img

আড়াই বিঘা জুড়ে ২০০ বছরের পুরোনো আমগাছ

প্রকাশিত :  ১৭:৩৬, ২১ জুলাই ২০২৩

আড়াই বিঘা জুড়ে ২০০ বছরের পুরোনো আমগাছ

ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের প্রিয় একটি আমের জাত সূর্যপুরী। সুস্বাদু, সুগন্ধী, রসালো আর ছোট আঁটি সূর্যপুরী আম জাতটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আর যদি কোনো আমগাছের বয়স হয় ২০০ বছরেরও বেশি, তাহলে সেই আমের স্বাদ কে না নিতে চায়!
শুধু ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের কাছে নয়, ২০০ বছরের প্রাচীন এক আমগাছ এখন গোটা দেশের কাছে বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাছের মূল থেকে ডালপালাকে আলাদা করে দেখতে চাইলে রীতিমতো অবাক হতে হয়। এই ঐতিহ্যবাহী আমগাছটি ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণ মারি সীমান্তের মন্ডুমালা গ্রামে অবস্থিত। সূর্যপুরী বোম্বাই জাতীয় লতানো বিশাল আকৃতির এই আমগাছটি আড়াই বিঘারও বেশি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এ বছর আম গাছটিতে ২০০ মণ আমের ফলন হয়েছে। গাছটির উচ্চতা আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ ফুট। এর পরিধি প্রায় ৩৫ ফুট। গাছের তিন দিকে অক্টোপাসের মতো মাটি আঁকড়ে ধরেছে ১৯টি মোটা ডালপালা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বয়সের ভারে গাছের ডালপালাগুলো নুয়ে পড়লেও গাছটির শীর্ষভাগে সবুজের সমারোহ, সবুজ আমে টইটম্বুর এই গাছটি। প্রতি বছর প্রায় ১০০ থেকে ২০০ মণের বেশি আম পাওয়া যায় গাছটি থেকে। আমগুলোর ওজনও হয় প্রতিটি ২০০ গ্রাম থেকে ২৫০ গ্রাম। এগুলোর মূল্য বাজারের অন্যান্য আমের চেয়ে দ্বিগুণ। আমের মৌসুমে গাছের পাশেই তা বিক্রি করা হয়। স্থানীয়দের মতে, এই আম গাছের ইতিহাস অনেক পুরোনো। মাটি আঁকড়ে থাকা মোটা ডালপালাগুলো দেখে অনেকেই গাছটির বয়স অনুমান করতে চেষ্টা করেন, কিন্তু কেউ সঠিকভাবে গাছটির বয়স বলতে পারছেন না।

গাছটি কোন সময় লাগানো হয়েছে তা সঠিক জানা নেই কারো। আমগাছটির আনুমানিক বয়স ধরা হয় ২২০ বছরেও অধিক। কেউ বলেন ১৫০ বছর, আবার কেউ বলেন ২৫০ বছর। তবে এলাকার বায়োজ্যেষ্ঠরাও গাছটির বয়স কত তা সঠিকভাবে বলতে পারেন না। তারা বলেন কোন সময় আমগাছটি লাগানো হয়েছে তা জানা নেই। প্রাচীন এই গাছটি সম্পর্কে তারা জেনেছেন তাদের বাবা-দাদার কাছ থেকে। প্রকৃতির আপন খেয়ালে বেড়ে উঠে আজ ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই গাছটি। দূর-দূরান্ত থেকে গাছটিকে দেখতে আসা মুগ্ধ দর্শনার্থীরা জানান, এখানে যদি পর্যটকদের জন্য থাকার, বসার ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হতো তাহলে আরো ভালো হতো। আমগাছটির ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য শুধু দেশের পর্যটক নয়, বিদেশের অনেক অতিথিকেও আকৃষ্ট করে। শত ব্যস্ততার মধ্যে একটু সময় করে ছুটে গিয়ে চোখ জুড়ানোর লোভ সামলাতে পারেন না তারা।

ব্যতিক্রমী এই আমগাছ ঠাকুরগাঁও জেলার পশ্চাত্পদ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলাকে বিশ্বের কাছে আজ পরিচিত করে তুলেছে। সূর্যপুরী ঠাকুরগাঁও এর মানুষের প্রিয় একটি আমের জাত। গাছের মূল কাণ্ড থেকে বেরিয়েছে ২০টির মতো শাখা। গাছটির শাখাগুলোর দৈর্ঘ্য আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ ফুটের মতো। গাছের প্রতিটি ডালে চাইলে অনায়াসে হাঁটাচলা ও বসা যায়। ২০০ বছর বয়সি আমগাছটি দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন একটা বিশালাকৃতির ঝাউগাছ। গাছটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এর ডাল। গাছের ডালগুলো কাণ্ড থেকে বেরিয়ে একটু ওপরে উঠেই মাটিতে নেমে গেছে। তারপর আবারও উঠেছে ওপরের দিকে। দেখতে অনেকটা টেউয়ের মতো।

ঐতিহাসিক এই আম গাছটির বর্তমান মালিক দুই ভাই সাইদুর রহমান ও নূর ইসলাম। তারাও সঠিক বলতে পারেন না যে, ঠিক কবে গাছটির চারা রোপণ করা হয়েছিল। তাদেরও ধারণা, প্রায় ২০০ বছর হবে গাছটির বয়স। উপমহাদেশ জুড়ে সূর্যপুরী জাতের এত বড় আমগাছ আর নেই। ফলে এটি দেখতে প্রতিদিন শতশত মানুষ ভিড় করে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে তাদের উপস্থিতি থাকে বেশি। সাইদুর রহমান বলেন, ‘গাছটি আমার বাবার দাদার দাদা লাগিয়েছিলেন বলে শুনেছি। এর বয়স আনুমানিক ২০০ বছর হবে। বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ দেখতে আসে। প্রবেশ মূল্য হিসেবে প্রতি জনের কাছ থেকে আমরা ২০ টাকা করে নিই। টিকিট বিক্রি করে যা পাই, তা দিয়ে আমার দুই ভাই মিলে গাছটির যত্ন নিই।’ তিনি বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে এখানে একটি পিকনিক স্পট গড়ে তুলব। এ কারণে আমরা জায়গাটি একটু সুন্দর করার চেষ্টা করেছি।’

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান জানান, গাছটি যদিও ব্যক্তিমালিকানাধীন তারপরও পর্যটকদের জন্য সাময়িক বিশ্রামের ও খাবার সরবরাহের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ রেস্টুরেন্ট ও রেস্ট হাউজ করতে চাইলে তাদের সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

img

মানুষ শারীরিক সক্ষমতার চেয়ে মানসিক শক্তিতে বড় হয়.....

প্রকাশিত :  ০৬:৩১, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ০৭:০৯, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রেজুয়ান আহম্মেদ

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা ফুটফুটে সেই ছেলেটির চেহারা আমাদের হৃদয়ে অমোঘ এক দাগ কেটে গেছে। সে একটি স্বপ্ন দেখত, ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু জীবন কখনো কখনো নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখি করে দেয়, যেখানে সব স্বপ্নগুলো যেন মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে। তার পা হারিয়ে যাওয়া মানে শুধুমাত্র শারীরিক অসুস্থতা নয়, তার সমস্ত স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষারও বিনাশ। এই বাস্তবতা এতটাই নির্মম যে, তার মতো সাহসী একটি তরুণের চোখেও নিরাশার ছায়া পড়েছে।

ছেলেটির মুখে কথা ফোটে, “স্যার, আমার ক্রিকেট খেলার অনেক শখ ছিল, আমি এখন কিভাবে ক্রিকেট খেলব?” কথাটি শুনে মুহূর্তের জন্য থমকে যান আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস। ড. ইউনুস মানুষের দুঃখ, কষ্ট, স্বপ্ন ও বেদনা বোঝার অসামান্য ক্ষমতা রাখেন। তিনি শুধুমাত্র একজন নেতা নন, তিনি একজন মানবদরদী। তার চোখে তখন অশ্রু চলে আসে, একটি তরুণ হৃদয়ের স্বপ্ন ভাঙার এই মুহূর্তে তার মানবিকতা তাকে গভীরভাবে আঘাত করে।

ড. ইউনুস কিছুক্ষণ নীরব থাকেন। তিনি বুঝতে পারেন, শুধু একটি পা হারানো নয়, এই ছেলেটি তার জীবন হারিয়েছে, তার স্বপ্নগুলোও যেন ঝরে গেছে। কিন্তু ড. ইউনুস একজন লড়াকু মানুষ। তিনি জানেন, জীবনে বড় কিছু করতে গেলে শুধুমাত্র শারীরিক সক্ষমতা নয়, মানসিক শক্তিও অপরিহার্য। তিনি বুঝতে পারছেন, এই ছেলেটির জীবন থেকে ক্রিকেটের স্বপ্ন হারিয়ে গেছে, কিন্তু তার সামনে জীবনের আরও অনেক পথ খোলা।

তিনি সেই ছেলেটির মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, "তুমি শুধু একজন ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলে, কিন্তু তুমি জীবনে আরও অনেক কিছু করতে পারো। পা হারিয়ে গেছে, কিন্তু তোমার ইচ্ছাশক্তি, তোমার মেধা, তোমার মনোবল এখনও অটুট আছে। মানুষ শারীরিক সক্ষমতার চেয়ে মানসিক শক্তিতে বড় হয়। তুমি যদি চেষ্টা করো, তাহলে জীবন তোমাকে অন্য কোনো পথ খুলে দেবে।"

ড. ইউনুসের এই কথাগুলো ছিল শুধু কথাই নয়, এটি ছিল সেই ছেলেটির ভেতরে নতুন করে আশার সঞ্চার করা। জীবন কখনোই থেমে যায় না, এবং একজন প্রকৃত যোদ্ধা জীবনের প্রতিটি ধাপে লড়াই চালিয়ে যায়। ছেলেটি হয়তো তার শারীরিক সামর্থ্য হারিয়েছে, কিন্তু তার মানসিক শক্তি এখনও অপরাজেয়। এই ছেলেটিকে নতুন করে উৎসাহিত করতে ড. ইউনুসের মতো একজন মানবিক নেতার প্রয়োজন ছিল।

জীবনে এমন অনেক পরিস্থিতি আসে যখন আমরা মনে করি, সব শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কিছুই শেষ হয় না। যেখানেই হোক না কেন, জীবনের নতুন দরজা খোলা অপেক্ষা করে। আমাদের নিজেদের মধ্যে সেই মনোবল রাখতে হবে, যে কোনো পরিস্থিতি থেকে ফিরে আসার ক্ষমতা থাকতে হবে। যারা নিজেদের ভেতরের শক্তিকে কাজে লাগায়, তারা কখনোই হেরে যায় না।

এই ছেলেটি যদি নিজের ভেতরে সেই আশার আলো জ্বালাতে পারে, তবে সে জীবনের অন্য কোনো দিক থেকে সফল হতে পারবে। জীবনের একটি দিক বন্ধ হলে, অন্য দিক খুলে যায়। জীবন শুধু শারীরিক সক্ষমতার উপর নির্ভর করে না, এটি আমাদের মন ও মস্তিষ্কের শক্তিতে পরিচালিত হয়।

মানুষের জীবনে অনেক সংগ্রাম আসে, কিন্তু সেই সংগ্রামগুলোই মানুষকে আরও দৃঢ় ও শক্তিশালী করে তোলে। এই ছেলেটির মতো যারা নিজেদের স্বপ্ন হারিয়েছে, তাদের জন্য আমাদের সমর্থন ও ভালোবাসা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়িয়ে নতুন স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করা। কারণ জীবন কখনো থেমে থাকে না, জীবন সবসময় এগিয়ে যায়।

ড. ইউনুসের এই হৃদয়বিদারক মুহূর্ত আমাদেরকে শিখিয়ে দেয়, মানুষের জীবনে যতই দুঃখ ও বেদনা আসুক না কেন, সেই বেদনাকে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহসিকতা রাখতে হবে। জীবন যতই কঠিন হোক, তার সামনে মাথা নত করতে নেই।




রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম