img

যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন মিশন কি তবে শেষ

প্রকাশিত :  ০৮:১৭, ১৮ অক্টোবর ২০২৩

যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন মিশন কি তবে শেষ

দানিয়া কোলেইলাত খাতিব

গত সপ্তাহে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা দড়ির একেবারে শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছি।’ আমি একটু চমকে গেলাম। এর আগে না যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল, ‘যত দিন লাগবে, তত দিনই ইউক্রেনের পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র?’

গত জানুয়ারিতে কিরবির সেই সংবাদ সম্মেলনের কথা আমার পরিষ্কার মনে আছে। কিরবিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ইউক্রেন যুদ্ধে জয়ী হওয়া বলতে যুক্তরাষ্ট্র কী বোঝে? বিজয় অর্জনে কত দিন লাগতে পারে, কত দিন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমর্থন দেবে? কিরবির জবাব ছিল, বিজয় অর্জনে যত দিন লাগবে, তত দিনই যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকবে। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ইউক্রেনের জন্য এখন প্রয়োজন। এই সহায়তা তাদের সামনের দিনগুলোতেও প্রয়োজন হবে। তাদের যা প্রয়োজন, তা যথাসম্ভব নিশ্চিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এই যুদ্ধ জয়ের সংজ্ঞা প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ভালো জানেন। যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে তাঁকে কোনো নির্দেশনাও দিচ্ছে না

কংগ্রেস সদস্যরা ইউক্রেনের জন্য ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অনুদান দেওয়া-না দেওয়া নিয়ে ব্যাপক বাগ্‌বিতণ্ডায় যুক্ত হয়েছিলেন। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যয় কমানোর মতো সিদ্ধান্ত নিতে বসেছিল। ফলে কিরবি একটি শক্তিশালী বিবৃতি নিয়ে হাজির হলেন। বললেন, মার্কিন সহায়তা অনির্দিষ্টকালের জন্য নয়। তাঁর কথায় এমন ইঙ্গিত ছিল যে যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে ইসরায়েল এবং ইউক্রেন দুই দেশকে সহযোগিতা করতে পারবে না। গত সপ্তাহের শুরুর দিকে ওয়াশিংটন ইউক্রেনের জন্য ২০০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা ঘোষণা করেছে। দেওয়ার কথা ছিল ২৪ বিলিয়ন ডলার। ট্রাম্পের সমর্থকেরা এই অনুদানের চরম বিরোধী ছিলেন। ফলে শেষ পর্যন্ত ইউক্রেন সহায়তা হিসেবে যা পেল, তা সামান্যই। অথচ সহায়তা ছাড়া ইউক্রেনের পক্ষে এই যুদ্ধ জয় করা কঠিন হবে। 

যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই একটা প্রশ্নের জন্ম দেয়, তাহলে কি ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ? রাশিয়া কি জিতে গেল? 

আমরা এখনো তা বলতে পারছি না। তবে গাজার যুদ্ধের একটি প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে ইউক্রেনে। যুক্তরাষ্ট্রের এই নেতিয়ে পড়া ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জন মিরশেইমারের কথা মনে করায়। ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে করা মন্তব্যের কারণে তাঁকে ভ্লাদিমির পুতিনের অন্যায়ের সাফাই গাওয়া এবং রুশ প্রচারণার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে তিনি আসলে সত্য বলেছিলেন। খুব মৌলিক কিছু ধারণার ভিত্তিতে তিনি এই যুদ্ধের উপসংহারে পৌঁছেছিলেন। এই যুদ্ধের সমাধান বিবদমান পক্ষগুলোর সবার জন্য সমান ফলপ্রসূ হবে না। ন্যাটোতে ইউক্রেনের সদস্যপদ লাভ রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়। এ কারণে যখন গাজার ইস্যুটি সামনে এল, তখন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা উধাও হয়ে গেল। তারপরও জেলেনস্কির জন্য শুভকামনা। এখনো তাঁর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আছে।

চলমান যুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্য জড়িয়ে পড়াটা সবার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। সবাই এখন পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, দেখার অপেক্ষায়। হিজবুল্লাহ কি এই যুদ্ধে পক্ষ হবে? যদি ইসরায়েল হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়ে, তারা কি ইরান পর্যন্ত যাবে? যুক্তরাষ্ট্রকে সম্ভাব্য সবকিছুই ভাবতে হচ্ছে। এ কারণে ইউক্রেন ইস্যু এখন পেছনে পড়ে গেছে।

ইউক্রেন কি এখনো রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সক্ষম? জেলেনস্কি ডেমোক্রেটিক সিনেটর চাক শুমারকে গত মাসে জানিয়েছেন, ‘সহযোগিতা বন্ধ হয়ে গেলে আমরা যুদ্ধে হেরে যাব।’ যুক্তরাষ্ট্রকে দেখে মনে হচ্ছে, এই সম্ভাবনা মেনে নিতে তারা প্রস্তুত। শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের যুদ্ধ হিসেবেই গ্রহণ করেছিল ইউক্রেন যুদ্ধকে, সেই যুক্তরাষ্ট্রই এখন এই যুদ্ধ থেকে সরে আসতে চাইছে। বলছে, তাদের সহায়তা অনন্তকাল ধরে চলতে পারে না।

গাজার এই যুদ্ধ নানা দিক থেকে পুতিনের জন্য লাভজনক। এই যুদ্ধ ইউক্রেন থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেবে। পাশাপাশি আরব ও আরবের বাইরের আন্তর্জাতিক ফোরামে রাশিয়ার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সমস্যার মূলে নজর দেওয়ার কথা একমাত্র তিনিই বলেছেন। আরব লিগ তাঁর এই বক্তব্যকে আমলে নিয়েছে। আরব লিগের মুখপাত্র জামাল রুশদি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে রাশিয়া একটি যৌক্তিক ও ভারসাম্যমূলক মন্তব্য করেছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই করেনি।’

আরব বিশ্বে পুতিনের এই ভাবমূর্তির ফলে তিনি হয়তো ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যকার সমস্যা সমাধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে উঠবেন। এখন পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে সংকট সমাধানে যেখানেই মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র গেছে, সেখানেই তারা লেজেগোবরে করে ফেলেছে। যুক্তরাজ্যে ফিলিস্তিনি মিশনের প্রতিনিধি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে ব্যর্থ হয়েছে। সে তুলনায় চীন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভালো হবে। তিনি হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ফিলিস্তিনিদের আস্থার সংকটের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।

ইউক্রেনকে সম্ভবত পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনকে এভাবে ফেলে আসা আবারও প্রমাণ করে যে ওয়াশিংটন অংশীদার হিসেবে বিশ্বস্ত নয়। মার্কিন সাহায্য বন্ধ হয়ে গেলে ইউক্রেন যদি হেরে যায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও নতুন বন্ধু বানানো কঠিন হয়ে যাবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র অবিশ্বস্ত, এমন ধারণা আরও জোরালো হবে। আর প্রত্যেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে অন্য কোনো দেশের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করবে। সেই দেশ হতে পারে ইরান, রাশিয়া কিংবা চীন।

এখন দেখার বিষয়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জেলেনস্কির প্রতিক্রিয়া কী। তিনি কি পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করবেন, নাকি রাশিয়ার সঙ্গে নিজেই বসবেন? তিনি কি মনে করছেন, তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে যতটা হারাবেন, মস্কোর সঙ্গে যেকোনো চুক্তিতে তিনি ততটাই কম পাবেন? তবে একটা বিষয় সুনিশ্চিত, আমেরিকার বন্ধু ও অংশীদারেরা আংকেল স্যামের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে ব্যাপক সংশয়ে পড়েছেন।



পূর্বাচলে প্লট কেলেঙ্কারি

img

হাসিনা রেহানা জয়সহ ১০০ জনকে নিয়ে গেজেট প্রকাশ

প্রকাশিত :  ১৬:১০, ০৬ জুলাই ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৭:৫৩, ০৬ জুলাই ২০২৫

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠা সরকারি প্লট বরাদ্দ নেয়ার অভিযোগে পৃথক ছয় মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১শ’ জনকে আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। 
ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের সই করা এই গেজেট বিজিপ্রেস (বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয়) গত বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) প্রকাশ করে।
গেজেটে উল্লেখ করা হয়েছে, তফসিল বর্ণিত আসামিদেরকে জানানো যাচ্ছে যে, যেহেতু, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রহিয়াছে। যেহেতু এই কোর্ট বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে যে, তারা গ্রেফতার ও বিচারে সোপর্দকরণ এড়াইবার জন্য আত্মগোপন করিয়াছেন এবং তাহাদের আশু গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা নাই। 
সেহেতু ১৯৫৮ সনের ক্রিমিনাল 'ল' এমেন্ডমেন্ট এ্যাক্ট ৬(১৩) ধারা বিধান অনুসারে তফসিল বর্ণিত মামলায় তাহাদেরকে আগামী ধার্য তারিখের মধ্যে এই কোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। অন্যথায় আপনাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার কার্য সম্পন্ন করা হবে।
এর আগে ১ জুলাই বিচারক গেজেট প্রকাশের আদেশ দেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব। মামলাগুলোর পরবর্তী শুনানি ২০ জুলাই।
বিষয়টি বাসস’কে নিশ্চিত করেছেন দুদক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম।
তিনি বলেছেন, প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির ছয়টি মামলায় গেজেট প্রকাশের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বিজি প্রেস থেকে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। আগামী ২০ জুলাই মামলা গুলোর তারিখ ধার্য হয়েছে। এ তারিখের মধ্যে আসামিরা আদালতে হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে।
প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, টিউলিপ সিদ্দিক, পুতুল ও আজমিনা সিদ্দিকসহ মোট ১০০ জনকে আসামি করে ছয়টি মামলা দায়ের করা হয় ১২ থেকে ১৪ জানুয়ারির মধ্যে।
মামলাগুলো দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন, সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া এবং এস এম রাশেদুল হাসান। তদন্ত শেষে ১০ মার্চ চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
১৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনাসহ ৮ জনকে আসামি করেন উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন। তদন্তে নতুন ৪ জন যুক্ত হয়ে চার্জশিটে আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ১২। তদন্ত করেন সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।
একইদিন সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে ২ জন যুক্ত হয়ে চার্জশিটে আসামি হন ১৭ জন।
১৩ জানুয়ারি উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন শেখ রেহানাকে প্রধান আসামি করে শেখ হাসিনা ও টিউলিপসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে আরও দুইজন সহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন আফনান জান্নাত কেয়া।
আজমিনা সিদ্দিককে প্রধান আসামি করে ১৩ জানুয়ারি সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া শেখ হাসিনা ও টিউলিপসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে আরও দুইজন যুক্ত হয়ে চার্জশিটে আসামি হন ১৮ জন।
একইদিন সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, টিউলিপ ও শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে আরও দুইজন যুক্ত হয়ে চার্জশিট দেওয়া হয় ১৮ জনের নামে।
শেষে ১২ জানুয়ারি আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে শেখ হাসিনা ও পুতুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে আরও দুইজন যুক্ত হয়ে চার্জশিট দেন মোট ১৮ জনের নামে। এই মামলায় সাক্ষী রাখা হয়েছে ১৬ জনকে।
সূত্র : বাসস

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষ এর আরও খবর