প্রযুক্তির দ্বন্দ্ব!

রেজুয়ান আহম্মেদ

ঢাকা শহরের গুলশান এলাকার দুই বন্ধু, তন্ময় এবং রাকিব, তাদের জীবনযাত্রায় প্রযুক্তির অগ্রগতি নিয়ে নিয়মিত আলোচনা করত। তারা দুজনই ছিলেন প্রযুক্তিপ্রেমী, এবং স্মার্টফোন ছিল তাদের অন্যতম প্রধান আগ্রহের বিষয়। একদিন, তন্ময় তার নতুন iPhone 16 Pro Max নিয়ে এল, আর রাকিব এসেছিল Samsung Galaxy S25 Ultra হাতে নিয়ে। দুই বন্ধুর মধ্যে শুরু হলো ফোন নিয়ে এক উত্তেজনাপূর্ণ আলোচনা, যেন এটি শুধু একটি ফোনের ব্যাপার নয়, বরং জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।

তন্ময় বলল, "আমার iPhone 16 Pro Max দেখো। ডিজাইনটা দেখো, টাইটানিয়াম ফ্রেম আর সিরামিক শিল্ড গ্লাস দিয়ে বানানো, কীভাবে যেন এটা সবসময় প্রিমিয়াম ফিল দেয়! আর ম্যাগসেফ এবং ডাইনামিক আইল্যান্ডের মতো ফিচার তো একে সত্যিই আলাদা করে তুলেছে।"

রাকিব হাসতে হাসতে বলল, "তুমি তো Apple-এর ভক্ত। দেখো, S25 Ultra এর স্লিম ডিজাইন, টাইটানিয়াম ফ্রেম, আর Gorilla Armor 2 গ্লাসও তো অসাধারণ। আর S Pen সাপোর্ট তো একে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে।"

"তবে ডিসপ্লে নিয়ে বলো, iPhone 16 Pro Max এর ৬.৯-ইঞ্চি Super Retina XDR OLED ডিসপ্লে, কী অপূর্ব! ২০০০ নিটস ব্রাইটনেসের সাথে, আর HDR10 সাপোর্ট, সিনেমার মতো অভিজ্ঞতা দেয়," তন্ময় তার ফোনের স্ক্রিন দেখিয়ে বলল।

রাকিব কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল, "তুমি তো শুধু দেখাও! Galaxy S25 Ultra এর ডিসপ্লে দেখতে আসলেই মজা। Dynamic LTPO AMOLED ডিসপ্লে, ২৬০০ নিটস ব্রাইটনেস, আর HDR10+—আউটডোরে এটা আরও বেশি কার্যকর।"

তন্ময় হালকা হাসি দিয়ে বলল, "আমার ফোনের পারফরম্যান্সও খুব ভালো। Apple A18 Pro চিপসেট আর iOS ১৮ এর অপ্টিমাইজেশন তো দুর্দান্ত।"

"হ্যাঁ, কিন্তু S25 Ultra এর Snapdragon 8 Elite চিপসেট এবং ১২GB RAM এর সাথে মাল্টি-টাস্কিং বা গেমিং, সবই অসাধারণ। আমি বেশি গেম খেলি, তাই এটা আমার জন্যই ভালো," রাকিব সোজাসুজি বলল।

তন্ময় কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, "তবে ক্যামেরার ব্যাপারে আমি কী বলব? আমার ফোনে ৪৮MP মেইন ক্যামেরা, ১২MP টেলিফোটো আর আল্ট্রাওয়াইড ক্যামেরা তো আছেই, ভিডিও রেকর্ডিংয়ে কত ভালো!"

"হ্যাঁ, কিন্তু আমার Galaxy S25 Ultra তে ২০০MP মেইন ক্যামেরা, ৫০MP আল্ট্রাওয়াইড আর ৫০MP পেরিস্কোপ টেলিফোটো ক্যামেরা তো ফটোগ্রাফির রাজা! আমি যেকোনো দূরের বস্তুতে জুম করে অসাধারণ ছবি তুলতে পারি," রাকিব দৃঢ় কণ্ঠে উত্তর দিল।

এক মুহূর্তের জন্য দুজনেই চুপ থাকল। তারপর তন্ময় বলল, "ব্যাটারি আর চার্জিংয়ের ব্যাপারে কী? আমার iPhone 16 Pro Max তে ৪৬৮৫mAh ব্যাটারি আর ২৭W ওয়্যার্ড চার্জিং, কিছুটা হলেও আরামদায়ক।"

"ওয়ার্ল্ড ক্লাস চার্জিং সাপোর্ট তো আমার S25 Ultra তে! ৫০০০mAh ব্যাটারি আর ৪৫W ওয়্যার্ড চার্জিং, ব্যাটারি দ্রুত চার্জ হয়, এবং অনেকক্ষণ চলে," রাকিব হাসতে হাসতে বলল।

তন্ময় বলল, "কিন্তু তোকে মনে রাখতে হবে, iPhone এর সফটওয়্যার ইন্টিগ্রেশন এবং AI খুব ভালো। Apple এর ইকোসিস্টেমের সাথে সংযোগে থাকার সুবিধা তো আছেই।"

রাকিব কিছুটা আক্রমণাত্মক কণ্ঠে বলল, "তবে আমি Android পছন্দ করি। Galaxy S25 Ultra এর AI ফিচার, রিয়েল-টাইম ট্রান্সলেশন, ছবি এডিটিং—এসব কিছু আমার জন্য বেশি প্র্যাকটিক্যাল।"

তাদের মধ্যে কথা চলতে থাকে, কখনো তুলনামূলক আলোচনা, কখনো একে অপরের ফোনের প্রশংসা। দুজনেরই নিজের ফোনে সন্তুষ্টি ছিল, তবে তারা বুঝতে পারে যে, কোন ফোনটি সেরা, সেটা তাদের প্রয়োজন এবং পছন্দের উপর নির্ভর করে। iPhone এর নির্ভরযোগ্যতা এবং ভিডিও রেকর্ডিংয়ের দক্ষতা, এবং Samsung Galaxy S25 Ultra এর উন্নত ফটোগ্রাফি ও দ্রুত চার্জিং—প্রত্যেকেরই নিজস্ব প্রাধান্য আছে।

শেষে তারা একমত হয়, "কখনো কখনো, প্রযুক্তি এমন এক বিষয় যা প্রতিযোগিতা নয়, বরং আমাদের জীবনকে আরও সহজ এবং সুন্দর করে তোলে।"

দেশে স্টারলিংকের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু

স্টারলিংক আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

আজ মঙ্গলবার (২০ মে) সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘স্টারলিংক অফিশিয়ালি বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে। সোমবার বিকেলে তারা ফোন কলে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে এবং আজ সকালে তাদের এক্স হ্যান্ডেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।’

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আরও বলেন, শুরুতে স্টারলিংক দুটি প্যাকেজ দিয়ে শুরু করছে– স্টারলিংক রেসিডেন্স এবং রেসিডেন্স লাইট। মাসিক খরচ একটি ৬০০০ টাকা, অপরটি ৪২০০। তবে সেটআপ যন্ত্রপাতির জন্য ৪২ হাজার টাকা এককালীন খরচ হবে। এখানে কোনো স্পিড ও ডাটা লিমিট নেই। ব্যক্তি ৩০০ এমবিপিএস পর্যন্ত গতির আনলিমিটেড ডেটা ব্যবহার করতে পারবেন।

বাংলাদেশের গ্রাহকরা আজ থেকেই অর্ডার করতে পারবেন জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে ৯০ দিনের মধ্যে যাত্রা শুরুতে প্রধান উপদেষ্টার প্রত্যাশাটি বাস্তবায়িত হলো। প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

ফয়েজ আহমদ বলেন, খরুচে হলেও এর মাধ্যমে প্রিমিয়াম গ্রাহকদের জন্য উচ্চমান এবং উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা প্রাপ্তির টেকসই বিকল্প তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি যেসব এলাকায় এখনো ফাইবার কিংবা দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছেনি, সেখানে কোম্পানিগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ পাবেন, এনজিও ফ্রিল্যান্সার এবং উদ্যোক্তারা বছরব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন উচ্চগতির ইন্টারনেটের নিশ্চয়তা পাবেন।

বিষয়টি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।