যে দফায় দফায় দলের শীর্ষ নেতারা অনুষ্ঠানস্থল পরিদর্শন করে প্রস্তুতির অগ্রগতি দেখছেন।

ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় ২০০৮ সালে কারামুক্ত হয়ে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান তারেক রহমান।

এরপর দীর্ঘ সময় তিনি সেখানেই অবস্থান করছিলেন। তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান একাধিকবার দেশে এলেও এতদিন তার দেশে ফেরা সম্ভব হয়নি। 

দীর্ঘ অপেক্ষার পর এবার সেই প্রত্যাবর্তন বাস্তব হতে যাচ্ছে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

কমিউনিটি এর আরও খবর