img

ঘরোয়া উপায়ে দূর করুন গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা

প্রকাশিত :  ১৬:২৯, ১৮ ডিসেম্বর ২০২১

 ঘরোয়া উপায়ে দূর করুন গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় পড়তে হয় না এমন মানুষ পাওয়া খুব কঠিন। কম কিংবা বেশি সবাইকেই এই সমস্যায় পড়তে হয়। খাবারে সামান্য একটু অনিয়ম হলেই শুরু হয়ে যায় গ্যাস্ট্রিকের মারাত্মক ব্যথা। অনেক সময় অতিরিক্ত অনিয়মে এই সাধারণ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাই সৃষ্টি করে আলসার। তাই শুরুতেই সতর্ক হওয়া জরুরি। জেনে রাখা উচিৎ গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির কিছু ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি।

১. দারুচিনি
দারুচিনি হজমশক্তির জন্য অনেক ভাল একটি মশলা। এটি প্রাকৃতিক এনটাসিড হিসাবে কাজ করে থাকে এবং পেটের গ্যাস দূর করতে সাহায্য করে। এক কাপ পানিতে আধা চাচামচ দারুদিনি গুঁড়া মেশান। কয়েক মিনিট সেটি সিদ্ধ করুন। এটি দিনে ২/৩ বার পান করতে পারেন। আপনি চাইলে স্যুপ বা সালাদের সাথেও দারুচিনির গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারেন।

২. বেকিং সোডা
বেকিং সোডা পেটের অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে তাৎক্ষণিক রেহাই পেতে সাহায্য করে। ১ গ্লাস পানিতে ১/৪ চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে পান করুন। ভালো ফলাফল পাবেন।

৩. রসুন
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য রসুন খুবই কার্যকরী উপাদান। রসুন, কালো মরিচ বীজ, ধনে বীজ এবং জিরা বীজ একসাথে মিশ্রিত করে কয়েক মিনিট উত্তাপে ফুটিয়ে সিদ্ধ করতে হবে , সিদ্ধ করার পর এই মিশ্রন থেকে যে নির্যাস বের হবে সেটা ছেঁকে আলাদা করতে হবে। তারপর সাধারণ তাপমাত্রায় এই নির্যাস ঠান্ডা করে দৈনিক দুই বার পান করতে হবে।

৪. প্রচুর পরিমাণে পানি পান
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। এটি শুধু আপনার গ্যাস্টিকের সমস্যা কমাবে না আরো অনেক রোগের হাত থেকে মুক্তি দেবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন।

৫. পুদিনা পাতা
পুদিনা পাতা আপনার অম্লতা, গ্যাস ও বমি বমি ভাব থেকে সাথে সাথে মুক্তি দেবে। গ্যাস্টিকের ব্যথা যখন অল্প তখন থেকে অল্প কিছু পুদিনা পাতা মুখে নিয়ে ভাল করে চিবুতে থাকুন। দেখবেন কিছুক্ষণের মধ্যে আপনার ব্যাথা অনেকটা কমে গেছে। এছাড়া এক কাপ পানিতে কয়েকটি পুদিনা পাতা দিয়ে সিদ্ধ করুন। এটি দিনে ২/৩ বার পান করতে পারেন। স্বাদ বাড়াতে এতে মধু যোগ করতে পারেন তবে দুধ দিবেন না।

৬. আলু
আলু গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে থাকে। খাবার আগে তিন বেলা আলু থেকে রস বের করে খেতে হবে এবং এতে খুব দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়।

৭. আদা
পেটে গ্যাসের সমস্যা দূর করার জন্য একটি অনন্য এবং সহজ উপাদান হিসেবে ‘আদা’ অত্যন্ত কার্যকরী। এটি বদ হজমও দূর করে থাকে। প্রতিদিন খাবার পর এক টুকরা আদা চিবিয়ে খেলে পেটে আর গ্যাসের সম্যসা করবে না। এছাড়া আদা চা,আদা পানি পান ও গ্যাসের সমস্যা দূর করে থাকে।

৮. পেয়ারা পাতা
২ কাপ পানিতে পেয়ারা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে নিন। পানি ১ কাপ পরিমাণে হলে ছেঁকে পান করুন। এতেও বেশ ভালো উপকার হবে।

৯. লবঙ্গ
লবঙ্গ অম্লতা উপশম এবং গ্যাস দূর করতে সাহায্য করে। কয়েকটি লবঙ্গ এবং দারুচিনি গুঁড়া করে মিশিয়ে নিন। এটি আপনি আপনার প্রতিদিনের খাবারের সাথে খেতে পারেন। লবঙ্গ গ্যাসের সমস্যা দূর করার সাথে সাথে আপনার নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধও দুর করে থাকে।

১০. হলুদের পাতা
হলুদের পাতা কুচি করে কেটে প্রতিদিন দুধের সাথে মিশিয়ে পান করে নিন। এতে করে পেটে ব্যথা এবং গ্যাসের সমস্যার সমাধান হবে।

১১. ভেষজ চা
পুদিনা পাতা,ক্যামোমিল,রাসবেরি এবং ব্ল্যাকবেরি একসাথে মিশিয়ে তৈরী ভেষজ চা হজম প্রক্রিয়া অনেক সাহায্য করে। আর হজম প্রক্রিয়া ঠিক থাকলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।

১২. আপেল সাইডার ভিনেগার
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে তাৎক্ষণিক রেহাই পেতে এর জুড়ি নেই। ১ গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ২ টেবিল চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করে ফেলুন।

img

হরমোন ভারসাম্যহীন হলে নারীর যেসব সমস্যা হয়

প্রকাশিত :  ১৮:২০, ০১ নভেম্বর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৮:৩৪, ০১ নভেম্বর ২০২৫

শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে হরমোনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, হরমোন হলো শরীরের অভ্যন্তরীণ বার্তাবাহক, যা কোষ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে শরীরকে সঠিকভাবে পরিচালনা করে। কিন্তু যখন এই হরমোনগুলোর মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় বা কমে যায়, তখন নারীর শরীরে দেখা দেয় নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা।

মানবদেহ সচল রাখতে প্রয়োজন ছয়টি মৌলিক পুষ্টি উপাদান—কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল এবং পানি। এই উপাদানগুলো শুধু শক্তি জোগায় না, বরং হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পুষ্টির ঘাটতি হলে হরমোনের কার্যকারিতা ব্যাহত হয়, যার ফলে ক্লান্তি, মানসিক অস্থিরতা, মাসিক অনিয়ম, ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাসসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের তথ্যানুসারে, নারীর শরীরে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ হরমোন রয়েছে, যা সরাসরি দেহের শক্তি, প্রজনন, মানসিক অবস্থা ও বিপাকক্রিয়া (অর্থাৎ শরীরের শক্তি ব্যবহারের প্রক্রিয়া)-এর সঙ্গে সম্পর্কিত। বয়স, মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে এই হরমোনগুলোর ভারসাম্যে অসামঞ্জস্য দেখা দেয়।

দেহে যেসব হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, সেগুলো হলো—

টেস্টোস্টেরন (Testosterone):

সাধারণভাবে এটি পুরুষ হরমোন হিসেবে পরিচিত হলেও নারীর শরীরেও উপস্থিত থাকে। এটি শক্তি, পেশী বৃদ্ধি, হাড়ের দৃঢ়তা এবং যৌন আগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নারীদের মধ্যে টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি দেখা দিলে ক্লান্তি, মনমরা ভাব এবং যৌন আকাঙ্ক্ষা হ্রাস পেতে পারে।

ডিএইচইএ (DHEA – ডিহাইড্রোইপিয়ান্ড্রোস্টেরন):

এটি এক ধরনের প্রাক-হরমোন, যা থেকে টেস্টোস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন তৈরি হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে DHEA-এর মাত্রা কমে যায়, ফলে নারীরা শক্তি হারান, ত্বক ঝুলে পড়ে এবং মনমরা ভাব দেখা দেয়।

গ্রোথ হরমোন (Growth Hormone):

এই হরমোন শরীরের কোষ, পেশী ও হাড়ের বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। গ্রোথ হরমোনের ঘাটতি হলে নারীদের ওজন বেড়ে যায়, ত্বক ঢিলে হয়ে যায় এবং ক্লান্তি দেখা দেয়।

প্রোজেস্টেরন (Progesterone):

নারীর প্রজনন ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হরমোন এটি। এটি জরায়ু প্রস্তুত করে গর্ভধারণের জন্য এবং মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণে রাখে। প্রোজেস্টেরনের ঘাটতি হলে মাসিক অনিয়ম, বন্ধ্যাত্ব এবং উদ্বেগ বেড়ে যায়।

ইস্ট্রোজেন (Estrogen):

নারীর প্রধান হরমোন হিসেবে ইস্ট্রোজেন মাসিক চক্র, ত্বকের উজ্জ্বলতা ও হাড়ের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ করে। বয়স, মানসিক চাপ বা খাদ্যাভ্যাসের কারণে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে গেলে গরম লাগা (হট ফ্ল্যাশ), মেজাজ খারাপ, ত্বক শুষ্কতা এবং ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়।

ইনসুলিন (Insulin):

অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত এই হরমোন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসুলিনের ভারসাম্য নষ্ট হলে শরীরে চর্বি জমে, ওজন বেড়ে যায় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।

লেপটিন (Leptin):

এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন, যা শরীরকে সংকেত দেয় কখন খাওয়া বন্ধ করতে হবে। তবে লেপটিন প্রতিরোধ (Leptin Resistance) দেখা দিলে শরীর এই সংকেত বুঝতে পারে না, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা ও স্থূলতা বাড়ে।

গ্রেলিন (Ghrelin):

গ্রেলিন হলো ক্ষুধা বাড়ানোর হরমোন, যা শরীরকে খাবার গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করে। ঘুমের অভাব, মানসিক চাপ বা অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে গ্রেলিন বেড়ে যায়, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা ও ওজন বৃদ্ধি ঘটে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক প্রশান্তি এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। অপ্রয়োজনে ওষুধ সেবন, প্রসেসড খাবার ও অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ থেকে বিরত থাকাও হরমোনের সুস্থতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনোকোলজিস্ট সহকারী অধ্যাপক ডা. রুহী জাকারিয়া বলেন, “নারীর জীবনের প্রতিটি ধাপেই হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। কৈশোর থেকে শুরু করে গর্ভধারণ, সন্তান জন্মদান ও মেনোপজ প্রতিটি পর্যায়ে হরমোনের ওঠানামা স্বাভাবিক বিষয়। তবে এই পরিবর্তনগুলো যদি নিয়ন্ত্রণে না রাখা যায়, তাহলে মাসিক অনিয়ম, বন্ধ্যাত্ব, ত্বকের সমস্যা, ক্লান্তি এবং মানসিক অস্থিরতা সহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় প্রথমেই প্রয়োজন সুস্থ জীবনধারা। নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন। এই সবকিছুর সমন্বয়ই নারীর হরমোনের ভারসাম্য রক্ষার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।”