শীতে সুস্থ থাকতে করণীয়
শীতের বাতাস শরীরের সব আর্দ্রতা শুষে নেয়। এতে ত্বক ফেটে যায় এবং চুলকানি হতে পারে। তাই ত্বকের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। গোসলের পরপরই ভেজা শরীরে ময়েশ্চারাইজার বা লোশন লাগান। রাতে ঘুমানোর আগে হাতে-পায়ে পেট্রোলিয়াম জেলি বা গ্লিসারিন ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বক ফাটা রোধ হবে।
আগেভাগে ঘুমানোর প্রস্তুতি : শীতকালে সন্ধ্যার পর ভারী কাজ কমিয়ে আনুন। রাতের খাবার তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিন। লেপ বা কম্বলের নিচে শুয়ে বই পড়ুন। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে সতেজ রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানোর ও ওঠার অভ্যাস ধরে রাখা জরুরি।
শীতের দিনে সূর্যের আলো কম থাকে। মস্তিষ্কের ‘মেলাটোনিন’ হরমোন ঘুমের চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। আলো কমে গেলে শরীরে অলসতা ও বিষন্নতা বাড়তে পারে। একে ‘সিজনাল ডিপ্রেশন’ বলা হয়। তাই দিনের বেলা ঘরের জানালা-দরজা খুলে রাখুন। সুযোগ পেলে সকালে বা দুপুরে ছাদে অথবা বারান্দায় কিছুক্ষণ সময় কাটান। ঘরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখুন।
ভিটামিন-ডি ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ : রোদের অভাবে শরীরে ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে। হাড় ও পেশির সুস্থতার জন্য এটি খুব জরুরি। সকালের মিষ্টি রোদ গায়ে মাখলে শরীরে প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন-ডি তৈরি হয়। এ ছাড়া খাবারেও নজর দিতে হবে। ডিম, দুধ, সামুদ্রিক মাছ বা ছোট মাছ এবং কলিজা খাওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যায়।
আরামদায়ক ও গরম খাবার খাওয়া : শীতের সময় শরীর গরম রাখে এমন খাবার বেছে নিন। এ সময় খিচুড়ি, ঘন স্যুপ, ডাল এবং বিভিন্ন ধরনের ভর্তা খেতে খুব আরামদায়ক। শীতের পিঠা বা পায়েস খাওয়ার ঐতিহ্য আমাদের দেশে বেশ পুরনো, যা শরীর ও মন ভালো করে দেয়। আদা দেওয়া চা, গরম দুধ বা তুলসী পাতার রস শরীরকে ভেতর থেকে উষ্ণ রাখে।
শরীর হাইড্রেটেড রাখা : শীতকালে শরীরে পানির অভাব হলে ত্বক আরও রুক্ষ হয়ে যায় এবং হজমে সমস্যা হয়। সারা দিন অল্প করে কুসুম গরম পানি পান করার অভ্যাস করুন। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে শীতকালীন শাকসবজি ও ফলমূল খান। জলীয় অংশ আছে, এমন ফল খেলে পানির চাহিদা পূরণ হয়।
শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের সময় বাড়ানো : শীতের সকালে সকালে কুয়াশা থাকলে ঘরের ভেতরেই ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম করুন। স্ট্রেচিং বা আড়মোড়া ভাঙলে পেশির জড়তা কাটে। বিকেলে বা সন্ধ্যায় ব্যাডমিন্টন খেললে শরীরকে ঘর্মাক্ত ও সচল রাখতে দারুণ কাজ করবে।
নিজেকে সময় দেওয়া ও মননশীলতা : বছরের এই সময়টিতে বই পড়ার অভ্যাস করা যেতে পারে। মানসিক প্রশান্তির জন্য মেডিটেশন বা ধ্যানের চর্চা করুন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটান। এগুলো মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
স্তরে স্তরে পোশাক পরিধান : শীতে একটি ভারী মোটা কাপড় পরার চেয়ে কয়েকটি হালকা কাপড় স্তরে স্তরে পরা বেশি আরামদায়ক। একে ‘লেয়ারিং’ বলা হয়। এতে বাতাস শরীরে ঢুকতে পারে না এবং শরীর বেশিক্ষণ গরম থাকে। গরম লাগলে ওপরের একটি স্তর খুলে ফেলা সহজ হয়। কান ও গলা মাফলার দিয়ে ঢেকে রাখা এবং পায়ে মোজা পরা ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে খুব জরুরি।
প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাওয়া : শীত মানেই ঘরে গুটিসুটি মেরে বসে থাকা নয়। প্রকৃতির খোলা বাতাস ও পরিবেশ মনকে চাঙা করে তোলে। দিনে অন্তত ১৫-২০ মিনিট দ্রুত হাঁটলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং মন ফুরফুরে থাকে।


















